লন্ডন বৈঠকে নির্বাচনের সময় নিয়ে সমঝোতার আভাস পাওয়ার পর বিএনপি’র নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন। নির্বাচনী ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছানো নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ও সংকট ছিল তা এই বৈঠকের মাধ্যমে কেটে গেছে। এই বৈঠকের আগে নির্বাচনের ট্রেন ছিল গন্তব্যহীন। বৈঠকের বার্তা পাওয়ার পর নির্বাচন নিয়ে তৈরি হয়েছে চাঞ্চল্য। নেতাকর্মীদের মধ্যে বেড়েছে কনফিডেন্স। নির্বাচনী প্রস্তুতিও প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলে মনোনয়নপত্র বিতরণ করবে বিএনপি। এরপরে মনোনয়নপত্র বাছাই এবং প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে। যদিও এখন পর্যন্ত ভোটের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে কোনো দিকনির্দেশনা দেয়নি সরকার। ওদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর আস্থা রেখে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। নির্বাচন নিয়ে সরকারের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করবে দলটি।
বিএনপি’র সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বৈঠকের আগে নির্বাচন নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। তবে বৈঠকের বার্তার পর বিএনপি’র নেতাকর্মীরা এখন আশার আলো দেখছেন। দেশে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। বিএনপি’র সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ভোটের প্রচারণায় কাজ শুরু করেছেন। তারা মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। প্রতিটি আসনে বিএনপি’র মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রায় তিন থেকে চারজন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সূত্রটি জানায়, মনোনয়ন পেতে তারা লবিং-তদবির করছেন। নির্বাচনী এলাকায় প্রতিনিয়তই দিচ্ছেন শোডাউন। এ ছাড়া মনোয়নপ্রত্যাশীরা ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টারও টাঙিয়েছেন। ওদিকে লন্ডন বৈঠকের আগে রাজনীতি ছিল গন্তব্যহীন। চলেছে দোষারোপের রাজনীতি। নির্বাচনী ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি-দাওয়া ছিল না। এখনো কয়েকটি দল দাবি-দাওয়া জানাচ্ছে। লন্ডন বৈঠক নিয়েও তুলছে নানা প্রশ্ন।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ‘জনতার চোখ’কে বলেন, বিএনপি’র সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নির্বাচনের অংশ। দলকে আরও বেশি শক্তিশালী করতে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করা হচ্ছে। এসবই নির্বাচনকেন্দ্রিক।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ‘জনতার চোখ’কে বলেন, জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের কাজ শুরু করবো। তবে আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে।
বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ‘জনতার চোখ’কে বলেন, বিএনপি অনেক আগে থেকেই নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হলে মনোনয়নপত্র ছাড়া হবে। এরপরে মনোনয়নপত্র বাছাই এবং প্রার্থীদের সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।
গত ১৩ই জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে ঐতিহাসিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে তারেক রহমান আগামী রমজানের আগে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব করেন। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে রমজানের আগের সপ্তাহেও নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠকে নির্বাচনের বার্তা পাওয়ার পর দেশে বইছে ভোটের হাওয়া। বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী বাছাই শুরু না করলেও ভেতরে ভেতরে নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজ চলছে। এখন দলগতভাবে এখন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ভোটের তারিখ ঘোষণার পর জোটগতভাবে নাকি সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বলে বিএনপি ও সমমনা দলসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। অন্যদিকে লন্ডনে ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতি প্রদানকে রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে মনে করছে জামায়াতে ইসলামী। এর মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন বলেও অভিযোগ দলটির। এমনকি এটা সরকারের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে বলেও দাবি জামায়াতের। ওদিকে লন্ডন বৈঠকে বিচার ও সংস্কার যতটুকু না গুরুত্ব পেয়েছে তার চেয়ে বেশি নির্বাচন গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে মনে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এটাকে অত্যন্ত হতাশাজনক বলেও মনে করছে দলটি।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার নির্বাচনের কথা বলেছে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলনরত প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলও নির্বাচন প্রত্যাশা করছে। সেই লক্ষ্যে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে।
ওদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া দল আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দলটির রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ এবং নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনও স্থগিত রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দলটি আর নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে না বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এবিষয়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা তাদের পদক্ষেপকে সমর্থন ও স্বাগত জানিয়েছি।
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, আওয়ামী লীগকে নিয়ে বিএনপি মাথা ঘামাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের আর রাজনীতি নেই। গণহত্যার দায়ে তাদের কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। বিচার শেষ না পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। আর নির্বাচনের আগে বিচার শেষ না হলেও তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না।