তীর্যক মন্তব্য

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর আমাদের উঠে দাঁড়ানোর পরীক্ষা

হাসান মামুন | মতামত
জুলাই ৫, ২০২৫
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর আমাদের উঠে দাঁড়ানোর পরীক্ষা

গেল বছরের ৫ই আগস্ট দেশে যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটে, তার সূত্রপাত হয়েছিল জুলাইয়ে। গত সাড়ে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থান ঘটেছিল জুলাই-আগস্টে। তার তোড়ে কার্যত পালিয়ে যেতে হয় গোটা সরকারকে। সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল ও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে সম্পর্কিত অনেককেও গা-ঢাকা দিতে হয়। এ অবস্থায় তাদের একাংশ ধরা পড়ে। যারা ধরা পড়েনি, তাদের নামেও মামলা হয়। ফৌজদারি মামলাই বেশি। পরে অবশ্য অনেকের নামে দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের মামলা দেয়া হচ্ছে। হাসিনার শাসনামলে দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ এবং তা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। চলছে সেগুলো খুঁজে বের করে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার এসব কাজে নিয়োজিত। 
 

তাদের সর্বশেষ কাজ অবশ্য একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। গণতন্ত্রে উত্তরণের তো কোনো বিকল্প নেই। সত্যি বলতে কী, হাসিনা সরকার তিনটি ভুয়া নির্বাচন করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াই ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং কায়েম করেছিল এক নজিরবিহীন স্বৈরতন্ত্র। এর বিরুদ্ধে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামেও সুফল মিলছিল না শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা দমন-পীড়নে পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন বলে। তারা এমন পরিকল্পনাও করেছিলেন, অন্তত ২০৪১ সাল পর্যন্ত এভাবেই দেশ চালাবেন। তার পরেরটা পরে দেখা যাবে! জুলাইয়ে নতুন করে সৃষ্ট কোটা সংস্কার আন্দোলনও তারা নির্বিচার দমন-পীড়নে শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলন দমনের চেষ্টা অবশ্য ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়; তা বুমেরাং হয়েও আসে। ন্যায্য দাবি মেনে না নিয়ে দমন-পীড়নের পন্থা অবলম্বন করায় আন্দোলনটি ক্রমে রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করে। দীর্ঘদিন ধরে বিক্ষুব্ধ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ, এমনকি দলমত নির্বিশেষে নাগরিক সমাজ এর সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত হয়ে পড়ে। এর পরের ইতিহাস সবার জানা। এ বছরের ১লা জুলাই থেকে আগস্টের ৫ তারিখ পর্যন্ত এসব তাজা ঘটনা নতুন করে বর্ণিত হবে। একেক পক্ষ নিজ নিজ দৃষ্টিকোণ থেকে এর কার্যকারণ ব্যাখ্যা করবে, সেটাও স্বাভাবিক। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে দেশে-বিদেশে গবেষণা হবে, তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। 
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবির সহজ নিষ্পত্তির সুযোগ সরকার গ্রহণ করলে কী হতো, এ প্রশ্ন তুলে এখন আর লাভ নেই। আমাদের আলোচনা করতে হবে সেটি না হওয়ার কারণে যা ঘটে গেছে, তা নিয়ে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি সাধারণ অর্জনের কথা সহজেই বলা যায়। তা হলো জগদ্দল পাথর হয়ে ওঠা একটি ক্ষমতায় মদমত্ত সরকারের পতন। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্যদিয়ে যদি সরকার বিদায় নিতো, তাহলে সেটি হতো স্বাভাবিক ঘটনা। তাতে গণ-অভ্যুত্থানে তৃণমূল পর্যন্ত তাদের তছনছ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটি ঘটতো না। হাসিনা সরকারের দলীয় বাহিনীতে পরিণত পুলিশও নজিরবিহীন প্রতিক্রিয়ার শিকার হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশকেও দীর্ঘদিন রাস্তায় দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর হতে চললেও পুলিশকে কিন্তু এখনো যথেষ্ট মাত্রায় সক্রিয় করে তোলা যায়নি। সে কারণে আবার সেনাবাহিনীকে পর্যায়ক্রমে মেয়াদ বাড়িয়ে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে ব্যারাকের বাইরে পুলিশি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তারপরও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষসহ বিভিন্ন ক্ষমতাহীন অংশের ওপর মব ভায়োলেন্স বন্ধ করা যাচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলার অবনতির ধারা বিপরীতমুখী হচ্ছে না। তাতে ব্যবসার পরিবেশও বিনষ্ট হয়েছে। অর্থনীতি স্থবিরতায় আক্রান্ত। কর্মসংস্থান বাড়ছে না। এর মধ্যে বিগত সরকারের রেখে যাওয়া মূল্যস্ফীতিও আসছে না নিয়ন্ত্রণে। 
 

অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের দিকে গেলে পরিস্থিতি কেমন হতো, সেটাও নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যেই একটি উৎকৃষ্ট নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথ করে দিয়েছিল। পরবর্তীকালে এ ধরনের আরও দু’টি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। আশা করা হচ্ছিল, দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এসব নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে এবং এক সময় সুষ্ঠুভাবে জাতীয় নির্বাচন করতে আর দলনিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে না। কিন্তু সে প্রত্যাশা পূরণ না হয়ে ঘটেছে ভিন্ন কিছু। এর দায় রাষ্ট্রক্ষমতায় আসা-যাওয়া করা দুই রাজনৈতিক দলকেই নিতে হবে। তবে হাসিনা সরকারকে নিতে হবে এর চূড়ান্ত দায়। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার বিধানই বাতিল করে দেয় এবং একদলীয়ভাবে দেশ পরিচালনার দিকে চলে যায়। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মাঝে একটি নির্বাচনে এলেও ‘রাতের ভোট’ আয়োজন করে তাদের বোকা বানানো হয়। জাতিকেও করা হয় চরমভাবে অপমানিত। এরপরও ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনটিকে গ্রহণযোগ্য করতে এমনকি আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় থেকে রীতিমতো চাপ সৃষ্টি করা হয়। সরকার সেটাকে অকার্যকর করে দেয় একটি আঞ্চলিক শক্তির সহায়তায়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সেই শক্তির প্রভাব বলয়ও ভেঙে চুরমার হয়েছে বলে ধারণা। শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বড় অংশটি সেখানেই গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। সে দেশটির সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সম্পর্ক স্বভাবতই খারাপ। দু’দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের সমর্থন অবশ্য অটুট। প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ভাবমূর্তিও এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। তবে গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর সমর্থনে তার নেতৃত্বে যে সরকার গঠিত হয়েছে, সেটি দুর্বল। উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল এনে এটাকে শক্তিশালী করার উদ্যোগও লক্ষ্য করা যায়নি। এ সরকারের ‘রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা’ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। শুরু থেকে সরকার একটি পক্ষের দিকে হেলে আছে এবং তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়তা জোগাচ্ছে বলে অভিযোগ কম জোরালো নয়। সরকার অবশ্য শুরু থেকে বলছে, ‘রাজনৈতিক ঐকমত্য’ ছাড়া অগ্রসর হবে না। সংস্কার, বিশেষত রাষ্ট্র সংস্কার এ সরকারের একটি বড় এজেন্ডা বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। সংস্কার দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত এবং এতে করে স্বৈরতন্ত্র জন্ম নিচ্ছে বলে মত জোরালো বৈকি। তবে রাষ্ট্র সংস্কারই হাসিনা সরকার পতনের প্রধান লক্ষ্য কিনা, এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। সেটা থাকলেও কোনো দলই সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা পুরো অস্বীকার করছে না। সংস্কার কমিশনগুলোর বাছাইকৃত সুপারিশ নিয়ে আয়োজিত সংলাপেও তারা অংশগ্রহণ করছে। বেশ কিছু প্রশ্নে ঐকমত্যও হচ্ছে পরিলক্ষিত। সাংবিধানিক ক্ষেত্রে মৌলিক সংস্কারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় সরকার পক্ষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মাঠে থাকা প্রধান দল বিএনপিকে যত বেশি সম্ভব সংস্কারে রাজি করানোর প্রয়াসটি লক্ষণীয়। মনে করা হচ্ছে, নির্বাচন হলে বিএনপিই ক্ষমতায় আসবে। সেক্ষেত্রে দলটি যাতে সংস্কারের ধারা বহাল রাখে, সেটা নিশ্চিত করাই লক্ষ্য। যারা সহসা ক্ষমতায় আসবে না বলে ধারণা, তাদের লক্ষ্য হলো সংস্কারের মাধ্যমে রাজনীতিতে নিজেদের অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়ানো। কোনো পক্ষের চেষ্টাতেই সেক্ষেত্রে দোষের কিছু নেই। 
 

অধিক সংস্কারের চেষ্টায় কালক্ষেপণ ও নির্বাচন পিছিয়ে যাওয়ার কারণে দেশে অরাজকতা বাড়ছে বলে অবশ্য মত রয়েছে। অর্থনীতিও গতি পাচ্ছে না। মাঝে অর্থ উপদেষ্টা বলেছিলেন, নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়ে আসতে থাকায় উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থ ছাড়ে এগিয়ে আসছে। তার কথায় বোঝা যায়, নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ও অপেক্ষা করছে। জাতিও অপেক্ষা করছে বললে ভুল হবে না। গণ-অভ্যুত্থানের পর এগারো মাস চলে গেলেও সংস্কারের পাশাপাশি ক্ষমতাচ্যুতদের অপরাধী অংশের বিচারেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি কিন্তু হয়নি। ঢালাও মামলা দায়েরের ঘটনায় সরকারও বিব্রত বলে মাঝে মাঝে বক্তব্য দিয়ে থাকে। সেগুলোকে সুশৃঙ্খল করে আনার উদ্যোগও কিন্তু পরিলক্ষিত হচ্ছে না। রাজনীতির একটি পক্ষ থেকে আবার বিচার ও সংস্কারে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে নির্বাচন হতে দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। মাঝে লন্ডনে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার আলোচিত বৈঠকে নির্বাচনের সময় এগিয়ে আনার ব্যাপারে যে ঐকমত্য হয়, তাতেও রয়েছে বিচার ও সংস্কারে ‘পর্যাপ্ত অগ্রগতি’র শর্ত। কোন্‌ পর্যন্ত অগ্রগতিকে ‘পর্যাপ্ত’ বলা যাবে, সেটা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। তবে সংস্কারের সংলাপ শেষে চলতি জুলাইয়ের মধ্যে এর সনদ হয়ে যাওয়ার কথা। তাতে স্পষ্ট হবে, কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার বর্তমান সরকারের আমলে হবে এবং ঠিক কবে নাগাদ হবে নির্বাচন। 
নির্বাচনটি ফেব্রুয়ারিতে, রোজার আগে হয়ে গেলেই সব দিক থেকে মঙ্গলজনক। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিও জোরদার হয়ে উঠেছিল মাঝে। গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম অংশীজন সেনাবাহিনীর প্রধানও এমন প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেছিলেন। সেটা ঘিরে আবার সরকারের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি বড় শঙ্কার বিষয় হয়ে ওঠে। সেটা কেটেছে। রাজনৈতিক দলগুলো এক্ষেত্রে রেখেছে ইতিবাচক ভূমিকা। তাদের মধ্যে গণ-অভ্যুত্থানের সময়কার ঐক্য আর নেই বটে। নতুন প্রেক্ষাপটে তাদের মধ্যে মতপার্থক্য বাড়ছে, সেটাও স্বাভাবিক। সরকারের সঙ্গেও সব রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক একই রকম নয়। গণ-অভ্যুত্থানের পর এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়াটা ‘হতাশাজনক’ হতে পারে; কিন্তু অস্বাভাবিক বলা যাবে না। এ অবস্থায় সরকারকে আবার বলা হচ্ছে তার রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা স্পষ্ট করার কথা। কেননা, এ সরকারকেই আগামী নির্বাচনটি নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা বারবারই বলছেন, ইতিহাসের সবচেয়ে ভালো নির্বাচনটি তাদের দ্বারা সম্পন্ন হবে। এ অবস্থায় এমন আলোচনাও রয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত দলের অপরাধী অংশের বিচার চলাকালে তাদের অপর অংশটি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা। সরকার সাময়িকভাবে দলটির ‘কার্যক্রম’ নিষিদ্ধ করেছে। তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সম্ভাবনা কিন্তু একেবারে নাকচ করা হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ও চাইছে- কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ না হোক। এ মতও দেশে জোরালো যে, আওয়ামী লীগ আদৌ কোনো রাজনৈতিক দল হিসেবে অস্তিত্বশীল কিনা! 
 

গণ-অভ্যুত্থানে কোনো রাজনৈতিক দল দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে উৎখাত হয়ে গেলে কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে, সেটা তাদের নিরপরাধ সমর্থকরাও লক্ষ্য করছে। রাজনীতিতে এদের অংশগ্রহণের সুযোগের বিষয়টিও কম আলোচিত হচ্ছে না। শেখ হাসিনার শাসনামলে ভেঙে পড়া রাষ্ট্রকে গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনাটাই এখন প্রধান কাজ। জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনকারীদের বিচার এবং রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার কতোদিনে সম্পন্ন করা যাবে, সে প্রশ্ন রয়েছে। কিন্তু এটি করতে গিয়ে নির্বাচনকে বিলম্বিত বা দূরবর্তী করাটা কোনো কাজের কথা হবে না। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সাধারণ অর্জন যদি হয় হাসিনা সরকারের পতন, তবে এর পরবর্তীকালে সাধারণ লক্ষ্য হলো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান। সম্ভাব্য সব পক্ষকে নিয়ে সেটা যত দ্রুত সম্পন্ন করা যায়, ততই মঙ্গল। তাতেই অবশ্য জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন ঘটবে না। তবে এর ভেতর দিয়েই এগোতে হবে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের পথে। সেটা বন্ধুর পথ বটে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেও কিন্তু আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেছিলাম। দুর্ভাগ্যবশত তাতে হোঁচটই খেতে হয়েছে বেশি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সেখান থেকে শক্তভাবে উঠে দাঁড়াতে বলছে আমাদের। উঠে দাঁড়ানোর সে পরীক্ষাটাই রয়েছে সামনে।
লেখক: সাংবাদিক, কলাম লেখক

 

মতামত'র অন্যান্য খবর