‘নির্বাচনের সম্ভাবনা ২০২৭ সালেও দেখি না’

পিয়াস সরকার | মতামত
এপ্রিল ২৬, ২০২৫
‘নির্বাচনের সম্ভাবনা  ২০২৭ সালেও দেখি না’

সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মাওলা রনি। তার স্পষ্টভাষী কথায় মুগ্ধ নেটিজেনরা। আলোচনার পাশাপাশি থাকেন সমালোচকদের মুখেও। প্রায়শই কথা বলেন আউট অব বক্সে। ‘যত কথা’য় নবনীতা চৌধুরীর সঙ্গে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। কথা বলেছেন চলমান পরিস্থিতি নিয়ে। প্রসঙ্গক্রমে টেনেছেন ইতিহাসের পাঠও। তিনি বলেছেন,  ভারতই শেখ হাসিনাকে পদচ্যুত করেছে। এর পেছনে তুলে ধরেছেন যুক্তি। তার মতে ২০২৭ সালের মধ্যেও হচ্ছে না নির্বাচন। বলেছেন নির্বাচনের জন্য যে উপকরণগুলো প্রয়োজন তার একটাও এখন নেই। এখন শেখ হাসিনার মতো দিনের ভোট রাতে করাও সম্ভব না। আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে বলেছেন, ১৫ বছর যারা আওয়ামী লীগে বঞ্চিত হয়েছেন এবং আওয়ামী চরিত্র ধারণ করেছেন তারাই সামনে আসবেন। সেইসঙ্গে তিনি বলেছেন জামায়াত যে স্বপ্ন দেখছে তা কখনোই বাস্তবায়ন হবে না।


নির্বাচন কবে হবে? প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, আমার নির্বাচন নিয়ে সন্দেহ আছে। ’২৫ সালে তো হচ্ছেই না, ’২৬-’২৭ সালেও হবে কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। নির্বাচনের জন্য যেসব বিষয় দরকার সেগুলোর একটাও নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আছে অনৈক্য, অবিশ্বাস। প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা। কিন্তু শেখ হাসিনার মতো যদি রাতের ভোটও করতে চান ওটাও এখন সম্ভব না। এখন একটা মব হচ্ছে। পুলিশ ইনঅ্যাকটিভ। থানা পুলিশ নিজেরা নিরাপত্তা চাচ্ছেন। অন্য যারা নির্বাচনের স্বপ্ন দেখছেন তাদের স্বপ্ন অনেক বেশি। তাদের দূরদর্শিতা লিওনার্দো দ্য ভিন্সির থেকেও বড়। আমার মতো আমজনতার মতে ড. ইউনূস যেটা বলেছেন, ২০২৬ সালের মার্চ অথবা জুন মাসে নির্বাচন হলেও হতে পারে; এটার কোনো রকম ভিত্তি নেই। আমি নির্বাচনের সম্ভাবনা ২০২৭ সালেও দেখি না। যখন একটা রাজনৈতিক ধারাপাত নষ্ট হয়ে যায়, এটা ফিরে আসার জন্য ৫/৮ বছর সামরিক শাসন বলেন, বিশৃঙ্খলা বলেন, এটা চলতে থাকে। ১৯৫৪ সালে যে সরকার গঠন হলো এবং ফেল করলো পরেই কিন্তু আইয়ুব খানের মার্শাল ল’ চলে আসলো। বঙ্গবন্ধু যখন ফেল করলেন তখন জিয়াউর রহমান সাহেব খুব চেষ্টা করেছিলেন গণতান্ত্রিক বিধি ব্যবস্থা চালুকরণের। কিন্তু সেটা তিনি দু’বছরও (১৯৭৯-৮১) চালাতে পারেন নাই। এখন যে অবস্থা কোনো পক্ষেরই কোনো অনুশোচনা নেই। 


জামায়াত বলছে, ’৭১-এ যা করেছে ঠিক করেছে। আওয়ামী লীগ বলছে, তারা করেছে একদম ঠিক। কালকেই শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে এসে ক্ষমতায় বসবেন। বিএনপি’র লোকজন মনে করছে কালকে তারা ক্ষমতায় আসবে। অতীতে যে তাদের কারণে একটা ১/১১ হয়েছিল, তাদের একটা হাওয়া ভবন হয়েছিল- যে কারণে একটা মিলিটারি রুল হয়েছিল এই কথা বিএনপি’র কোনো একটা লোকের কাছে বললে ৩২টা দাঁত খুলে ফেলবে। নতুন যারা ছাত্র-জনতা, তৌহিদী জনতা এসেছে কারও মধ্যে আর্ট অব নেগোসিয়েশন দেখা যাচ্ছে না। এরকম পরিস্থিতিতে সংঘাত অনিবার্য। সংঘাত হওয়ার পর যখন শক্তি হারায় তখন অনুধাবন করে আমাদের একটা নেতা দরকার। তখন পরিবর্তন আসে। এখন সবাই শক্তিশালী।


গোলাম মাওলা রনি বলেন,  জনগণ নেতার কথা শোনে। জনগণ কখনো সিদ্ধান্ত নিয়ে নেতা নির্বাচন করতে পারে না। তারা শুধু নেতাকে ভোট দেয়। কিন্তু খুব বেশি একত্র হয়ে একটা পালা পরিবর্তন করেছে এমন ঘটনা নেই। অতীতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি জনগণকে ব্যবহার করেছে। এখন যারা আছে তারাও তাই করার চেষ্টা করছে। বাস্তবতা হলো সবকিছুর মূলে বিজ্ঞান আছে। রাজনীতি হলো বিজ্ঞান। নির্বাচনের জন্য যে উপকরণগুলো প্রয়োজন তার একটাও এখন নেই। রাজনীতির নেশা হচ্ছে মারাত্মক নেশা। 


ড. মুহাম্মদ ইউনূস যখন এই চেয়ারে বসেন নি তখন তার মন-মানসিকতা ছিল রাজনীতি খুবই খারাপ। সবাই শেখ হাসিনা, সবাই খালেদা জিয়া; এখানে কোনো ভালো মানুষ আসে না। উনি কখনো টুপি পরেন নাই। এই চেয়ারে বসার আগে কোনো টুপি পরা ছবি আমি দেখি নাই। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে অতি সম্প্রতি দেখলাম তিনি টুপি পরেছেন। এটার মানে তার আকাঙ্ক্ষা জেগেছে। আগে দেখি নাই তিনি হাত নাড়াচ্ছেন। কিন্তু তিনি রোহিঙ্গাদের দেখে হাত নাড়াচ্ছেন। এত আনন্দ, এত মজা রাজনীতিতে। মানুষ জিন্দাবাদ বলছে। রাজনীতির প্রতি আগ্রহ জন্ম নিয়েছে। এই আগ্রহ থামবে না। হেলিকপ্টারে না ওঠা পর্যন্ত এই আগ্রহ থামবে না। তিনি এখন পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ হয়ে গেছেন। হবে, হবে না, হতে পারে, চলবে, চলবে না- এসব কথা বলছেন রাজনীতিবিদের মতো।


রাজনৈতিক সমর্থনও তো আছে? প্রশ্নের জবাবে বলেন, ড. ইউনূসের প্রধান শক্তি সময়। তিনি জীবন যুদ্ধে সফল একজন মানুষ। ওই চেয়ারে বসার সঙ্গে সঙ্গেই ইতিবাচক, নেতিবাচক দিক আছে উনি ক্যালকুলেশন করে ফেলেছেন। উনি বুঝে গেছেন তিনি সহজে যেতে পারবেন না। উনি সহজে এই চেয়ার ছাড়লে দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে, বা অপমান হতে হবে। আমাদের দেশে সাহসী ব্যক্তি হাতেগোনা দু’একজন ছাড়া নেই।  আওয়ামী লীগের তাপস দেখেন কীভাবে পালিয়ে গেল। দেশে লাখ লাখ আওয়ামী লীগের লোক পালিয়ে আছে। বিএনপি ১৫ বছর পালিয়ে ছিল, জামায়াত পালিয়ে ছিল। ড. ইউনূস যদি একটু কঠোর হন তাহলে কোনো সমস্যাই থাকবে না। এর কারণ বাঙালির স্বভাব ডাণ্ডা মারলে ঠাণ্ডা। আর ডাণ্ডা না মারতে পারলে অত্যাচারী হয়ে যায়। এই মুহূর্তে সবকিছু ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে আছে। এই অবস্থায় এমন কী দায় পড়েছে তিনি ভোট দিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাবেন। আর বিএনপি কালকেই জিজ্ঞাসা করবে, এই সময়ে বসে বসে কী করেছেন? কতো টাকা খেয়েছেন? 


অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে বলেন, পুরো পরিস্থিতি আগস্টের ১৫ তারিখ পর্যন্ত বিএনপি’র পক্ষে ছিল। তারেক রহমান যদি আগস্টের ৮ তারিখ বা ৫ তারিখ চলে আসতেন তাহলে প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন সেটা তারেক রহমানের সিদ্ধান্তেই হতো। ড. মুহাম্মদ ইউনূস যদি নির্বাচিত হতেন তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার কাছে গিয়ে সালাম করে আসতে হতো। এই সুযোগটা বিএনপি নিতে পারেনি। রাজনীতিতে যে সুযোগগুলো আসে এটা আসলে ম্যাটার অব ওয়ান আওয়ার। আমি যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলাম এটার সিদ্ধান্ত এক ঘণ্টায় নিতে হয়েছিল। এই সুযোগ বিএনপি না নিতে না পারায় বিএনপি’র খারাপ মানুষ যারা গুণ্ডামিতে অভ্যস্ত তারা আওয়ামী লীগের জায়গাগুলো দখল করেছে। এটা হাইকমান্ডের নিয়ন্ত্রণে নাই। কতো আর বহিষ্কার করা যায়? 
কাওরান বাজারে প্রতিদিন ১০ কোটি যদি চাঁদাবাজি হয় এই সিন্ডিকেটের সদস্য যদি হয় তাহলে বহিষ্কার করেন আর না করেন কী আসে যায়। ৩ মাস যদি এই সুযোগ পায় তাহলে আর জীবনে আর কিছু করার দরকার নাই। এরকম আরও অনেক জায়গা আছে। হাজার হাজার কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়। একারণে নির্বাচন হলে আমি যে এলাকায় গিয়ে ভোট চাইবো, আমি তো চাঁদাবাজি বন্ধ করতে পারছি না। লোকজন বলবে, ওই ছেলে আমার দোকান দখল করছে। এখন ওই ছেলে এমন শক্তিশালী হয়ে গেছে সে চাইলে আমাকে এলাকায় ঢুকতে দেবে না। আগামীতে যারা মনোনয়ন পাবেন তারা ভয়ঙ্কর অবস্থায় আছেন। তারা বিএনপি’র টার্গেটে থাকবেন। মনোনয়ন বঞ্চিত ৫ জন মিলে সিন্ডিকেট গড়ে তুলবে। পুরো এলাকায় দুটো থেকে তিনটি কমিটি আছে। তারাই এলাকা ভাগ করে নিয়েছে। যারা এলাকায় জনপ্রিয়, তারা এলাকায় ঢুকতেই পারছে না। তারা তো গিয়ে জনগণের কথা বলতে পারছেন না। এই নির্বাচনের আগে অপারেশন ক্লিনহার্ট করে যদি মাঠ ক্লিন করতে চান কেয়ামত হয়ে যাবে। যেখানে ঢাকাতে ৪/৫ জন মিলে মব করছে। মিলিটারি যাচ্ছে, সেখানে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেয়া হচ্ছে। পুলিশের সহকারী কমিশনারকে ধরে মারধর করছে। সেখানে বিএনপি নির্বাচন করে রাতারাতি ক্ষমতায় যাবে তার কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।


তিনি বলেন, ধরেন এখন অবস্থা স্বাভাবিক আছে; আমি যেকোনো দলের নমিনেশন নিয়েই এলাকায় যাই না কেন পুরো পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে সময় লাগবে ২/৩ ঘণ্টা। এর কারণ জনগণ শক্তিশালী। এখন গুণ্ডাতন্ত্র চলছে আমাকে মেরে ফেললেও জনগণ এগিয়ে আসবে না। ২০১৮ সালে একই ঘটনা ঘটে। যখন আমি বিএনপি’র নমিনেশন পেলাম তখন বিএনপি’র নেতাকর্মীরা ভাবলো আমি অনেক শক্তিশালী। কিন্তু যখন দেখলো ল’ অ্যান্ড অর্ডার নাই; টিএনও, ওসি, এসপি সাহেব আওয়ামী লীগের গুণ্ডাদের লেলিয়ে দিয়ে বললো যাও ওনার বাসায় ঢিল মারো। তখন বিএনপি’র লোকরাও যারা নমিনেশন পছন্দ করে নাই তারাও মজা পেয়ে গেল। তখন আমার প্রাণ বাঁচানো দায় হয়ে গেল। বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কোনো দিনই নির্বাচনে যাবো না।


পটুয়াখালী-৩ আসনে তারেক রহমানের পছন্দ নুরুল হক নুর? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমত আমি আগামীতে বিএনপি’র নমিনেশন চাইবো কীভাবে ভাবলেন? আমারও একটা ইচ্ছার ব্যাপার আছে। মাঠের পরিস্থিতি রাজনীতিতে নেশা জাগায়। বড় বড় যারা রাজনীতিবিদ আছেন তাদের একটা চরিত্র আছে বেশিদিন তাদের কাউকে ভালো লাগে না। একটা সময় শেখ হাসিনা আমাকে খুব পছন্দ করতেন। একটা সময় পর তিনি আর পছন্দ করেননি। তারেক রহমান সাহেব আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বিএনপিতে এনেছেন। আমাকে ভালোবেসেছেন। আমি বিএনপি’র নমিনেশন কিনিও নাই। এখন আমাকে আর ভালো লাগে না। এখন ভালো লাগে নুরুল হক নুরকে। এটা নিয়ে আমার দুঃখ পাওয়ার কিছু নাই। আমাদের দেশের দলের ক্ষমতা পরিবারের হাতে থাকে। তারা দিন বললে দিন রাত বললে রাত।


আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র তুলনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে হোমোজেনিয়াস বিষয়টি বেশি। পিওরিটি। ছাত্রলীগ করবে, যুবলীগ করবে- এরপর আওয়ামী লীগ করবে। বাবা আওয়ামী লীগ করলে ছেলেও আওয়ামী লীগ করবে। আমি বিএনপিতে আসলেও আমার বিশ্বাস ছিল আমি যদি রাত ১২টার সময়েও গণভবনে যাই আর উনি যদি শোনেন গোলাম মাওলা রনি এসেছেন উনি দেখা করবেন এবং আমাকে এক কাপ চা খাওয়াবেন। এই কালচারটা শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমুসহ উপজেলা পর্যায়ের নেতার কাছে পর্যন্ত আশা করতে পারেন। এটা ফ্যামিলি ফেলোশিপ। এই জিনিসটা বিএনপি’র মধ্যে নাই। কিন্তু আমি কল্পনা করতে পারি না আমি লন্ডনে যাবো, তারেক রহমান সাহেবের বাসায় থাকবো। তার ওয়াইফকে ভাবি ডাকবো, রাতে রান্না করে খাওয়াবেন। বেগম খালেদা জিয়া আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। আমার কোনোদিন ওনার সঙ্গে দেখা হয় নাই। উনি আমার লেখা পড়তেন, টকশো শুনতেন। এত স্নেহের পরেও বিশ্বাস জন্মায়নি ওনার বাসার সামনে যাবো বিনা নোটিশে। ওনার সঙ্গে বসে এককাপ চা খাবো। মির্জা ফখরুল সাহেবও ইমাজিন করতে পারবেন না যে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে এক টেবিলে বসে চা খাবেন। বেগম জিয়া বলবেন, ফখরুল সাহেব আপনি আসছেন আপনার জন্য আমি নিজের হাতে রান্না করেছি। 


এটা কেন গুরুত্বপূর্ণ? গোলাম মাওলা রনি বলেন, আমাদের দেশের গরিব মানুষ বা আমজনতা ৯০ শতাংশ এটা পছন্দ করে। আপনি কাউকে হাত বুলিয়ে দিলেন, একসঙ্গে একটু ডাল ভাত খেলেন এটা পছন্দ করে। অন্য লোক যদি এক কোটি টাকাও দেয় সে তার পক্ষে যাবে না আপনার সঙ্গে থাকবে। এটার জন্য আওয়ামী লীগের রাজনীতি বাংলাদেশে কেয়ামত পর্যন্ত শেষ হবে না। এই অভ্যাসটা আওয়ামী লীগের মধ্যে আছে; বিএনপি’র মধ্যে নাই।


আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের বিষয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের যে দুর্নীতি, শেখ পরিবারের দুর্নীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে না। ’৭৫ সালেও এসেছিল। ’৭৫-এ কিন্তু একটা সেট শেষ হয়ে গিয়েছিল। ’৭৫-এর পরে জোহরা তাজউদ্দিনের নেতৃত্বে যে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তারা ’৭৩ থেকে ’৭৫ সাল পর্যন্ত বঞ্চিত হয়েছিল কিন্তু আওয়ামী লীগ করেছিল। এখনো যারা ১৫ বছর বঞ্চিত হয়েছে আওয়ামী চরিত্র ধারণ করে তারা যে নামেই হোক গণমানুষের রাজনীতি যারা করে তারা আসবে।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে জোহরা তাজউদ্দিন তো থাকতে হবে। ২০০৯ সালে যাদের বয়স ছিল ৪০, তারা এখন ৫৫। যাদের ৫০ তাদের কতো হয়েছে? যারা ১৫ বছর বঞ্চিত হয়েছে তারা তো আর দাঁড়াতে পারবে না। তারা পরিচিতও না। আওয়ামী লীগের লোকজন তো এই লোকগুলোকে পরিচিত হতে দেয় নাই। যারা পরিচিত হয়েছে তারা খারাপ কাজ করেছে। এই লোকগুলো শেষ হয়ে যাবে আবার নতুন ফেসগুলো বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তৈরি হয়ে যাবে। সারজিস নামে যে কেউ আছে আমরা কী জানতাম? সময় আসলে নেতা তৈরি করে। যেহেতু ফিল্ড তৈরি আছে; নেতা তৈরি হয়ে যাবে।
শেখ হাসিনার বিষয়ে বলেন, দেশে এসে রাজনীতি করবেন এটা সুঁইয়ের পেছনে উট ঢুকানোর মতো কষ্টকর হবে। তবে ভারত যদি চায় বসাবে- এটা সম্ভব। ভারত যদি মনে করে তারা করবে- তাহলে চেষ্টা করলে সম্ভব। 


ভারত এটা কেন করবে? গোলাম মাওলা রনি বলেন, প্রথমত বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ভারত জড়িত ছিল। শেষের দিকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ইন্দিরা গান্ধীর দা-কুড়াল সম্পর্ক ছিল। ভারতের নির্দেশেই ক্যু হয়েছে। এই মানুষটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিক্রি করতে চাননি। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় একটা চুক্তি হয়েছিল মুজিব নগর সরকারের সঙ্গে। তাজউদ্দিনকে ফোর্স করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে বের করার পর ওনার সামনে প্লেস করা হলে উনি ওটা টেনে ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। সেখান থেকে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। ’৭৩ সালে গিয়েছিলেন জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে ও ’৭৪ সালে ওআইসিতে। ওখানে ভারতও গিয়েছিল। ওখানে তিনি ছিলেন নাম্বার ওয়ান ম্যান। বঙ্গবন্ধুকে পেয়ে বিশ্ব নেতৃত্ব জাগ্রত হয়েছিল। ভারত দেখেছিল বঙ্গবন্ধুকে যদি ইমপাওয়ার্ড করা হয় এই যে পাক-ভারত রাজনীতি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে হবে। আবার গ্রেটার বাংলা হবে, বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা হবে। এর কারণে ভারত ছাত্রলীগকে দু’ভাগ করেছে, সর্বহারা পার্টিকে অস্ত্র দিয়েছে। ভারতে শেখ হাসিনা আছে। ভারতই শেখ হাসিনাকে পদচ্যুত করেছে। শেখ হাসিনা থাকাকালীন সময়ে বলেছি- শেখ হাসিনার পতন হবে ভারতের হাতে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হয়েছে এটা ভারত করিয়েছে। ওখানে ভারত সেখানে নিয়েছে এবং ডলা দিয়ে শিক্ষা দেবার জন্য। বলেছে, তুমি শেষ হয়ে যাও কিংবা আমার সেবাদাসী হয়ে বাংলাদেশে যাও।


তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের আগে এবং পরে তারা বিকল্প পেয়ে গিয়েছিল। ’৭৫-এর পরে  মোশ্‌তাক, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর তাদের বন্ধুত্ব হয়েছিল এবং এরশাদ সাহেবকে তারা আগেই তৈরি করে রেখেছিল। গত ১৫ বছরে ভারত শেখ হাসিনার বিকল্প একটা রাজনৈতিক শক্তি তৈরি করতে পারে নাই। তারা চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু না বিএনপি, না জামায়াত, না ড. ইউনূস; কারও সঙ্গে পারছে না। আলু ভর্তা হোক, ডাল হোক এই শেখ হাসিনাই তাদের জন্য উপযুক্ত।


এতে ভারতের লাভ কী হলো? তিনি বলেন, কোনো একটা জায়গা ধরেন দখল করে আছে। এই বাড়ির দখল অন্য কাউকে দিলে আগে তো ভ্যাকেন্ট করতে হবে। এই ভ্যাকেন্ট করার পর ভারত বিবেচনা করছে কে তাদের ভালো বন্ধু। এখন তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে কে তাদের ভালো বন্ধু। শেখ হাসিনার জমানাতে তারা পারে নাই। তাদের মনে হয়েছে শেখ হাসিনা আপনজন আবার মনে হয়েছে চীনের কাছে চলে যাবে। শেখ হাসিনা সকালে চিন্তা করেছে সকালে ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব হবে আবার বিকালে পাকিস্তানের ইমরান খানের সঙ্গে বন্ধুত্ব, হিলারি ক্লিনটন, ম্যাক্রোনের সঙ্গেও বন্ধুত্ব থাকার দরকার আছে। অর্থাৎ ভারতের বিকল্প খোঁজার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছে। সে পারে নাই। বঙ্গবন্ধুর জন্য শতবর্ষ উদ্‌যাপন। এই উদ্‌যাপনে যাতে নরেন্দ্র মোদি না আসে এজন্য মাঠ গরম করছে শেখ হাসিনা। তৎকালীন হুজুরদের নামিয়ে দিয়ে মাঠ গরম করছে। নরেন্দ্র মোদি কিন্তু জোর করে আসছে। সেখানে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে গেছে।
ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তিনি বলেন, আগামী ১০ বছর আমাদের পরিস্থিতি এরকমই যাবে। নেতা পরিবর্তন হবে। ইউনূস সাহেব থাকতে পারেন, আসিফ নজরুল আসতে পারেন, মাহফুজ আসতে পারেন। এরকম একটা অগণতান্ত্রিক অবস্থায় চলতে থাকবে। জামায়াত, হিজবুত তাহরীর কোনো ভবিষ্যৎ নেই। এই দেশ ৮০০ বছর মুসলমানরা শাসন করেছে। কিন্তু ব্যবসা কর্ম হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানরা নিয়ন্ত্রণ করেছে। কখনোই উগ্রবাদ স্থান পায় নাই। ফলে এই সমাজে জামায়াত যে স্বপ্ন দেখছে এটা অসম্ভব। 

মতামত'র অন্যান্য খবর