আলোচিত টকশো

‘কিছু উপদেষ্টাকে নির্বাচন করা ভুল হয়েছে’

জনতার চোখ ডেস্ক | এক্সক্লুসিভ
জুলাই ৫, ২০২৫
‘কিছু উপদেষ্টাকে নির্বাচন করা ভুল হয়েছে’

আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় এক বছরের দ্বারপ্রান্তে। কতোটা এগুলো দেশ? ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাজনৈতিক মাঠে কতোটা ভূমিকা রাখছে? এ ছাড়াও দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। অনলাইন ঠিকানার প্রধান সম্পাদক খালেদ মুহিউদ্দীনের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন এনসিপি’র মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। 
 

‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ টকশোতে যোগ দিয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, এই সরকার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছিল। কাজ নিয়ে এসেছিল, তাদের আরও অ্যাকটিভ হওয়া উচিত ছিল। এই সরকার একটা ব্যুরোক্রেটিক ধাঁচের সরকার। এই সরকার প্রায়োরিটি ঠিক করতে গিয়ে অনেক ভুল করেছে। প্রথম প্রায়োরিটি হওয়া উচিত ছিল আহতদের চিকিৎসা। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা একজন প্রোপারলি ডিসফাংশনাল। ব্যক্তিগতভাবে ফিল করছি, কিছু উপদেষ্টাকে নির্বাচন করা ভুল হয়েছে। তারা এখন পর্যন্ত প্রোপারলি ফাংশন করতে পারেননি। তারা কী কারণে বেতন নিচ্ছেন, কাজের ক্ষেত্রে তারা ইমপ্যাক্টফুল কাজ করতে পারছেন না। ইনস্টিটিউটশনগুলোর সংস্কার হওয়া উচিত ছিল। আমাদের প্রত্যাশাগুলো পূরণ হয়নি। আমরা খুব অপ্রয়োজনীয় আলাপে আছি নির্বাচন আগানো-পেছানো নিয়ে। একটা ঐকমত্য কমিশন করা হয়েছে তারা আলোচনা করে পূর্বের ব্যবস্থাগুলো রাখবে কী রাখবে না। ড. ইউনূস, উপদেষ্টাদের কাছে যে প্রত্যাশা ছিল এই প্রত্যাশার জায়গায় প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির জায়গায় বিশাল একটা ব্যবধান রয়েছে। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। 
এনসিপি নেতাদের অর্থনৈতিক আয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের অনেকেরই আয় আছে। আমরা যারা আয় করি তারা ডোনেট করি। সদস্য ফরম থেকে একটা অর্থ আসে। আমাদের অসংখ্য মানুষ আছে যারা প্রতিষ্ঠিত। সাংগঠিক ব্যয় দল দেয়। ব্যক্তিপরিসরে খরচ কীভাবে ব্যয় করছেন সেটা ব্যক্তি জানবেন। তাদের পরিবারের সদস্যরা রয়েছেন। 
পূর্ণাঙ্গ কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, উপদেষ্টা মাহফুজ কিংবা আসিফ রাজনীতি করবেন কিনা, এনসিপিতে যোগ দেবেন কিনা সেটা তাদের বিষয়। তারা রাজনীতি করবেন কিনা বা অন্য দলে যোগ দেবেন কিনা সেটা তাদের বিষয়। উপদেষ্টা আসিফ যদি সঠিক সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে আমরা বাহবা দেবো। ভুল হলে সমালোচনা করেছি। ওনারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে গিয়েছে, এনসিপি’র প্রতিনিধি হয়ে যায়নি। তাদের জন্য কমিটি গঠন করা হচ্ছে না এটা ভুল ধারণা। আমরা কাউন্সিল করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেবো। কাউন্সিল কবে হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।
এনসিপি’র এই নেতা বলেন, আমরা আমাদের দলে রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়ার জন্য সিভিও আহ্বানও করেছি। অনেকের সঙ্গে কথাও হয়েছে। আমরা বিভিন্ন ধরনের লোকই চাই। প্রাইস পোস্টিং রাখা হবে না দলে। আমরা ফাংশনাল পোস্ট দিতে চাই। 
 

এনসিপি’র নেতৃত্ব নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দীর্ঘদিন ধরে ইন্ট্রাপার্টি ডেমোক্রেসি ছিল না। ওয়ান ম্যান যা বলতো সবাই তা বলতো। আমরা ইন্ট্রাপার্টি ডেমোক্রেসি করছি। এখানে একেকজনের একেক মতামত। এখানে আগে ছিল না যে, নিজ দলের কারও সমালোচনা করা যাবে। আমাদের দলে বিভিন্ন চিন্তার মানুষ এসেছে।
নারী কমিশনের বিরুদ্ধে আয়োজিত হেফাজতের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের বিষয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমি সেখানে উপস্থিত হয়ে এনসিপি কর্তৃক যে সুপারিশ সেগুলোর আলোকে কথা বলি। আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের বিষয়ে কথা বলি। এরপর আমি চলে আসি। আমার অনুপস্থিতিতে নারীদের নিয়ে নেতিবাচক কথা বলা হয়। সেটা আবার আমার পার্টি থেকে নিন্দা জানানো হয়েছে।
সেনাবাহিনীর বিপক্ষে স্ট্যাটাসের বিষয়ে তিনি বলেন, নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারী এই বিষয়ে বলেছেন, এই যে বক্তৃতাটা পাবলিক স্পোয়ারে নিয়ে আসা হয়েছে এটা শিষ্টাচারবহির্ভূত। উপদেষ্টা আসিফের সঙ্গে যুক্তি করে বলেছিলাম বিষয়টা এমন না। আসিফ তার সরকার গঠনের সময়ের অভিজ্ঞতার কথা বলেছিলেন। এই ট্রান্সফরমেশন যেটা হয়েছে প্রত্যেকের আলাদা আলাদা অভিজ্ঞতা হয়েছে। প্রত্যেকের একই যে অভিজ্ঞতা হবে সেটা ঠিক না।
এনসিপি কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। কিন্তু নারীদের বিপক্ষে সহিংসতার বিরুদ্ধে কেনো প্রতিবাদ সমাবেশ হয়নি? এই বিষয়টিকে ভুল বলেন হাসনাত। তিনি বলেন, আমরা নানান অনুষ্ঠান করেছি। দলের ভেতরে নারীদের বিষয়ে নানান ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। এটা তো সিলেক্টটিভ প্রতিবাদের বিষয় না। আমরা দেখছি আমরা জাতিগতভাবে ট্রমাটাইজড। সার্বজনীন প্রতিবাদের বিষয়টি হয়নি। আওয়ামী লীগীকরণ, বিএনপিকীকরণ, এনসিপিকীকরণ করা হচ্ছে। আমরা জাতিগত, ভাষাগত, সভ্যতাগত ক্যারেকটারিসটিক দাঁড় করাতে পারিনি। সমস্যাগতও করতে পারিনি।
 

সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের থাইল্যান্ড সফরের বিষয়ে বলেন, সরকার এখানে একটা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ওই সময় আওয়ামী লীগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিয়ে অনেক ব্যক্তিকে ফ্যাসিলেটেড করা হচ্ছিল। এনসিপি দিয়ে কোনো নাটক মঞ্চস্থ করা হয়নি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে ডিজিএফআই দিয়ে দল করা, নিজে দল করে দেয়া, রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা- এগুলো নতুন কিছু না। অতীতে অনেক হয়েছে। আমরাও যদি ডিজিএফআই দিয়ে আসতাম তাহলে অনেক কাজ সহজ হতো। কিন্তু আমরা তো তা না। আমরা অর্গানিকভাবে গ্রো করছি। ডিজিএফআই আমাদের এনসিপি’র বিপক্ষে কিনা তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। বরং ডিজিএফআই বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করা, রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করা অনেকক্ষেত্রে অব্যাহত রেখেছে। ড. ইউনূসের ডিজিএফআইও হাসিনার ডিজিএফআইয়ের মতো হস্তক্ষেপ করছে। ডিজিএফআইয়ের পত্রিকায় নিউজ করছে। একটু পর নামিয়ে  মেসেজ দিচ্ছে যে, ওনেস্ট মিসটেক, পুনরাবৃত্তি হবে না। রাজনৈতিক বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করা, রাজনৈতিক ব্যক্তিকে নেগোসিয়েশনের প্রস্তাব দেয়া এই কাজগুলো অব্যাহত রয়েছে। এগুলো ড. ইউনূসের ফেইলিওর। ওনার যতটা স্ট্রং হওয়ার কথা ছিল, তিনি হতে পারেননি। ডিজিএফআইয়ের বিষয়ে যে সংস্কারের প্রয়োজন ছিল তা হয়নি। প্রশাসনের দ্বিচারিতামূলক আচরণ তো নতুন না। ড. ইউনূস এসেই বিচার করা শুরু করা উচিত ছিল। প্রশাসনের যারা দীর্ঘ সময়ে আওয়ামী লীগের অন্যায্য তাতে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে তাদের ক্ষেত্রে সহজ হতো পূর্ণাঙ্গ সংস্কার কাজ করা। প্রশাসনে এখনো হাসিনার লোক আছে যা সরকারের ব্যর্থতা।
জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার পূর্বে বলেছিল ঐকমত্যের ভিত্তিতে হবে। এরপর আন্দোলন করলে ৩০ কর্মদিবসের কথা বলে। এটাও শেষ হয়ে গিয়েছে। সরকার থেকে এধরনের আচরণ অপ্রত্যাশীত। দুদকের মন্তব্যের বিষয়ে বলেন, আমি ভিডিও রেফারেন্সসহ দিয়েছি। দুদকে গিয়ে টাকা দেয়ার কথা বলা হয়েছে। 
আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা আপনার ছিল কিনা এই প্রসঙ্গে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আমি জীবনে কোনো মিছিলে যাইনি। বক্তব্য দেইনি। এক মিনিটের জন্য ছাত্রলীগ করি নাই। ক্যাম্পাসে সবসময় ছাত্রলীগবিরোধী অবস্থান ছিল। ছাত্রলীগ আমাকে হল থেকে বের করে দিতে চেয়েছে। ১১ তলা থেকে ফেলে মেরে ফেলতে চেয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর একটা লেখা আমার ফেসবুকে এখনো আছে। ২০২০ সালে জন্মদিন উপলক্ষে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল শতবর্ষ উদ্‌যাপনের জন্য। ঐ পোস্টের ক্যাপশন লেখা আছে, যে দেশের মানুষ খেতে পারে না, যে দেশের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের জোগাড় করতে পারেনি তাদের আবার কীসের জন্মদিন। অর্থাৎ যেই ব্যক্তি এই কথা বলেছেন তার জন্মদিন পালন করা হচ্ছে। তখন করোনার কারণে অনেক কিছু বন্ধ হয়ে যায় সেটাকে মিন করার জন্য বলেছি।

 

 

এক্সক্লুসিভ'র অন্যান্য খবর