বি ত র্ক

ট্রাম্পের শুল্কনীতিতে যে প্রশ্নগুলো অনিবার্য

মোহাম্মদ আবুল হোসেন | আন্তর্জাতিক
এপ্রিল ১২, ২০২৫
ট্রাম্পের শুল্কনীতিতে যে প্রশ্নগুলো অনিবার্য

না! এটা কোনো বিশ্বযুদ্ধ নয়। আবার কোনো মহামারিও নয়। তবু সারা দুনিয়া ভয়াবহ এক আর্থিক সংকটের মুখোমুখি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের ফলে দুনিয়া জুড়ে শেয়ারবাজারে ধস নেমেছে। বেড়েছে অস্থিরতা। দেখা দিয়েছে বাণিজ্যের বিপুল ক্ষতির আশঙ্কা। এমন অবস্থায় বিভিন্ন  দেশের প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন রকম। বৃহৎ আর্থিক শক্তিগুলোর মধ্যে শুধু চীনই বেছে নিয়েছে প্রত্যাঘাতের নীতি। তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মাথা নত না করে পাল্টা আঘাত করেছে। ইউরোপিয়ান কমিশনও আধা যুদ্ধে নেমেছে। তবে তারা আলোচনার দরজা খোলা রেখে শুল্ক বাড়িয়েছে। আমেরিকার উপরে অতিনির্ভরশীল ছোট দেশগুলো ক্রমে বশ্যতা স্বীকার করছে। এমন অবস্থায় বিভিন্ন দেশের অনুরোধের প্রেক্ষিতে ট্রাম্প প্রশাসন চীন বাদে অন্য সব দেশের ওপর আরোপিত শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। তার এ ঘোষণাকে সাধুবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ। তবে তিন মাস পরে কী হবে তাও স্থির নয়। ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো আবার শুল্ক পুনর্বহাল করবে অথবা কাটছাঁট করবে। তবে ট্রাম্প একেবারে যে মাফ করে দেবেন না, সে কথা চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায়। এমন পরিস্থিতিতেই বর্তমানের বিশ্বায়িত যুগে যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত শুল্কের প্রভাব সব দেশের উপরেই পড়বে। উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবার যুক্তরাষ্ট্রকে একেবারে বাদ দিয়ে বাকি যেসব দেশ থাকে তারা যে নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য চালিয়ে যাবে, এমন সম্ভাবনাও অলীক। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে যদি অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমে যায় তার প্রভাব সব দেশের পণ্যের ওপরও পড়বে। তা ছাড়া বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ভূ-রাজনীতির প্রশ্নও। যুক্তরাষ্ট্রকে বাদ দিলে বিশ্ব-অর্থনীতি আরও বেশি মাত্রায় চীননির্ভর হয়ে উঠবে। এটা ভারত সহ বহু দেশের কাছে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য হবে না। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবিলায় ভারতকে চীনের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে চীন। কারণ, এশিয়ায় ভারত ও চীন একে অন্যের প্রতিপক্ষ। তারা নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছে। বিশ্ব অর্থনীতি ধাক্কা খেয়েছে বটে। কিন্তু ট্রাম্পের নীতিতে আমেরিকার নাকটিও কাটা পড়বে। কারণ,  সে দেশের অর্থব্যবস্থা বহুলাংশে আমদানিনির্ভর। শুল্ক বাড়ায় তাদের আমদানির খরচ বাড়বে। তাতে সরাসরি প্রভাব পড়বে পণ্যের দামে। বহুলাংশে বেড়ে যাবে পণ্যের দাম। ফলে বড় মাপের মূল্যস্ফীতি ঘটবে। স্বল্পমেয়াদে হলেও দেশটির মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাবে। এ কারণে এরই মধ্যে বহু মার্কিনি তাদের অপ্রয়োজনীয় খরচের খাত আটকে দেয়ার চেষ্টা করছেন।  ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, বিদেশি পণ্য আমদানি কমিয়ে দিলে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়বে, কর্মসংস্থান এবং বেতনও বাড়বে। এতে লাভবান হবে সাধারণ মানুষ। কিন্তু প্রশাসনের এই যুক্তির পাল্টা যুক্তি আছে। তা হলো অভ্যন্তরীণ বাজারের সম্পূর্ণ চাহিদা মেটানোর মতো পণ্য উৎপাদন করার জন্য এখনই প্রস্তুত নয় মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদেরকে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে নিশ্চিতভাবে। তারও আগে প্রয়োজন অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে নিশ্চয়তা। মানুষের আয় ধাক্কা খাওয়ার পরও তাদের ক্রয়ক্ষমতার ভরসায় সংস্থাগুলো উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ করবে কিনা-  সে প্রশ্ন অনস্বীকার্য। 


ওদিকে কারও কথা শুনছেন না ডনাল্ড ট্রাম্প। নিজে যেটা ভাবছেন, সেটাই বাস্তবায়ন করছেন। তিনি ক্ষমতায় আসার পর অনেকটা তড়িঘড়ি করে ফেলছেন। এর ফলে বিশ্ব জুড়ে এক অস্থির অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বেশির ভাগ দেশের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করে রীতিমতো বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করে দিয়েছেন। এর শিকার শুধু যে দরিদ্র, উন্নয়নশীল দেশগুলোই তা নয়। একই সঙ্গে উন্নত, সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশগুলোও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এরই মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে নতুন এক আর্থিক মন্দা নিয়ে। খোদ যুক্তরাষ্ট্রই মন্দায় পড়তে যাচ্ছে বলে খবর রটেছে। কারণ, শুল্ক আরোপের ফলে বিদেশি পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে না বললেই চলে। এ জন্য পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণ। ভোক্তারাও তাদের চাহিদা কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে। ওদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চোখে চোখ রেখে কথা বলছে চীন। দেশটির বিরুদ্ধে ট্রাম্প ১২৫ ভাগ শুল্ক আরোপ করেছেন। এর প্রতিশোধ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর চীন পাল্টা শতকরা ৮৪ ভাগ শুল্ক আরোপ করেছে। ইউরোপ অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। অসন্তোষ অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা সহ অন্য সব দেশ। কার্যত পুরো বিশ্বকে একপেশে করে ফেলেছেন ট্রাম্প। এর মধ্যদিয়ে তিনি নিজেকে বিশ্বে এক নম্বর শক্তিধর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছেন। ক্ষমতায় যাওয়ার আগে ও পরে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন ইউক্রেনে শান্তি আনবেন একদিনের মধ্যে। কিন্তু সেই একদিন কয়েক মাস হয়ে গেছে। গাজা এবং ইউক্রেনে তিনি শান্তি আনতে ব্যর্থ হয়েছেন। উল্টো গাজাকে দখল করে নেয়ার সাহস দেখিয়েছেন। এর ফলে জায়নবাদী ইসরাইল গণহত্যা বন্ধ করবে তো পরের কথা, উল্টো তারা উৎসাহিত হয়েছে। তাই অবাধে তারা হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে গাজায়, পশ্চিমতীরে। ইয়েমেনে বোমা হামলা চালিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি গ্রিনল্যান্ডকে দখল করে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন। ইরানকে হুমকি দিয়েছেন পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় রাজি হতে। যদি সেটা না হয় তাহলে সেখানে হামলার হুমকি দিয়েছেন। তবে দৃশ্যত দুর্বল হলেও ইরান তাতে বিন্দুমাত্র ভয় পায়নি। তারাও সমস্বরে জানান দিয়েছে, আক্রান্ত হলে তারাও পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে। ক্ষমতার প্রথম মেয়াদে ইরানকে শায়েস্তা করতে পারেননি ট্রাম্প। এবার সুযোগ পেয়েছেন। তাই তার অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে চান তিনি। এটাই যদি হয়, তাহলে বিশ্ব নতুন করে সত্যিকার একটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রবেশ করবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বিশ্ব এরই মধ্যে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রবেশ করেছে। বার বার ইরান বলে এসেছে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে তাদের কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র সহ অন্য দেশগুলো বিশ্বাস করে, পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি আছে ইরান। তারা এই অস্ত্র তৈরি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে সারাবিশ্বে এক অস্থির পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারগুলোতে ধস দেখা দিচ্ছে। গত কয়েকদিনে শত শত কোটি ডলারের বাণিজ্য হারিয়েছেন কয়েকজন বিলিয়নিয়ার। এ পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছিল বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ। শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন থেকে যে সংবাদ দেয়া হয়েছে তাতে স্বস্তি বা নিঃশ্বাস নেয়ার একটি জায়গা তৈরি হয়েছে। তিনি চীন বাদে অন্য দেশগুলোর জন্য অতিরিক্ত শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত ঘোষণা করেছেন। তবে চীনের বিরুদ্ধে বুধবার থেকে কার্যকর হয়েছে শুল্ক। মার্কিন আমদানির উপর নির্ধারিত শুল্ক আরও ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে চীন। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইতিমধ্যেই চীনা পণ্যের উপর যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করেছেন এটা তার সমান। বুধবারের শুরু থেকে ট্রাম্পের ব্যাপক রিসিপ্রোক্যাল শুল্ক কার্যকর হয়েছে চীনের বিরুদ্ধে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ চীন। তাদের সব পণ্যের ওপর কমপক্ষে শতকরা ১২৫ ভাগ শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। এ অবস্থায় চীনের স্টেট কাউন্সিল ট্যারিফ কমিশন এক বিবৃতিতে বলেছে- চীনের উপর মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধি একের পর এক ভুল পদক্ষেপ। এটা চীনের  বৈধ অধিকার ও স্বার্থের মারাত্মক লঙ্ঘন। এই পদক্ষেপ নিয়মভিত্তিক বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থার মারাত্মক ক্ষতি করছে। একই রকম শুল্ক আরোপের পাশাপাশি চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ও ১২টি আমেরিকান  কোম্পানির উপর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে প্রতিশোধ নিয়েছে। আরও ছয়টি মার্কিন কোম্পানিকে তাদের ‘অনির্ভরযোগ্য তালিকায়’ যুক্ত করেছে। এই তালিকায় যেসব  কোম্পানি আছে, তারা চীনে ব্যবসা বা বিনিয়োগে নিষিদ্ধ হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, চীনও সর্বশেষ মার্কিন শুল্কের বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অভিযোগ দায়ের করেছে। রাষ্ট্র পরিচালিত পত্রিকা চায়না ডেইলি এক সম্পাদকীয়তে বাণিজ্যিক দৈত্যের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এতে অন্য একটি খবরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে মুক্ত বাণিজ্য ও বহুত্ববাদকে সমুন্নত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। 


বিশ্বের কমপক্ষে ৮৬টি দেশের বিরুদ্ধে নতুন শুল্ক আরোপ করেছেন ট্রাম্প। এর ফলে শতকরা ১১ ভাগ থেকে ৮৪ ভাগ পর্যন্ত উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে যদি চীন কোনো পণ্য রপ্তানি করে তাহলে তাকে মোট নিট শতকরা ১২৫ ভাগ শুল্ক দিতে হবে। এর আগে চীনা পণ্যের ওপর শতকরা ২০ ভাগ শুল্ক আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প। তার সঙ্গে ছিল শতকরা ৩৪ ভাগ অতিরিক্ত শুল্ক। তার সঙ্গে মঙ্গলবার শেষ মুহূর্তে শতকরা ৫০ ভাগ শুল্ক বাড়িয়েছেন। চীনের পরে একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে লেসোথোর ওপর। আফ্রিকার এই দেশটি যদি যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করতে চায় তাহলে তাদেরকে শোধ করতে হবে শতকরা ৫০ ভাগ শুল্ক। এর কাছাকাছি আছে কম্বোডিয়া। বুধবার থেকে তাদের পরিশোধ করার কথা শতকরা ৪৯ ভাগ শুল্ক। কম্বোডিয়ার দুই প্রতিবেশী লাওস ও ভিয়েতনামকে গুনতে হবে যথাক্রমে শতকরা ৪৮ ভাগ ও ৪৬ ভাগ শুল্ক। ২রা এপ্রিল শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। তারপর যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজার অব্যাহতভাবে ঝাঁকুনি খাচ্ছে। খোয়াচ্ছে শত শত কোটি ডলার। তবে তাতে বিচলিত নয় হোয়াইট হাউস ও ট্রাম্প। তিনি মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস থেকে এমন উদ্বেগের বিষয় উড়িয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, আবারো খুব শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্র খুব ধনী হতে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত শুল্ক কার্যকর হওয়ায় বুধবারও এশিয়ার শেয়ারবাজারে ধস ছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার বেঞ্চমার্ক কোসপি’র লেনদেন নিম্নমুখী হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কার্যকর হওয়ায় ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করার জন্য পলিসি রেট বেসিস ২৫ পয়েন্ট কমিয়ে দিয়ে শতকরা ৬ ভাগ করেছে। ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে শতকরা ২৬ ভাগ। 


এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে কিছু ‘উপহার’ দিয়ে তাকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করছে। তাদের এই প্রচেষ্টায় ‘ট্যারিফ কিং’ ট্রাম্পকে তার ব্যবসাকে আরও কৌশলগত করার সুযোগ এনে দেবে। এমন কোনো নিয়ম নেই, এমন কোনো স্পষ্ট চ্যানেল নেই- যার মাধ্যমে ট্রাম্পের কাছে পৌঁছানো যাবে। এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই যে, কেউ তাকে নতুন করে সমঝোতায় নিয়ে একটি চুক্তি করাতে সক্ষম হবেন। এমন চেষ্টা করেছিলেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাণিজ্য বিষয়ক কমিশনার ম্যারোস সেফকোভিচ। তিনি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দু’জন উপদেষ্টা জ্যামিয়েসন গ্রিয়ার এবং হাওয়ার্ড লুতনিকের সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলেছেন। কিন্তু তাদেরকে ফিরে আসতে হয়েছে শূন্য হাতে। কারণ, এই দুই উপদেষ্টার কারও হাতে একটি চুক্তি করার মতো কর্তৃত্ব নেই। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এক কর্মকর্তা বলেছেন, আমরা সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছি। তবে গ্রিয়ার এবং লুতনিকের এ বিষয়ে কোনো ম্যান্ডেট নেই। বিষয়টি পুরোপুরি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের হাতে। এর মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যে প্রবেশ করতে হলে এর গেটকিপার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন ট্রাম্প। ২রা এপ্রিল তিনি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তারপর থেকে প্রায় ৭০টি দেশ হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাদের আশা, কিছুটা স্বস্তি মিলবে। বুধবার কার্যকর হয়েছে ট্রাম্পের শুল্ক। ফলে এসব ব্যক্তির চেষ্টা আরও তীব্র হয়ে উঠবে। অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে দেশগুলো একত্রিত হচ্ছে। তারা বিভিন্ন রকম কৌশল নিচ্ছে। এর মধ্যে ট্রাম্পকে সুবিধাজনক উপহার থেকে শুরু করে হুমকি পর্যন্ত দিচ্ছে। কিন্তু তাতে কি ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হবে? দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি থেকে খাদ্য নিরাপত্তা, ভ্যাট, প্রতিরক্ষা ব্যয় এবং প্রযুক্তি বিষয়ক রেজ্যুলেশন পর্যন্ত সবকিছুর বিরুদ্ধে অবস্থান ট্রাম্পের। এসব বিষয়ে তিনি যেসব অভিযোগ উত্থাপন করেছেন তার বেশির ভাগই পুরোপুরি ভিত্তিহীন। ফলে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবা শিগেরু বলেন, আমাদেরকে অবশ্যই প্রশ্ন করতে হবে এসব হিসাব কোন আমল থেকে আনা হয়েছে? উল্লেখ্য, ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন- যুক্তরাষ্ট্র থেকে চাল আমদানিতে শতকরা ৭০০ ভাগ শুল্ক আরোপ করেছে জাপান। জাপানের মতো একইভাবে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা। কারণ, ট্রাম্প দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় গড়ে চারগুণ শুল্ক আরোপ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির বাণিজ্যমন্ত্রী ইয়েও হান-কু এমন তথ্যের বিরোধিতা করেছেন। তিনি বলেছেন, এই তথ্য বানোয়াট। উল্লেখ্য, এই দুটি দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আছে। যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ পণ্যে শুল্ক প্রায় শূন্য। ফলে অফিসিয়াল চ্যানেলের মাধ্যমে ট্রাম্পের ওই তথ্য সংশোধন করার চেষ্টা করছে দক্ষিণ কোরিয়া। কিছু দেশের সরকার ট্রাম্পকে তাদের আস্থায় নেয়ার চেষ্টা করেছে। ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেন- যদি তার (ট্রাম্প) লক্ষ্য হয় পারস্পরিক, তবে কেন পুরোপুরি শুল্ক প্রত্যাহার হবে না? একটি ভালো চুক্তির জন্য সব সময় প্রস্তুত ইউরোপ। উরসুলা ভন ডার লিয়েন গাড়ি, রাসায়নিক ও মেশিনারি সহ সব শিল্পপণ্যের ওপর জিরো-ফর-জিরো শুল্ক প্রস্তাব করেছেন। শূন্য শুল্কের একটি বিস্তৃত প্যাকেজ প্রস্তাব করেছে তাইওয়ান। তার মধ্যে প্রতিশোধমূলক কোনো পদক্ষেপ নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। ভিয়েতনামের নেতারাও পারস্পরিক শুল্ক নির্মূলের প্রস্তাব করেছেন। তবে খুশি হয়নি হোয়াইট হাউস। ইউরোপের প্রস্তাবকে অপর্যাপ্ত ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। আবারো তার মতো করে তিনি বলেছেন, ইউরোপকে সৃষ্টি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যকে বাস্তবেই ক্ষতি করার জন্য। অন্যদিকে ভিয়েতনামের প্রস্তাবকে উড়িয়ে দিয়েছেন ট্রাম্পের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারো। তার অভিযোগ, চীনা পণ্যকে নতুন রুটের মাধ্যমে ব্যবসা করছে তারা। এ দেশটি চীনের একটি কলোনি হিসেবে কাজ করছে। 

আন্তর্জাতিক'র অন্যান্য খবর