আ ন্ত র্জা তি ক

বাংলাদেশে ভারতের একমুখী নীতি, এগিয়ে যাচ্ছে চীন

মোহাম্মদ আবুল হোসেন | আন্তর্জাতিক
ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৫
বাংলাদেশে ভারতের একমুখী নীতি, এগিয়ে যাচ্ছে চীন

জনরোষে ক্ষমতা ছেড়ে পালানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিদেশি মিডিয়ার চোখে ‘অটোক্র্যাট’ শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ কূটনীতির পারদ উঠছে আর নামছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকার সময় থেকেই ভারত প্রকাশ্যে তার ও তার দল আওয়ামী লীগের পক্ষ অবলম্বন করেছে। ভারতকে শেখ হাসিনা দিয়েছেন অনেক বেশি। বিনিময়ে পেয়েছেন খুবই সামান্য। এ কথা তিনি নিজ মুখেই স্বীকার করেছেন। তার সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুই দেশের সম্পর্ককে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক বলে অভিহিত করেছেন। একজন কূটনীতিক কূটনৈতিক সম্পর্ককে প্রকাশের এমন ভাষা ব্যবহারে বিস্মিত হয়েছেন বিশ্বের অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। ভারতীয় বিশ্লেষকরা বার বার বলেছেন, নয়াদিল্লি সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখছে। অর্থাৎ তারা শুধু আওয়ামী লীগের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছে। এবং সাম্প্রতিক সময়ে সেটা আবারো প্রমাণ দিচ্ছে। ছাত্রদের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থানের সময় প্রায় ৬৫০ জন মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে শেখ হাসিনার প্রশাসন। তাদের বিষয়ে টুঁ-শব্দটি করেনি ভারত। অথচ নেতৃত্ব হারিয়ে পালিয়ে নয়াদিল্লিতে যাওয়ার পর তাকে নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করে সেই বলয়ের মধ্যে রাখা হয়েছে। সেখানে সেই গোপন ডেরা থেকে বার বার বক্তব্য দিচ্ছেন শেখ হাসিনা। সেসব বক্তব্য উস্কানিমূলক। তার এমন বক্তব্যে দেশে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বার বার ক্ষোভ দেখা দিচ্ছে। তারা মাঠে নামছে। প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বার বার ভারতের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে- শেখ হাসিনাকে চুপ রাখার জন্য। ভারতের জবাব শেখ হাসিনা নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। তিনি নিজস্ব ডিভাইসের মাধ্যমে বক্তব্য দিচ্ছেন। কিন্তু এটা তো সত্য, তিনি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে একটি সুরক্ষিত আবাসনে থেকে এসব বক্তব্য দিচ্ছেন। যদি তা-ই হয় এবং বাংলাদেশ সরকারের কথা আমলে নেয়, তাহলে তাকে কেন এমন বক্তব্য দেয়ার প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়া হচ্ছে? এমন প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তিনি তো ভারতীয় কোনো প্রযুক্তির সহায়তা ছাড়া বক্তব্যই হোক বা বিবৃতিই হোক- তা প্রচার করার সুযোগ পাওয়ার কথা না। বাংলাদেশের মানুষ অনেকটা স্পষ্ট বুঝে গেছে ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। আবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং সংবাদ মাধ্যমেও গুঞ্জন শোনা যায় যে, শেখ হাসিনাকে বা আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে ভারত। এহেন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ক্রমশ ভারতবিরোধী হয়ে উঠছে, এটা ভারতের বোঝা উচিত। যে ভারত স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশকে সহায়তা করেছিল, তাদেরকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে চায় এদেশের মানুষ। কিন্তু সেখানকার নেতারা ক্রমশ একপেশে আচরণের মাধ্যমে বিভক্তি বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তারা একপেশে অবস্থানের কারণে ভারতের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী চীন এখানে সুবিধা নিতে পারে। এমনিতেই চীন বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, পাকিস্তানের দিকে হাত বিস্তার করেছে। সেখানে ভারত যদি সুযোগ তৈরি করে দেয়, তাহলে তাতে রাজনীতির লড়াইয়ে ভারতই পিছিয়ে পড়বে। আমরা যদি শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে কলম্বো বন্দরে পাইলট টাওয়ারের দিকে নজর দিই। তাহলে দেখবো এই টাওয়ারই বলে দেয় দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের সঙ্গে ভারতের লড়াই চলছে কীভাবে। এর পূর্বদিকে আছে বার্থ। সেখানে মাঝে মাঝে ভারত ও চীনের যুদ্ধজাহাজ নোঙর করে। দক্ষিণ দিকে আছে চীন পরিচালিত কন্টেইনার টার্মিনাল। এটা আগে ছিল চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড পরিকল্পনার অংশ। এরপর পশ্চিমদিকে আরেকটি টার্মিনাল নির্মাণ করছে ভারতের আদানি গ্রুপ। ২০২৩ সালে মার্কিন সরকারের আর্থিক সহায়তায় ৫৫ কোটি ৩০ লাখ ডলারের এই প্রকল্প জিতে নেয় তারা। এই চুক্তির বিষয় যখন প্রকাশ হয়ে পড়ে তখন এটাকে দেখা হয় চীনের প্রভাবের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে। বাণিজ্য, অস্ত্র বিক্রি এবং অবকাঠামো বিষয়ক প্রকল্পের মাধ্যমে এ অঞ্চলে ক্রমাগত প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে চীন। অন্যভাবেও পিছিয়ে যাচ্ছে ভারত। তারা কোভিড-১৯ থেকে উত্তরণে প্রতিবেশীদের ঋণ দিচ্ছিল। চীনের কাছ থেকে ঋণ নেয়া দেশগুলোর খেলাপি সমস্যায় পাশে দাঁড়িয়েছে। এটাকে চীনের বিরুদ্ধে ভারতের কৌশলগত প্রতিযোগিতা হিসেবে দেখা যায়। ২০২৩ সালে থিংকট্যাংক র‌্যান্ড করপোরেশন এমনটাই লিখেছেন। 


ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফেব্রুয়ারিতে যখন ওয়াশিংটন সফর করার কথা, তখন তার আঞ্চলিক স্কোরকার্ড অনুজ্জ্বল। গত আঠার মাসে বা দেড় বছরে ভারতের প্রতি বন্ধুত্ব আছে এমন বেশ কয়েকজন নেতাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। এর মধ্যে আছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিকে ব্যালটের লড়াইয়ে পরাজিত করেন চীনপন্থি মোহাম্মদ মুইজু, শ্রীলঙ্কার নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন মূলধারার সব প্রার্থী। সেখানে জয় পেয়েছেন বামপন্থি, চীনপন্থি অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে। ভারতপন্থি পুষ্প কমল দাহালকে ক্ষমতাচ্যুত করে নেপালে নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন কেপি শর্মা ওলিও। বিশেষ করে এর মধ্যে বাংলাদেশ বেশি করে ঝুঁকে যাচ্ছে চীনের দিকে। আদানি প্রকল্পের আঞ্চলিক বেশ কিছু প্রকল্প নিয়ে বিতর্ক ডালপালা বিস্তার করেছে। এই গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ঘুষের অভিযোগ উঠেছে, যদিও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। গত ১১ই ডিসেম্বর তার প্রতিষ্ঠান বলেছে, তারা কলম্বো বন্দরের জন্য আর কোনো মার্কিন ঋণ ব্যবহার করবে না। 


এমন সব বক্তব্য-বিবৃতি আসছে। এর কারণ হলো এশিয়ার জায়ান্টরা একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতার লড়াই করছে। দুর্বল কূটনীতির কারণেও এটা ঘটে। এ থেকে ভারতের জন্য কঠিন প্রশ্নের উদয় হয়। তাদের সঙ্গে ভৌগোলিক এবং সাংস্কৃতিক একটি প্রাকৃতিক বন্ধন আছে। উপরন্তু নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সাল থেকে ‘নেইবারহুড ফার্স্ট’ বা প্রতিবেশী প্রথম নীতি গ্রহণ করেন। ভারতের নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক অভিজাতদের মধ্যে কেউ কেউ আশংকা করছেন যে, দূরদৃষ্টি এবং সংহতির অভাব আছে। এ কারণে চীনের তুলনামূলক দুর্বলতার সময়েও ভারত তার সুযোগ বা অর্জনকে ব্যর্থ করে দিচ্ছে। চীনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারার জন্য ভারতকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য সরকারগুলোও উদ্বিগ্ন। অনেক পশ্চিমা কর্মকর্তা আশঙ্কা করেন যে, ভারতের আঞ্চলিক কূটনীতি অনেক সময় উল্টো তাদের বিপক্ষেই যায় অথবা স্ববিরোধী হয়। কেউ কেউ বলেন যে, স্বৈরাচারদের মদত দেয়া, অস্বচ্ছ ব্যবসায়িক চুক্তিকে সমর্থন করা এবং দেশের ভেতরে উগ্র জাতীয়তাবাদকে আলোড়িত করে চীনের আচরণই প্রতিফলিত করছে। হোয়াইট হাউসে ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে আসবে। 


এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ‘সুইং স্টেট’ বলে পরিচিত বাংলাদেশ। দীর্ঘ সময় ধরে চীনা শিবিরে অবস্থান করছে পাকিস্তান। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর সমর্থক ছিল ভারত। তিনি যে ক্রমশ কর্তৃত্ববাদী শাসন জারি করেছিলেন সে বিষয়ে ভারত তার চোখ বন্ধ করে রেখেছে। এমনকি শেখ হাসিনার রেকর্ড নিয়ে সমালোচনা উঠলে যুক্তরাষ্ট্রকে নিবৃত করার জন্য তদবির করেছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। তারা সতর্ক করেছেন যে, বাংলাদেশ ভরে যাবে ইসলামপন্থি উগ্রবাদীতে। এখানে ভারতের পদক্ষেপ কাজ করেছে। বাণিজ্য, অবকাঠামো এবং নিরাপত্তা বিষয়ক বন্ধন হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে। কিন্তু চীনের প্রতি হাত প্রসারিত করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যদিয়ে নিরাপত্তায় ভারতকে পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। তারপর ২০২৪ সালের আগস্টে ভারতের জুয়ার দান উল্টে যায়। ছাত্রদের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। তিনি পালিয়ে চলে যান ভারতে। পুরো বাংলাদেশে এখন ছড়িয়ে পড়েছে ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্ট। বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কথিত হামলার রিপোর্ট নিয়ে ভারতের অনেকের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। 


ওদিকে বেল্ট অ্যান্ড রোড অবকাঠামো থেকে পিছিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও, অক্টোবরে ভারতের সঙ্গে চার বছর ধরে সীমান্তে উত্তেজনার সমাধান করা সত্ত্বেও চীন যেকোনো রকম কৌশলকে কাজে লাগাচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশকে এরই মধ্যে ২০০ কোটি ডলার আর্থিক সহায়তা দিতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। আরও ৫০০ কোটি ডলার নিয়ে আলোচনা চলছে। জানুয়ারিতে তিনি বেইজিং সফর করেন। সেখানে চীনের প্রতি আরও সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন। সেক্ষেত্রে ঋণ দেয়ার কিছু শর্ত দিয়েছে চীন। অবকাঠামোগত প্রকল্পের বিষয়ে উভয় পক্ষই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মোংলা বন্দরকে উন্নয়নে চীনা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করেছেন তারা। অথচ ভারত মহাসাগরীয় বন্দরে চীনের নিয়ন্ত্রণকে কাটিয়ে উঠতে  শেখ হাসিনার অধীনে এই কাজের দাবি করেছিল ভারত। 


এটা শুধু ভারতীয় গোয়েন্দা ব্যর্থতাই নয়। ভারত যে এ অঞ্চলে পুরনো পদ্ধতি বা আউটডেটের পদ্ধতি ব্যবহার করে তা উন্মোচিত হয়ে পড়েছে। কয়েক দশক ধরে যারা ক্ষমতায় থাকেন, তাদেরকেই আরও নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাপকভাবে সমর্থন দিয়েছে ভারত। এমন নীতির ওপরেই অবস্থান করেন মোদি। তবে অর্থনৈতিক শক্তির ওপর বেশি নির্ভর করেন। ব্যবহার করেন উদার ঋণ। এর মধ্যে ২০২২ সালে দেউলিয়া হয়ে পড়ার পর শ্রীলঙ্কাকে তারা ৪০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। আবার তারা কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করেছে। যেমন ২০১৫ সালে নেপালের বিরুদ্ধে অনানুষ্ঠানিক ব্লকেড দিয়েছিল। তবে ভারতের কর্মকর্তারা বলেন তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করছে। তারা এক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকের উদাহরণ দেন। নির্বাচিত হওয়ার পর দিশানায়েকে প্রথম বিদেশ সফরে ভারতে আসেন। অথচ দলীয় ইতিহাস আছে চীনের প্রতি সম্পর্কের। 


মালদ্বীপে নতুন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজু। তিনি নির্বাচনী প্রচারণার সময় ‘ভারতবিরোধী’ অবস্থান নেন। তার জোরেই তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। ভারতীয় কর্মকর্তারা দাবি করেন মালদ্বীপের এই নতুন নেতা তার ভারতবিরোধী অবস্থান বদলেছেন। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পতনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইঞ্জিনিয়ারিং করেছে বলে ভারতের মিডিয়া অপ্রমাণিত তথ্য প্রচার করে। কিন্তু ভারতীয় কর্মকর্তারা এমন প্রচারণা বন্ধে কিছু করেননি বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সিনিয়র কূটনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা নতুন করে চিন্তা-ভাবনার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা আরও বলছেন, চীনের মতো কঠোর অবস্থান নিয়েছে ভারত। তারা বিরোধী দলগুলো, নাগরিক সমাজ, একটি অভিন্ন মূল্যবোধ ও পরিচয়ের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কেউ কেউ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং বেসরকারি সংগঠনের প্রতি নরেন্দ্র মোদির শত্রুতামূলক আচরণের সম্পর্ক স্থাপন করেন। তার হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদ উল্টো ফলও দিয়েছে। বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশেও। ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শিব শঙ্কর মেনন বলেছেন, খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে বিশ্ব। কিন্তু আমরা আগেও যে কাজ করেছি এখনো সেই কাজ করছি। তাতে একই ফল প্রত্যাশা করছি। তিনি বলেন, অর্থনৈতিকভাবে একত্রীকরণে দৃষ্টি দেয়া উচিত ভারতের। দুর্বল প্রতিবেশীর কাছ থেকে পারস্পরিক সহযোগিতা চাওয়া বন্ধ করতে হবে। 
অন্যরা এ অঞ্চলের তরুণ জনগোষ্ঠীর দিকে বৃহত্তর দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানান, যাতে আরও বেশি তরুণ ভারতে পড়তে আসেন। আরেক সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শ্যাম শরণ বলেন, আঞ্চলিক বিষয় মোকাবিলা করতে পারবে, সীমান্ত এলাকায় স্থানীয় সরকারের অধিক জড়িত হওয়ার জন্য আরও অনেক বেশি কূটনীতিক প্রয়োজন ভারতের। ভারতের কূটনীতিকরা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আরও বেশি নমনীয় হয়েছেন। কিন্তু শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে কিন্তু তার পথ করে চলেছেন। তিনি জানুয়ারিতে চীন সফর করেছেন। তিনি একটি তেল শোধনের জন্য ৩৭০ কোটি ডলারের একটি চুক্তিতে রাজি হয়েছেন। এই শোধনাগার নির্মাণ করা হবে শ্রীলঙ্কার দক্ষিণে চীনা মালিকানাধীন বন্দরের পাশে। একে সামরিক হুমকি হিসেবে মনে করছে ভারত। বিদেশি গবেষণা করতে যাওয়া জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছেন দিশানায়েকে। চীনের জাহাজ ওই অঞ্চলে আসার পর ভারত তীব্র প্রতিবাদ করেছিল। তারপর দেয়া হয়েছিল ওই নিষেধাজ্ঞা। চীনারা তিব্বতকে ‘সিজাং’ হিসেবে অভিহিত করেন। দিশানায়েকে তিব্বতকে এই নামে অভিহিত করেন। তাইওয়ানকে চীনের সঙ্গে একীভূত করার সব রকম উদ্যোগে সমর্থন দিয়েছেন দিশানায়েকে। ডিসেম্বরে চীন সফরে গিয়েছিলেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। তিনিও ওই একই শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও গভীর করতে রাজি হয়েছেন। নেপালে ভারতের সাবেক একজন রাষ্ট্রদূত ছিলেন রণজিৎ রাই। তিনি মনে করেন সব দলের সঙ্গে ভারতের না ছিল কোনো সম্পর্ক, কেপি শর্মা অলি জুলাইতে নিয়োগ পাওয়ার পর তাকে সফরের আমন্ত্রণও জানায়নি ভারত।  


অবকাঠামো বিষয়ক প্রকল্পগুলোতে আদানির ওপর নির্ভরশীল ভারত। এটা নিয়ে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ২০১৭ সালে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ২৫ বছর মেয়াদি একটি চুক্তি করে তারা। শ্রীলঙ্কায় তারা কলম্বো বন্দর এবং একটি বায়ুচালিত শক্তিকেন্দ্রের কাজ পায়। তবে এ দু’টি প্রকল্পের কোনোটিই উন্মুক্ত টেন্ডারে দেয়া হয়নি।  নেপালে তারা একটি বিমানবন্দর নির্মাণ ও তিনটি পরিচালনার জন্য তদবির করেছে। বিদ্যুৎ বিষয়ক চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনা করতে চায় বাংলাদেশ। তাদের অভিযোগ এই চুক্তিতে বিদ্যুতের মূল্য অনেক বেশি দেখানো হয়েছে।  একইভাবে বায়ুচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বিষয়ক চুক্তি একই যুক্তি দেখিয়ে পর্যালোচনা করতে চাইছে শ্রীলঙ্কা। 


নরেন্দ্র মোদি ভারতকে বিশ্বের একটি উদীয়মান শক্তি হিসেবে দেখাতে চান। বৈশ্বিক দক্ষিণে একটি চ্যাম্পিয়ন দেশ হিসেবে দেখাতে চান। এ অঞ্চলের কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতের অবস্থান আসলে কি তা পরিষ্কার নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা এটা পরিষ্কার না করবে, ততক্ষণ প্রতিবেশীদের সঙ্গে সন্দেহ থেকেই যাবে। তাতে ফল তুলবে চীন। 

আন্তর্জাতিক'র অন্যান্য খবর