মি ডি য়া

ড. ইউনূসের পদত্যাগের জল্পনা নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় জোর আলোচনা

কলকাতা প্রতিনিধি | সরজমিন
মে ২৪, ২০২৫
ড. ইউনূসের পদত্যাগের জল্পনা নিয়ে ভারতীয় মিডিয়ায় জোর আলোচনা

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ জল্পনা এবং তার পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নজর রয়েছে প্রতিবেশি দেশ ভারতের। ভারতের মিডিয়ায় গুরুত্ব সহ প্রকাশ করা হচ্ছে বাংলাদেশের সামপ্রতিক ঘটনাবলির খবর। পর্যবেক্ষকদের মতে, ভারতীয় মিডিয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই অস্থির রাজনীতির ছবিটিকে তুলে ধরছে গুরুত্ব সহকারে ।


কোনও কোনও ভারতীয় মিডিয়ার মতে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের  নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ও আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে ব্যর্থ হওয়ার পরিণতিতে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব তীব্র হচ্ছে। কিছু ভারতীয় মিডিয়ার প্রতিবেদনে স্টারলিংকের বাংলাদেশে প্রবেশ থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির বাড়ি ধ্বংস এবং “মানবিক করিডোরের” প্রস্তাবের মত বিষয়গুলি তুলে ধরা হয়েছে।


কলকাতা থেকে প্রকাশিত আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নিঃসন্দেহে কোনঠাসা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। কিন্তু তার পদত্যাগ করার প্রচারকে এখনও পর্যন্ত নাটক বলে মনে করছে নয়াদিল্লির একটা অংশ। তাদের বক্তব্য, ছাত্র নেতা ও জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন আরও বেশি করে নিজের পক্ষে টেনে এবং তাদের একজোট করে যতদিন সম্ভব ক্ষমতা ধরে রাখাই উদ্দেশ্য ড. ইউনূসের। তাই পদত্যাগ নিয়ে প্রচার একটি কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। বেশিরভাগ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়েছে। সেই প্রতিবেদনে ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে উদ্ধৃত করা হয়েছে, যিনি বলেছেন যে ড. ইউনূস বর্তমান চাপের মধ্যে এই ভূমিকায় তার অব্যাহত থাকার ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ড. ইউনূস “সামগ্রিক বিষয়গুলি” নিয়ে একটি জাতীয় ভাষণের খসড়াও প্রস্তুত করেছিলেন।
ইন্ডিয়া টুডে চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। “ইউনূস পদত্যাগের হুমকি দিয়েছেন, ঢাকায় আবারও ব্যাপক বিক্ষোভের সম্ভাবনা রয়েছে” শিরোনামে বলা হয়েছে, ছাত্র নেতারা ইসলামী দলগুলিকে একত্রিত করছেন।


প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা থেকে শুরু করে নারী বিষয়ক সংস্কার উদ্যোগ বন্ধ করা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি বাসভবন ভাঙচুর করা, সামপ্রতিক এই পদক্ষেপগুলি ছাত্র গোষ্ঠীগুলির প্রভাবে ঘটেছে। দ্য ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস তাদের সংবাদে উল্লেখ করেছে, বৃহস্পতিবার রাতে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম গণমাধ্যমে তার বক্তব্য প্রকাশ করার পর দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথ নিয়ে এমনই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে যে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগের কথা ভাবছেন।বিএনপির একাধিক নেতার সাথে যোগাযোগ করার কথা জানিয়ে পত্রিকাটি লিখেছে, বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন যে, এনসিপি নেতারা ড. ইউনূসের পদত্যাগের গুজব ছড়িয়ে অস্থির জলে মাছ ধরার চেষ্টা করতে পারেন। বিএনপি নেতাদের মতে, তারা এই সরকারের সাথে সহযোগিতা করতে চান যদি পরবর্তী নির্বাচনের জন্য একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ থাকে। অন্যথায়, অনিশ্চয়তা তৈরি হবে এবং গণতন্ত্র ঝুঁকির মুখে পড়বে।


আনন্দবাজার পত্রিকা শনিবারের সংস্করণের প্রথম পৃষ্ঠার প্রধান শিরোনাম করেছে, “সেনা, বিএনপির চাপে কোনঠাসা ইউনূস/‘ইস্তফা’ কৌশল, ধারণা নয়াদিল্লির”। এই বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দিনে সে দেশের রাজনীতি কোন দিকে বাঁক নেয়, তা এখনই চূড়ান্ত হিসেবে ধরে নেওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করা হচ্ছে।
কলকাতা থেকে প্রকাশিত আজকাল পত্রিকার শিরোনাম করেছে, “সংস্কার আগে, ভোট পরে, ইউনূসকে নিয়ে বাংলাদেশে বিতর্ক, ফের মিছিল, কী হবে ভবিষ্যৎ।” এই রিপোর্টে মার্চ ফর ইউনূস নিয়ে মিছিলের আহ্বানের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। 


ভারতের বিভিন্ন মিডিয়া ওয়েবসাইটের ইউটিউব আলোচনায় ইউনূসের ইস্তফার জল্পনা নিয়ে নানা ধরণের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে। ফার্স্ট পোস্টের প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কি পদত্যাগের দ্বারপ্রান্তে? রাজনৈতিক দলগুলি একটি সাধারণ ভিত্তি অর্জন করতে না পারার কারণে নোবেল বিজয়ীর কাজ করা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে বলে জল্পনা তুঙ্গে উঠার সাথে সাথে সকলেই এই প্রশ্নটি জিজ্ঞাসা করছেন।  আরও বলা হয়েছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচন অনুষ্ঠান বা আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে ব্যর্থ হওয়ার পর বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মধ্যে বিভেদ আরও তীব্র হচ্ছে। এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের উদ্বেগজনক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, অনেক বাংলাদেশি পর্যবেক্ষক আশঙ্কা করছেন যে ড. ইউনূসের পদত্যাগের হুমকি আসলে সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে একটি পূর্ণাঙ্গ আন্দোলন শুরু করার একটি চক্রান্ত। প্রকৃতপক্ষে, সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টগুলিতে দেখা যাচ্ছে যে কিছু কর্মী বিশাল আন্দোলনের প্রস্তুতি এবং পরিকল্পনা করছেন।


আরও মন্তব্য করা হয়েছে, এটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির জন্য শুভ লক্ষণ নয়, যা গত আগস্ট থেকে ইতিমধ্যেই অস্থিরতার মধ্যে নিমজ্জিত। বিশ্বব্যাংক তার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে আনার সাথে সাথে দেশটির অর্থনীতি মন্দার মধ্যে রয়েছে, সতর্ক করে দিয়েছে যে দেশটি ৩৬ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ধীর প্রবৃদ্ধি দেখতে পারে। ভারতের সাথে বাংলাদেশের বিচ্ছিন্নতার ফলে এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে, যার ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সুযোগ থেকে শুরু করে সংকটের সময় অর্থনৈতিক সহায়তা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সুবিধা হারিয়েছে। 

সরজমিন'র অন্যান্য খবর