ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালানোর পর টানা তিন দিন দেশে কোনো সরকার ছিল না। ৮ই আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গঠন করা হয় উপদেষ্টা পরিষদ। সরকার পতনের পর সারা দেশে যে মব জাস্টিস শুরু হয় তা সামাল দেয়াই হয়ে উঠে তখন নতুন সরকারের প্রধান কাজ। সর্বত্র বিশৃঙ্খলা। মাঠছাড়া পুলিশ প্রশাসন। সিভিল প্রশাসনে অস্থিরতা। অতীতের ক্ষোভ থেকে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ। এসব ঘটনা সামাল দিতে শুরুতে সরকারের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও মাঠে নামে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হয়। কিন্তু একের পর এক ইস্যু আসতে থাকে সামনে। একের পর এক অস্থিরতা সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। প্রায় চার মাস আগে দায়িত্ব নেয়া সরকারের সামনে যে চ্যালেঞ্জ ছিল চার মাস পরও এমন অনেক চ্যালেঞ্জ মাড়িয়ে পথ চলতে হচ্ছে। বলা হচ্ছে যেসব ইস্যুতে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে তা সরকারের আগাম উদ্যোগের মাধ্যমে আগে থেকে নিরসন করা যেতো। শুরুতে সরকার লক্ষ্য নির্ধারণে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। যে কারণে মূল কাজের বাইরে অহেতুক ইস্যুর সঙ্গে লড়ে সময় নষ্ট করতে হচ্ছে। এ ছাড়া প্রায় চার মাস দায়িত্বের সময়ে গোয়েন্দা সংস্থা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন পুনর্গঠন করে পুরো মাত্রায় কাজে লাগাতে না পারাও চলমান অস্থিরতার নেপথ্যে বড় কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ ও বোঝাপড়ায় দূরত্ব তৈরির কারণেও কিছু পক্ষ নতুন নতুন ইস্যু সামনে এনে অস্থিরতা তৈরির সুযোগ পাচ্ছে।
সচিবালয়ের মতো প্রশাসনিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি আদায়ের বিক্ষোভ-মিছিল সরকারের প্রশাসনিক দুর্বলতাকেই ইঙ্গিত করে।
সরকার গঠনের কিছু দিনের মধ্যেই আগস্টের শেষদিকে চাকরি স্থায়ীসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে সচিবালয় ঘেরাও করে আনসার সদস্যরা। দাবি মানার পরও রাত পর্যন্ত সচিবালয় অবরুদ্ধ করে রাখায় তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। পরে ছাত্র-জনতা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেষ্টায় তাদের সেখান থেকে সরানো হয়। ঘটনার পর জানা যায় পরিকল্পনা করেই আনসার সদস্যদের ঢাকায় আনা হয় সারা দেশ থেকে। আনসার সদস্যদের পোশাকের আড়ালে রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও সেখানে হাজির হয়েছিলেন। তাদেরকে একাধিক পোশাক সঙ্গে নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল। এ ছাড়া আনসার সদস্যদের নতুন ইউনিফর্ম পরে আসাটার বিষয়টিও ছিল সন্দেহের কারণ। তাদের লক্ষ্য ছিল সচিবালয় অচল করে দেয়া। তাদের সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি ছাত্র-জনতার তীব্র প্রতিরোধের কারণে। তখনই প্রশ্ন উঠেছিল কীভাবে এই আনসার সদস্যরা দায়িত্ব ফেলে ঢাকায় আসার সুযোগ পেয়েছিল। বাহিনীর নিজস্ব গোয়েন্দা তথ্য ও সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কি তখন কোনো কাজ করেনি।
নূর হোসেন দিবস ঘিরেও অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা হয়েছিল। ভারতে থাকা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা এদিন নেতাকর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ছবিসহ পোস্টার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে রাস্তায় নামার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তার নির্দেশনা অনুযায়ী কিছু নেতাকর্মী মাঠে নামার চেষ্টাও করেন। কিন্তু পরিকল্পনা আগে থেকে প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় ছাত্র-জনতা আগেই রাজপথ দখলে নেয়। যার কারণে আওয়ামী লীগ বা তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মাঠে নামার সুযোগ পাননি।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে ঢাকার কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে অস্থিরতা দেখা গেছে তা নিয়েও নানা আলোচনা আছে। অনেকে বলছেন, তুচ্ছ ঘটনাকে ঘিরে বড় সংঘাত হয়েছে। ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীরা এক একটি প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে। গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগাম প্রস্তুতি নিলে এসব ঘটনা রোধ করা যেতো। এ ছাড়া অভ্যুত্থানের পর সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যে এখনো পুরো কার্যকর হয়নি তার একটা বড় প্রমাণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। একের পর এক প্রতিষ্ঠান সংঘাতে জড়ালেও কর্তৃপক্ষ তা সামাল দিতে পারেনি। একইসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। সর্বশেষ শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পাঠমুখী করতে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ধরনের নির্দেশনা দেয়ার প্রয়োজন ছিল শুরুতেই। এ ছাড়া যে শিক্ষার্থীরা অভ্যুত্থানের মূল শক্তি ছিল। যাদের জীবনের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান হয়েছে তাদের শুরুতেই শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসা এবং আন্দোলনের সময়ে যে ট্রমা তৈরি হয়েছিল তা দূর করার দায়িত্ব ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু সেটি করতে তারা কোনো উদ্যোগই নেয়নি। ক্লাস-পরীক্ষাসহ সৃজনশীল কাজে শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে নেয়া গেলে হয়তো ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো নাও ঘটতে পারতো।
ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের বিষয়েও কয়েকদিন লুকোচুরি চলেছে রাজধানীতে। দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যাটারিচালিত রিকশা রাজধানীতে ক্রমে জঞ্জাল তৈরি করেছে। এর সঙ্গে নানা পক্ষ জড়িত হয়েছে। একইসঙ্গে বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবিকার উপায়ও তৈরি হয়েছে এই অটোরিকশাকে ঘিরে। এখন হঠাৎ করে এই রিকশা বন্ধ করে দেয়া কোনো সমাধান হতে পারে না। পরিকল্পিতভাবে এই জঞ্জাল সরানো বা এটিকে নিয়মের মধ্যে আনা সময়ের দাবি হলেও হঠাৎ করে আদালত থেকে রায় আসা এবং রিকশা বন্ধ করতে অভিযান চালানোর ফলে মালিক এবং চালকদের মাঝে যে ক্ষোভ তৈরি হয় তা রাস্তায় গড়িয়েছে। এতে পরাজিত শক্তি ইন্ধন দিয়ে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করেছে। রিকশা চালকদের কয়েকদিনের বিক্ষোভ অবরোধে নগর জুড়ে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ভোগ দেখা দেয়। এই সময়ে এ ধরনের উদ্যোগ সামনে না আনলে এই পরিস্থিতিও হয়তো উদ্ভব হতো না।
অনেকে বলছেন, ব্যাটারিচালিত রিকশার মডেল অনুমোদন, চলাচলের স্থান নির্ধারণ করে দেয়া, অঞ্চল ভেদে সংখ্যা নির্ধারণ করে লাইসেন্স প্রদান, এবং অবৈধ চার্জিং স্টেশন বন্ধ, অবৈধ কারখানা বন্ধ ও ব্যাটারি ও যন্ত্রপাতি আমদানির নিয়ন্ত্রণ করা গেলে এই খাতেও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এসব না করে মাঠে অভিযান চালিয়ে জঞ্জাল সাফ করার চেষ্টা গ্রহণযোগ্য নয়।
লাখ টাকা ঋণ নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শাহবাগে লাখো মানুষের সমাগমের চেষ্টা চালিয়েছিল একটি পক্ষ। ফরোয়ার্ড পার্টির নেতা আ ব ম মোস্তফা আমীন কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে এই তৎপরতা চালিয়েছিলেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী দলে দলে লোক ঢাকা আসতে শুরু করেছিল বাস, ট্রাকে করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তীক্ষ্ণ নজরদারি ও সাহসী প্রতিরোধের কারণে তাদের এই চেষ্টা সফল হয়নি। বলা হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতার মধ্যে শাহবাগ অবরোধ করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার উদ্দেশ্যে তারা এ উদ্যোগ নিয়েছিল। এই মিশনে একটি পক্ষ বিপুল অর্থও বিনিয়োগ করে। এ ঘটনায়ও সরকারের গোয়েন্দা ব্যর্থতা সামনে এসেছে।
সর্বশেষ সনাতনী জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণের গ্রেপ্তারের জেরে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাও এড়ানো যেতো বলে অনেকে মনে করছেন। যে কারণে চিন্ময়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে গ্রেপ্তারের পরপরই তা প্রকাশ করা হলে বা ব্রিফ করা হলে তার পক্ষে মাঠে নামার সুযোগ কতোটা সহজ হতো এই প্রশ্ন এখন সামনে এসেছে।
চিন্ময় কৃষ্ণকে আগেই ইসকন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে ইসকন তাকে বহিষ্কার করেছিল। এই অভিযোগের বিষয়গুলোও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সামনে আনতে পারতো। তা না করে বিমানবন্দর থেকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা এবং এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো ব্রিফ না করায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়। চিন্ময় সমর্থকদের আদালতে তাণ্ডব চালানো এবং আইনজীবী সাইফুলকে নৃশংসভাবে খুন করার ঘটনার ক্ষেত্রেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চিন্ময়কে গ্রেপ্তারের পরপরই যেখানে সারা দেশে তার সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সেখানে আদালতে তাকে নেয়ার ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা কেন নেয়া হয়নি সে প্রশ্নের জবাব আসলে কে দেবে?
কয়েকটি সরকারি কলেজের সঙ্গে বেসরকারি মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের হাঙ্গামার মধ্যেই চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেপ্তার করা হয়। অনেকে বলছেন, মামলার আসামি হিসেবে তাকে আরও কৌশল অবলম্বন করে গ্রেপ্তার করা যেতো।
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুলকে হত্যার পর চিন্ময়কে নিয়ে ইসকনের নেতারাও বেকায় পড়েছেন। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন, চিন্ময় ইসকনের কেউ নন। তাকে আগেই বহিষ্কার করা হয়েছে। তার কর্মকাণ্ডের দায় ইসকন নেবে না।
খোদ ইসকনই যেখানে চিন্ময়কে অস্বীকার করছে সেখানে তার পক্ষে মাঠে নামা, ভারতের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখানোর সুযোগ হতো না যদি গ্রেপ্তারের আগে বা গ্রেপ্তারের সময়ে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হতো। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার সময়ে কিছু অঘটন ঘটেছে সারা দেশে। এর মধ্যে কিছু সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষও আক্রান্ত হয়েছেন। কিন্তু তারা সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে আক্রান্ত হয়েছেন এমনটা নয়। যারা বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বা আওয়ামী লীগের নেতা ছিলেন তাদের প্রতি মানুষের ক্ষোভ ছিল। এই ক্ষোভ থেকেই কেউ কেউ আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এখন আর সেই পরিস্থিতি নেই। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের উপর কোনো ধরনের আক্রমণের ঘটনা অতি সম্প্রতি ঘটছে না। এ অবস্থায় যেসব অভিযোগ ও দাবি নিয়ে চিন্ময় মাঠে নেমেছিলেন তাতে স্পষ্ট তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন ছিল বলে ধরে নেয়া যায়। এ ছাড়া তার বক্তৃতা-বিবৃতিতে এক ধরনের উস্কানি লক্ষ্য করা গেছে। সর্বশেষ তথ্য হলো চিন্ময়সহ ইসকনের ১৭ জন নেতার ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। তাদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক লেনদেনও স্থগিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে এই কাজগুলো গ্রেপ্তারের আগে করা হলে গ্রেপ্তার নিয়ে এত ধুন্ধুমার কাণ্ড হওয়ার হয়তো সুযোগ থাকতো না।
চিন্ময় গ্রেপ্তারের পর ভারত যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তা নজিরবিহীন। ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশের দূতালয় আক্রান্ত হয়েছে। পতাকা অবমাননা করা হয়েছে। বাংলাদেশ অভিমুখী বিক্ষোভ করেছেন উগ্রবাদীরা। চাপা উত্তেজনা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। বলা হচ্ছে, দেশে একের পর এক ষড়যন্ত্র হালে পানি না পাওয়ায় চিন্ময় এবং ভারত কার্ড খেলা হয়েছে। তবে এই ভারত কার্ডও খুব একটা কার্যকর হয়নি এ যাত্রায়। উল্টো ভারতের জন্য এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। নতুন করে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক আসছে। দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে দেশের স্বার্থে একতাবদ্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। বুধবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর যে ফটোসেশনে অংশ নেন সেই ছবিটিকে অনেকে স্বাধীন দেশের ইতিহাসে বিরল বলে বর্ণনা করছেন। স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে এভাবে একসঙ্গে এত দলের এত নেতার দাঁড়ানো ছবি নিকট অতীতে দেখা যায়নি। নানা ঘটনার মধ্যদিয়ে প্রমাণ হয়েছে সাম্প্রতিক অস্থিরতার নেপথ্যে অভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছাড়া আওয়ামী লীগের নেতারা কলকাঠি নাড়ছেন। লুটপাটের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ এর পেছনে ব্যয় করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ব্রিফিংয়েও বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পেছনে ইন্ধনদাতা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ সম্প্রতি এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে সরাসরি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘হত্যা, গুম, খুন, গণহত্যা, নির্যাতন-নিপীড়ন, গণতন্ত্র ধ্বংস করে, দুর্নীতি করে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশটাকে শেষ করে ছাত্র-জনতার ঝাঁটাপেটা খেয়ে পালিয়ে যেয়ে এখন দেশ ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে।’
স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, কতো বড় নির্লজ্জ বেহায়া হলে দেশটাকে এক মুহূর্তের জন্য শান্তিতে থাকতে দিবে না। প্রথমে ডিজিটাল জুডিশিয়াল কু’র চেষ্টা, তারপর একের পর এক অপচেষ্টা আনসার বাহিনী দিয়ে, ব্যাটারি রিকশা, নূর হোসেন দিবসে ‘ট্রাম্প’ কার্ড, ঋণ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শাহবাগে মানুষের জমায়েত করার চেষ্টা, বিভিন্ন কলেজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা আর এবার ধর্মীয় সমপ্রীতি নষ্ট করে লাশের উপর দিয়ে ক্ষমতায় ফিরে আসার চেষ্টা।
স্ট্যাটাসটিতে তিনি মতিউর রহমান রেন্টুর লেখা ‘আমার ফাঁসি চাই’ ও ‘অন্তরালে হত্যাকারী প্রধানমন্ত্রী’ বই দুটো সবাইকে পড়তে অনুরোধ করেন। সোহেল তাজের এই বক্তব্য সাম্প্রতিক অস্থিরতার নেপথ্যে পালিয়ে যাওয়া নেতাদের চেষ্টার দাবিকেই প্রতিষ্ঠিত করে। শেখ হাসিনা কি করতে পারেন- মতিউর রহমান রেন্টুর বইয়ে তার কিছু বিবরণ আছে। চলমান অস্থিরতা বন্ধ করতে চাইলে, পালিয়ে থাকা নেতারা কি করতে পারেন তার ধারণা নিতে চাইলে হাসিনা সরকারের আমলে নিষিদ্ধ এই বই দু’টি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারাও পড়ে দেখতে পারেন। মনে রাখতে হবে যতই সংস্কার পরিকল্পনা নেয়া হোক না কেন রাষ্ট্র ও সমাজে অস্থিরতা থাকলে তা বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন। নানামুখী অস্থিরতা চলতে থাকলে তা ফ্যাসিবাদকে ফিরে আসার পথও তৈরি করে দিতে পারে।