পো স্ট ম র্টে ম

হাসিনা ইস্যুতে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

মিজানুর রহমান | এক্সক্লুসিভ
ডিসেম্বর ৮, ২০২৪
হাসিনা ইস্যুতে ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ এবং ভারতের বর্তমান সীমানায় বসবাসরতদের বন্ধন অনেক পুরনো। এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। নানা কারণে পাশাপাশি থাকা দু’টি জনপদ একে অন্যের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কেও তা-ই হয়েছে। কিন্তু বহু দলমত, ধর্ম-বর্ণের মানুষের ‘বাংলাদেশ’-এর ওপর যে ভারত খানিকটা হলেও নির্ভরশীল তা তারা খুব কম সময়ই স্বীকার করে। ৫ই আগস্টের রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের পর থেকে ‘পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ওই সম্পর্ক’ নিয়ে তো ভারতীয় মিডিয়া রীতিমতো প্রশ্ন উত্থাপনের চেষ্টা করছে। তাদের বয়ান যাই হোক- বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশের কূটনীতিকরা এখনো এটা পুরোপুরি অস্বীকার করছেন না। বরং তারা বলছেন যে, আমাদের দুই দেশের সম্পর্ক ‘বহুমাত্রিক’। ভারতের বহুধা-বিভক্ত রাজনীতি, প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যম এবং বর্তমান সরকারের আচরণে বিশ্লেষকদের কাছে এটা অনুমেয় যে, শেখ হাসিনা ইস্যুতেই ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ভবিষ্যৎ। শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে বিচ্ছিন্ন ‘সংখ্যালঘু নির্যাতন’ নিয়ে ভারত থেকে যেভাবে কথাবার্তা আসছে তাতে পেশাদার কূটনীতিক এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক তো বটেই, সাধারণের মধ্যে বিস্ময় তৈরি হয়েছে। ভারত কি আদতে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিকল্প চিন্তা করতে পারছে না?

কূটনৈতিক সূত্র বলছে, মুখে যাই বলা হোক বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে ‘শেখ হাসিনা’, ‘আওয়ামী লীগ’, ‘সংখ্যালঘু রাজনীতি’ ‘হিন্দুত্ববাদ’ নতুন আলোচ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গত ক’মাসে এটা অনেকটাই স্পষ্ট। এই  সপ্তাহে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় ফরেন অফিস কনসালটেশন, দিল্লির বিদেশ  সচিবের সফরসহ আগামীর আলোচনাগুলোতে এসব ইস্যু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ছায়া ফেলবে। ভারতীয় মিডিয়া এবং দেশটির কিছু উগ্রবাদী সংগঠনের বাংলাদেশবিরোধী বয়ান বিশেষত শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে হিন্দু সম্প্রদায়কে টার্গেট করে নির্যাতন করা হচ্ছে মর্মে যে ক্যাম্পেইন চলছে তা দুনিয়া জুড়ে থাকা হিন্দুদের কাছে পৌঁছে গেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষমতা গ্রহণ বৈধ নয় এবং তিনি সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় ব্যর্থ বলে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। দুনিয়ার সামনে ‘বাস্তব সত্য’ তুলে ধরা এখন ঢাকার বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যথায় সংস্কার, নির্বাচন এবং অন্যান্য জরুরি কাজ বাদ দিয়ে দেশে দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের সংঘবদ্ধ প্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় বাড়তি সময় ব্যয় করতে হবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে। যা তাদের রুটিন কাজে ব্যাঘাত এবং অবস্থানকে প্রলম্বিত করতে পারে।
বাংলাদেশে ভারতের প্রভাব পর্যালোচনায় অনেক বিশ্লেষক শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেখ হাসিনার বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠার ইতিহাস টানছেন। তারা শেখ মুজিব এবং শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠায় ভারতের ভূমিকার কথা স্মরণ করছেন। তারা বলছেন শেখ হাসিনা কেবলমাত্র তার পিতার রক্তের উত্তরাধিকারীই নন, তিনি তার পদাঙ্ক, সম্পর্কের লিগ্যাসি এবং রাজনৈতিক আদর্শকে ধারণ করে চলেছেন পতনের মুহূর্ত পর্যন্ত। তবে জুলাই-আগস্টের নির্মমতার প্রশ্ন টেনে মুরুব্বিদের অনেকেই এখন এটা বলার চেষ্টা করেন যে, কন্যার মতো এতটা নির্দয় ছিলেন না জাতি-রাষ্ট্রের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ মুজিব। হ্যাঁ, ভারতের বাইপার্টিজান লিডারশিপের সঙ্গে পিতার মতোই কন্যা ভাব বা বন্ধুত্ব রক্ষা করেননি শুধু বরং তিনি আরও গভীরতা এনেছেন। এটা সত্য যে, কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের উভয়ের গভীর  সখ্যতা রয়েছে যুগের পর যুগ ধরে। পিতার মর্মান্তিক মৃত্যুর পর দুই কন্যার আশ্রয় এবং শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রথমত টিকিয়ে রাখা এবং পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠায় ভারতের অপরিসীম ভূমিকা ছিল, যা দেশটির প্রয়াত প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির বয়ানে অনেকটাই উল্লেখ রয়েছে। 

 

সেদিনের ঘটনা, ২০১৩ সালেও জাতিসংঘের মধ্যস্থতা, সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের চাপে শেখ হাসিনার যখন দিশাহারা অবস্থা তখন ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় ভারত। দেশটির সরকার (কংগ্রেস) বিশেষ দূত হিসেবে তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংকে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় পাঠায়। তখনো ভোটের মাঠ থেকে দূরে জাতীয় পার্টি। তাদের নির্বাচনে আনার জন্য দূতিয়ালি করেন তিনি। সফলও হন। সুজাতাই সেদিন শেখ হাসিনার পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পথ প্রশস্ত করেছিলেন। বলাবলি আছে- পশ্চিমা দুনিয়ার আপত্তি সত্ত্বেও জানুয়ারি ’১৪ টু জানুয়ারি ’২৪- ভারত শেখ হাসিনার পাশে ছিল ছায়ার মতো। আর এ জন্যই তিনি এতটা নির্দয়ভাবে তার স্বৈরশাসন চালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন । কেবল সরকার নয়, দলেও তার কথাই ছিল শেষ কথা। যদিও বয়োজ্যেষ্ঠ এবং বাঘাবাঘা নেতা রয়েছেন হাসিনার দলে। ’২৪ সালের ডামি ভোটে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দুনিয়ার প্রচণ্ড রিজারভেশন ছিল। বিরোধী দলগুলো মাঠে ছিল সক্রিয়। সব অগ্রাহ্য করে ৭ই জানুয়ারি ’২৪-এর নির্বাচনে ফের ক্ষমতায় আসেন শেখ হাসিনা। ঘরে-বাইরে বাধা সত্ত্বেও সবকিছু জয়ের আনন্দে তখন তিনি এবং তার শিবির আত্মহারা। ভারতের নেতৃত্ব তখন ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে, দেশটিতে ভোট চলছিলো। বলাবলি আছে, ওই ‘রিলাক্সভাবই’ শেখ হাসিনার পতনকে ত্বরান্বিত করে ৬ মাসের মাথায় যা আজও ভারতের নেতৃত্ব মেনে নিতে পারছে না! ফলে বাংলাদেশে রেজিম চেঞ্জের পর থেকে দুই ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীর সম্পর্ক কেবলই তিক্ত হচ্ছে। ভারতীয় বিশ্লেষকরা শুরু থেকেই বাংলাদেশের এই পরিবর্তন নিয়ে নানা কথা বলছেন। তারা ড. ইউনূস, বিএনপি কিছু না দেখে কেবলই ইসলামপন্থিদের উত্থান দেখছেন। ভারতের বাইপার্টিজান রাজনীতিবিদ এবং প্রশাসনযন্ত্র তো গত দেড় যুগ ধরে শেখ হাসিনার বাইরে বাংলাদেশে কাউকে কল্পনাই করতে পারেনি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- ৫ই আগস্টে রক্তাক্ত অভ্যুত্থান শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের ইতি টেনেছে। ওই দিনের আগ পর্যন্ত এখানে তাদের ‘অনুগত’ প্রশাসন থাকলেও এখন যে নেইÑ তা তাদের মেনে নিতে হবে। এমন বার্তাই দিচ্ছে সরকার ও নাগরিক সমাজ। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন কোনোরকম রাখঢাক ছাড়াই ক’দিন ধরে বলছেন ৫ই আগস্টের পূর্বাপর বাংলাদেশ এক নয়। এই রিয়েলিটি দিল্লিকে মানতেই হবে। ঢাকার প্রতিষ্ঠিত একটি দৈনিক শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের সেই বিখ্যাত বক্তব্যকে স্মরণ করে একটি নিবন্ধ ছেপেছে। যার শিরোনাম ছিল- “ভারত তুমি রিয়েলিটি মাইন্যে ন্যাও”। হ্যাঁ এটা সত্য ভারত যেটুকু সময় এই রিয়েলিটি না মানছে ততদিন বাংলাদেশকে একটু কষ্ট করে ধৈর্য ধরতে হবে। সম্পর্ক রক্ষায় উভয়ের চাওয়া-পাওয়ার মাঝামাঝি পথ ও পন্থা বের করে অগ্রসর হতে হবে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনা চ্যাপ্টার আপাতত ক্লোজ এটা বুঝতে রকেট সায়েন্টিস্ট হওয়া জরুরি নয়। তবে এটা মানছেন সবাই পরিবর্তিত নেতৃত্ব নিয়ে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে টিকে থাকবে। কারণ বহু চড়াই-উৎরাইর মধ্যদিয়ে দলটি পৌনে একশ’ বছর পার করেছে।

 

ভারতে কেমন আছেন শেখ হাসিনা:
বিবিসি বাংলার রিপোর্ট মতে, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিলেও তাকে লোকচক্ষুর অন্তরালে রেখেছে। যদিও তাকে ফোনে কথাবার্তা বলার সুযোগ দিচ্ছে, তবে এটাও লিমিটেড। তিনি (বা তার সঙ্গে থাকা ছোট বোন শেখ রেহানা) দিল্লিতে নামার পর থেকে কীভাবে আছেন, কোথায় আছেন- তা নিয়ে ভারত সরকারের মুখপাত্র, মন্ত্রী বা নীতিনির্ধারকরা আজ পর্যন্ত একটি শব্দ খরচ করেননি। কোনো সাংবাদিক সম্মেলনে না, কোনো সাক্ষাৎকারেও না। তবে ভারত সরকার গত অক্টোবরে এটুকু জানিয়েছে যে তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন, অন্য দেশে যাওয়ার খবর সঠিক নয়। দিল্লিতে শেখ হাসিনার অবস্থানের ৪ মাসের মাথায় প্রশ্ন উঠছে তাহলে কী তিনি তিব্বতি ধর্মগুরু দালাই লামা বা আফগান প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নজিবুল্লাহ’র স্ত্রী-সন্তানদের মতো ভারতে ‘পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম’ বা রাজনৈতিক আশ্রয় পেতে যাচ্ছেন? এ নিয়েও ভারত এখনো কিছু বলেনি। ভারতের চোখে এই মুহূর্তে শেখ হাসিনা একজন গেস্ট, বাট আন্ডার কমপালশন! অর্থাৎ তিনি রাষ্ট্রের একজন সম্মানিত অতিথি; যাকে বিশেষ পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়েছে। 
ভারতে আসার পর পর শেখ হাসিনা যাতে প্রয়োজনে তৃতীয় কোন দেশে সফর করতে পারেন, এই জন্য দেশটির সরকার তাকে ‘ট্র্যাভেল ডকুমেন্ট’ (টিডি) দিয়েছে।

 

কূটনীতিতে ‘হাসিনা ইস্যু’, প্রশ্ন খোদ ভারতেই, তবে...

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত অজয় বিসারিয়া মনে করেন, কংগ্রেস বা বিজেপি নয়, দিল্লির জন্য যথাযোগ্য মর্যাদায় শেখ হাসিনাকে ভারতে রাখা ছাড়া দ্বিতীয় কোন রাস্তা নেই! যদিও বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনাকে ভারতে থাকতে দেওয়াটা দিল্লির জন্য একটা ‘ডেলিকেট ডিলেমা’ বা খুব স্পর্শকাতর দ্বিধার বিষয়। কূটনৈতিক মহল বা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা দিল্লির এই সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দেন এভাবে- আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের কারণেই সঙ্কটের মুহূর্তে শেখ হাসিনার পাশে তাদের দাঁড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত: এত ঘনিষ্ঠতার পরও শেখ হাসিনা প্রত্যাখ্যাত হলে আগামী দিনে দক্ষিণ এশিয়া বা নেইবারহুডের কোন দেশের কোন নেতাই ভারতের বন্ধুত্বে ভরসা রাখতে পারবেন না। সে করণেই পুরনো বন্ধুত্বের মর্যাদা দেওয়ার সবচেয়ে সম্মানজনক রাস্তা হলো, শেখ হাসিনাকে রাষ্ট্রীয় অতিথির সম্মান দিয়ে যতদিন দরকার, ততদিন ভারতেই রেখে দেয়া। দিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্ক আইডিএসএ-র সিনিয়র ফেলো স্মৃতি পট্টনায়কের ভাষ্য মতে, শেখ মুজিবের হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৫ সালে শেখ হাসিনা যখন সপরিবার ভারতে আশ্রয় পেয়েছিলেন তখনও কিন্তু টেকনিক্যালি তাকে পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম দেওয়া হয়নি বরং পরিচয় গোপন রেখে তাকে রাষ্ট্র একজন অতিথি হিসেবেই রেখেছিল। সেই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সেই ঘটনার প্রায় অর্ধশতাব্দী পর আজকের নরেন্দ্র মোদি সরকার ঠিক একই রকম পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে ইঙ্গিত দেন তিনি। তবে ওই কূটনীতিক মনে করেন, ১৯৭৫ থেকে '৮১ প্রায় ছ’বছর যেভাবে ছদ্মপরিচয়ে ও মিডিয়ার নজর এড়িয়ে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের দিল্লিতে রাখা সম্ভব হয়েছিল আজকের যুগে বাস্তব কারণেই তা হয়তো সম্ভব হবে না! কিন্তু দিল্লিতে শেখ হাসিনার উপস্থিতি যে ভারত ও বাংলাদেশের নতুন সরকারের মধ্যে সম্পর্কে অস্বস্তির উপাদান হয়ে উঠতে পারে, এটা বহু পর্যবেক্ষকই এখন মানেন। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সের অধ্যাপক ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির লেখক-গবেষক অবিনাশ পালিওয়ালের মতে, ভারতেই যদি শেখ হাসিনা থেকে যান তাহলে সেটা হয়তো দু’দেশের সম্পর্কে ডিল-ব্রেকার হবে না, কিন্তু দ্বিপাক্ষিক কূটনীতিকে তা জটিল করবেই! তার মতে, হাসিনার বিরুদ্ধেই তো বাংলাদেশে অভ্যুত্থান হলো, তিনিই যদি ভারতে আশ্রয় পান তাহলে সেটা দুই দেশের সম্পর্কে অবশ্যই অস্বস্তি বয়ে আনবে। সেই লক্ষণ আমরা এরইমধ্যে দেখতে পাচ্ছি। আর সেই আশ্রয় যদি ঘটা করে হয়, তাহলে অবশ্য কূটনৈতিক জলঘোলা হবে। দিল্লির জেএনইউ-তে সাউথ এশিয়া স্টাডিজের অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদ্বাজ মনে করেন- ভারতে শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়ার আর একটা বড় সুবিধা হলো- তিনি এই স্বীকৃতিটা পেলে তাকে ‘প্রত্যর্পণ’ করার বা বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার যে কোন অনুরোধ শুধু সেই যুক্তিতেই ফেরানো যাবে। তবে অসুবিধার দিকটা হলো, শেখ হাসিনা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় পেলে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অবধারিতভাবে তিক্ত হবে। বাংলাদেশে একটা শ্রেণির মানুষের মধ্যে ভারত-বিরোধী মনোভাব হয়তো ইন্ধন পাবে। যেহেতু বর্তমান বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ ও ‘স্টেক’ শত শত কোটি টাকার-তাই দিল্লি সেই ঝুঁকিটা আগ বাড়িয়ে নেবে কি না, সেটা একটা এখন দেখার বিষয়! স্মরণ করা যায়, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) গত ১৭ই অক্টোবর ‘ফেরার’ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ারা জারি করেছে এবং বাংলাদেশ সরকারও জানিয়েছে, তারা এই নির্দেশ বাস্তবায়নে দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। যদিও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গত বৃহস্পতিবারের ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেছেন, শেখ হাসিনাকে ফেরৎ চাওয়ার কাজে এখনো তার দপ্তর কোন তৎপরতা শুরু করেনি। দিল্লির মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালও জানিয়েছেন তারা বাংলাদেশে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির রিপোর্ট দেখেছেন। কোন অনুরোধ এখনো পাননি।

শেষ কথা
এই নিবন্ধ পাঠকের গোচরে থাকা অবস্থায় উপরুল্লিখিত অনেক কিছুতেই পরিবর্তন আসতে পারে। বিশেষ করে ৯ই ডিসেম্বর সোমবার ঢাকায় ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিক্রিম মিশ্রি’র প্রথম সফর এবং সেদিনই পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক (ফরেন অফিস কনসালটেশন) হওয়ার কথা। জানা গেছে আনুষ্ঠানিক আলোচনার আগে দুই সচিব কিছুটা সময় একান্তে কথা বলবেন। দিল্লির আগ্রহেই সচিবদ্বয়ের ওয়ান টু ওয়ান বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা। একদিনের ওই সফরে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তার পৃথক সৌজন্য সাক্ষাতের সূচি রয়েছে। রাজনীতি এবং কূটনীতির রসায়ন স্বতন্ত্র। আলোচনার আগে বা পরে নতুন সিদ্ধান্ত কিংবা ঘোষণা আসা অমূলক নয়। তবে এটা ঘোষণা হোক বা না হোক টানাপোড়েন সত্ত্বেও দিল্লির বিদেশ সচিব যখন আসছেন, তখন শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ তথা বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কোন না কোন ফর্মে আলোচনা হবেই, এটা প্রায় নিশ্চিত।

এক্সক্লুসিভ'র অন্যান্য খবর