প্রতি,
ড. মুহাম্মদ ইউনূস,
প্রধান উপদেষ্টা এবং প্রধান
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
মহাত্মন,
জাতির ইতিহাসে ছাত্র-জনতার অন্যতম গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নামক প্রজাতন্ত্রটি বিনির্মাণের ঐতিহাসিক কর্তব্য পালনে আপনার এবং আপনার নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারকে শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
কিছুদিন পূর্বেই গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মরণপণ সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ দেশের সংগ্রামী ছাত্র-জনতা। সমগ্র দুনিয়ার সামনে প্রজন্মের বীরেরা অসম সাহসিকতার সঙ্গে মৃত্যুকে সংবর্ধিত করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। দেশের নাগরিকদেরকে দাসত্বে পরিণত ও নিয়ন্ত্রণ করার রাজনীতির বিরুদ্ধে, আত্মদানের মাধ্যমে ক্ষমাহীন সংগ্রাম ঘোষণা করার পর এক নতুন বাস্তবতা আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। এখন এমন এক সমাজ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা দরকার, যাতে প্রতিটি মানুষের আকাঙ্ক্ষাসমূহের সার্থক বিকাশ ও চরিতার্থতা লাভ করতে পারে। বিদ্যমান শোষণ আর নিপীড়নমূলক গোটা শাসন ব্যবস্থাটাকে চিরদিনের জন্য বিলুপ্ত করে সমাজের মৌলিক রূপান্তর ঘটানোর রাজনৈতিক প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করতে হবে। স্বাভাবিকভাবে বৈপ্লবিক এই দায়িত্ব আপনার এবং আপনার নেতৃত্বাধীন সরকারকেই বহন করতে হবে।
এই সামাজিক-ঐতিহাসিক পটভূমিতে প্রজাতন্ত্রকে অধিকতর গণতন্ত্রায়নের লক্ষ্যে স্বৈরতন্ত্রবিরোধী, মানবতাবাদী ও বৈপ্লবিক চিন্তাধর্মী উদ্যোগকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের লক্ষ্যে তিনটি প্রস্তাব সুবিবেচনার জন্য উত্থাপন করছি-
১) স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে নির্দেশিত ত্রয়ী আদর্শ ‘সাম্য’, ‘মানবিক মর্যাদা’ এবং ‘সামাজিক সুবিচার’-কে প্রজাতন্ত্রের দার্শনিক ভিত্তি হিসেবে গ্রহণের প্রস্তাবনা উত্থাপন করার ফলে ঘোষণাপত্র জারির দিবসটি, ঐতিহাসিক বিবেচনায় ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ। সুতরাং ১০ই এপ্রিলকে ‘রিপাবলিক ডে’ (জবঢ়ঁনষরপ উধু) ঘোষণা করা, যা প্রজাতন্ত্রের স্মারক হিসেবে মুক্তিকামী মানুষকে যুগে যুগে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
২) ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ ও অভূতপূর্ব বিজয়ের মাধ্যমে, ফ্যাসিবাদ উৎখাতে ইতিহাসের নির্মম গণহত্যার বিপরীতে গণমানুষের সংগ্রামী চরিত্রকে চিরঞ্জীব ও চির-জাগ্রত রাখার লক্ষ্যে ৫ই আগস্টকে ‘ফ্যাসিবাদ পতন’ বা ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’ দিবস/ ঠরপঃড়ৎু ধমধরহংঃ ঋধংপরংস উধু/ অহঃর-ভধপরংঃ উধু ঘোষণা করা।
৩) গণতন্ত্রের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতার আত্মদান এবং অসম সাহসিকতাকে অবিস্মরণীয় করার লক্ষ্যে, ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা শেরেবাংলা নগরে গণতন্ত্র উদ্যান বা খরনবৎঃু ঝয়ঁধৎব প্রতিষ্ঠা করা।
এই তিনটি পদক্ষেপ অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের নৈতিক বৈধতা হিসেবে ইতিহাসের বেদিতে মাইলস্টোন বা খধহফসধৎশ হয়ে থাকবে। তাছাড়া প্রস্তাবগুলোর সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক ও দার্শনিক প্রেক্ষাপট আছে, যার ঐতিহাসিক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
এসব পদক্ষেপ- সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রাম ও ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের অভিপ্রায়ের মতাদর্শগত সংগ্রাম এবং অসমাপ্ত গণতান্ত্রিক বিপ্লব ত্বরান্বিত করায় ভূমিকা রাখবে, যা হবে প্রজাতন্ত্রের গণতান্ত্রিক বিকাশকে বোঝার পদ্ধতিগত চাবি।
উপরোক্ত প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়ন নির্ভর করে আপনার স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ও উদ্যোগ গ্রহণের উপর। কারণ, আপনি ইতিহাসকে সবসময় ঐতিহাসিক সম্ভাবনার ও আশাবাদী দর্শন-এর উপর হাজির করেন।
প্রজাতন্ত্র দীর্ঘজীবী হোক।
শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছাসহ
শহীদুল্লাহ ফরায়জী, গীতিকবি
১৩ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিঃ, ঢাকা।
faraizees@gmail.com