দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রমাগত বন্ধু হারাচ্ছে ভারত। বাড়ছে তাদের শত্রুর সংখ্যা। বৈশ্বিক ক্ষেত্রে ভারতের উত্থান এবং আঞ্চলিক ক্ষেত্রে সম্পর্কের অবনমন বড় রকম প্রভাব ফেলছে। বিশ্বের সুপারপাওয়ারদের মধ্যে অন্যতম ভারত। বিশ্বমঞ্চে তারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ। জি-২০, ব্রিকস, কোয়াড সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের জন্য ভারত পাওয়ারহাউজ, গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এশিয়া বা দক্ষিণ এশিয়ায়? প্রতিবেশী প্রথম নীতি অবলম্বন করলেও দৃশ্যত একের পর এক বন্ধু হারাচ্ছে দেশটি। পাকিস্তানের সঙ্গে তার চিরশত্রুতা। ২০১৯ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি তখনকার জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সন্ত্রাসী হামলার পর সেই শত্রুতা ভয়াবহ রূপ নেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বন্ধ হয়ে যায় ইসলামাবাদে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা বিষয়ক সার্কের সম্মেলন। তাতে সায় দেয় বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা সহ আরও কিছু দেশ। কার্যত তখনই সার্ককে শ্বাসরোধ করে মমি বানিয়ে ফেলা হয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক চিরবৈরী। এ কথা সবাই জানেন। কিন্তু ভারত তার চারপাশে যেসব প্রতিবেশী আছে তাদের সঙ্গে ক্রমশ সম্পর্ক হারাচ্ছে। একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো মালদ্বীপ। সেখানে গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘ইন্ডিয়া আউট’ ইস্যুতে প্রচারণা চালিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন মোহাম্মদ মুইজু। তিনি ঘোর চীনপন্থি। নির্বাচিত হওয়ার পর তার দেশ থেকে ভারতীয় সেনাদের প্রত্যাহার করে নেয়ার আল্টিমেটাম দেন। সে অনুযায়ী ভারত সেনাদের প্রত্যাহার করে নেয়। তারপর থেকে মোহাম্মদ মুইজুর সরকার, বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ভারত সফরে এলেও তাদের যে চীনপ্রীতি তা থেকে সরাতে পারেনি ভারত। ভারতপন্থি সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ হালে পানি পেলেন না। মালদ্বীপ চলে গেছে চীনের কব্জায়। তারা ভারতের সঙ্গে যে সম্পর্কটুকু ধরে রেখেছে, সেটা প্রতিবেশী হলে করতেই হয়। আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ গণির সময় সেখানে ভারতের সরব উপস্থিতি ছিল। কিন্তু তালেবানরা ক্ষমতায় আসার পর সেখানে ভারতের কর্মকাণ্ড নেই বললেই চলে। এসব ইস্যুতে সি রাজা মোহন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক মন্তব্য প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের ২৬শে ডিসেম্বর লিখেছেন- ভারত কি উপমহাদেশ হারিয়েছে? দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত যে ক্রমশ পরাজিত হচ্ছে তা জোরালো হয়ে ওঠে দিল্লির নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে। উদাহরণ হিসেবে তিনি মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনা প্রত্যাহারের প্রসঙ্গ সামনে আনেন।
আঞ্চলিক পর্যায়ে নিজেদের ওজনদার দেখাতে ভারতের ভূমিকাকে বড় করে দেখাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে ‘নেইবারহুড ফার্স্ট’ বা প্রতিবেশী প্রথম নীতি ঘোষণা করে। কিন্তু সেই ঘোষণা অনুযায়ী ফল আসছে না। লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন ভারত যখন এই নীতি গ্রহণ করেছে, তখন ক্রমবর্ধমান সংখ্যক প্রতিবেশী দেশ বিকল্প জোট বা দেশ খুঁজছে। এক্ষেত্রে বিশেষ করে চীনের কথা উল্লেখ করা যায়। এসব থেকে আমাদেরকে বিতর্কে নিয়ে যায়- দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত কী নিজেকে হারিয়ে ফেলছে। এক্ষেত্রে সবিশেষ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের কথাই ধরা যাক। ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত আওয়ামী লীগের প্রতি সংবেদনশীল। একথা সবাই জানেন। কিন্তু তিনি পালিয়ে চলে যাওয়ার পর ভারতের কিছু অংশ যেভাবে সোচ্চার হয়েছে, তাতে মনে হয়- তারা বাংলাদেশকে চায় না। তারা শুধুমাত্র একব্যক্তি বা একদলকে সমর্থন দিয়ে তাদেরকেই ক্ষমতায় দেখতে চায়। এটা নিয়ে ভারতের বহু সাংবাদিক, কলামনিস্ট লিখেছেন- ভারত সরকার সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখছে। এক্ষেত্রে ভারতের সামনে যে ঝুঁকি সৃষ্টি হচ্ছে, সে বিষয়েও তারা সতর্ক করেছেন। কিন্তু সে সব কথা সরকার শোনেনি অথবা শুনেও না শোনার ভান করেছে। আওয়ামী লীগের সময়ে যখন বিশ্বজিৎকে দিনের বেলায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হলো- তখন কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের শুভেন্দু অধিকারী বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা কোনো হিন্দু সম্প্রদায়ের কাউকে টুঁ-শব্দটি করতে শোনা যায়নি। বিশ্বজিৎ কোন সম্প্রদায়ের ছিলেন? তিনি কি হিন্দু সম্প্রদায়ের নন? তাহলে কেন তখন হিন্দু নির্যাতনের অভিযোগ তোলা হয়নি? এ প্রশ্নের সোজা উত্তর। তা হলো তখন ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু এবার ৫ই আগস্টের পর থেকে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের যে অভিযোগ তুলে রাজনীতি, দেশ এবং ভারত উপমহাদেশকে উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছেন শুভেন্দু অধিকারী, তার পক্ষকে সমর্থনকারী বা অন্যরা- তা শুধুই ধ্বংস ডেকে আনবে বলে মনে করছেন অনেকে। শুভেন্দু যে উদ্দেশ্য নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন, তা ব্যর্থ হয়েছে। সামনে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর কথিত নির্যাতন নিয়ে তিনি সোচ্চার হয়েছেন। এটা স্রেফ রাজনীতি তার। সেই ফাঁদে পা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবে ভারত সরকার তাদের মতো তীর্যক বাক্য ব্যবহার করেনি। তারা কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতি দিচ্ছে। সব মিলে দৃশ্যত বাংলাদেশিদের জন্য ভারতে ঘোষিত বা অঘোষিত একরকম নিষেধাজ্ঞা চলছে। তা ভারতের অর্থনীতির জন্য কতোটা লাভজনক। ভারত যদি বাংলাদেশে বাণিজ্য বন্ধ করে দেয়, বাংলাদেশ যদি অন্য বিকল্প খোঁজে তাতে কী ভারতের লাভ হবে? অবজারভেটিভ অব ইকোনমিক্স কমপ্লিসিটি’র তথ্যমতে ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হয়েছে ২০০ কোটি ডলারের পণ্য। অন্যদিকে একই সময়ে বাংলাদেশে ভারত রপ্তানি করেছে ১৩৮০ কোটি ডলারের পণ্য। এ সময়ে ভারত বাংলাদেশের চেয়ে (১৩৮০-২০০)= ১১৮০ কোটি ডলারের পণ্য বেশি রপ্তানি করেছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করলে বা ছিন্ন করলে এই অসম বাণিজ্যের হাট হারাবে তারা। এটা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করা যায়। সেদিকে না গিয়ে আমরা যদি দক্ষিণ এশিয়ায় কীভাবে বন্ধু হারাচ্ছে, শত্রু বাড়াচ্ছে ভারত সেদিকে দৃষ্টি দিতে পারি। ২০২৩ সালে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে দেখা হয় চীন ও ভারতের মধ্যবর্তী প্রতিযোগিতা হিসেবে। শীর্ষ স্থানীয় দু’জন প্রার্থী বিপরীত শিবিরে অবস্থান নেন। তখনকার প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সোলিহ ভারতপন্থি। তার প্রতিদ্বন্দ্বী মোহাম্মদ মুইজু তীব্র চীনপন্থি। তিনি ইন্ডিয়া আউট ঘোষণা দিয়ে নির্বাচিত হন। সেখানেই শেষ নয়। মালদ্বীপের মন্ত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করতে থাকেন। এ বছরের শুরুর দিকে এই ইস্যুটি সারাবিশ্বে সংবাদ শিরোনাম হয়। দিস্তার পর দিস্তা কাগজ শেষ হয় গবেষণায়। ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান এই নির্বাচনে মুইজুর জয়কে বেইজিংয়ের পক্ষে একটি বড় জয় বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন- ‘দিস ইজ মিউজিক টু দ্য ইয়ারস অব বেইজিং’। মালদ্বীপের সঙ্গে ভারত বা ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপ এখনো সম্পর্ক ধরে রাখলেও মালদ্বীপের এই নির্বাচন আঞ্চলিক ক্ষেত্রে ভারতের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানকেই তুলে ধরে। অন্যদিকে মালদ্বীপের মতো ছোট ছোট দেশ ক্রমশ ভারত ও চীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করছে। এর ফলে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশ কঠিন থেকে আরও জটিল হয়ে উঠছে। তবে ভারত অর্থনীতিকে বেইলআউট দেয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে কূটনীতির চাকায় গ্রিজ মাখানোর মতো দেখা যেতে পারে। মালদ্বীপের মতো একই কথা প্রযোজ্য শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে। দীর্ঘদিন ধরে পক প্রণালীতে অবস্থিত কাটচাথিভু দ্বীপ ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ১৯৭০-এর দশকে এই দ্বীপটি শ্রীলঙ্কার কাছে হস্তান্তর করা হলেও এখন পর্যন্ত তা উত্তেজনার একটি ইস্যু হয়ে আছে। বিশেষ করে ভারতের নির্বাচনী রাজনীতির সময় এই ইস্যু গরম হয়ে ওঠে। কারণ, ভারতের তামিলনাড়ুর রাজনীতিকরা নির্বাচনের সময় এই দ্বীপকে তাদের কাছে ফেরত দেয়ার দাবি জানান। এই দ্বীপের চারপাশে শ্রীলঙ্কার জেলে এবং ভারতীয় জেলেদের মাছ ধরা নিয়ে বিরোধ মাঝে মধ্যেই জানান দেয় এই উত্তেজনা। তবে এটা নিয়ে নতুন করে কোনো আলোচনার প্রস্তাব একেবারেই প্রত্যাখ্যান করেছে শ্রীলঙ্কা সরকার। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছে- এই ইস্যু কয়েক দশক আগেই সমাধান হয়ে গেছে। শুধু এটাই নয়, শ্রীলঙ্কায় চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি তাদের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলেছে। চীনের অর্থায়নে শ্রীলঙ্কা বড় বড় অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হাম্বানটোটা বন্দর ও কলম্বো পোর্ট সিটি। এ দু’টি ইস্যুই দিল্লিকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। শ্রীলঙ্কায় চীনের প্রভাবকে কমানোর জন্য ভারত যখন চাপ দিচ্ছে, তখন শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বেইজিং তার ক্ষমতার শিকড়কে আরও গভীরে প্রোথিত করার চেষ্টা করছে। ২০২২ সালে একটি কূটনৈতিক সুযোগ আসে ভারতের সামনে। এ সময় শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি যখন ভেঙে পড়ে, তখন সন্দেহজনকভাবে অনুপস্থিত দেখা গেছে চীনকে। শ্রীলঙ্কা যে ঋণের ফাঁদে পড়েছে তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা করতে তারা দ্বিধাবোধ করে। এই সুযোগটা নিয়ে নেয় ভারত। তারা সেখানে বিভিন্ন রকম কাজে ৪০০ কোটি ডলার নিয়ে এগিয়ে যায়।
ভারত যেভাবে বন্ধু হারাচ্ছে, তা লিখতে গেলে এই লেখা অনেক লম্বা হয়ে যাবে। সংক্ষেপে এখানে তার কিছু অংশ তুলে ধরছি। ভারতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে দেখা হয় নেপালকে। নেপালে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি হয় তার মধ্যে তিনভাগের দুই ভাগই যায় ভারত থেকে। কিন্তু ধারাবাহিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ভুল পদক্ষেপ নেয়ার কারণে ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। নেপালও সেই চীনের দিকে ঝুঁকে যায়। ২০১৫ সালে নেপালে নতুন যে সংবিধান প্রণীত হয়, তাতে মধেষি সম্প্রদায়ের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এই সম্প্রদায়ের সঙ্গে জাতিগত সম্পর্কের কারণে তাদেরকে সমর্থন করে ভারত। নেপালের সঙ্গে বাণিজ্যিক রুটগুলোকে বন্ধ করে দেয়। এর ফলে স্থলবেষ্টিত নেপালের অর্থনীতি ভয়াবহ এক পরিস্থিতির মুখে পড়ে। পরে ওই অবরোধ তুলে নেয়া হলেও ভারত-নেপাল সম্পর্কের যে ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে। এর ফলে চীন থেকে সমর্থন পাওয়ার আশায় এগিয়ে যায় নেপাল। চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ও অবকাঠামো চুক্তি স্বাক্ষর করে। এতে আরও একপেশে হয়ে পড়ে ভারত। এই সম্পর্ককে মেরামতের চেষ্টা করা হয়। এ জন্য ২০১৮ সালে নেপাল সফরে যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু ফল যা ছিল তা-ই থেকে গেছে। উত্তেজনা অব্যাহত আছে। কালাপানি, লিপু লেক এবং নিম্পিয়াধুরা অঞ্চলের সীমানা নিয়ে ভারত ও নেপালের মধ্যে যে উত্তেজনা ছিল সেটা থেকে যায়। ২০১৯ সালে ভারত এসব বিরোধপূর্ণ এলাকাকে নিজেদের দাবি করে একটি রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করে। তখন থেকেই এই উত্তেজনা চলমান।
ওদিকে প্রতিবেশী মিয়ানমার ও ভারত সীমান্ত, মিজোরাম সহ সেভেন সিস্টার্সে যে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো আছে- তাদেরকে নিয়ে ভারতের যথেষ্ট মাথাব্যথার কারণ রয়েছে। চীনের বলয়ে চলে গেছে নেপাল। ভুটানও অনেকটা সেই পথে। পাকিস্তান, আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ভালো নয়। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সাম্প্রতিক যে উত্তেজনা, তাতে ভারতকে সুচিন্তিত পন্থা অবলম্বন করা উচিত। তাদের বোঝা উচিত- বাংলাদেশ মানে একটি দল বা একজন ব্যক্তি নন। বাংলাদেশ মানে একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী। এর সদস্য হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন- সব মত ও পথের মানুষ। এরই মধ্যে কলকাতা, আসাম বা আশপাশের রাজ্যগুলো যেভাবে বাংলাদেশিশূন্য হয়ে পড়েছে- তার প্রেক্ষিতে সেখানকার স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কথা শোনা উচিত প্রশাসনের। একটি মতের প্রতি দুর্বলতা দেখাতে গিয়ে, নিজের দেশে হিন্দুত্ববাদী কার্ড খেলতে গিয়ে ভয়ঙ্কর এক পথে ধাবিত দৃশ্যত ভারত। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার সুচিন্তিত পদক্ষেপ নেবে বলে বিশ্বাস করে বাংলাদেশ।
লেখাটা শেষ করতে চাই সি রাজা মোহনের লেখার কয়েকটি লাইন দিয়ে। ‘ইজ ইন্ডিয়া লুজিং সাউথ এশিয়া? দ্যাটস নট দ্য কোয়েশ্চেন’ শীর্ষক নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, নিজস্ব স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে যথেষ্ট সক্ষমতা আছে ভারতের। সেটা করতে দিল্লিকে অবশ্যই দক্ষিণ এশিয়ায় তার পুরনো ধ্যান-ধারণাকে ত্যাগ করতে হবে। এই উপমহাদেশে অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে যে নাটকীয় বিস্তার ঘটাচ্ছে চীন সেটা ভারতের উদ্বেগের কারণ হওয়া উচিত। কিন্তু এ অঞ্চলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তিকে একটি শক্তিধর অ্যাক্টর হওয়া থেকে আটকাতে পারবে না ভারত। এই উপমহাদেশে পশ্চিমাদের উপস্থিতি কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে চীন তার কৌশলগত চরিত্র পাল্টাচ্ছে। আগামী বছরগুলোতে তারা অর্থনৈতিক, সামরিক ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে তাদের অবস্থানকে আরও সুসংহত করবে। এটা ভারতের জন্য হবে এক ভয়ঙ্কর চ্যালেঞ্জ। শুধু দক্ষিণ এশিয়ায়ই চীন তার শক্তির বিস্তার করছে বিষয়টি এমন নয়। তাদের অর্থনৈতিক ও সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যেও। এর মধ্যে আছে কাতার, সৌদি আরব, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সঠিক আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দ্য হিন্দুকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। দক্ষিণ এশিয়াকে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো একটি অঞ্চল হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। যদি এমনটা হয়, সেক্ষেত্রে ভারতকে অনেক ছাড় দিতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোর দিকে এক চোখ বন্ধ করে অন্য চোখ দিয়ে তাকালে সঠিক দৃশ্য দেখতে পাবে না তারা।