নির্বাচনে রাজনৈতিক দলই হচ্ছে আসল খেলোয়াড়। কমিশনের কাজ হচ্ছে নির্বাচনের মাঠ লেভেল করে দেয়া। সেখানে কমিশন থাকবে রেফারির ভূমিকায়। আর নির্বাচনে কারা আসবে বা আসবে না তার ফয়সালা হবে আইনি লড়াইয়ে নতুবা রাজনীতির মাঠে। নির্বাচন কবে অনুষ্ঠিত হবে তা বলার সময় এখনো আসেনি। তবে ন্যূনতম সংস্কার শেষ করেই নির্বাচনের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। মানুষ মুখিয়ে আছে ভোটের জন্য। বিগত পনের/ষোল বছর মানুষ ভোট দিতে পারেনি। আর আমাদের আস্থার জায়গা হচ্ছে, রাজনৈতিক দালগুলোর সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দীর্ঘ লড়াই। সুবিধার দিক হচ্ছে, এখন কোনো রাজনৈতিক দল সরকারে নেই। কাজেই আমাদের পক্ষেই সম্ভব একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দৃষ্টান্ত স্থাপনের। এ এম এম নাসির উদ্দীন সিইসি হিসেবে শপথ নেয়ার পর প্রথম মুখোমুখি হন ‘জনতার চোখ’-এর। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে তিনি নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার দিক তুলে ধরেন। হেমন্তের পরন্ত বিকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশনে সিইসি’র দেয়া সেই সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত ‘জনতার চোখ’-এর পাঠকদের জন্য-
প্রশ্ন: একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়েছেন। আগের কমিশনকে বিতর্কের মধ্যেই বিদায় নিতে হয়েছে। আপনি দায়িত্ব নেয়ার পর জনগণের প্রত্যাশা বেড়েছে বহুগুণ। সার্বিক প্রেক্ষাপটে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ অনুভব করছেন?
সিইসি: আপনি যথার্থই বলেছেন। তবে আমি দায়িত্বটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি না, বরং সুযোগ হিসেবে দেখছি। আমি মনে করছি শেষ বয়সে এসে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি সুযোগ আমার এসেছে-দেশের জন্য কিছু করার। বিগত ১৫ থেকে ১৬ বছর মানুষ তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। এক্ষেত্রে মানুষের প্রত্যাশা হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন। সেই প্রত্যাশা পূরণের সুযোগ আল্লাহ আমাকে দিয়েছেন। সুতরাং, এই চ্যালেঞ্জটাকে আমি সুযোগ হিসেবেই দেখছি এবং সেটি মোকাবিলার জন্য মানসিকভাবে আমি প্রস্তুত।
প্রশ্ন: নির্বাচনের একটি বড় স্টেকহোল্ডার রাজনৈতিক দল। দলগুলোকে নির্বাচন কমিশনের আস্থায় আনার বিষয়টি কীভাবে সামাল দিবেন?
সিইসি: দেখুন, এখানে আমার একটা বিশাল সুযোগ আছে। সেটা হলো-গত ১৫ থেকে ১৬ বছর ধরে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের অধিকারের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। তারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। ফলে তারাই তো জাতির কাছে ওয়াদাবদ্ধ যে, আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এমন একটি পরিবেশ চাই- যেখানে মানুষ ভোট দিতে পারে। তাদের এই ওয়াদা বাস্তবায়নের জন্যই আমরা কাজ করছি। সুতরাং তারা তো আমাদের থেকে আলাদা থাকবে না, আমরা তাদেরকে অবশ্যই পাশে পাবো। সেই সুযোগটা আগে ছিল না। আগে যারা সরকারে ছিলেন তারা তো সত্যিকার অর্থে অন্য দলকে কাছে টানতে চায়নি। এখন তো সেইরকম না। সবাই চাচ্ছে আমরা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এই সুযোগটা আমি পেয়েছি। যেটা আমার জন্য বিরাট অ্যাডভানটেজ।
প্রশ্ন: আন্দোলনের মধ্যদিয়ে বিতর্কিত সরকারকে বিদায় নিতে হয়েছে। নানা কারণে তারা জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, এটা তো দৃশ্যমান। কিন্তু নির্বাচনের সময় হলে তো আলোচনা থাকবে সেই দলও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা। বিএনপিও বলছে, সকল দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চায়। বিষয়টি নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?
সিইসি: আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী কিছু দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে দেয়ার বিষয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক ও দাবি-দাওয়া চলছে। মিছিল-মিটিংও করা হচ্ছে যে, তাদেরকে যেন ভোটে অংশগ্রহণের সুযোগ না দেয়া হয়। আমার কাছে ডকুমেন্ট নেই, তবে আমি শুনেছি অনেকে মামলা করার কথাও ভাবছেন। মিডিয়াতে দেখছি আইনকানুনও বোধহয় সংশোধন হচ্ছে যে, যারা ফ্যাসিস্ট সরকার, মানুষের গুম-খুনের জন্য দায়ী, তারা যেন নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে। এ বিষয়ে আমার পক্ষ থেকে আগাম কিছু বলা ঠিক হবে না। আমি অপেক্ষা করে দেখতে চাই, এটার ফয়সালা কোথায় গিয়ে হয়। যেহেতু আলোচনা হচ্ছে, সুতরাং ফয়সালা তো হবেই। যদি আইনগতভাবে কোর্ট থেকে নির্দেশনা আসে, তাহলে তো আমাকে সেটি অনুসরণ করতেই হবে। এ ছাড়া রাজনৈতিকভাবে যদি তারা একটি ফয়সালায় আসে, সেটি বিবেচনায় নিতে হবে। এগুলো বিবেচনায় নিয়ে আমরা আলোচনা করবো। যেভাবে হলে ভালো হয়- সেটাই করবো।
প্রশ্ন: মানে, এই ফয়সালাটা রাজনৈতিক বা আইনের মাঠে-সেটি দেখার অপেক্ষায় আছেন?
সিইসি: হ্যাঁ, সেটা দেখার অপেক্ষায় আছি।
প্রশ্ন: বিগত তিনটি নির্বাচনে বিএনপি’র মতো একটি বড় দলের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা বা বাধা লক্ষ্য করা গেছে। নির্বাচনগুলো ছিল বিতর্কিত। যদি আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় দল নির্বাচনে অংশ না নিতে পারে, তাহলে আগামী নির্বাচনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায় কিনা? সন্দেহের জায়গাটা এখানেই।
সিইসি: সন্দেহের জায়গাটা তো আছেই। সেই বিতর্কটাই তো এখন চলছে। বিভিন্ন দিক নিয়েই আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। এমনকি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে কমিশন গঠিত হয়েছে। তারাও তো একটি পরামর্শ দিবেন। হয়তো তারা আমাদের সঙ্গেও আলোচনা করবেন। এই বিষয়গুলো একটি পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত, আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ বা তাদের দোসরদের অংশগ্রহণ নিয়ে আমাদের পক্ষ থেকে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
প্রশ্ন: নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। না ভোটের বিধান ফিরিয়ে আনা, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সরাসরি ভোটের মাধ্যমে করা, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন? আপনার কাছে কি মনে হয়?
সিইসি: নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে বিভিন্ন সুপারিশ করা হচ্ছে, মিডিয়াতে দেখেছি। আমি বলে দিয়েছি যে, যত ধরনের সুপারিশ আসছে সেগুলো কম্পাইল করতে। এ ছাড়া সংস্কার কমিশনে যারা কাজ করছেন, তারাও কিছু সুপারিশ দেবেন। সকল সুপারিশ কম্পাইল করে আমরা বসবো। সকলকে নিয়েই আমরা চলতে চাই।
প্রশ্ন: নির্বাচনের টাইমলাইন নিয়েও কথা হচ্ছে। ২০২৫ সালে হবে, নাকি ২০২৬ সালের মাঝামাঝি? বিএনপি তো নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইছে?
সিইসি: নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের উপর আমাদের প্রস্তুতি নির্ভর করবে। যদি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সরাসরি হওয়ার সিদ্ধান্ত আসে, তাহলে আমাদের এক ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আবার যদি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হয় তাহলে আরেক ধরনের প্রস্তুতি নিতে হবে। সুতরাং এগুলো ফয়সালা না হলে আমরা পারছি না। কিন্তু সংস্কারের মধ্যে না ঢুকে আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু করা যায়, আমরা তা শুরু করেছি। যেমন আমরা ভোটার তালিকা হালনাগাদ শুরু করেছি। নির্বাচন যেভাবেই হোক না কেন ভোটার তালিকা তো লাগবেই। আমরা ৬ মাসের মধ্যে ঘরে ঘরে গিয়ে তালিকা তৈরি করবো। আমাদের কাছে রিপোর্ট আছে, এখানে অনেক ফেইক ভোট আছে। এ ছাড়া কারও বয়স এখন যদি ১৬ বছর হয় এবং ভোটের দিন যদি তাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয় তাহলে তাদের ভোট দেয়ার অধিকার জন্মায়। তারা যেন ভোট দিতে পারে সেই চেষ্টাও করা হবে। যদিও এই বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। আমরা পরীক্ষা করছি।
মানুষের ভোটের প্রতি অনীহা তৈরি হয়েছে। আমি নিজেই তো দু’বার ভোট দিতে যাইনি। কেননা, গিয়ে কী হবে? আমি গেলেও যা হবে, না গেলেও তাই হবে। এই যদি অবস্থা হয়, তাহলে মানুষ ভোট দিতে যাবে কেন? এজন্য আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে সবাইকে উৎসাহিত করবো যে, আপনারা ভোট দিতে আসবেন, নতুন ধরনের একটি ব্যবস্থা আমরা করছি। যাতে আপনার ভোট আপনিই দিতে পারেন। আমরা সংবিধান অনুযায়ী কাজ করবো। সংবিধান সংস্কার কমিশন কাজ করছে। কেউ কেউ বলছে সরকারের মেয়াদ ৪ বছর হবে। কিন্তু আমরা তো পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচন করি। সেক্ষেত্রে যদি ৪ বছর মেয়াদ হয়, তাহলে আমাদের প্রস্তুতিও তো সেভাবে নিতে হবে। এ ছাড়া ‘না’ ভোটের বিধান ফিরিয়ে আনার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা চলছে। এই সংস্কারগুলো যদি সংবিধানে আনা হয়, তাহলে তো আমাদের সেভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। এজন্যই এ বিষয়গুলোর ফয়সালা দরকার।
প্রশ্ন: তাহলে সংস্কারের ফয়সালার উপরেই নির্ভর করছে আগামী নির্বাচন কীভাবে হবে?
সিইসি: সব সংস্কার না। ভোটের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সংস্কারগুলো তো করতে হবে। সংস্কার তো চলমান প্রক্রিয়া। এটা আজীবন চলতেই থাকবে। স্থানীয় সংস্কার কমিশন কাজ করছে। তারা যদি বলে ইউনিয়ন বা উপজেলা পরিষদের মেম্বার হতে হবে এত জন। এই ফয়সালাটা তো সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট থেকেই আসবে। সুতরাং আমাদের অনেক রিলেটেড এরিয়া আছে। ওই বিষয়গুলো ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের তারিখ নিয়ে কথা বলা সম্ভব নয়। প্রধান উপদেষ্টার অফিস থেকে ঘোষণা এসেছে, নির্বাচনের তারিখটা উনারাই ঘোষণা করবেন। আমরা যদিও শিডিউলসহ যা যা করার দরকার তাই করবো।
প্রশ্ন: দ্রুত নির্বাচনের যে তাগাদা, সেই ঢেউটা তো আপনার পর্যন্তও আসে?
সিইসি: অবশ্যই আসে, ঢেউয়ের ধাক্কায় আমি ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ শুরু করে দিয়েছি।
প্রশ্ন: এই কমিশন গঠন হওয়ার পরও কিন্তু রাজনৈতিক চাপ শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকটি দল কমিশন গঠনের প্রক্রিয়াকে যথার্থ মনে করছে না এবং প্রত্যাখ্যানও করেছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?
সিইসি: দুই-একটি পত্রিকায় বিষয়টি দেখেছি। তবে যখন তারা দেখবে সঠিকভাবে কাজ করা হচ্ছে, তখন তারা আমাদের পক্ষেই চলে আসবে। কেননা, যারা বিরোধিতা করছেন, তারাও দেশের মঙ্গল চান। আরেকটি বিষয় হলো- টেলিভিশনের স্ক্রলে নাম না দেখার আগে আমি জানতাম না যে, আমাকে সিইসি করা হয়েছে। ১৫ থেকে ১৬ দিন আগে আমাকে এক বন্ধু ফোন করে বললেন, একটি মিডিয়ায় আসছে যে, তোমার নাম দিয়েছে বিএনপি। আমি বললাম, তাই নাকি? সে তখন আমাকে ক্লিপ পাঠায়, তখন দেখলাম বিএনপিসহ আরও অন্যান্য রাজনৈতিক দল নাম দিয়েছে। কিন্তু কার নাম কোথা থেকে দিয়েছে এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। সুতরাং এখানে কেউ একজন আমাকে পিক অ্যান্ড চুজ করে বসিয়ে দিয়েছে, দিজ ইজ নট দ্যাট। খুবই স্বচ্ছ পদ্ধতিতে আমরা এখানে এসেছি। ফলে যারা এটার বিরোধিতা করছেন, তারা যখন দেখবেন আমরা সঠিকভাবেই কাজ করছি, আন্তরিকতার অভাব নেই, আমাদের কাজ সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রের জন্য নিবেদিত। তখন দেখবেন তারাও আমাদের পক্ষে কাজ করা শুরু করেছে।
প্রশ্ন: আমরা প্রত্যাশা করি আপনার এই আশাবাদের জায়গাটা যেন মজবুত হয়, আপনি যেন সফল হন।
সিইসি: ইনশাআল্লাহ, আপনারা সমর্থন করলে হবে। আমি সাংবাদিক ভাইদের বলেছি, দেখুন আমরা মানুষ, ফেরেশতা নই। আমাদেরও ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। তবে জেনে রাখুন, ইচ্ছা করে কোনো ভুল আমরা করবো না। শুধু ভুলগুলো লিখলে তো আমাদের প্রতি অবিচার করা হবে। এজন্য আমাদের ভালো কাজগুলোও একটু লিখবেন। ভালো কাজের প্রশংসা করা হলে আমাদের কাজ করার আগ্রহ বাড়বে, উৎসাহিত হবো।
প্রশ্ন: নির্বাচন কমিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সিভিল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। এবং এ নিয়ে বিতর্কও আছে। এ নিয়ে কোনো ধরনের চিন্তাভাবনা আছে কিনা?
সিইসি: কোনো মানুষ দুশ্চরিত্র হয়ে জন্মায় না। মায়ের পেট থেকে বের হওয়ার পর একই ভাষায় হাসে এবং কাঁদে। পরিবেশের কারণে ধীরে ধীরে বদলে যায়। একই বাড়ির দুই ভাই, একজন যদি আর্মিতে চাকরি করে এবং অন্যজন যদি মাদ্রাসায় ইমামতির দায়িত্ব পালন করে তাহলে তাদের চলন-বলন, কথাবার্তা ভিন্ন হয়। আমাদের সার্ভিসে যেগুলো হয়েছে সেটি হলো-উনারা জানেন যে, এই আকাম-কুকামগুলো করলে প্রমোশন হবে, পোস্টিংটা হবে। আমি আরেকজনকে ডিঙিয়ে উপরে উঠে যেতে পারবো। আর না করলে আমার চাকরি যাওয়ারও একটি সম্ভাবনা আছে। সুতরাং, সামনে মুলাও ঝুলানো আছে, শাস্তিরও ব্যবস্থা আছে। মুলা দেখে মানুষ প্রলোভনে পড়ে এবং এই সমস্ত কাজে শরিক হন। কিন্তু যখন দেখবে আমার ইমাম, অর্থাৎ যিনি পরিচালনা করছেন উনার নিয়ত ঠিক আছে। ভালো কাজের মাধ্যমে পোস্টিং নিতে হবে, প্রমোশন পাওয়া যাবে তাহলে দেখবেন সোজা হয়ে গেছে। এই লোকগুলোই তো ১৯৯১ এবং ২০০১ সালে ফেয়ার নির্বাচন করেছে। করলো কেমনে? একই তো ব্যুরোক্রেসি। তারা জানতেন যে, ফেয়ার ইলেকশন না হলে তাদের মুসিবত আছে।
প্রশ্ন: আপনার সামনে তো সেইরকই একটা চ্যালেঞ্জ। যে কমিশনের কাছে সকল মানুষের একটা আস্থা। সেই আস্থার জায়গা থেকে চ্যালেঞ্জ দেখছেন কি-না?
সিইসি: আমরা সিরিয়াসলি ক্যাম্পেইনে যাবো। ভোট দিতে যাওয়ার আগেই ভোট শেষ- সেটি আর হবে না। আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে বলবো “ও জামানা চলা গ্যায়া”। আপনি ভোটার হন। আপনার ভোট আপনিই দিতে পারবেন। সেই ব্যবস্থা আমরা করবো। আরেকটি বিষয় হলো- আগে তো সরকারি দল ছিল। তারা মুখে বলেছে সকল দলকে নির্বাচনে চায়। কিন্তু ভেতরে ছিল গোলমাল। অন্তর থেকে চেয়েছে- তারা (অন্যান্য দল) যত দূরে থাকবে ততই ভালো। এখন সরকারি দল না থাকায় আমাদের তো সেই চাপ নেই। এটা আমাদের জন্য বিরাট অ্যাডভানটেজ। আমি রাজনৈতিক কোনো চাপে নেই, সরকারি রাজনৈতিক চাপ যেটাকে বলে।
রাজনৈতিক চাপ বলতে বিভিন্ন অপজিশন পলিটিক্যাল পার্টি বিভিন্ন কথাবার্তা বলছে, সেগুলো তো শুনি। কেউ গালি দিচ্ছে যে ঠিক হয়নি। আগের আইনে সিইসি নিয়োগ হয়েছে। এগুলো থাকবেই, মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু সরকারি দল থাকার কারণে যে এক ধরনের চাপ তৈরি হয়, যেটা মারাত্মক চাপ। যেটার জন্য রাতে ভোট, ডামি ভোট হতে হয়, ১৫৩ জনকে বিনা ভোটে জিততে হয়। এগুলো তো সরকারি দল থাকার কারণেই হয়েছে। এখন সেই জিনিসটা নেই।
প্রশ্ন: আপনি হাসতে হাসতে শপথ নিয়েছেন। এই চ্যালেঞ্জটা তো নিচ্ছেন যে, আপনি হাসিমুখেই ফিরে যাবেন?
সিইসি: সেই প্রত্যাশা ও বিশ্বাস আমার আছে। আমি হাসিমুখেই যেতে চাই। হাসিমুখে যেতে যা যা করণীয় আমি তা তা করবো ইনশাআল্লাহ। জনগণের প্রত্যাশাটা পূরণ করতে পারলে হাসিমুখে না যাওয়ার তো কোনো কারণ নেই।
প্রশ্ন: রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কবে থেকে বসা শুরু করবেন?
সিইসি: সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্ট আগে আসুক। উনারা সরকারের সঙ্গে বসে আলোচনা করবেন। কী ফয়সালা করে দেখি। তারপরে আমাদের দিক থেকে উদ্যোগটা নিতে হবে। উনারা তো আবার কিছু পরিবর্তন আনছে। এই পরিবর্তনগুলো আবার রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে নেবে, এগুলোও তো আমাদের বুঝতে হবে। রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করার কোনো চিন্তা আমাদের মধ্যে নেই। তারাই প্রধান খেলোয়াড়। আমাদের কাজ হলো নির্বাচনের মাঠকে লেভেল করে দেয়া। আমরা থাকবো রেফারির ভূমিকায়। আইন অনুযায়ী যাতে সবাই খেলতে পারে সেটাই আমাদের দায়িত্ব। উনাদেরকে বাদ দিয়ে তো কোনো কিছু করার সুযোগ নেই।
প্রশ্ন: ভোটারদের উদ্দেশ্যে কি বলবেন?
সিইসি: ২০১৪ সালে যখন দেখলাম বিনা ভোটে ১৫৩ জন নির্বাচিত হয়ে গেল তখন আমি ভোট দিতে যাইনি। তবে ২০১৮ সালে ভোট দিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কেন্দ্রে কোনো ভোটার ছিল না। ২০২৪ সালে ভোট দিতে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। সুতরাং, বলতে গেলে আমি নিজেও ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমি চাই- এমন পরিস্থিতি যেন আর তৈরি না হয়। মানুষ যাতে আবারো ভোট দিতে আগ্রহী হয়। এখানে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করুন। আমরা যখন ভোটার তালিকা করতে ঘরে ঘরে যাবো, তখন বলবো-ভোটার হন, ভোট দিতে আসুন। আগের মতো সিস্টেমে ভোট হবে না। নতুন নির্বাচন কমিশন কমিটেড। তিনি বলেন, ৫ থেকে ৬ শতাংশ ভোট পড়ে। যদিও ৪১ বা ৪০ শতাংশ তারা দেখায়। এই ৫ শতাংশকে যদি আমি ৬০ শতাংশে আনতে চাই তাহলে, হিউজ টাস্ক। এখানে গণমাধ্যমের একটি বড় ভূমিকা দরকার।
একনজরে সিইসি এএমএম নাসির উদ্দীন
সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীনের বাড়ি কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়, জন্ম ১৯৫৩ সালের ১লা জুলাই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করার পর ১৯৭৭ সালে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন শিক্ষক হিসেবে। দুই বছর পর তিনি সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। প্রশাসন ক্যাডারের এ ব্যাচটি বিসিএস ৭৯ ব্যাচ হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি তথ্য সচিব, জ্বালানি সচিব, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি অবসরে যান ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে।
৪ নির্বাচন কমিশনার: নতুন কমিশনে নির্বাচন কমিশনার সাবেক অতিরিক্ত সচিব আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমানেল মাসুদ, সাবেক যুগ্ম সচিব বেগম তহমিদা আহমদ এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
সার্চ কমিটির প্রস্তাব করা নামের তালিকা থেকে প্রেসিডেন্ট এই পাঁচজনকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বেছে নেন।