হ ত ভা গা র চি ঠি ১২

প্রশ্নটা বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছেই

শামীমুল হক | মতামত
জানুয়ারী ৪, ২০২৫
প্রশ্নটা বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছেই

প্রিয় হাসু আপা, ৫ই আগস্ট যখন আপনি পালিয়ে যান দেশ ছেড়ে তখন লাখো কোটি মানুষ রাজপথে উল্লাসের নৃত্য করেছিল। লাখো মানুষ গণভবনে প্রবেশ করে কতো কিছুই না করেছে। যে যা হাতের কাছে পেয়েছে তাই নিয়ে গেছে নিজের মনে করে। শুনেছি, আপনার নিজের জন্য রান্না করা খাবারও অনেকে পেট পুরে খেয়েছে। অনেককে দেখেছি গণভবনের সামনে শুকরিয়া নামাজ আদায় করতে। অথচ গত প্রায় ১৬টি বছর কি দোর্দণ্ড দাপটে আপনি দেশ শাসন করেছেন। যখন যা খুশি করেছেন। আপনার পরিণতি এমন হবে- এটা ছিল কল্পনার বাইরে। কিন্তু এর চেয়েও বেশি কষ্টের হলো- কোটি টাকায় নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য যখন ছাত্র-জনতা ভাঙছিল। মনটা তখন দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু কিছুই করার ছিল না। ভাস্কর্যের মাথাটা যখন ভেঙে ফেলে তখন মনে হয়েছিল গোটা দেশের মাথাটাই ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ নিয়ে অনেকের সঙ্গেই আক্ষেপ করেছি। সবাই বলেছে, এটা শেখ হাসিনার বাড়াবাড়ির ফল। জানতে চাইলে তারা বলেছে, গত ষোল বছরে বঙ্গবন্ধুকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে তার কন্যা হাসিনা- যার শেষ পরিণতি এটাই হওয়ার কথা ছিল। যেটা আমরা দেখতে পেয়েছি। 


অন্তরের আপা, আমার হাসু আপা, তখন আমার লালনের একটি গানের কলি মনে পড়েছে। ‘সে কি চিনে মানুষ রতন/দরগাতলায় মন মজেছে/শিরনি খাওয়ার লোভ জাগাতে...’। সত্যি আপা আপনি মানুষ চিনেন নি। যারা আপনার দরগায় মন-প্রাণ ঢেলে দিয়েছে তাদের প্রত্যেকের ছিল শিরনি খাওয়ার লোভ। তারা শিরনি খেয়েছে। আপনার বারটা বাজিয়ে ছেড়েছে। আর তা না হলে গোটা দেশটাকে বঙ্গবন্ধুময় করে তুলতেন না আপনি। আকাশ থেকে পাতাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু। আকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট আর পাতালে বঙ্গবন্ধু টানেল। ভাস্কর্য থেকে শুরু করে স্কুল, মাদ্রাসা, সড়ক, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান, স্মারক পদও রয়েছে। তাছাড়া অনেক কিছু করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর নামে। যে প্রক্রিয়ায় করা হয়েছে সেটা কী জরুরি ছিল? বঙ্গবন্ধুকে চেনাতে? বঙ্গবন্ধু তো বঙ্গবন্ধুই। তার সঙ্গে কারও তুলনা হতে পারে? আপনিই বলুন। এতক্ষণে হয়তো আপনি বলবেন কি এমন করেছি? তাহলে একটু নমুনা তুলে ধরি আপনার সামনে। বঙ্গবন্ধুর নামে কি করেছেন। আর এই নামকরণ করাই ছিল বঙ্গবন্ধুর জন্য কাল। আচ্ছা সড়ক দিয়েই শুরু করি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিস যে পাড়ায় সে পাড়ার নাম বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। এ সড়কের নাম অবশ্য আপনি দেননি। বাংলাদেশ হওয়ার পর জিন্নাহ এভিনিউ বাদ দিয়ে এ নামটি হয়েছে। এরপর দেখুন ফরিদপুরে রয়েছে বাংলাদেশ মুুুুজিব সড়ক। সাভারে রয়েছে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু সড়ক। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে রয়েছে বাংলাদেশ শেখ মুজিব সড়ক। সিরাজগঞ্জে রয়েছে বাংলাদেশ শেখ মুজিব সড়ক। এ নামকরণ থেকে পাহাড়ও বাদ যায়নি। তাই তো বান্দরবানে করা হয়েছে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সড়ক। নারায়ণগঞ্জে রয়েছে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু সড়ক। যশোরে রয়েছে বাংলাদেশ মুজিব সড়ক। গোপালগঞ্জে রয়েছে মুজিব সড়ক। ঠাকুরগাঁওয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু সড়ক। দেশে এত সড়ক বঙ্গবন্ধুর নামে হওয়ার পরও শখ মেটেনি। দেশের বাইরে রয়েছে শিকাগোতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শেখ মুজিব ওয়ে। কলকাতায় রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সরণি। নয়াদিল্লিতে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সড়ক। তুরস্কের আঙ্কারায় রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুলবার্ড। এবার একটু দেখা যাক সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু কতো বার ব্যবহার হয়েছেন। ভাসানী নভোথিয়েটার থেকে ভাসানী বাদ দিয়ে করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার। চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতাল। ঢাকার কুর্মিটোলায় করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু অ্যারোনটিক্যাল সেন্টার। গাজীপুরে করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি। খুলনার রূপসায় করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট। টাঙ্গাইলে রয়েছে বঙ্গবন্ধু সেনানিবাস। রয়েছে ক্ষেপণাস্ত্র ফ্রিগেট বানৌজা বঙ্গবন্ধু। নভো-উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১। স্মারক পদ হিসেবে রয়েছে- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে বঙ্গবন্ধু চেয়ার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্‌-এ রয়েছে বঙ্গবন্ধু চেয়ার। ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু চেয়ার। থাইল্যান্ডের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে বঙ্গবন্ধু চেয়ার। ব্রাজিলের ব্রাসিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগে রয়েছে বঙ্গবন্ধু চেয়ার। কানাডার সাস্কাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু চেয়ার। পোল্যান্ডের ইয়াগোলোনিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু সেন্টার। যুক্তরাজ্যের  কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু সেন্টার। এবার দৃষ্টি দেয়া যাক সেতুর নামকরণের দিকে। প্রথমেই আসি যমুনা সেতুর দিকে। যমুনা সেতু নামটি বাদ দিয়ে আপনি করেছিলেন বঙ্গবন্ধু সেতু। অবশ্য বর্তমান সময়ে আবার সেতুটি তার পূর্বের নাম ফিরে পেয়েছে। দেশের পুরনো স্টেডিয়াম যেটা গুলিস্তানে অবস্থিত সেটার নামও দিলেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম। সবই যখন দিলেন দ্বীপ কেন বাদ যাবে? দিলেন বঙ্গবন্ধু দ্বীপ। এবার ভবনের দিকে তাকালে কী দেখতে পাই? চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রকে নাম দিলেন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। যেটা  আগারগাঁও, শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত। আবার পূর্বাচলে নামকরণ করলেন বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্র। ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধু ভবনে রয়েছে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর। ঢাকায় রয়েছে বঙ্গবন্ধু চত্বর স্মৃতিস্তম্ভ, বঙ্গবন্ধু টাওয়ার। ফরিদপুরে রয়েছে বঙ্গবন্ধু  স্কোয়ার। এবার কিছুটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দিকে তাকিয়ে দেখি সেখানকার কী অবস্থা। শুরুতেই পিজি হাসপাতালের নাম বদলে করলেন- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া ঢাকায় রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি। গাজীপুরে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়। গোপালগঞ্জে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। নারায়ণগঞ্জে রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।  লালমনিরহাটে বয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়। কিশোরগঞ্জে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়। পিরোজপুরে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। মেহেরপুরে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়। নওগাঁয় রয়েছে বঙ্গবন্ধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। টাঙ্গাইলে রয়েছে বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। ঢাকায় রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজ। গাজীপুরে রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কলেজ। চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জে রয়েছে ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ। কুমিল্লায় রয়েছে বঙ্গবন্ধু কলেজ। খুলনায় বঙ্গবন্ধু কলেজ। মাদারীপুরে রয়েছে বঙ্গবন্ধু ল’ কলেজ। সাতক্ষীরার কলারোয়ায় রয়েছে বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ। রাজশাহীতে রয়েছে বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজ। নীলফামারীতে রয়েছে শিমুলবাড়ী বঙ্গবন্ধু ডিগ্রি কলেজ। গোপালগঞ্জে রয়েছে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ। গোপালগঞ্জে আরও একটি রয়েছে সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। জামালপুরে সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ। পঞ্চগড়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব-ইন্দিরা মহাবিদ্যালয়। চট্টগ্রামে রয়েছে বঙ্গবন্ধু ল’ টেম্পল। নীলফামারীতে রয়েছে আম্বরি বঙ্গবন্ধু বিদ্যালয়। নারায়ণগঞ্জে রয়েছে সৈয়দপুর বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়। চট্টগ্রামে রয়েছে কৈবল্যধাম হাউজিং এসেস্ট বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়। গোপালগঞ্জ সদরে রয়েছে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়। পটুয়াখালীর গলাচিপায় রয়েছে বঙ্গবন্ধু নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সাতক্ষীরার আশাশুনিতে রয়েছে কাকবাসিয়া বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়। নোয়াখালীর কবিরহাটে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে রয়েছে হেঞ্চি বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়। চট্টগ্রামে রয়েছে পোমরা বঙ্গবন্ধু সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। এত যখন হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর নাম বাদ যাবে কেন? সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল। হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু ইন্টারন্যাশনাল হল।  খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হল, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু হল, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু হল, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বঙ্গবন্ধু হল, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে রয়েছে বঙ্গবন্ধু হল।  


প্রিয় হাসু আপা, এত কিছুর পরও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ’ নামে একটি আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে। এ ছাড়া মুজিববর্ষ উপলক্ষে ২০২০ সাল থেকে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগকে (বিপিএল) বঙ্গবন্ধু বিপিএল নামে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। মুজিব বর্ষ উপলক্ষে শেখ মুজিবের নামে ২০২০ সালে বাংলাদেশ গেমসের ৯ম আসরের নামকরণ ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ গেমস’ করা হয়। তবে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন গেমস স্থগিত ঘোষণা করে। পার্ক ও উদ্যানেও বঙ্গবন্ধু! গাজীপুরে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, কক্সবাজারে ডুলাহাজরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, ফরিদপুরে রয়েছে মুজিব উদ্যান। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে প্রধানত বাংলা ও পাশাপাশি অন্যান্য ভাষায় বিপুল সংখ্যক রচনা, বই, পুস্তিকা রচিত হয়েছে। বাংলাদেশের বহু প্রতিষ্ঠান ও বিষয়বস্তুর নামকরণ শেখ মুজিবুর রহমানের নামানুসারে করা হয়েছে। তার জীবনের উপর বিভিন্ন চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে। প্রামাণ্যচিত্রের মধ্যে রয়েছে- ১৯৭২: হি ইজ্‌ ব্যাক। যা ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের উপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র। ১৯৭২: বাংলাদেশ, শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ গঠনের কর্মকাণ্ডের উপর যুক্তরাষ্ট্রের এবিসি টিভি কর্তৃক নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র। ১৯৭২: ডেভিড ফ্রস্ট প্রোগ্রাম ইন বাংলাদেশ- শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাৎকার ভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র। বৃটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের উপর ভিত্তি করে এটি নির্মাণ করেন। ১৯৭৩: শেখ মুজিবুর রহমান, দ্যা ফাদার অফ বেঙ্গল-জাপানি পরিচালক নাগাসি ওশিমা পরিচালিত শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত জীবন, তার প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ড ও পরবর্তী পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র। ১৯৭৩: ‘ওয়েলকাম বঙ্গবন্ধু’- জাপানে শেখ মুজিবুর রহমানের রাষ্ট্রীয় সফরের উপর ভিত্তি করে জাপানের মাইনিচি প্রডাকশনস-এর প্রযোজনায় নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র। ২০২২ সালে জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশে অবস্থিত জাপানের দূতাবাস, ‘বঙ্গবন্ধুর জাপান সফর’ শিরোনামে বাংলা অডিও এবং জাপানি সাবটাইটেল সহ প্রামাণ্যচিত্রটির ডিজিটালি রিমাস্টার করা সংস্করণ প্রকাশ করে। ১৯৯৬: চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধু- শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্মের উপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র। ১০ই আগস্ট বি এম সালাউদ্দিনের প্রযোজনায় এর নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ১৫ই আগস্ট প্রচারিত হয়। চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরে ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে প্রামাণ্যচিত্রটি ডিজিটাল ফিল্মে পুনঃনির্মিত হয়। সেই অন্ধকার, প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবৃতিতে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের উপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ, বিশ্বজিত সাহা ও শ্যামল দত্ত পরিচালিত প্রামাণ্যচিত্র। ২০১০: দ্যা স্পিচ- শেখ মুজিবুর রহমানের সাতই মার্চের ভাষণের বিশ্লেষণ নিয়ে ফাখরুল আরেফিন খান পরিচালিত প্রামাণ্যচিত্র। সাক্ষাৎকারভিত্তিক এই প্রামাণ্যচিত্রে উঠে এসেছে ভাষণ রেকর্ডিংয়ের পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে সংরক্ষণের ঘটনাসমূহ। ২০১২: অসমাপ্ত মহাকাব্য- শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনীর’ উপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র। ২০১৪: মাছরাঙা টেলিভিশনের প্রযোজনায় শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের উপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র। ২০১৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হাসিনা: এ ডটার’স টেল’ তথ্যচিত্রে শেখ হাসিনা নিজ ভাষ্যে তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড বিবৃত করেন। ২০১৯: বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ববন্ধু, মুজিববর্ষ উপলক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানের উপর নির্মিত বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র। ২০২১: বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়, সৈয়দ সাবাব আলী আরজু পরিচালিত শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রামাণ্যচিত্র। এটি ‘শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্যচিত্র’ শাখায় ৪৫তম আসরে বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করে। ২০২৩: দ্য অ্যাসাসিন নেক্সট ডোর, কানাডিয়ান ডকুমেন্টারি সিরিজ দ্য ফিফথ এস্টেট-এর একটি পর্ব, শেখ মুজিবুর রহমানের ঘাতক নূর চৌধুরীর উপর প্রকাশিত হয়েছিল। চলচ্চিত্রও হয়েছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। ১৯৭৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘সংগ্রাম’ চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্যে নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন শেখ মুজিবুর রহমান। চলচ্চিত্রটিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের যুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তাদের অবদানকে দেখানো হয়েছে। ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মৃত্যুঞ্জয় দেবব্রত পরিচালিত ‘যুদ্ধশিশু’ নামক ভারতীয় বাংলা-হিন্দি চলচ্চিত্রে প্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায় শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০২১: ‘তারুণ্যের আলোক শিখা’, শেখ মুজিবুর রহমানের উপর নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। ২০২১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’ চলচ্চিত্রে শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনা দেখানো হয়। ২০২০ সালে ‘আগস্ট ১৯৭৫’ নামে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ড পরবর্তী ঘটনা নিয়ে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়।  যা ১৫ই আগস্ট ২০২০ সালে মুক্তির পরিকল্পনা থাকলেও করোনা মহামারিজনিত জটিলতার কারণে এর মুক্তির তারিখ পিছিয়ে যায়। ২০২১ সালের ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। ২০২১ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী অবলম্বনে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘চিরঞ্জীব মুজিব’ নির্মাণ করা হয়। এটি ২০২১ সালের ৩১শে ডিসেম্বর মুক্তি পায়। ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে নির্মিত ছবিটিতে শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের ১৯৪৯ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত চিত্রিত হয়। ২০২৩: ‘বঙ্গমাতা’, শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জীবনের উপর নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটিতে শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন মনির আহমেদ শাকিল। ২০২৩: ‘দুঃসাহসী খোকা’ মুশফিকুর রহমান গুলজারের পরিচালনায় সরকারি অনুদানে নির্মিত চলচ্চিত্রটিতে শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম থেকে কৈশোর ও যৌবনের সময়কে তুলে ধরা হয়েছে। ২০২৩: ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার’ নির্মাতা শ্যাম বেনেগালের পরিচালনায় বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ প্রযোজনায় শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি বাংলা, হিন্দি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এ সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন নুসরাত ইমরোজ তিশা। ২০২৪: ‘৫৭০’, শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড পরবর্তী দাফন পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টার ঘটনাবলী নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র। ‘হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি’, বঙ্গবন্ধুর উপর নির্মিত চিত্রপরিচালক এখলাস আবেদিন পরিচালিত চলচ্চিত্র। এ ছাড়া শেখ হাসিনার লেখা বই ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ অবলম্বনে তৈরি হয়েছে পূর্ণদৈর্ঘ্য দ্বিমাত্রিক (টু-ডি) অ্যানিমেশন ‘মুজিব আমার পিতা’ চলচ্চিত্রটি। এটি পরিচালনা করেছেন সোহেল মোহাম্মদ রানা।  ১৯৯৬: নিশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি, কায়েস চৌধুরী পরিচালিত শেখ মুজিবুর রহমানের উপর নির্মিত প্রথম নাটকভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র। ১৫ই আগস্ট বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রামাণ্যচিত্রটি প্রচারিত হয়। শেখ মুজিব রিসার্চ সেন্টার লন্ডনের অর্থায়নে লেখক ও সাংবাদিক আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী তার স্বলিখিত রাজনৈতিক উপন্যাস “পলাশী থেকে ধানমণ্ডি” অবলম্বনে ২০০৭ সালে একই নামে একটি টেলিভিশন চলচ্চিত্র তৈরি করেন, যেখানে শেখ মুজিব চরিত্রে অভিনয় করেন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০২১: ২৮৮ দিন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে শেখ মুজিবুর রহমানের কারাবন্দি জীবনের উপর নির্মিত মঞ্চনাট্য। ২০২১: অভিশপ্ত আগস্ট, শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের উপর নির্মিত বাংলাদেশ পুলিশ নাট্যদলের মঞ্চায়ন। মঞ্চনাট্যটির পরিকল্পনা, গবেষণা ও তথ্য সংকলন করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের এডিশনাল আইজি হাবিবুর রহমান। রচনা ও নির্দেশনায় ছিলেন পুলিশ পরিদর্শক মো. জাহিদুর রহমান। এ ছাড়া একাধিক অ্যানিমেশন, গান, সাহিত্য, মুদ্রা ও স্ট্যাম্প, শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সংবলিত একশত টাকার ব্যাংকনোট। 


বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এভাবে মেতে ওঠাও ছিল একটি ভুল। এতে করে বঙ্গবন্ধু বরং ছোট হয়েছেন। যার পরিণতিতে দেখা গেল ৫ই আগস্ট। 

মতামত'র অন্যান্য খবর