গণবিস্ফোরণে হাসিনা সরকারের পতনের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ঠিক কী ধরনের সরকার গঠিত হয়েছে, তার সদুত্তর পাওয়া আসলেই কঠিন। কীভাবে এমন নজিরবিহীন একটি সরকার গঠিত হয়, সে বিষয়ে মাঝে কিছু কথাবার্তা বলেছিলেন সংশ্লিষ্টরা। তাতেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়নি। এটি এখনই স্পষ্ট হতে হবে, তা নয়। তবে স্পষ্ট হওয়া চাই জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণ। নির্বাচনী তফসিল অবশ্য ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। তাদেরও স্পষ্ট নির্দেশনা পেতে হবে ইউনূস সরকারের কাছ থেকে। সরকার অবশ্য এমন একটা সময়সীমা দিয়ে রেখেছে যে, আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অবশ্যই হবে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
একটা সময় পর্যন্ত দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার ব্যবস্থা ছিল। সাংবিধানিকভাবেই ছিল এটা। বিগত শাসনামলে সেটা কীভাবে বাতিল হয়, তা আমাদের জানা। তারপর তিন-তিনটি অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনে নাগরিকদের ভোটাধিকার হয় পদদলিত। শাসন পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। অর্থনীতি ব্যবস্থাপনায়ও নজিরবিহীন স্বেচ্ছাচার দেখতে হয়। তাতে জনঅসন্তোষ বাড়তে বাড়তে শেষে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের মতো দাবি ঘিরে ঘটে যায় গণবিস্ফোরণ। নজিরবিহীন নিষ্ঠুরতায় আন্দোলন দমনের চেষ্টা ব্যর্থ হলেও সরকারপ্রধান ও তার সহযোগীদের কার্যত পালিয়ে যেতে হয়। এ প্রেক্ষাপট মনে রেখেই পরবর্তী (ইউনূস) সরকারের কার্যক্রম বিচার করা দরকার। বলা হচ্ছে, এ সরকারের প্রধান কাজ তিনটি- বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন। হাসিনা সরকারের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ইউনূস সরকারের পক্ষে সম্পন্ন করা সম্ভব বলে অবশ্য কেউ মনে করেন না। সাড়ে ১৫ বছরের শাসনে তাদের বিরুদ্ধে অনেক গুম-খুন এবং গুরুতর আর্থিক অপরাধের অভিযোগও রয়েছে। দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি নতুন করে সামনে এসেছে গণ-অভ্যুত্থানের পর। কোটার আন্দোলন দ্রুত সরকার পতনের দিকে চলে যাওয়ার সময় অবশ্য সংস্কারের দাবি প্রবলভাবে ওঠেনি। কোটা সংস্কারের প্রশ্নটাই ছিল সামনে। দ্রুত আর গ্রহণযোগ্যভাবে এর নিষ্পত্তি করা হলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো- এতে কোনো সন্দেহ নেই। পরে অন্য কোনো ইস্যুতে হয়তো সরকার বিক্ষুব্ধ জনতার মুখোমুখি হতো। তবে একথা ঠিক, হাসিনা সরকারের পতন ঘটলে যে কোনো পরিস্থিতিতেই সংস্কারের প্রশ্ন উঠতো। মাঠে তার প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি বেশ আগে ‘রাষ্ট্র মেরামতের’ বিষয়টি সামনে এনেছিল ৩১ দফার মাধ্যমে। এরও অনেক আগে, ওয়ান ইলেভেনের সময়ে রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে কম আলোচনা হয়নি। এ লক্ষ্যে কার্যক্রমও গৃহীত হয়। পরবর্তীকালে ধারাবাহিকতা রক্ষার বদলে এর বিপরীতটাই করা হয়েছে। সে কারণেও সংস্কারের প্রশ্নটা সামনে ছিল স্বভাবতই। রাষ্ট্র সংস্কার না হওয়াতেই শাসন পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটতে পেরেছে, এমন মত রয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-তরুণরা এটা গভীরভাবে বিশ্বাস করেন। এমনটা মনে করেন মুহাম্মদ ইউনূসও। মাঠে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোও এ প্রশ্নে ভিন্নমত পোষণ করে না- যদিও সংস্কারের ব্যাপ্তি, গভীরতা ও সময় নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। ড. ইউনূস সরকার এর নিষ্পত্তি করেছে এভাবে যে, ‘রাজনৈতিক ঐকমত্যে’ কিছু সংস্কার করবে বর্তমান সরকার; বাকিটা নির্বাচিত সরকার। তৃতীয়ত, নির্বাচন দেরিতে না দ্রুত- এ নিয়ে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। প্রধান দল বিএনপি ও তার সহযোগীরা বাদে আর কারও দেরিতে নির্বাচন হলে আপত্তি নেই বলেই মনে হচ্ছে। নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি প্রয়োজনীয় সব সংস্কার সেরে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে। এদিকে, সংস্কার ও নির্বাচনের সময়সীমার বিষয়ে সেনাপ্রধান ১৮ মাসের কথা বলে রেখেছেন।
ইতিমধ্যে সরকারের আট মাস পেরিয়ে গেছে। বিচারকাজে অগ্রগতি কম। সংস্কার আলোচনা শেষ হয়নি। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নটি বেশি করে সামনে এসেছে কেবল। মাঝে অবশ্য কিছুদিন জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে আলোচনা বেড়েছিল। সেটা বেশি কল্কে না পাওয়ার পর ইউনূস সরকারকে আরও ভালোভাবে ‘পারফর্ম’ করার সুযোগ করে দিতে নির্ধারিত সময়ের চাইতেও বেশিদিন রাখা যায় কিনা, সে আলাপের প্রবণতা বেড়েছে। ‘হ্যাঁ-না’ ভোটের মাধ্যমে তার সরকারকে পুরো একটা মেয়াদ দেয়া গেলে কেমন হয়, এমন আলোচনাও আছে। ফেসবুকে এসব কথাবার্তা তুলে কোনো কোনো মহল এ-সংক্রান্ত আলোচনা রাজনৈতিক অঙ্গনেও বাড়াতে চাইছে মনে হয়। খোদ ড. ইউনূস এ ব্যাপারে আগ্রহী কিনা, তা জানার কোনো সুযোগ সাধারণ মানুষের নেই। তবে আগামী বছরের জুন অবধি রোডম্যাপ ঘোষণার সময় তিনি স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, তার সহকর্মীদেরও কেউ যেন এর বাইরে কিছু চিন্তা না করেন! সেনাপ্রধানও মাঝে ‘নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি’ পরিহারের আহ্বান জানানোর সময় যত দ্রুত সম্ভব ব্যারাকে ফেরার বিষয়ে সেনাসদস্যদের আগ্রহপূর্ণ অপেক্ষার কথা তুলে ধরেছিলেন। জানি না, এরপরও নির্বাচন অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে কিনা! তবে রাজনীতিতে অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে। ঘোষণা থেকে সরে আসার মতো পরিস্থিতিও সৃষ্টি হতে পারে। ‘দৈব-দুর্বিপাকের’ প্রশ্নও তো রয়েছে। আমরা অবশ্য আশা করে থাকবো, রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতার হস্তান্তর হবে শান্তিপূর্ণভাবে। এর কিছু অনাস্বাদিত সুফলও আমরা পাবো। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতিতে আসা যেকোনো নির্বাচিত সরকারই অনেক বেশি দায়িত্বশীল হবে বলে আমাদের আশা।
অন্তর্বর্তী হলেও ইউনূস সরকার যেসব পদচ্ছাপ বা ‘ফুটপ্রিন্ট’ রেখে যাচ্ছে, সেগুলো কতোটা অনুসৃত হবে- এ ব্যাপারে সংশয় অবশ্য রয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাচ্যুতদের বিচার থেকে নিয়ে সংস্কার অবধি নির্বাচিত সরকার আগের ধারায় কতোখানি চলবে, কে জানে। এটা আবার অনেকখানি নির্ভর করে- কারা নির্বাচিত হচ্ছে, তার ওপর। তবে শেখ হাসিনাসহ প্রধান অভিযুক্তদের বিচারে বড় ছাড় দেয়া কারও পক্ষে সম্ভবপর বলে মনে হচ্ছে না। এ প্রশ্নে একটা ‘রাজনৈতিক ঐকমত্য’ রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে রাজনৈতিক ঐকমত্য নেই। ইউনূস সরকারও দলটিকে নিষিদ্ধ না করার লাইনে রয়েছে। বিচারে দল নিষিদ্ধের বিধান রাখার প্রস্তাবও বাদ দিয়েছেন তারা। আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ অবারিত রাখতে চাওয়ার কারণেও সরকারের এ অবস্থান। আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ রাখতে চায় না সরকার। কিন্তু নির্বাচনের পর কী হবে? ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ ইউনূস সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নিলেও আওয়ামী লীগ কি এরপর রাজনীতিতে ফিরতে পারবে? ধরা যাক, বিএনপি সরকার গঠন করলো। তারা কেমন অবস্থান নেবেন আওয়ামী লীগের ফেরা বিষয়ে? বৈধ রাজনৈতিক দল হলে তার তো স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়ার কথা। তখনো কি বলা হবে, দলটি ক্ষমা চেয়ে আর শেখ পরিবারমুক্ত হয়ে আসুক? ইউনূস সরকার এখনো ‘রিকনসিলিয়েশন’ প্রক্রিয়া উন্মুক্ত করেনি; এ বিষয়ে কিছু বলছেও না। তারা এ ক্ষেত্রে একটা ফুটপ্রিন্ট রেখে গেলে সেটা অনুসরণের প্রশ্ন হয়তো উঠতো। মারাত্মক সব অপরাধের মধ্যেও দলটির একটা নিরপরাধ অংশ তো রয়েছে- প্রচলিত আইনে যাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ নেই। নির্বাচন-উত্তর সময়ে এ প্রশ্ন সম্ভবত নতুন করে বিবেচিত হবে। বিচারে কঠোর থেকেও রিকনসিলিয়েশনের প্রশ্ন বিবেচনা করা সম্ভব বটে।
সংস্কার বিষয়ে যে ‘জুলাই চার্টার’ হতে যাচ্ছে, সেটা ইউনূস সরকারের এক বড় ফুটপ্রিন্ট। সরকার এ বিষয়ে এতটাই সিরিয়াস যে, কোন দল কোন প্রশ্নে কী মত দিচ্ছে- তা জনগণের কাছে প্রকাশ করবে। নির্বাচিত হয়ে কোনো দল বা জোট সেখান থেকে সরে এলে জনগণ যেন জবাবদিহি চাইতে পারে। বিরোধী দলও যেন তাদের করতে পারে প্রশ্নবিদ্ধ। নির্বাচিত হয়ে কোনো দলই সংস্কারে আগ্রহ দেখায়নি; এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রেখে যাওয়া সুপারিশও পাশে সরিয়ে রেখেছে-এটা জনগণের অভিজ্ঞতা বৈকি। এক্ষেত্রে হাসিনা সরকার সম্পূর্ণ বিপরীত ধারায় চলে বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতেও পড়েছে। তার পরিণতি দেখে কেউ আর সে পথ মাড়াবে না বলেই বিশ্বাস। তাছাড়া বিএনপি’র মতো ক্ষমতাপ্রত্যাশী দল তো নিজে থেকে ‘রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা’ দিয়ে বসে আছে। দলটি বলছে, গণ-অভ্যুত্থান বাদে ক্ষমতায় এলেও তারা জনগণকে দেয়া ওইসব প্রতিশ্রুতি রাখতেন। এর সঙ্গে ইউনূস সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর অনেক প্রস্তাব মিলেও গেছে। যেগুলো মেলেনি, সেসব ক্ষেত্রে জটিলতা নিরসন কঠিন নয়। নির্বাচিত সংসদে কিছু সংস্কার বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনেরও সুযোগ রয়েছে। বিরোধী মতের সঙ্গে সমন্বয় করেও এসবের নিষ্পত্তি করা যায়। নব্বইয়ের পর সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন ঘটেছিল সংসদে সরকার ও বিরোধী পক্ষের ঐকমত্যে। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংযোজনেও দুই প্রধান রাজনৈতিক পক্ষ শেষতক একমত হয়েছিল। এর একটি পক্ষ অবশ্য এখন ক্ষমতাচ্যুত হয়ে পলাতক। রাষ্ট্র সংস্কার বিষয়ে তাদের কোনো বক্তব্যও নেই। রাজনীতিতে ফিরে প্রতিশোধ গ্রহণের হুংকার কেবল দিয়ে যাচ্ছেন তারা। এ অবস্থায় মাঠে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যই গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হবে। নির্বাচনের পরও কোন কোন সংস্কার বিষয়ে তাদের ঐকমত্য বহাল থাকে, তা দেখার বিষয়। মূল কিছু প্রশ্নে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া গেলেও সেটা গণতন্ত্র ও সুশাসন জোরদারে কম অগ্রগতি হবে না।
ইউনূস সরকারকে ন্যূনতম যে সংস্কার করতে সব পক্ষই বলছে, তা হলো নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বানচাল হওয়া থেকেই সব বিনষ্টির সূত্রপাত বলে মনে করা হচ্ছে। সেজন্য নির্বাচনের একটা পাকা ব্যবস্থা করেই যেতে হবে সরকারকে, যা অনুসরণে একরকম বাধ্য থাকবে নির্বাচিত সরকার। এ ফুটপ্রিন্ট অনুসরণ করতে হবে সব রাজনৈতিক দলকে। পুলিশ আর বিচার বিভাগ সংস্কার করতেও বলা হচ্ছে সবার ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথ খোলা রাখতে। বাকস্বাধীনতা অবারিত করার ওপরও সবাই জোর দিচ্ছেন। এসব ক্ষেত্রে যেটুকু সংস্কার ইউনূস সরকারের আমলে হবে, তা এগিয়ে নেয়ার দাবি বহাল থাকবে বলেই অনুমান। নির্বাচিত সরকার মূল এসব ক্ষেত্রে কী অবস্থান নেবে, সেটা ঘিরে অনেকখানি আবর্তিত হবে আগামীর রাজনীতি।
এমনটি অবশ্য বলা হয়ে থাকে, সাধারণ মানুষ সংস্কার নিয়ে মাথা ঘামায় না। তারা চায়, পণ্যবাজার শান্ত থাকুক এবং জননিরাপত্তা থাকুক অটুট। তারা চায় কাজের সুযোগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি। তবে এগুলোও যে ঘুরেফিরে সংস্কারের সঙ্গে জড়িত, তা কে না জানে। ইউনূস সরকার রমজানে পণ্যবাজার শান্ত রেখে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে বলে অনেকে শাবাশি দিয়েছেন। রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে পেরেছেন তারা। ব্যাংক খাতে ধস রোধ করেছেন। দেশে বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজন করেও সাড়া জাগিয়েছে সরকার। গণ-অভ্যুত্থানের পর সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিদেশি বিনিয়োগ স্বভাবতই অনেক হ্রাস পেয়েছে। দেশি বিনিয়োগ আর ব্যবসার অবস্থাও খারাপ। এ অবস্থায় ইউনূস সরকারের বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রয়াসও একটি ব্যতিক্রমী ফুটপ্রিন্ট। হাসিনা সরকার যে অর্থনীতি রেখে গেছে, তার ওপর একটি শ্বেতপত্রও প্রস্তুত করেছে সরকার। স্মরণ করা যেতে পারে, ১৯৯১ সালে প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অর্থনীতিসহ বিভিন্ন খাতের ওপর আরও বিস্তৃত কাজ হয়েছিল। সেগুলোর ৫০ শতাংশ বাস্তবায়নের প্রয়াসও কি নেয়া হয়েছিল পরে?
গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ অবশ্য এক নতুন বাস্তবতা। আন্তর্জাতিকভাবেও নতুন পরিস্থিতিতে পড়েছি আমরা। এ অবস্থায় একটা নতুন ধরনের পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণের চেষ্টা করছে ইউনূস সরকার। এক্ষেত্রে পুরনো স্লোগান পরিহার করে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে যেকোনো দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরির ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক লাভালাভের প্রশ্ন এখানে গভীরভাবে বিবেচ্য। জনগণও এ বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠছে বলে মনে হয়। ইউনূস সরকারও রেখে যাচ্ছে ফুটপ্রিন্ট। নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের কারণেও বাংলাদেশ বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। দেশের সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় একটি দলীয় নির্বাচিত সরকারের পক্ষে এ ফুটপ্রিন্ট অনুসরণ করাও কি সহজ হবে?
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট