সংবাদমাধ্যমের সকল পর্দায়, সকল প্রথম পাতার প্রধান শিরোনাম খবরে ঝলমল করছে একটি ঢাউস আকারের ছবি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে মধ্যমণি রেখে তার ডান পাশে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ও বাঁ পাশে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ তিন সারিতে অন্তত ৩৬টি রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের কমপক্ষে ৬৮ জন নেতা দণ্ডায়মান। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অভূতপূর্ব ঘটনার নজির এতগুলো দলের এক বৈঠকের সংলাপে জাতীয় ঐক্যের ঘোষণা দিয়ে ফটোসেশন করে এই সংবাদচিত্র। ইংরেজিতে বললে ‘হাইলি ইমপ্রেসিভ’ বা অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক এই ছবি ও বার্তা। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় জড়িত অস্থিতিশীল টালমাটাল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জাতীয় ঐক্য অর্জনে প্রফেসর ড. ইউনূসের সাফল্য তুলে ধরছে এই ঘটনা যা আপাতদৃষ্টিতে তার অবস্থানকে দৃঢ় করবে, তার হাতকে শক্তিশালী করবে ও তার বিরুদ্ধে সমালোচনা কমাবে বলে মনে করা যায়।
রক্তাক্ত ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের ঠিক চার মাস পরে বুধবার ৫ই ডিসেম্বর ২০২৪ ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমির ভবনে অনুষ্ঠিত সংলাপে কী ঘটলো তা দেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিকটির খবর থেকে জানা যাক। প্রথম আলো’র খবরের শুরুতে বলা হয়েছে, “দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব ও মর্যাদার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ থাকার এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের অপপ্রচার, হস্তক্ষেপ ও উস্কানির বিষয়ে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছে দলগুলো।” সভায় সূচনা বক্তব্যে প্রফেসর ইউনূস ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে তা রুখে দিতে সব রাজনৈতিক দলের প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানান।
উল্লেখ করা যায়, আগে থেকেই সরকার উৎখাতের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র সমন্বয়করা ‘ফ্যাসিবাদ যাতে ফিরে না আসতে পারে’ সেজন্য ‘ফ্যাসিবাদ-বিরোধী’ তথা আওয়ামী লীগ-বিরোধী সকল ছাত্র ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার লাগাতার আহ্বান জানিয়ে আসছেন। গত পনের বছরের একচ্ছত্র শাসক দল আওয়ামী লীগ ঝাড়ে-বংশে পলাতক হয়ে যাওয়ার পরে দেশের প্রধান দল বিএনপি’র পক্ষ থেকেও জাতীয় ঐক্যের কথা বলা হয়েছে। তাদের তাগিদ অচিরে নির্বাচন। বিএনপি এই রাজনৈতিক অঙ্গীকারও ঘোষণা করেছে যে, নির্বাচনে জিতলে তারা সব দলকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করবে। সেটা অবশ্য এখনো দূরবর্তী বিষয়।
এমন ঐক্যের আহ্বান সত্ত্বেও বাস্তবে গত চার মাসে আওয়ামী লীগ আমলের রাষ্ট্রপতিকে বিদায় করা, উপদেষ্টাদের নিয়োগ, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা, সংস্কারে সময় দেয়া না নির্বাচন আগে ইত্যাদি নিয়ে বিএনপি, জামায়াত, ছাত্রনেতা ও সরকারের মধ্যে বিভিন্ন মতের প্রকাশ, ক্ষোভ ও অস্বস্তি দেখা গেছে। বিশেষত ছাত্রদের মধ্যে অনৈক্য ও উত্তেজনা দেখা দিলে সমন্বয়ক নেতারা তা প্রশমিত করতে ঐক্যের জোরালো পদক্ষেপও নিয়েছেন।
নভেম্বর মাসের দ্বিতীয়ার্ধে রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, পুরান ঢাকায় শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, যাত্রাবাড়ীর ডা. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ছাত্ররা বিভিন্ন ধরনের ঠুনকো বিরোধে দাঙ্গাসদৃশ সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও লুটপাটে লিপ্ত হয়, ৭টি কলেজ ও ৩৫টি কলেজের ফোরাম ইত্যাদি গঠন করে অদ্ভুত সংঘাতে জড়ায়। এসব ঘটনায় প্রশাসন ও পুলিশের শৈথিল্য এবং ত্বরিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও হস্তক্ষেপে দক্ষতার অভাব দেখা যায়, যার ফলে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের অনুসারী বনেদি ছাত্র সংগঠন বিএনপি সমর্থিত ছাত্রদল ও জামায়াত সমর্থিত ছাত্র শিবিরের বিরোধ মাথাচাড়া দিতে থাকে। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম কলেজ, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ ও ঢাকার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রদল ও শিবিরের সংঘর্ষ হয়। জুলাই আন্দোলনে গঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারা চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবাদকারী ছাত্র সংগঠনগুলোকে একত্রে বসানোর চেষ্টা করেও সফল হননি। ১৯শে নভেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ছাত্র সংসদ তথা ‘জাকসু’ নির্বাচনের জন্য ছাত্র সংগঠনগুলোকে বৈঠকে ডাকলে শিবিরের উপস্থিতিতে ছাত্রদল ও বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো বসতে চায়নি। তারা শিবিরকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ অভিহিত করে। দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুড়বৃত্তিকারী ছাত্র সংগঠনগুলোকে ক্যাম্পাসে কাজ করতে দেয়া হবে কি-না এই পুরনো প্রশ্নটির সমাধান না হওয়ায় এসব জটিলতা হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সুশৃঙ্খল শান্তিপূর্ণ একাডেমিক পরিবেশ আনা এবং বহু বছর না হওয়া ‘ডাকসু’ প্রভৃতি বিধিবদ্ধ ছাত্র সংসদের কাঙ্ক্ষিত নির্বাচন করাও কঠিন।
এই অবস্থায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা আহ্বান জানিয়ে ২৬শে নভেম্বর থেকে ২রা ডিসেম্বর পর্যন্ত ‘জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ’ পালন করেন। কিন্তু শেষে ৪ঠা ডিসেম্বর ঢাকার বাংলামোটরে রূপায়ন টাওয়ারে সকল ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময়ের জন্য ডাকা বৈঠকে কয়েকটি ইসলামী সংগঠন ছাড়া ছাত্রদল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট প্রভৃতি অনুপস্থিত থাকে।
এই পরিস্থিতিতে অনেকটা আকস্মিকভাবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টা জটিল আকার ধারণ করে। ৫ই আগস্টের পরিবর্তন তথা ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেয়ার পর দু’দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগে ভারতে এক শ্রেণির সংবাদমাধ্যমে তীব্র প্রচারণা চালানো ও সরকারের তরফেও প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়। এরই মধ্যে ২৫শে নভেম্বর আন্তর্জাতিক সাধু সংগঠন ‘ইসকন’ থেকে অব্যাহতি দেয়া এক সাধু ‘সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোট’-এর মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাশের গ্রেপ্তার পরিস্থিতিকে বিদ্যুতায়িত করে। তাকে জামিন না দেয়ার প্রতিবাদে সৃষ্ট হাঙ্গামাকালে চট্টগ্রামে একজন আইনজীবীকে হত্যার ঘটনা, কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভ, বাংলাদেশের পতাকা ও প্রধান উপদেষ্টার কুশপুতুল দাহ, বাংলাদেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী পাঠাতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আরজি জানানো এবং সর্বশেষ আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও জাতীয় পতাকা অবমাননার ঘটনা ঘটে।
দু’দেশের তরফে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বাদানুবাদে এমন উত্তেজনা দেখা দেয় যা গত অর্ধ শতাব্দীতে ঘটেনি। সরকার পরিবর্তনের পরে গঠিত সনাতনী জাগরণ মঞ্চের ডাকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৮ দফা দাবিতে ২৫শে অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে একটি বড় সমাবেশ হয়। এরপর ঐ সাধুর বিরুদ্ধে পতাকা অবমাননার একটি মামলা হয়। এর প্রতিবাদে ১লা নভেম্বর চেরাগী পাহাড় এলাকায় পুলিশের অনুমোদন না পেয়েও আরও বড় একটি সমাবেশ হয় এবং সারা দেশে আন্দোলন করার ঘোষণা দেয়া হয়। ১৭ই নভেম্বর আরেকটি হিন্দু সংগঠনের সঙ্গে মিলে সনাতনী জোট গঠিত হয়। জোটের ডাকে ২২শে নভেম্বর রংপুরে বিভাগীয় সমাবেশে হিন্দুদের বিশাল জমায়েত হয়। এই জমায়েতগুলো বিশাল হলেও শান্তিপূর্ণ ছিল। রংপুর সমাবেশের পরে এক মাস আগের মামুলি পতাকা মামলায় সাধুকে গ্রেপ্তার করে জামিন না দিয়ে জেলবন্দি করা কতোটা বিবেচনাপ্রসূত হয়েছে তা নিয়ে দেশে-বিদেশে প্রশ্ন উঠেছে।
অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ভারতের সঙ্গে উত্তেজনা সৃষ্টির পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, বিভিন্ন ইসলামপন্থি দল, বাম দলসহ ৩৫টির মতো রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন। সামগ্রিকভাবে দেখলে একটি ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরে সুদূরপ্রসারী রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের যে গুরুত্বপূর্ণ কাজ তা থেকে সাময়িকভাবে হলেও দৃষ্টি অন্যদিকে সরে গেল।
অর্থাৎ ঘোষিত জাতীয় ঐক্যটি মৌলিকভাবে জাতির ভবিষ্যৎ অগ্রগতির ইতিবাচক প্রশ্নে না হয়ে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার আওয়াজে হলো। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অবশ্যই জাতির জীবন-মরণের প্রশ্ন। এবং এমন তীব্র জাতীয়তাবাদী আবেগে সহজেই জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হতে দেখা যায়। তবে মুক্তিযুদ্ধের মিত্র ও ভৌগোলিকভাবে তিনদিকে অবস্থানকারী আমাদের একমাত্র প্রতিবেশীর সঙ্গে এই বোঝাপড়া কীভাবে হবে তা গভীর বিবেচনার বিষয়। সুখের বিষয় ভারত ইতিমধ্যে আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা বিষয়ে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার ও পুলিশে শাস্তি দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে এবং কূটনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ঢাকায় আসবেন বলে জানানো হয়েছে। শেখ হাসিনার পতনকে ভারত আপাত গ্রহণ করতে পারেনি এবং এ ব্যাপারে ভারত তার জাতীয় ঐক্য দেখিয়ে সকল দলের সম্মতিতে শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়েছে। তবে সন্দেহ নাই যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাংলাদেশের জনগণের সিদ্ধান্তকে তাদের মানতেই হবে। আমাদের সন্দেহ পোষণ করারও কারণ নেই যে, এখানে নির্বাচিত সরকার হলে ভারত তার সঙ্গে স্বাভাবিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কই জোরদার করবে। এতে দু’দেশের বিরাট পারস্পরিক স্বার্থ রয়েছে।
ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের সাময়িক জটিলতায় যে ‘জাতীয় ঐক্য’ হলো তার প্রতি দেশের জনগণের মনোভাব কী জানা গেল না, দেড় যুগ দেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ হয়নি, জনগণের সঙ্গে মাঠে কোনো সংলাপ নেই, ক্ষমতাচ্যুত যে আওয়ামী লীগ বরাবর মানুষের কম-বেশি ৩৫ শতাংশ ভোট পেয়ে আসছে তাদের বাদ রেখেই ভোটবিহীন অধিকাংশ ইসলামী দলের উপস্থিতিতে হয়ে গেল ঐক্য।
আমরা অতি সংক্ষেপে বাংলাদেশে জাতীয় ঐক্যের প্রত্যয়ের ঐতিহাসিক রূপরেখায় দৃষ্টিপাত করতে পারি। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ভারতের মুসলমানরা একটি পৃথক জাতি- এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে। আর পাকিস্তান হওয়ার পরই এর প্রতিষ্ঠাতা নেতা কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ গণপরিষদে ভাষণে বললেন, আমাদের হিন্দু-মুসলমান হওয়া ভুলে যেতে হবে, আমরা সবাই পাকিস্তানী। নাগরিকত্ব ও ধর্ম হচ্ছে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত বিশ্বাস। সেই ভাষণে তিনি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও নিরপেক্ষ সরকার, ধর্মীয় স্বাধীনতা, আইনের শাসন এবং সবার জন্য সমতার কথা বলেছিলেন। কিন্তু তিনিই পরে বাঙালিদের ভাষার অধিকার অস্বীকার করে পাকিস্তানের ভাঙনের সূচনা করেন। অখণ্ড পাকিস্তানের ২৫ বছরে সব সময় জাতীয় ঐক্যের ডাক শোনা যেতো। তবে সে ঐক্য বলতে বোঝাতো শুধু শাসকদের হুকুম মানা। তাই ১৯৭১ সালে এক সাগর রক্ত ঢেলে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ হয়ে গেল।
বাংলাদেশে গত ৫৩ বছরে প্রকৃত জাতীয় ঐক্য দেখা গেছে বস্তুত দুইবার। প্রথমত ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনে ও দ্বিতীয়ত ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে। মুক্তিযুদ্ধেও খুব কম সংখ্যক মানুষ বিরোধিতা করে পাকিস্তানের পক্ষে ছিল, যারা এখন ‘রাজাকার’ নামে অভিহিত। আর স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পরে আজ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের কয়েকটি মৌলিক বিষয়েও রাজনৈতিক দলগুলো একমত হতে পারে না। দুঃখজনকভাবে ২০২৪-এ তা আবার তীব্র হচ্ছে। জাতীয় ঐক্যের সোনার হরিণ কখনো ধরা দেয়নি।
মানবজাতির হাজার বছরের ইতিহাসে মানুষ ১০০ ভাগ একমত কখনো কোথাও হতে পারেনি। এটাই জীবজগতে বুদ্ধিমান প্রাণীর ক্ষেত্রে স্বাভাবিক। এক ভূখণ্ডে বাস করে কিছু ব্যতিক্রমসহ সাধারণত একই ভাষা-সংস্কৃতির বন্ধনে, একই অর্থনীতিতে জীবনযাপন করে, একই ইতিহাসের ধারা বহন করে একটি একত্বের অনুভূতিই হচ্ছে জাতীয় ঐক্য। এখানে বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্যের অনুভূতিকে ধারণ করতে হবে। আর সেটা সম্ভব হবে সর্বাধিক গণতন্ত্র ও সর্বাধিক ব্যক্তিস্বাধীনতার মাধ্যমে। আমাদের এগুতে হবে সেই পথে।