সা ক্ষা ৎ কা র

যেকোনো লোক নির্বাচনে দাঁড়াতে পারাটাও সুষ্ঠু নির্বাচন

পিয়াস সরকার | সাক্ষাৎকার
ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
যেকোনো লোক নির্বাচনে দাঁড়াতে পারাটাও সুষ্ঠু নির্বাচন

আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে যারা জাতীয় পার্টির বিচার চাইছে তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে অনুসরণ করেছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। আমাদের বিরুদ্ধে অবিচার, অন্যায়, জুলুম করা হচ্ছে। জুলুম করাটাকে আল্লাহ্‌ সহ্য করেন না। জাতীয় পার্টির দলীয় কোন্দলটা দীর্ঘদিন ধরে শেখ হাসিনা জিইয়ে রেখেছিলেন। যার কারণে আমাদের দলের এই দুর্গতি হয়েছে। আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই- আমরা মনে করি বাংলাদেশের স্বার্থের জন্য এটা অনুকূলে। কিন্তু কোনো কিছু ছাড় দিয়ে নয়। যেকোনো লোক নির্বাচনে দাঁড়াতে পারাটাও সুষ্ঠু নির্বাচন। ভবিষ্যৎটা সকলের কাছে পরিষ্কার নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের।
কাঠগড়ায় জাতীয় পার্টি। ভোট ব্যাংকে বরাবরই তলানিতে। তবুও নির্বাচনের সময় যুগে যুগে ট্রাম্প কার্ড হয়ে সামনে আসে দলটি। শেখ হাসিনা শাসিত সরকার পতনের পর দোসর হিসেবে নাম এসেছে জাতীয় পার্টির। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে দাবি তুলেছে বিচারের। সমসাময়িক রাজনৈতিক নানা বিষয় নিয়ে সম্প্রতি ‘জনতার চোখ’-এর মুখোমুখি হয়েছিলেন দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। 


আন্দোলনের সময়ে জাতীয় পার্টির ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রথমে আন্দোলন ছিল কোটাবিরোধী। এরপর এটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। আমি আন্দোলনের পক্ষে সংসদে বক্তব্য দিয়েছি। প্রায় প্রতিদিন পাবলিক মিটিংয়ে বক্তব্য দিয়েছি। যেসব অপকর্মের জন্য জনগণ আওয়ামী লীগকে এখন দোষারোপ করছে এগুলো আমি তুলে ধরেছি অনেক আগে। আমাদের অনেক নেতাকর্মী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। আমাদের দু’জন নেতা নিহত হয়েছেন। অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছে, জাতীয় পার্টির অনেকের নামে হুলিয়া হয়েছিল, তারা পালিয়ে ছিলেন। এগুলো তালিকা, মামলার নম্বরসহ প্রকাশ করেছি। এই আন্দোলনে আমরা সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলাম। এটা শুধু ছাত্রদের আন্দোলন ছিল না, এটা জনগণের আন্দোলন ছিল। ছাত্ররা আন্দোলনটা শুরু করেছিলেন। যখন ছাত্রদের নির্বিচারে মারা হচ্ছে, অত্যাচার করা হচ্ছে তখন তাদের সাপোর্ট করেছি। ছাত্রদের এই আন্দোলনকে জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে আমি যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেছি বলে মনে করি। আমরা কিন্তু একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে সাহস করে দাঁড়িয়েছিলাম। আমার ছেলেগুলো যখন অ্যারেস্ট হয় তাদের বাবা-মাকে গিয়ে বোঝাতে হয়েছে। সমর্থন দিতে হয়েছে। এই কথাও বলেছিলাম, ছাড়িয়ে আনতে না পারলে আমি নিজে জেলখানায় যাবো। এখন যারা এসব কথা বলছেন- এখন প্রশ্ন উঠছে তারা কী সঠিকভাবে মূল্যায়ন করেছেন বা অনুসরণ করছেন? নাকি কারও ইনফ্লুয়েন্সে এটা করছেন? এটা আমাকে অত্যন্ত দুঃখ দিয়েছে। এখন এসে আমরা দোসর হয়ে গেলাম। যেহেতু আমরা এখানে- ওখানে নির্বাচন করেছি। আমি মনে করি আমাদের বিরুদ্ধে অবিচার, অন্যায়, জুলুম করা হচ্ছে। জুলুম করাটাকে আল্লাহ্‌ সহ্য করেন না। 


তৃণমূলের মতামত অগ্রাহ্য করে জাতীয় পার্টি কেন ’২৪-এর নির্বাচনে গেল? এই প্রশ্নের জবাবে সংসদের সাবেক এই বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, আমরা ’২৪-এর নির্বাচনে স্বাভাবিকভাবে যাই নাই। আমরা একাধিকবার স্পষ্ট করেছি কী পরিস্থিতিতে আমরা নির্বাচনে গিয়েছি। এই বিষয়টি নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি করা হচ্ছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা হচ্ছে। একটা গোষ্ঠী হয়তো আমাদের ভুল বুঝেছেন বা তারা মানুষকে আমাদের বিষয়ে ভুল বোঝাতে চাচ্ছেন। সেই সময়ে যারা দায়িত্বরত ছিলেন তারাও প্রতিবাদ করেন নাই যে, এই কথাটা সত্য নয়। নির্বাচনে না গেলে দলের ভবিষ্যৎ কী হতো, আমার কী হতো, সেটা ওই মুহূর্তে অ্যাসেস করা সম্ভব ছিল না।


নির্বাচনের পরে পরাজিত প্রার্থীরা টাকার ভাগবাটোয়ারার প্রশ্ন তুলেছিলেন। এবিষয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদের ভাই বলেন, এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক বিষয়। আমরা যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম নির্বাচনে যাবো সেহেতু ৩০০ আসনেই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা চেয়েছিলাম সব জায়গায় আমাদের লোক থাকুক; জিতুক বা হারুক। আমরা বলেছিলাম, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকতে হবে। কাউকে অর্থ দেয়া হবে তা নয়। প্রার্থী নির্বাচন করার সময় তাদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, নির্বাচনে যাবেন আপনাদের সামর্থ্য আছে কিনা? আমরা চেয়েছিলাম জনগণকে জানাতে যে, মাঠে লাঙ্গল আছে। শেষ পর্যন্ত থাকতে। এর পরেও অনেকে অনেক কথা বলেছেন। এটা আমাদের দলের জন্য দুর্ভাগ্য। দলীয় কোন্দলের কারণে একজনের কথা আরেকজনকে লাগানো হয়েছে। তবে এই কথার কোনো ভিত্তি নাই যে, এখানে ভাগবাটোয়ারা হয়েছে বা টাকাপয়সার লেনদেন হয়েছে। এটাও একটা অপপ্রচার।


আরেক প্রশ্নের জবাবে জিএম কাদের বলেন, যখন নির্বাচন থেকে সরে আসার আর কোনো সুযোগ নেই, তখন আমরা চাচ্ছিলাম যাতে আমাদের প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে। এজন্য কিছু আসনে ছাড় দেয়া। কথা ছিল সেসব আসনে নৌকা মার্কা থাকবে না। এর বিপরীতে যাকেই দেন তার সঙ্গে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো। সেখানে আরও কয়েকজনের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু অন্যদের কথা না মেনে আমার স্ত্রীরটা (প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদের) মেনে নেয়া হলো। রটনা যারা করেছেন এটার মধ্যে কোনো ভিত্তি নেই। এটা আমাদের দলের লোকজনও প্রচার করেছেন। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। দলীয় কোন্দলটা দীর্ঘদিন ধরে শেখ হাসিনা জিইয়ে রেখেছিলেন। যার কারণে আমাদের দলের এই দুর্গতি হয়েছে। না হলে আমাদের দল আরও ভালো করতো।
’২৪-এর নির্বাচনের আগে ভারতের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে বাণিজ্য এবং বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমার কিছুটা ভুল ছিল। ভারত থেকে ফেরার সময় আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলাম। এয়ারপোর্টে হঠাৎ করে এসে দেখি লোকজন হৈচৈ শুরু করেছেন। আমি ভাবলাম পরের দিন একটা সংবাদ সম্মেলন করে জানাই। এয়ারপোর্টে হঠাৎ প্রেসার দেয়ায় আমি বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কূটনৈতিক শিষ্টাচার বলেও একটা কথা রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে কোনো কথাবার্তা হলে আমরা দুই দেশের সমর্থনেই সেটা রিভিল করতে পারি। সেই কথাটা আমি ভুলক্রমে বলে ফেলেছি (তিনি বলেছিলেন, ভারতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে- এটা আমি বলতে পারবো না। তারা যদি প্রকাশ করতে চান, করবেন কিন্তু তাদের অনুমতি ছাড়া আমি কিছু বলতে পারবো না)।


তিনি বলেন, আমি পূর্বেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বৈঠক করেও এই কথা বলেছি যে, ওদের সঙ্গে কথা বলে এটা বলবো। ভারতের সঙ্গে বৈঠকের পর এটা আমি হঠাৎ করে বলে ফেলেছিলাম। এটা আমার এখন পর্যন্ত সব থেকে বড় রাজনৈতিক ভুল। যেটাকে ব্যাপকভাবে অপপ্রচার করা হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে কোনো কারণ ছাড়াই বিরাট এলিগেশন আনা হয়েছে। কী কথা হয়েছে না হয়েছে- পরবর্তীকালে আমি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছি। ভারত যেহেতু সো সেনসিটিভ এটা আমার বুঝতে ভুল হয়েছে।


ভারতের আশীর্বাদে জাতীয় পার্টি রাজনীতি করে কিনা- এই প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষার্থী বলেন, এটাও আমাদের নিয়ে প্রচারণা করা হয়। বাংলাদেশে তিনটি দল শাসন করেছে। জাতীয় পার্টির শাসনামলে ভারতকে কখনোই বড় ধরনের ছাড় দেয়া হয়নি। এরশাদ সাহেব সবসময় দেশকে প্রাধান্য দিয়েছেন। জাতীয় পার্টির আমলে তিনি খুব সুন্দরভাবে নেগোসিয়েট করতেন। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকা উচিত বলে আমি মনে করি। বিশেষ করে ভারত শুধু একটা বৃহত্তর দেশ নয়, বৃহত্তর অর্থনীতি। অগ্রসরমান অর্থনীতি। বাংলাদেশ যদি সুসম্পর্ক রাখে তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। ভারতের সঙ্গে শত্রুতামূলক সম্পর্ক রেখে অর্থনীতিতে ভালো করা কঠিন। সম্পর্ক ভালো রাখা এক জিনিস। আর ছাড় দেয়া খারাপ জিনিস। আওয়ামী লীগের বিষয়ে কিছু বলছি না। বিএনপি’র আমলে কিছু পণ্যে ছাড় দেয়া হয়েছিল। যেটা এরশাদ সাহেব দেননি। যার কারণে বাংলাদেশে তৎকালীন সময়ে কিছু টুথপেস্ট ছিল যেগুলো খুব ভালো চলতো। ইন্ডিয়ার মার্কেট খুলে দেয়ায়, ট্যারিফ ব্যারিয়ার তুলে দেয়ায় ওই ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ হয়ে যায়। গ্লোব নামে একটা মশার কয়েল ছিল সেটাও ভারত থেকে পণ্য আসতে দেয়ায় ধ্বংস হয়ে গেছে। বাংলাদেশে কোনো পণ্যের প্রচারণায় ভারতীয় অভিনেতা-অভিনেত্রী দিয়ে করানো হলে হাই ট্যারিফ দেয়া লাগতো। এটা উঠিয়ে দেয়া হয়। যার কারণে এখন বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। এসব দুই/একটি কথা মনে আছে কিন্তু আমার জানামতে এরশাদ সাহেব কোনো ছাড় দেননি। সরকারের বাইরে যে আমরা রাজনীতি করেছি, আমরাও ভারতকে কোনো ধরনের বিশেষ সুবিধা দেই নি। আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই। আমরা মনে করি বাংলাদেশের স্বার্থের জন্য এটা অনুকূলে। কিন্তু কোনো কিছু ছাড় দিয়ে নয়।  
জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছি যারা দেশ চালাচ্ছেন তারা দুটো ভাগে ভাগ করে ফেলেছেন। দেশপ্রেমিক আর দেশপ্রেমিক নয়। আওয়ামী লীগের আমলে কেউ নির্যাতিত ছিলেন কিনা, আবার অনেকে আওয়ামী লীগের আমলে সুবিধাও পেয়েছেন কিন্তু তার কোনো নিকট আত্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন কিনা; তারা সবাই দেশপ্রেমিক। বাকিরা দেশপ্রেমিক নন। যারা দেশপ্রেমিক তাদের জন্য কোনো আইন প্রযোজ্য নয়। তারা আইনি বা বেআইনি যেকোনো ধরনের কাজ করতে পারবেন। যাকে তাকে গালাগালি করতে পারবেন। ধরতে পারবেন, মারতে পারবেন, বাড়িঘর লুট করতে পারবেন, দখল করতে পারবেন। আমাদের ৫০ শতাংশের বেশি রিজেন্টিভকারী দল এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আমাদের কথা বাদ দিলাম...কর্নেল অলি, বীরবিক্রম (লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, কাদের সিদ্দিকী, বীরউত্তম (কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, বীরউত্তম), বিকল্প ধারার মেজর মান্নান (বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সাবেক মহাসচিব মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান) আরও অনেক নাম আছে যাদের বাদ দিয়ে দেশপ্রেমিক নন এই ক্যাটাগরিতে ফেলা হয়েছে। আর যারা দেশপ্রেমিক নন তাদের ওপর যেকোনো কাজ করার একটা ফ্রি লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এটাতে সাধারণভাবেই মনে হয়েছে দেশটা ঐক্যের জায়গায় থাকছে না। যারা অত্যাচারিত হচ্ছে তারা সাধারণভাবে একটা সময় অত্যাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেন। যারা উপদেষ্টা আছেন তারা অনেক সিনসিয়ার মনে হচ্ছে।


তিনি আরও বলেন, যাকে-তাকে মামলা দেয়া হচ্ছে। প্রথমে ছিল হাজার হাজার, এখন দেয়া হচ্ছে লাখ লাখ মানুষকে। গণমাধ্যমে খবর হচ্ছে, মামলার নামে চাঁদাবাজি হচ্ছে। উপদেষ্টারাও বলছেন, পুলিশরা বলছেন। এগুলো তো বন্ধ হচ্ছে না বরং বাড়ছে। তাহলে কী ওনাদের আন্তরিকতার অভাব নাকি ওনাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে? সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা আছে এটা তো বোঝাই যাচ্ছে। আমার কাছে মনে হচ্ছে একটা ডিভিশন করা হচ্ছে। সার্বিক ঐক্য, সবাই আমরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। অনেকেই মৌন সমর্থন জানিয়েছিলেন। অনেক আওয়ামী লীগ নেতাও সমর্থন জানিয়েছিলেন। অনেকেই বঞ্চিত ছিলেন। শেখ হাসিনাকে অনেক আওয়ামী লীগ নেতা দেশের স্বার্থে চাচ্ছিলেন না। আওয়ামী লীগ করলেই সবাই দেশপ্রেমিক না বা সবাই দেশদ্রোহী, জাতীয় পার্টি করলে সবাই দেশদ্রোহী এটা ভুল। ওনারা কীসের ভিত্তিতে এটা করছেন জানি না। দেশের একটা বৃহৎ অংশকে ঐক্যের বাইরে রাখছেন তখনই আমরা বলেছি, ঐক্যের ডাক দেয়া যেখানে উচিত ছিল সেখানে অনৈক্যের সূচনা করছে বলে আমরা আশঙ্কা প্রকাশ করছি।


নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, এখনো কোনো পরিবেশ নেই। সংস্কারের বিষয়ে আমরাও প্রস্তাব দিয়েছি। যদিও আমাদেরটা গ্রহণ করেনি। এই সংস্কার জাতীয় সংসদে পাস করতে হবে। জাতি ঐক্যবদ্ধ না হলে এগুলো পাস করাতে সমস্যা হবে। এটাকে ওনারা প্রস্তাব হিসেবে দিয়ে চলে যেতেই পারেন। জাতি যদি ঐক্যবদ্ধ না হন পাস করা নিয়ে সমস্যা হতে পারে। যেভাবে এনারা করেন হ্যাঁ বা না- এটা জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এটা আমাদের দেশের আইনে নাই। জনগণের সমর্থন পাওয়ার পরই এটা গ্রহণযোগ্য হবে। নির্বাচন আয়োজনে প্রশাসনের মনোবল অনেক কম। তারা দেশপ্রেমিক নন জেনে চলে গেছেন। দেশপ্রেমিক নন যারা তাদের ফিট করা হচ্ছে দেশপ্রেমিকদের দিয়ে। সেখানেও আওয়ামী লীগের বিপরীত লোকদের দিয়ে রিপ্লেস করা হচ্ছে। দলীয়করণ হয়ে যাচ্ছে প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জুডিশিয়ারি সব জায়গাতেই। ডিমোরাইলজড কিছু লোক তারা ভাবছেন আমি আজকে আছি কালকে থাকবো কিনা। জেলে দেবে কিনা, ফাঁসি হবে কিনা। কিছু লোক দলীয়করণে চলে আসছেন। সেখানে আবার সরকারি দল যদি একটা কিংস পার্টি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে নির্বাচনে গেলে সঠিক নির্বাচন হবে কিনা? ভোট হলে সবাই ভোট দিতে আসতে পারবে কিনা? আমরা শুধু ভোট দেয়াটাকেই অবাধ নির্বাচন মনে করি না। যেকোনো লোক নির্বাচনে দাঁড়াতে পারাটাও সুষ্ঠু নির্বাচন। ভবিষ্যৎটা সকলের কাছে পরিষ্কার নয়। তিনি বলেন, নির্বাচন যত তাড়াতাড়ি হয় ততই ভালো। আমরা এখন বিচার পাচ্ছি না। নির্বাচনের পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। যেটা আমরা আওয়ামী লীগের সময় পাচ্ছিলাম না- যার কারণেই এত আন্দোলন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টি কখনোই কোনো দলের ছত্রছায়ায় রাজনীতি করে নাই। অ্যালায়েন্স করা মানেই কারও ছায়ায় রাজনীতি করা নয়। বিশ্বের অনেক দেশেই বড় বড় দলের সঙ্গে নির্বাচন করা হয়। ছায়ায় থেকে রাজনীতি এগুলো আমাদের ছোট করার জন্য বলা হয়। আমরা আমাদের প্রতীক নিয়েই রাজনীতি করেছি। যখন জোট করেছিলাম তখন আমাদের দলের জন্য কাজ করেছি। আমরা শেখ হাসিনার সব কথা মানি নাই। আমরা কোথাও গেলে নিজস্বতা বিসর্জন দিয়ে যাই না, কারও ছায়াতেও যাই না। 

সাক্ষাৎকার'র অন্যান্য খবর