সাফ কথা

স্বাধীন মিডিয়ার পরাধীনতা

মোজাম্মেল হোসেন | বিশেষ রচনা
ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪
স্বাধীন মিডিয়ার পরাধীনতা

মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ করে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর গত অর্ধশতাব্দী সংবাদমাধ্যমে একটি ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসকে ধরে মাসের প্রথম দিন থেকে ‘বিজয়ের মাস’ স্মরণ করে প্রতিদিন সেই বিজয়গাথা নিয়ে কিছু-না-কিছু লেখা, ১৯৭১ সালের সেই দিনের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান ঘটনা বা অগ্রগতির বিবরণ এখনকার শিশু-কিশোর-তরুণদের জন্য তুলে ধরা সে-দিনের ছবি দিয়ে বা মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারের নবায়ন বা পাওয়া না-পাওয়ার হিসেবের বিশ্লেষণ করা ইত্যাদি। কখনো এ ধরনের সাংবাদিকতার গতানুগতিকতা নিয়ে সমালোচনা-আত্মসমালোচনা হয়েছে, কখনো পারস্পরিক প্রতিযোগিতায় একেকটি সংবাদপত্র বা টেলিভিশন চ্যানেল উপস্থাপনা ও বিষয়বস্তুর নতুনত্ব খুঁজে দেখার চেষ্টা করেছে। মুক্তিযুদ্ধ যেহেতু আমাদের ইতিহাসের সর্বাধিক তাৎপর্যপূর্ণ অনন্যসাধারণ বর্ণাঢ্য মহাকাব্যিক এক ঘটনা তাই তা নিয়ে জনসাধারণের আবেগ বেশি থাকা স্বাভাবিক এবং সংবাদমাধ্যম বা মিডিয়ায় তা প্রতিফলিত হয়। 
একইভাবে আমরা  ফেব্রুয়ারিকে ‘ভাষার মাস’ ও মার্চকে ‘অগ্নিঝরা’ বলে অভিহিত করি। ২৬শে মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস ও ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস এবং এর মধ্যে শেষোক্তটি জাতীয় দিবস। 

 

আবার আমাদের এই অর্ধশতকের ইতিহাস ভয়ঙ্কর উঠতি-পড়তি দ্বারাও চিহ্নিত। স্বাধীনতার জন্য তৃণমূলের কৃষকসন্তানসহ গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনযুদ্ধে লিপ্ত হলেও খুব অল্প সংখ্যক লোক ছিল পাকিস্তান সরকারের পক্ষে। এমনকি পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালিদের ওপর গণহত্যা চালানোর পরও তারা ঐ সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সদস্য হয়ে। রাজনৈতিক দল হিসেবে কেবল মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামী ছিল স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। মুসলিম লীগ তুলনামূলক দুর্বল হওয়ায় এখানে প্রধান ভূমিকা ছিল জামায়াতের। পৃথিবীর ইতিহাসে সব দেশেই স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামে আপামর জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থানকারী কিছু গাদ্দার বা বেঈমান লোক পাওয়া যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ক্রমে নানা রাজনৈতিক ও গোষ্ঠীগত স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে মুক্তিযুদ্ধকালীন ঐক্য শিথিল হয় এবং কিছু শাসনব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধীরা শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে। দেশি-বিদেশি স্বাধীনতাবিরোধীদের চক্রান্তে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট দেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পরিবারের অনেক সদস্যসহ নিহত হলে পরবর্তী দুই দশক সামরিক-আধা সামরিক শাসনের মধ্যদিয়ে অগ্রসর হওয়ার সময় দেশের ঐক্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে দেশ সরে যেতে থাকে। গণতন্ত্র ও সাম্যের বিপরীতে দেশে অর্থনৈতিকভাবে লুটেরা শ্রেণির আধিপত্য তৈরি হয়। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বকারী দল আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় ফিরে এলেও দেশ আর জনকল্যাণকামী রাষ্ট্রের কাঙ্ক্ষিত পথে অগ্রসর হতে পারে না। বরং আওয়ামী লীগেই মধ্যবিত্তরা পিছিয়ে পড়ে ও নব্য লুটেরা শ্রেণির আধিপত্য বাড়ে। বিশেষত ২০০৮ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪-এর তিনটি সংসদ নির্বাচনে ন্যক্কারজনক কারচুপির মাধ্যমে শেখ হাসিনা একচ্ছত্রভাবে একটানা ক্ষমতায় থেকে যান। এ সময় দেশে বিশ্বের দৃষ্টিকাড়া উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয়-সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভঙ্গুর হয়ে পড়ে, দেশ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয় এবং শেখ হাসিনা জনপ্রিয়তা হারাতে থাকেন। এই তো সেদিনের ঘটনা আমরা সবাই জানি যে, কলঙ্কিত একতরফা সংসদ নির্বাচনের মাত্র ছয় মাস পরই সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে উদ্ভূত ছাত্র আন্দোলন দ্রুত সরকার উৎখাতের আন্দোলনে রূপ নেয় এবং অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। দৃশ্যত সেনাবাহিনীর সম্মতিতে ছাত্ররা নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে একটি অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় বসায়। দ্রুতই দৃশ্যমান হয় যে, এই সরকারে জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামপন্থি দল ও গ্রুপগুলোর আধিপত্য রয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বা বিএনপি দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দাবি করলেও তার আগে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্কারের কাজ এগিয়ে নিতে জামায়াত ও আন্দোলনের ছাত্রনেতারা বেশি প্রভাব খাটাচ্ছে। 


এই রকম পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এসেছে বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। পরিবর্তনটা এমনই যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাগরিকদের প্রশ্ন উচ্চারিত হয় যে, এবার বিজয় দিবস উদ্‌যাপন হবে তো? হলেও কেমন হবে? বিজয়ের মাস কেমন যাবে? আর ডিসেম্বরের প্রথম দিন সকলেরই নজরে পড়ে যে সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে বিজয়ের মাসের ঐতিহ্যবাহী বিশেষ প্রতিবেদন ও রচনাগুলো এবার নেই। একবারে যে নেই- তা নয়, তবে যা আছে তা বুড়ি ছোঁয়ার মতো। কোনো দৈনিক ঐতিহ্য বজায় রেখেছে প্রথম পৃষ্ঠায় ‘বিজয়ের মাস’ লোগো দিয়েই প্রতিবেদন প্রকাশে, কোনো পত্রিকা প্রতিদিন দিচ্ছে না বা পেছনের পাতায় দিচ্ছে, কোনো পত্রিকায় একবারেই নেই। সবচেয়ে লক্ষণীয় সম্প্রচার মিডিয়া তথা টেলিভিশনে একাত্তরের ডিসেম্বরে বিজয় অভিমুখে মুক্তিযুদ্ধের দুর্বার অগ্রগতির ফুটেজ দিয়ে যে প্রতিবেদনগুলো প্রতি বছর দেখা যেতো তা এবার কোনো চ্যানেলেই নেই। 
কেন এই সংবরণ? বিজয়ের মাস উদ্‌যাপনের ঐতিহ্য থেকে সংবাদমাধ্যমকে সরালো কে? স্পষ্টত সরকারি কোনো নির্দেশ নেই। থাকলে সব মিডিয়াই তা অনুসরণ করতো। নিকট অতীতে ১৫ই আগস্ট-পরবর্তী মোশ্‌তাকের স্বল্পকালীন শাসন এবং জিয়া ও এরশাদের মার্শাল ল’র শাসনের সময় চোখ রাঙানি, চাপা ধমক ও তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোন খবর যাবে বা যাবে না- মর্মে দেয়া ‘অ্যাডভাইস’ নামের নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে আমরা জানি। এর বিপরীতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস স্বয়ং এবং তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম একাধিকবার সাংবাদিকদের বলেছেন, গণমাধ্যম এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং স্বাধীনভাবে লিখলেই বরং সরকার কোথাও ভুল হচ্ছে কি-না তা বুঝতে পারবেন। 

 

শেখ হাসিনার পনের বছরের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে যতগুলো অভিযোগ তার মধ্যে অন্যতম হলো সংবাদ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা দমন। কুখ্যাত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রত্যাহারের জন্য শত দাবি তুলেও সফল হওয়া যায়নি। এই আইন ছাড়াও হাসিনা সরকার একটি ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছিল যার জন্য মিডিয়ায় স্বাধীনভাবে লেখা যায়নি। অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি যে, মিডিয়ার উপর যত রকম নিয়ন্ত্রণ বা সেন্সরশিপ কার্যকর হয় তার মধ্যে একটি হচ্ছে সেলফ সেন্সরশিপ বা স্বনিয়ন্ত্রণ। ভয়ে অথবা কোনো সুবিধা পাওয়ার বিনিময়ে মিডিয়া নিজে থেকেই স্বাধীন সাংবাদিকতা করে না, শাসকদের মন যুগিয়ে চলে। 

 

জুলাই/আগস্ট আন্দোলনের সময় মিডিয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কয়েকটি খোলাখুলিভাবে হাসিনা সরকারের পক্ষ নিয়ে একপেশে সংবাদ পরিবেশন করলেও রাজপথে জনগণের জোর প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় মূলধারার মিডিয়া নির্ভীকভাবে সব সংবাদ পরিবেশন করেছে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরই দেখা গেল যে মিডিয়াগুলো আন্দোলনের তিন সপ্তাহ পুলিশের অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ ও বিপুল সংখ্যক ছাত্র-জনতা নিহত হওয়ার খবর প্রশংসনীয়ভাবে পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিবেশন করেছে তারাই ৫ থেকে ৮ই আগস্ট পর্যন্ত পুলিশ নিহত হওয়া, থানা আক্রমণ, হিন্দু ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে আক্রমণ, সূফী মুসলিমদের মাজার ধ্বংসের খবরগুলো পরিবেশনে তত উৎসাহী নয়। পরে তো সরকারের তরফে ১৪ই অক্টোবর ঘোষণা করা হলো যে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ১৫ই জুলাই থেকে ৮ই আগস্ট পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারও বিরুদ্ধে মামলা, কাউকে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হবে না। 


অন্তর্বর্তী সরকার বিশেষত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক যারা সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের আওয়ামী লীগ, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর জাতীয় মর্যাদা বিষয়ে পুনর্মূল্যায়নের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ‘ছাত্ররা রিসেট বাটন টিপে অতীত মুছে ফেলেছে, এভরিথিং ইজ গান’ বলে ভয়েস অফ আমেরিকার কাছে যে উক্তি করেছেন তা এখন সর্বাধিক আলোচিত একটি বিষয়। ৫ই আগস্ট সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গেই গণভবন, সংসদ ভবন, ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ও স্মৃতি জাদুঘর এবং সারা দেশে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্যগুলো এক শ্রেণির বিক্ষুব্ধ মানুষের আক্রমণে ধ্বংস হলেও সরকার কোনো প্রতিক্রিয়া   দেখাননি, সেগুলো রক্ষার ব্যবস্থা করেননি। সরকার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ ও ১৫ই আগস্টকে সরকারি ছুটির তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন। আন্দোলনের প্রধান রূপকার বলে পরিচিতি পাওয়া উপদেষ্টা মাহফুজ আলম নিজে উদ্যোগ নিয়ে বঙ্গভবন থেকে বঙ্গবন্ধুর ছবি অপসারিত করেছেন এবং কোনো সরকারি সিদ্ধান্ত ঘোষণা ছাড়াই সরকারি অফিসে বঙ্গবন্ধুর ছবি রাখা নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। এই ঘটনাগুলো কি ভয়ের পরিবেশসহ একটি বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যার ফলে স্বাধীন মিডিয়া পরাধীন মনোভাবে স্বনিয়ন্ত্রিত হওয়ায় বিজয়ের মাসে মুক্তিযুদ্ধের প্রতিফলন কমে গেল?
এই লেখা যখন লিখছি তখন ১২ই ডিসেম্বর খবর এলো যে, বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ‘রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স’ নামের সংগঠন চলতি বছর সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক দেশের তালিকায় যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিন ও পাকিস্তানের পরই তৃতীয় অবস্থানে বাংলাদেশকে চিহ্নিত করেছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের মৃত্যুর সংখ্যা দিয়ে এটি বিচার করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও মেক্সিকোতে মৃত্যু হয়েছে ৫ জন করে সাংবাদিকের। 


আন্দোলনের পরে দেশে হত্যা মামলার আসামি হন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাংবাদিক যাদের কয়েকজন জেলে আছেন। এ বিষয়টি এখন সরকার একটি কমিটি গঠন করে পর্যালোচনা করছেন। দেড় শতাধিক সাংবাদিকের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে কোনো রকম অভিযোগ আনয়ন ও কারণ দর্শানোর সুযোগ ছাড়াই।
বিজয় দিবস পালন নিয়ে অনাবশ্যক সংশয় দেখা দিলেও সরকার তা মর্যাদার সঙ্গে পালনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। জাতীয় স্মৃতিসৌধে সরকারপ্রধান পুষ্পমাল্য অর্পণ করবেন। কেবল সশস্ত্র বাহিনীর ঐতিহ্যবাহী কুচকাওয়াজ বাতিল থাকবে এবং সারা দেশে বিজয়মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এই লেখা নিয়ে জনতার চোখ ম্যাগাজিন প্রকাশিত হওয়ার পরের দিনই জাতি বিজয় দিবস পালন করবে এবং মুক্তিযুদ্ধের  বীর শহীদদের প্রতি অন্তরের শ্রদ্ধা ঢেলে দেবে। 

বিশেষ রচনা'র অন্যান্য খবর