পাঁচ মাস পূর্ণ করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সময়ে নানা সংকট আর প্রতিঘাত মোকাবিলা করতে হয়েছে নয়া কিসিমের এই সরকারকে। ফ্যাসিবাদী শাসনের রেখে যাওয়া ভূত তাড়াতে গিয়ে একের পর এক সংকট সামনে এসেছে। কিন্তু এখনো সেই ভূতের আছর সর্বত্র রয়ে গেছে। এর বাইরে এখন নতুন রাজনৈতিক সংকটে অস্থির সময় পার করছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আপাতত বাইরের পরিস্থিতি শান্ত হয়ে এলেও এখন অস্থিরতা চলছে সরকারের ভেতরে। ৩১শে জুলাই ঘিরে যে রাজনৈতিক শঙ্কা তৈরি হয়েছিল তা নিরসনে সরকার উদ্যোগী হলেও এর রেশ কাটেনি এখনো। ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে ‘জুলাই প্রোক্লেমেশন’ বা জুলাই ঘোষণা দেয়ার কথা সরকারের। ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন অভ্যুত্থানের পর যে সরকার গঠিত হয় তার ধরন নিয়ে শুরুতেই প্রশ্ন ছিল। একটি বিপ্লবের পর বিপ্লবী সরকার হবে এমনটা বলেছিলেন অনেকে। আর বিপ্লবী সরকার হলে সংবিধানসহ আগের সব ব্যবস্থা ছুড়ে ফেলে দেয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু সরকার গঠিত হয় অতীতের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেই। আওয়ামী লীগের নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের কাছে শপথ নিতে হয় নয়া সরকারের। এই প্রেসিডেন্ট নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়েছে। তার কাছে শপথ নেয়ার পর তাকে সরিয়ে দেয়ার দাবি ছিল, এখনো আছে। আবার এই প্রেসিডেন্টের সইয়ে হওয়া আদেশ নির্দেশেই রাষ্ট্র চলছে।
ডিসেম্বরের শেষে হঠাৎ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জুলাই বিপ্লবের প্রোক্লেমেশন বা ঘোষণাপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এই ঘোষণাপত্র পাঠ করতে বড় আয়োজন করা হয়। সারা দেশ থেকে মানুষজনকে জড়ো করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেন আন্দোলনের নেতারা। কিন্তু এই ঘোষণা দেয়ার বিষয়ে আন্দোলনে থাকা রাজনৈতিক দল ও তাদের ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ করা হয়নি- এমন অভিযোগ করে আপত্তি আসতে থাকে। ছাত্রদের এই ঘোষণার বিষয়ে সরাসরি আপত্তি তুলে বিএনপি ও তাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রদল। জুলাই বিপ্লবের অন্যতম অনুঘটক জামায়াত ও তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের অবস্থান ছিল কৌশলী। ৩১শে ডিসেম্বর শহীদ মিনারের প্রায় কাছাকাছি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিজেদের সদস্য সম্মেলন ডাকে শিবির। নেতারা বলার চেষ্টা করেন, নিজেদের অনুষ্ঠান রেখে তারা শহীদ মিনারে ছাত্রদের অনুষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ পাবেন না। ছাত্রদের অনুষ্ঠানে যেমন সারা দেশ থেকে জনবল আনা হয়, শিবিরের অনুষ্ঠানেও সারা দেশ থেকে তাদের লোকবল এসেছিলেন।
আদতে ছাত্ররা শহীদ মিনার থেকে কী ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন তার কোনো ধারণাই ছিল না রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। এ কারণে নানা গুঞ্জন আর শঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে সবার মাঝে। জানার চেষ্টা করা হয়, তারা কী ঘোষণা করতে যাচ্ছেন। সংবিধান বাতিল বা সরকারের ধরন বদলে দেয়ার ঘোষণা আসতে পারে এমনটাও কেউ কেউ মনে করেছিলেন। আর এ কারণেই দলগুলোর মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়। শুরুতে এই অস্বস্তির বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের কেউ কেউ টের পেলেও কথা বলতে পারছিলেন না। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইউনূস ছিলেন দুশ্চিন্তায়। তিনি কি করবেন, কি করা উচিত- এ নিয়ে ভাবছিলেন। এমন মুহূর্তে তার কাছে বিশেষ বার্তা নিয়ে হাজির হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি ছাত্রদের ঘোষণাপত্র পাঠ থামাতে পরামর্শ দেন প্রধান উপদেষ্টাকে। বিএনপি’র পক্ষ থেকে ছাত্রদেরও বার বার বার্তা দেয়া হয় যাতে শহীদ মিনার থেকে এমন একটা ঘোষণাপত্র পাঠ না করা হয়। বলা হয়, এটি করতে হলে দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে করতে হবে। না হলে সরকার যে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছে তা বিঘ্নিত হবে। নতুন করে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হবে। যার ফলে পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিবাদের ফিরে আসার পথ তৈরি হবে। পরিস্থিতি নিয়ে বিচলিত ছিলেন বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্বও। দলটির তরফে বার্তা দেয়ার পর প্রধান উপদেষ্টা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গেও। কিন্তু সব জায়গায় বিভক্তি দেখতে পান তিনি। একজন উপদেষ্টা আগে থেকেই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগে ছিলেন। তিনি প্রফেসর ড. ইউনূসকে বিএনপি’র মতোই ছাত্রদের ঘোষণাপত্র পাঠ থামাতে বলেন। আরও কয়েকজন উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টাকে একই পরামর্শ দেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তাও এই পরামর্শ দেন প্রধান উপদেষ্টাকে।
কিন্তু অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে উপদেষ্টা পরিষদে আসা উপদেষ্টারা শুরুতে শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেন। তারা যুক্তি দেন জুলাই বিপ্লবের স্বীকৃতি বা ঘোষণাপত্র না থাকলে ভবিষ্যতে কোনো এক সময় তাদের নিজেদেরও কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে। এর সঙ্গে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া, অংশ নেয়াদেরও। ছাত্ররা যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা যথার্থ।
প্রধান উপদেষ্টার তরফে অবশ্য বলা হয়, ঐকমত্য ছাড়া এ ধরনের একটি ঘোষণা দিলে এরচেয়েও খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। যা জুলাই বিপ্লব এবং সরকারকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেবে।
শিক্ষার্থীদের থামাতে প্রফেসর ড. ইউনূস সিদ্ধান্ত নেন ঘোষণাপত্র সরকারই দেবে। ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে এটি চূড়ান্ত হবে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম রাত ৯টায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দেন সরকারই জুলাই প্রোক্লেমেশন প্রস্তুত করে ঘোষণা দেবে। ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে তা হবে।
সরকারের এই বার্তা পেয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। পরিস্থিতি নিয়ে তারা জরুরি বৈঠকে বসেন। বাংলামোটরে সংগঠনের কার্যালয়ের এই বৈঠক চলে মধ্যরাতের পরও। তারা কেউ চাইছিলেন ঘোষণা অনুযায়ী শহীদ মিনারের কর্মসূচি চালাতে। কেউ পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে সরকারের উপর দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। বৈঠক চলার সময়ে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনূসও যোগাযোগ করেন ছাত্রনেতাদের সঙ্গে। সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তিনি এও বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত না মেনে শহীদ মিনার থেকে ঘোষণাপত্র পাঠ করার উদ্যোগ নিলে তিনি সরকারের দায়িত্ব থেকে সরে যেতে পারেন।
প্রধান উপদেষ্টার এমন কঠোর বার্তা পেয়ে আপাতত শহীদ মিনার থেকে ঘোষণাপত্র পাঠ না করার সিদ্ধান্ত নেন ছাত্রনেতারা। সমস্যা তৈরি হয় শহীদ মিনারের কর্মসূচি নিয়ে। সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকা আসতে ইতিমধ্যে রওনা হয়ে গেছেন। কেউ মাঝ পথে, কেউ ঢাকার কাছাকাছি। এ অবস্থায় কর্মসূচি বাতিল করলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে, নেতাকর্মীরা মনোবল হারাবে- এই যুক্তিতে তা চালিয়ে যেতে বলেন অনেকে। পরে সিদ্ধান্ত হয় সরকার যে ঘোষণাপত্র দেবে তার পক্ষে ঐক্যের আহ্বানে সমাবেশ করা হবে। কর্মসূচির নাম দেয়া হয় ‘মার্চ ফর ইউনিটি’।
৩১শে ডিসেম্বর হওয়া এই সমাবেশ থেকে ছাত্রনেতারা বলেন, তাদের দাবি মেনে সরকার যে ঘোষণা দিতে যাচ্ছে এটি তাদেরই বিজয়। তবে ঘোষণাপত্রে তাদের করা খসড়ার বিষয়বস্তু থাকতে হবে। বিদ্যমান সংবিধানকে ‘মুজিববাদী’ আখ্যা দিয়ে তা বাতিলের দাবি করেন নেতারা। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচন দাবির বিষয়ে তারা নতুন এক তত্ত্ব হাজির করেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি করেন। গণপরিষদের মাধ্যমে রাজনৈতিক ব্যবস্থার ফয়সালা করার কথা বলেন। সরকার ঘোষিত সংস্কারের আগে জাতীয় নির্বাচন হবে না- এমন বক্তব্যও দেন কেউ কেউ।
যে কারণে ভয় আর শঙ্কা তৈরি হয়: জুলাই ঘোষণাপত্র ঘিরে শঙ্কা তৈরির মূল কারণ ছিল শিক্ষার্থীদের সাম্প্রতিক তৎপরতা। তারা কিছুদিন ধরে যে দল গঠনের উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছেন তা নিয়ে অন্যান্য দলগুলোর মধ্যে জিজ্ঞাসা তৈরি হয়েছে। পর্দার আড়ালে তারা বলার চেষ্টা করছেন, ছাত্ররাই এই সরকারের নিয়োগদাতা আবার তারাই দল গঠন করে ভোটের মাঠে নামবে- এমনটা হয় কী করে। প্রকাশ্যে আবার কোনো কোনো দল ছাত্রদের উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন। তারা বলছেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নতুন দল আসলে আপত্তি নেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এর থেকে গঠন হওয়া জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারাই নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছেন। বছরের শুরুতেই এই দল আত্মপ্রকাশ করতে পারে। দলটিতে ছাত্রদের বাইরের বিভিন্ন প্ল্যাটফরম থেকে পরিচিত মুখদের যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া নতুন দলের সঙ্গে আরও কয়েকটি দল যুক্ত হয়ে জোট গড়ার প্রাথমিক আলোচনাও আছে রাজনীতির মাঠে। গণঅভ্যুত্থানে জোরালোভাবে অংশ নেয়া একটি রাজনৈতিক দলের দু’টি অংশের নেতারা সম্প্রতি এক হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এই দলটির সঙ্গেও শিক্ষার্থীদের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের শহীদ মিনারের কর্মসূচি ঘিরে সারা দেশ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। কয়েক লাখ লোক জড়ো করা হবে এমনটা বলা হয়েছিল। নিজেদের শক্তিমত্তা জানান দেয়ার একটি প্রস্তুতি ছিল এই কর্মসূচি ঘিরে। শিক্ষার্থীদের সমালোচক গ্রুপগুলো নানা নেতিবাচক প্রচারণাও চালিয়েছে কর্মসূচি নিয়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়, বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে এই সমাবেশ ঘিরে। টাকার বিনিময়ে বাস ভরে লোকজনকে ঢাকায় আনা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন বা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে গাড়ি, অর্থ নিয়ে সহায়তা করা হয় এমন অভিযোগ করে কেউ কেউ। যদিও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ নাকচ করা হয়। প্রাপ্ত তথ্যের বিষয় যাচাই করতে ‘জনতার চোখ’-এর তরফে একটি জেলার প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বিষয়টি নাকচ করে দেন।
কী হবে ১৫ই জানুয়ারির পর: জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে শঙ্কা এখনো কাটেনি। সরকার বলছে ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে। জানামতে এখন পর্যন্ত এমন কোনো আলোচনা শুরু হয়নি। ছাত্র আন্দোলনের নেতারা অবশ্য সরকারের ওপর আস্থা রাখার কথা বলছেন। একই সঙ্গে ছাত্র-জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন না ঘটলে সরকার ঘোষিত ঘোষণাপত্র মেনে নেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন। সরকারের প্রস্তুতকৃত ঘোষণাপত্রে ১৯৭২ সালের সংবিধানের ব্যাপারে স্পষ্ট বক্তব্য চান ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তারা মনে করেন, এ সংবিধান বিভিন্ন সময় এত কাটাছেঁড়া হয়েছে যার মাধ্যমে মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ সংবিধানের দোহাই দিয়ে তিন তিনটি অবৈধ নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা। যার কোনো ম্যান্ডেট ছিল না জনগণের। তাই ’৭২-এর সংবিধান পুরোপুরি বাদ দিতে হবে। নতুন করে সংবিধান পুনর্লিখন করতে হবে। এ ছাড়া তারা সংস্কারের পর নির্বাচন করার কথা বলছেন।
শিক্ষার্থীদের এমন সব দাবির বিষয়ে বিএনপি সহ অন্যান্য দল একমত নয়। বিশেষ করে সংবিধান প্রশ্নে। দলগুলো সংবিধান বাতিলের পক্ষে নয়। তারা প্রয়োজনীয় সংস্কার চায়। দুই পক্ষের এসব দাবি মেনে সরকার জুলাই ঘোষণা কীভাবে দেয় সেটি এখন দেখার বিষয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, এক্ষেত্রে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা কঠিন। কারণ শিক্ষার্থীদের দাবি এবং দলগুলোর চাওয়া ক্রমে বিপরীত দিকে এগোচ্ছে। এমন অবস্থায় প্রফেসর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভেতরেই অস্থিরতা এবং দোটানা ভাব তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরকারের তরফে ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হয় কিনা, হলে পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়- তাই এখন দেখার বিষয়।
ভ্যাট ও ভাতা সমাচার: ওদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের চাপে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আইনে কিছু সংশোধন আনতে যাচ্ছে সরকার। এতে প্রায় ৩ ডজনের বেশি পণ্য ও সেবার ওপর ১৫ শতাংশ মূসক ও শুল্ক আরোপ হতে পারে। এটি হলে বাজেটের আগেই এসব পণ্য ও সেবার মূল্য একদফা বাড়তে পারে। যার প্রভাব পড়বে জনজীবনে। সরকারের আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে এটি করা হচ্ছে বলে এনবিআর’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ অবশ্য দাবি করেছেন, ভ্যাট বাড়লেও জিনিসপত্রের দামের ওপর তেমন প্রভাব পড়বে না। উপদেষ্টা এ দাবি করলেও ব্যবসায়ীরা সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা প্রয়োজনে আন্দোলনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের লুটপাট আর স্বেচ্ছাচারিতার কারণে তখন থেকে নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যে জেরবার ছিল মানুষের জীবন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর আশা ছিল সরকারের উদ্যোগে এই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সরকার এজন্য নানা উদ্যোগও নিয়েছে। কিন্তু অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। নিত্যপণ্যের বাড়তি দামের কারণে ভোগান্তিতে আছেন প্রায় সব শ্রেণির মানুষ। এমন অবস্থায় নতুন করে ভ্যাট চাপিয়ে এই ভোগান্তি আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হলো। অন্যদিকে কিছুদিন আগে থেকে বলা হচ্ছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা দেয়া হবে। নতুন করে ভ্যাট বাড়ানোর তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এর ব্যাপক সমালোচনা করছেন অনেকে। বলা হচ্ছে, সাধারণ মানুষের উপর চাপ দিয়ে ভ্যাট আদায় করে তা দিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের ভাতা দেয়ার আয়োজন করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ জীবন দিয়ে অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে। একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়ার জন্য। আহত ও নিহতদের রক্তের দাগ এখনো মুছে যায়নি। ছাত্র-জনতার দাবি অনুযায়ী সরকারি প্রশাসন এখনো ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়নি। প্রশাসনের ভেতরে থাকা ফ্যাসিবাদের দোসররাই নানা চাপ দিয়ে সরকারের কাছ থেকে দাবি আদায়ের চেষ্টা করছে। এমন অবস্থায় সরকারই যদি সাধারণ মানুষকে চাপে ফেলে বিশেষ শ্রেণিকে খুশি করার চেষ্টা চালায় সেটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এমন উদ্যোগ মানুষের কষ্ট বাড়াবে, নতুন করে অস্থিরতার উপলক্ষ হতে পারে সরকারের জন্যও।