অ নু স ন্ধা ন

তৃণমূলে কতোটা সাড়া ফেলেছে এনসিপি

মুনির হোসেন | অনুসন্ধান
এপ্রিল ১২, ২০২৫
তৃণমূলে  কতোটা সাড়া  ফেলেছে  এনসিপি

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ঈদকে কেন্দ্র করে প্রচার-প্রচারণা নতুন কিছু নয়। অন্য সময় নির্বাচনী এলাকায় তেমন দেখা না গেলেও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এ সময় এলাকায় বেশ সক্রিয় থাকেন। গ্রামে গ্রামে জনসংযোগ ও সভা করতে দেখা যায় তাদের। ঈদকেন্দ্রিক এ প্রচারণায় ব্যাপক সাড়াও পান রাজনৈতিক নেতারা। আবার এসব করতে গিয়ে কখনো কখনো এলাকায় সংঘাতের ঘটনাও ঘটে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে-পরেও এ চিত্র দেখা গেছে। যেখানে বিএনপি-জামায়াতসহ বড় বড় রাজনৈতিক দল যেমন সক্রিয় ছিল তেমনই গণ-অভ্যুত্থানের সামনের সারিতে থাকা ছাত্রদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি’র নেতারাও সক্রিয় ছিলেন। দলটির নেতারা অর্ধশতাধিক আসনে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখ বড় জমায়েতের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করা এনসিপি’র তৃণমূলে এটিই ছিল বড় প্রচারণা। ঈদের আগে-পরে ইফতার অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে জনসংযোগসহ বিভিন্ন কর্মসূচিতে দলটির নেতারা ব্যস্ত সূচি পার করেছেন। সেসব প্রচার-প্রচারণায় কেমন সাড়া পেয়েছেন ছাত্রনেতা থেকে জাতীয় নেতা বনে যাওয়া নেতৃত্ব সেই হিসাব-নিকাশ এখন করতে হচ্ছে। অনেকে মনে করেন এটি ছিল এনসিসি’র টেস্ট কেইস। কিন্তু সেই কেইসে পুরোপুরি সফল বলার সুযোগ নেই। কারণ যে উন্মাদনা নিয়ে রাজনীতিতে এসেছেন তৃণমূলে সেইভাবে সাড়া পাননি এনসিপি’র নেতারা। 


এনসিপি’র নেতারা ঈদকে কেন্দ্র করে এলাকায় জনসংযোগের পাশাপাশি জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ নেতাদের কবর জিয়ারত ও শহীদ পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ, আহতদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এ ছাড়াও এলাকায় সাধারণ মানুষের সঙ্গে মতবিনিময়ের পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকায় ব্যানার, ফেস্টুন টানিয়েছেন অনেকে। অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও। ঈদের নামাজের আগে কেউ কেউ কথা বলেছেন মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে। দোয়া চেয়েছেন নতুন দল এনসিপি’র জন্য। মূলত দলের নাম ছড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলে সংগঠন বিস্তৃত করাই উদ্দেশ্য ছিল তাদের। এসব করতে গিয়ে কিছু কিছু জায়গায় ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন কয়েকজন নেতা। আবার কিছু কিছু এলাকায় জনগণ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। 


বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন থেকে জাতীয় নাগরিক কমিটি, এরপর জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি। যখনই নতুন পরিচয়ে জনতার সামনে আসছেন ছাত্রআন্দোলনের নেতারা তখনই সমর্থন কমছে। জনসম্পৃক্ততা আগের তুলনায় কমে যাওয়ায় সেটি উদ্ধারে ঈদকেই বেছে নিয়েছিলেন তারা। এরপর রমজানে ইফতার পার্টি ও ঈদের আগে পরে অর্ধশতাধিক আসনে জনসংযোগ করেন তারা। এক্ষেত্রে দলটির নেতাদের সঙ্গে কয়েকটি স্থানে স্থানীয় বিএনপি’র বিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে। হামলার শিকার হয়েছেন এনসিপি’র সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়কারী আব্দুল হান্নান মাসুদ। অবশ্য নোয়াখালী-৬ হাতিয়া উপজেলার আসনটিতে আব্দুল হান্নান মাসুদের প্রতি জনতার সমর্থন ইতিমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে। এ ছাড়াও এনসিপি নেতা সরোয়ার তুষার, মীর আরশাদুল হকসহ অনেক নেতার পোস্টার ছেঁড়ার অভিযোগও সামনে এসেছে। 


এদিকে ঈদকেন্দ্রিক প্রচার প্রচারণার অংশ হিসেবে এনসিপি নেতারা নির্বাচন ছাড়াও কিছু বিষয়ে জনমত তৈরি করতে চেয়েছেন। সেগুলো হলো- গণপরিষদ নির্বাচন, জুলাই ঘোষণা ও সেকেন্ড রিপাবলিক বাস্তবায়ন। নেতারা পাড়ায় পাড়ায় জনসংযোগে গণহত্যার জন্য আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিও জোরদার করতে গণমানুষের সমর্থন চেয়েছেন। দলীয় নেতাদের আসনভিত্তিক কার্যক্রম সম্পর্কে এনসিপি’র সদস্য সচিব আখতার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, গণপরিষদ নির্বাচন, সেকেন্ড রিপাবলিক বাস্তবায়ন এবং জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবি বাস্তবায়নের পাশাপাশি এনসিপি দল গোছানো এবং সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছে। ঈদের সময় বিভিন্ন এলাকায় আমরা দেখেছি, সাধারণ মানুষ তরুণ নেতৃত্ব এবং একটি নতুন বাংলাদেশ দেখতে এনসিপিকে ভোট দেয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। তিনি জানান, সারা দেশের সব আসনেই এনসিপি’র যোগ্য প্রার্থী থাকলেও প্রাথমিকভাবে কিছু আসনে কেন্দ্রীয় নেতারা অবস্থান তৈরি করার কাজ করছেন। দলের নিবন্ধন পাওয়ার পর এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ এলে একযোগে সব আসনেই এনসিপি’র প্রার্থীরা কার্যক্রম শুরু করবেন।


ঈদুল ফিতরে এনসিপি নেতারা চেয়েছেন মূলত গণমানুষের সঙ্গে মিশে যেতে। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী যেসব এলাকায় প্রচারণা চালানো হয়েছে সেসব এলাকায় সব শ্রেণি- পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছেন তারা। এটি করতে গিয়ে কোথাও কোথাও বাধার সম্মুক্ষীণ হয়েছেন তারা। আবার কোথাও বাধা উপেক্ষা করে দলীয় কর্মসূচি সফল করেছেন তারা। এ ছাড়াও ঈদে এনসিপি নেতারা প্রচার প্রচারণাকে কেন্দ্র করে আলোচনা-সমালোচনারও জন্ম দিয়েছেন। বিশেষ করে দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক সারজিস আলমের শতাধিক গাড়ি নিয়ে এলাকায় মহড়া নিয়ে সমালোচনা হয়েছে অনেক। এ ছাড়া অন্যান্য নেতারাও এলাকায় বিশাল গাড়িবহর নিয়ে ব্যাপক শোডাউন দিয়েছেন। অন্যদিকে দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন ব্যাটারিচালিত শতাধিক ভ্যানে করে মহড়া দিয়ে আলোচনায় এসেছেন। 


ঈদকে কেন্দ্র করে এনসিপি নেতারা যেসব এলাকায় সক্রিয় থেকেছেন সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- পঞ্চগড় সদর, তেতুলিয়া এবং আটোয়ারী নিয়ে গঠিত পঞ্চগড়-১ আসনে এনসিপি’র উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ভোলা-১ আসন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ নোয়াখালী-৬ আসন, আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম রাজধানীর রামপুরা-বনশ্রী এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১১ (রামপুরা-বনশ্রী) আসন, সদস্য সচিব আখতার হোসেন রংপুর-৪ (পীরগাছা-কাউনিয়া) আসন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি), ঢাকা-১৭ (গুলশান-ক্যান্টনমেন্ট এলাকা) আসনে সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা, ঢাকা-১৩ (মোহাম্মদপুর) আসনে যুগ্ম সদস্য সচিব আকরাম হুসাইন, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এস এম শাহরিয়ার ঢাকা-৫ (ডেমরা) আসনে, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব ঢাকা-১৪, যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন ঢাকা-৯, সংগঠক মো. রাসেল আহমেদ ঢাকা-১ আসন, যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আলী নাছের খান গাজীপুর-১ আসন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার নরসিংদী-২ আসন, যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম মাহির লক্ষ্মীপুর-১ আসন, যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহাদী ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা অনিক রায় সুনামগঞ্জ-২, যুগ্ম সদস্য সচিব প্রীতম দাশ মৌলভীবাজার, মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন পটুয়াখালী-২ (বাউফল), যুগ্ম সমন্বয়কারী আরিফুর রহমান তুহিন ঝালকাঠি-১ আসন,  কুড়িগ্রাম-১ আসনে যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ, টাঙ্গাইল-১ মধুপুর আসনে মুখ্য সংগঠক অলিক মৃ, যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ভীম্পাল্লী ডেভিড রাজু খুলনা-১, চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী আসনে যুগ্ম সদস্য সচিব মীর আরশাদুল হক, যুগ্ম সদস্য সচিব মোল্লা মোহাম্মদ ফারুক এহসান চুয়াডাঙ্গা-১, আবু সাঈদ সুজাউদ্দীন কক্সবাজার, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাইফুল্লাহ হায়দার টাঙ্গাইল-৩, মেজর (অব.) আব্দুল্লাহ মাহমুদ খান গাজীপুর-৩, মুখ্য সংগঠক আবু সাঈদ লিওন নীলফামারী-৩, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা মিতু বরিশাল-৫, সংগঠক আব্দুল্লাহ আল মামুন ফয়সাল ভোলা-৪ আসনে, অর্পিতা শ্যামা দেব ও এহতেশাম হক সিলেট, যুগ্ম আহ্বায়ক নুসরাত তাবাসসুম কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর), হাসান আলী চট্টগ্রাম-১৪, নির্বাহী সদস্য ফাহিম রহমান খান পাঠান নেত্রকোনা-২ আসন, ঢাকা-১৪ আসনে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম সদস্য সচিব মশিউর রহমান (ঝালকাঠি-১), মো. নিজাম উদ্দিন (ঢাকা-৫), মাহিন সরকার (সিরাজগঞ্জ-৫), যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন (নওগাঁ-৫), যুগ্ম সদস্য সচিব এস এম সাইফ মোস্তাফিজ (সিরাজগঞ্জ-২), জয়নাল আবেদীন শিশির (কুমিল্লা-১০), যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মেজর (অব.) আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (গাজীপুর-৩), মোল্যা রহমতুল্লাহ্‌ (বাগেরহাট-৩), যুগ্ম সদস্য সচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত (ফেনী-২), দক্ষিণাঞ্চলের যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এস এম শাহরিয়ার (ঢাকা-৫), যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক গোলাম মর্তুজা সেলিম (ঠাকুরগাঁও-৩), সাকিল আহমাদ (মেহেরপুর-২), আবদুল্লাহ আল ফয়সাল (নরসিংদী-৫), খান মুহাম্মদ মুরসালীন (ঢাকা-৬), নাভিদ নওরোজ শাহ্‌ (কুমিল্লা-৬), উত্তরাঞ্চলের সংগঠক আবদুল্লাহ আল মনসুর (ফেনী-২), মো. ইমরান হোসেন (ঢাকা-২), এহসানুল মাহবুব জোবায়ের (ফেনী-১), ফাহিম রহমান খান পাঠান (নেত্রকোনা-২), সোহেল রানা (মেহেরপুর-১) ও সাইয়েদ জামিল (রাজবাড়ী-২)। 

অনুসন্ধান'র অন্যান্য খবর