অ র্থ নী তি

লন্ডন সফরের হাওয়া লাগেনি পাচার হওয়া অর্থে

টুটুল রহমান | এক্সক্লুসিভ
জুলাই ৫, ২০২৫
লন্ডন সফরের হাওয়া লাগেনি পাচার হওয়া অর্থে

প্রধান উপদেষ্টার প্রফেসর ইউনূসের লন্ডন সফর অনেক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রথমত, এটি সরকারি সফর কিনা তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছিল। বিশেষ করে বলা হচ্ছিল রাজা চার্লসের আমন্ত্রণে তিনি একটি পুরস্কার গ্রহণ করতে সেখানে গেছেন। রাজ পরিবার তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এটা আমাদের জন্য অনেক সম্মানের। পরে অবশ্য দেখা গেল বিষয়টি তেমন হয়। এটা চার্লস ফাউন্ডেশনের তরফে দেয়া একটি ব্যক্তিগত পুরস্কার গ্রহণে প্রধান উপদেষ্টা সেখানে গেছেন। সেই আলোচনা ঝিমিয়ে পড়তে না পড়তে নতুন করে বৃটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকীর চিঠি, বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে বৈঠক করতে না পারাসহ বৃটেনের দামি হোটেলের ৩৯টি কক্ষ ৫ কোটিতে ভাড়া নেয়ার বিষয়টি নিয়ে শোরগোল ওঠে। ভুল তথ্য, সরকারের তরফ থেকে সফরের নানা বিষয়ে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য যেটা প্রেস সচিব শফিকুল  আলম দিয়েছেন এবং পরে তিনি ভুল স্বীকারও করেছেন। এসব নিয়ে লন্ডন সফরের আলোচনা শেষ হতে পারতো। কিন্তু শেষ তো হলো অন্যখানে, অন্যকোনো ভুবনে। সেটা রাজনৈতিক ভুবন। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে একটি রাজনৈতিক বৈঠক সব আগুনে ছাই চাপা দেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করলো এবং লন্ডনের এই বিভ্রান্তিমূলক সফরকে অনেকটাই আড়াল করে দিয়ে ড. ইউনূস দেশে নির্বাচনের হওয়া বইয়ে দিয়ে সবাইকে আপাতত শান্ত করলেন।
আমি এই ভূমিকাটা দিলাম এই জন্য যে, আসলে লন্ডন সফরে প্রধান উপদেষ্টার প্রধানত উদ্দেশ্য কি ছিল সেটা বোঝবার সুবিধার জন্য।
 

তিনি ১০ মাসে ১১টি সফর করেছেন বলে পত্র-পত্রিকা লিখেছে। তবে এর মধ্যে একটি বাদে সবক’টি সফরই একপাক্ষিক। অর্থাৎ এই সফরগুলো তার ব্যক্তিগত সফর। যেখান থেকে বাংলাদেশ তেমন কিছু পায়নি বলে নিন্দুকেরা অহরহ তার সমালোচনা করছে। সত্যিই তো তাই? আগের সরকারের চুক্তির ধারাবাহিকতা রক্ষার আর আগের বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতির নবায়ন ছাড়া তিনি তেমন কিছুই দেশের জন্য আনতে পারেননি। তাহলে? তাহলে বলাটা স্বাভাবিক যে, এই সফরগুলো দেশের কোনো কাজে আসেনি।
এবার হয়তো কিছুটা কাজে আসতে পারতো। তিনি লন্ডন যাওয়ার সময়ে ৩৯ জনের মধ্যে অর্থ উপদেষ্টা, গভর্র্নরসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গেছেন এবং জোরেশোরে প্রচার হয়েছে তিনি দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে যাচ্ছেন এবং  একটা বিধি ব্যবস্থা করেই তিনি ফিরবেন। এ কারণে বৃটেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার বৈঠক হবে। রাজাকে অনুরোধ করবেন আমাদের টাকা আমাদের ফিরিয়ে দাও। না দিলে বাঘা-বাঘা সব আইনজীবী ধরা হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি।
 

আশায় গুড়ে বালি পড়লো তখনই, যখন প্রধানমন্ত্রী স্টারমার দেখা করা তো দূরের কথা, কোথায় আছেন সেটাও প্রেস উইং জানাতে ব্যর্থ হলো। তিনি কানাডায় আছেন, থাকতে পারে এমন সব তোতলামো কথাবার্তায় এই বৈঠক যে আগে থেকে নির্ধারণ করা নেই সেটা বেরিয়ে এলো। আবার রাজা চার্লসের সঙ্গে ড. ইউনূস যে এসব বিষয় নিয়ে একান্তে বসবেন সেটিও তো দেখা গেল না। রাজা অবশ্য পুরস্কার প্রাপ্তদের সবার সঙ্গে সৌজন্যমূলক কয়েক মিনিট কথা বলেছেন। ডিনার করেছেন। কিন্তু একান্ত বৈঠক হয়নি কারও সঙ্গে।
অর্থাৎ পাচার হওয়া অর্থ সম্পর্কে কোনো কথা সেখানে তুলতে পারেননি প্রধান উপদেষ্টা। এখন মনে হচ্ছে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়টি একেবারেই ফাঁপা গালগপপো। এ ব্যাপারে বিফল মনোরথ তো বটেই ফিরেছেন শূন্যহাতে। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে গভর্নর, অর্থ উপদেষ্টা, দুদকের চেয়ারম্যান কেন গেলেন তার সঙ্গে। রাষ্ট্রের এই অর্থ অপচয় কেন? লন্ডন সফরে যা করার তা তো জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমানই করে দিলেন। অন্তত তারেক-ইউনূস বৈঠকের সফলতা এমন কথাই প্রমাণ করে।
এবার পাচার হওয়া অর্থ নিয়ে কিছু বলা যাক। কথা হোক বিনিয়োগ ও রাজস্ব আদায় নিয়ে।
 

এ সরকার ক্ষমতা নেয়ার কিছুদিনের মধ্যেই পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ জানতে এবং আর্থিক কেলেঙ্কারির স্বরূপ জানতে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। যার প্রধান করা হয় ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে যিনি অর্থনীতি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। তিনি জানালেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। বর্তমান বাজারদরে (প্রতি ডলারের দাম ১২০ টাকা) এর পরিমাণ ২৮ লাখ কোটি টাকা। এই হিসাবে প্রতিবছর গড়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, আর্থিক খাতের রাঘববোয়াল, আমলা ও মধ্যস্বত্বভোগীরা এই পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন।
এই ভয়াবহ চিত্র উঠে আসার পর সরকার অন্তত ১০০টি টাস্কফোর্স করেছে। নানান দেশে যোগাযোগ করেছে। চিঠি চালাচালি করেছে কিন্তু ফল কিছুই হয়নি।
সর্বশেষ লন্ডন সফরে এ ব্যাপারে ফলাফল শূন্য তো বটেই আরেক কি চমকপ্রদ কথা শোনা যাচ্ছে। সেটা হলো বিদেশে অর্থ পাচারে অভিযুক্ত ধনকুবেরদের সঙ্গে সমঝোতা করার কথা ভাবছে সরকার। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
গভর্নর জানান, গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনার শাসনামলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে আন্তর্জাতিক মামলা পরিচালনার জন্য ১০ কোটি ডলার পর্যন্ত বরাদ্দ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে কারা এই প্রক্রিয়ার আওতায় আসতে পারেন, সে বিষয়ে তিনি কোনো নির্দিষ্ট তথ্য দেননি।
সাক্ষাৎকারে ড. মনসুর বলেন, ‘যদি আইন লঙ্ঘনের ধরন তুলনামূলকভাবে কম গুরুতর হয়, সেক্ষেত্রে সমঝোতা একটি সম্ভাব্য বিকল্প হতে পারে।
এই বক্তব্য থেকেই বুঝুন ‘দিল্লি শুধু দূরই নয়, অধরাও বটে। অর্থ ফেরতের নানা উদ্যোগ ব্যর্থ হওয়ার পরেও তিনি ১০ কোটি ডলার বরাদ্দের কথা ভাবছেন। আমি নিশ্চিত এই টাকা জলে যাবে।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, এতো দৌড়ঝাঁপ করে পাচার টাকা ফেরত আনা যাচ্ছে না কেন? তাহলে অর্থ পাচারের বিষয়টি কি শুধুই গল্প। নাকি যে দেশের অর্থনীতিতে এই টাকা মিশে গেছে তারা ফেরত দিতে রাজি হচ্ছে না কিংবা দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে?
মূলত দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়াই এখানে মূল বাধা। বাংলাদেশকেই প্রমাণ করতে হবে এগুলো কীভাবে, কখন কারা পাচার করেছে। সেটা করতে অন্তত ১০ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময় লাগতে পারে। ততদিনে দৃশ্যপট অনেক বদলে যাবে।
 

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিগত শাসনামলে বিদেশে পাচারকৃত অর্থের একটা বড় অংশই পাচার হয়েছে যুক্তরাজ্যে। যে কারণে প্রধান উপদেষ্টার এই সফরকে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন তারা। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যুক্তরাজ্য থেকে এই পাচারকৃত অর্থ খুব স্বল্পমেয়াদে ফেরত আনা সম্ভব নয়।
আসলে বিশ্বে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার তেমন কোনো নজির নেই। বড়জোর ওই দেশের অর্থনীতিতে এগুলোকে বৈধ বিনিয়োগ হিসেবে দেখানোর একটা রীতি রয়েছে। অর্থনীতির সঙ্গে মিশে থাকা অর্থ কেউ আলাদা করতে চায় না। আইনি প্রক্রিয়াও বেশ জটিল।
পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে সরকার যেমন হোঁচট খেয়েছেন তেমনিভাবে রাজস্ব আদায়ে ১১ মাসে নিদারুণ হোঁচট খেয়েছে বর্তমান সরকার।
সামপ্রতিক তথ্য মতে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে মোট ৩ লাখ ২৭ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। ভ্যাট, আয়কর ও শুল্ক- এই তিন প্রধান উৎস থেকে এই অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছে।
 

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) মোট ৩ লাখ ২৭ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা আদায় করেছে। এই রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। তারা বলেন, লক্ষ্য অর্জনে শুধু জুন মাসেই সব মিলিয়ে ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে হবে এনবিআরকে।
চলতি অর্থবছরের জন্য ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সংশোধিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য দেয়া হয়েছে। মূল লক্ষ্য ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
এনবিআর আরও জানিয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং এর অধীন সব কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর কার্যালয় খোলা থাকবে ২১শে জুন ও ২৮শে জুন। শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও ওই দুইদিন খোলা রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
 

অনেক হাঁকডাক হয়েছে বিনিয়োগ নিয়ে। ঘটা করে বিনিয়োগ সম্মেলন করা হয়েছে। কিন্তু তার ফল কি পেয়েছি তার ভিত্তিতে  চিত্র পাওয়া গেছে তা হতাশ করেছে।
চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, শ্রমিক আন্দোলন ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ না করায় চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমে ১০৪ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এটি অন্তত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য জানা যায়, বিনিয়োগ ও পুনঃবিনিয়োগ কমে যাওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭১ শতাংশ কম বিনিয়োগ পেয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে বিনিয়োগ ছিল ৩৬০ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন ডলার।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৭৬ দশমিক ৭৯ মিলিয়ন ডলার। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তা ৪৬ শতাংশ কম। বিদেশিদের পুনঃবিনিয়োগ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭৩ শতাংশ কমে ৭২ দশমিক নয় মিলিয়ন ডলার হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুই থেকে তিন বছর ধরে দেশে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা চলছে। বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয়েছে। তাই নতুন বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি আসেনি।
‘জুলাই-সেপ্টেম্বর বছরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাস। সে সময় দেশে অস্থিতিশীলতা থাকায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও কমে যায়। তারা বিনিয়োগের জন্য অপেক্ষার পথ বেছে নেন।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে যুক্তরাজ্য থেকে। এরপর এসেছে দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন থেকে।
অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে সরকারের এই পিছিয়ে পড়া ভাবিয়ে তুলেছে সংশ্লিষ্টদের। কী হবে? কী হতে যাচ্ছে। শুধু তা নয়, অর্থনীতির মন্দার সময়ে সরকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার একটি বাজেট দিয়েছে।  এর মধ্যে অহেতুক কতকগুলো ব্যয় ধরা হয়েছে যা মানুষকে খুশি করার জন্য। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

 

রাজস্ব আদায় যদি না হয় তাহলে এই ব্যয় কোথা থেকে মেটাবেন- সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
শুধু রাজস্ব আদায়ে দুঃসংবাদ নয়, সরকারের ঋণ নেয়ার প্রবণতাও অর্থনীতিকে ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ১ লাখ ৮ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সামপ্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অঙ্কটি আগের অর্থবছরের তুলনায় ৫৭ শতাংশ বেশি। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ১২ই মে পর্যন্ত তফসিলভুক্ত ব্যাংকগুলোর কাছে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ৬৮ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা।
তবে একদিকে যেমন সরকার তফসিলভুক্ত ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছে, অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আগের নেয়া ৪৯ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করেছে। ফলে চলতি অর্থবছরে সরকারের প্রকৃত বা নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজস্ব আদায়ে ধীরগতি, বাজেট ঘাটতি পূরণে অতিরিক্ত ঋণগ্রহণ, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমে যাওয়া এবং ২০২৪ সালের আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ব্যবসায়িক অনিশ্চয়তা- এসব কারণে সরকারের ব্যাংকঋণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনায় জটিলতা হয়তো অর্থনীতিতে তেমন একটা প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু রাজস্ব আহরণ কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে না হওয়া এবং সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়ে যাওয়ায় অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করবে এ কথা বলাই যায়। সরকারকে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি তারা দিয়েছেন। এক টাকা হলেও তাদের ফিরিয়ে এনে দেশের অর্থনীতির সঙ্গে জোড়া দিয়ে তাদের দেখাতে হবে তারা প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। 
লেখক: সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক

 

এক্সক্লুসিভ'র অন্যান্য খবর