প্রচ্ছদ প্রতিবেদন

কেমন ডাকসু চাই

পিয়াস সরকার | এক্সক্লুসিভ
আগস্ট ৩০, ২০২৫
কেমন ডাকসু চাই

ঐতিহ্যবাহী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালে লেগেছে নির্বাচনের হাওয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন। যে নির্বাচনের মাজেজা বৃহৎ। ধারণা করা যায় বাধাহীন, অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে এবার। তিন দশক পর সবশেষ ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন হলেও আদতে তা ছিল অকার্যকর। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বাহুর জোরে হালে পানি পায়নি ডাকসু। ’২৪-এর আন্দোলনের অগ্রণী ভূমিকায় ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে যোগ দেয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বলা যায়, জুলাই আন্দোলনের আঁতুড়ঘর ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শুধু ’২৪ না দেশের ইতিহাসের প্রতিটি ইট নড়িয়ে দেয়া আন্দোলনেই আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ভূমিকা।


ডাকসু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক ইতিহাসের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত। যার ইতিহাস শতবর্ষের। আন্দোলনের দামামা বেজেছে বরাবরই এই ক্যাম্পাসে। ডাকসু’র লিটমাস পার করে একে একে বেরিয়ে আসে জাতীয় নেতারা। ডাকসু যেন গণতন্ত্রের ‘প্রশিক্ষণশালা’। ডাকসু’র মেঘে খেয়া উড়িয়ে বড়দের রাজনীতির বড় মুখ হয়েছিলেন অনেকেই। রাশেদ খান মেনন, মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ, আ স ম আবদুর রব, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, মাহমুদুর রহমান মান্না, আমানউল্লাহ আমান এবং সবশেষ নুরুল হক নুর।


ডাকসু ’২৫ নির্বাচন হচ্ছে ভিন্ন আবহে। দোর্দণ্ড প্রতাপশালী নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ নেই এই নির্বাচনে। মাথার উপরে নেই ভীতিদায়ক আওয়ামী লীগ কিংবা শেখ হাসিনা। দলটির দেড় যুগের কুশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষেপে উঠেই হয় ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান। ছাত্র-জনতার স্বপ্ন চাই ভোটের অধিকার, বাকস্বাধীনতা। যদিও অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ রয়েছে তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রত্যাশা সকলের। যদিও হল রাজনীতিতে ‘না’ নিয়েই হচ্ছে ডাকসু নির্বাচন। বিষয়টিকে খুব একটা ভালোভাবে দেখছেন না সাবেক দুই ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না ও মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। ‘জনতার চোখ’-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ডাকসুর পূর্বাপর নিয়ে কথা বলেন এই দুই ছাত্রনেতা। 


১৯৭৯-৮০ ও ১৯৮০-৮১’র নির্বাচনে টানা দু’বার ভিপি নির্বাচিত হন মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, আমি নিজেকেই প্রশ্ন করছি। ডাকসু নির্বাচন একটা অরাজনৈতিক ও অসাংগঠনিক পর্যায়ে রয়েছে। ’২৪-এর এত বড় অভ্যুত্থানের পর ছাত্রদের মধ্যে নির্বাচনের, রাজনীতির একটা চাহিদা তৈরি হয়েছে। যথেষ্ট স্বচ্ছ পরিবেশ আছে। আমার মতো লম্বা সময় ধরে ক’জন ছাত্র রাজনীতি করেছে আমি জানি না। দেশের ভায়োলেন্ট সময়েও একটা পুলিশও ডাকিনি। আর এখন সেনাবাহিনীকে ডাকা হচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনেও যেখানে সেনাবাহিনীকে ডাকা হয় না। ছাত্রদের ভোট দেয়ার মানসিকতা বা প্রার্থীদের মানসিকতা কেমন হচ্ছে এটা নিয়ে আমি সন্দিহান। আমি ডাকসুকে দেখতে চাই ’২৪-এর আন্দোলনের যে জনআকাঙ্ক্ষা তার প্রতীক হিসেবে। ছাত্ররা আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক, সাংস্কৃতিক, সংস্কার আন্দোলনের ট্রাম্পকার্ড। তারা সবসময় কনসার্ন। এগুলো বাদ দিয়ে একটা নির্বাচন হচ্ছে দেখছি।


তিনি আরও বলেন, অবশ্য শেষ পর্যন্ত আমি আশা করি ভালো কিছু হবে। যৌবনের ধর্মই এটা। ডাকসু নির্বাচন শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক পর্যায়ে ইতিবাচক প্রভাব রাখবে।
স্বাধীন বাংলাদেশের (১৯৭২-৭৩) প্রথম ডাকসু নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম (ছাত্র ইউনিয়ন)। তিনি বলেন, আমি চাই শুধু এবছর না প্রতিবছর একাডেমিক ক্যালেন্ডারে ডাকসু নির্বাচন অন্তর্ভুক্ত করা হোক। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয় প্রতিটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটি করাই হবে আকাঙ্ক্ষিত।
তিনি বলেন, ’২৪-এর আন্দোলনের বড় একটা সুফল এবছরের ডাকসু নির্বাচন। এই প্রক্রিয়াটা যেন সাসটেইনেবল হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। এটা যাতে হাওয়ায় মিলিয়ে না যায়। আমাদের গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। প্রতিটি ক্যাম্পাসে মুখপাত্র নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন করা খুবই জরুরি। এটা সামগ্রিক গণতান্ত্রিক পরিবেশের আন্দোলনের অন্যতম প্রধান একটা অংশ। 
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের মতে, তবে শিক্ষার্থীদের নির্বাচনে আর্মি মোতায়েন করা হচ্ছে। এটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। এটার দায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারকেও নিতে হবে। দায় অন্তর্বর্তী সরকারের উপরও যায়। কারণ এক বছর হলেও তারা পরিস্থিতি উন্নতি করতে পারেনি। প্রত্যেক বছর যাতে সেনা মোতায়েন করতে না হয় সেরকম পরিস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। যদিও আইএসপিআর পরে জানিয়েছে, তারা ডাকসু নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করছে না। 


এবারের ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে মোটাদাগে আসেনি বড় ধরনের অভিযোগ। প্রার্থীরা সৌহার্দ্য বজায় রেখেই লড়ছেন। এই লড়াইয়ে বড় নাম ছাত্রদল ও ছাত্রশিবির। এ ছাড়াও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বাম গণতান্ত্রিক জোট এবং একাধিক স্বতন্ত্র প্যানেল রয়েছে। সাত বছর পর হতে যাওয়া এই নির্বাচন নিয়ে কৌতূহলী ভোটাররা। তবে ’২৪-এর আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেও ছন্নছাড়া সম্মুখসারির নেতারা। ডাকসু’র প্রায় ৪০ হাজার ভোটারের মধ্যে বড় ফ্যাক্টর পাঁচ ছাত্র হলের প্রায় ৪৮ শতাংশ ভোটার। এই নির্বাচনের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খোদ প্যানেল ঘোষণা করেন। ভিপি পদে ছাত্রদল থেকে লড়ছেন ’২৪-এর আন্দোলনে উদাত্ত আহ্বান জানানো ‘প্লিজ, কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না’ জানানো আবিদুল ইসলাম। আর ডাকসুর ইতিহাসে এই প্রথমবার মাঠে নেমেছে জামায়াতে ইসলামের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির। সম্মুখ দুই পদে লড়ছেন মো. আবু সাদিক কায়েম ও এস এম ফরহাদ। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) অবস্থা ভাঙনমুখর। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, কোরাম, দ্বিচারিতা ইত্যাদির অভিযোগে নড়বড়ে দলটি। ভিপি-জিএস পদে আব্দুল কাদের এবং আবু বাকের মজুমদার প্রার্থী হয়েছেন। আলাদাভাবে লড়ছেন সাবেক সমন্বয়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা। বড় দুই দলের বাইরে চমক হতে পারেন উমামা। এ ছাড়াও ’২৪ আন্দোলনের সম্মুখ যোদ্ধা মাহিন সরকারও করছেন আলাদা নির্বাচন। 


কেমন ডাকসু চাই? এই প্রশ্ন করা হয়েছিল ঢাবি’র একাধিক শিক্ষার্থীর কাছে। তাদের কথায় স্পষ্ট- তারা চান মেরুদণ্ডওয়ালা প্রতিনিধি। তারা প্রতিনিধির মাধ্যমে তাদের হিস্‌সা নিশ্চিত করতে চান। তারা গণরুম, গেস্টরুম কালচারের কবর রচনা করতে চান। মূলত তারা চাইছেন ভোট দিতে। যে ভোটাধিকারের অমৃতসুধার স্বাদবঞ্চিত ছিল শিক্ষার্থীসহ ভোটাররা।
শিক্ষার্থীদের মাঝেও সেনা মোতায়েনের বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা কেমন থাকবে- এ নিয়েই এমন আলোচনা সামনে এসেছে। তবে সবশেষ খবরে জানা গেছে, সেনা মোতায়েনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। 


বিগত আওয়ামী লীগ আমলেও হয়েছিল ডাকসু নির্বাচন। কিন্তু গণতন্ত্র ফেরা তো দূরের কথা আরও দূরে সরিয়ে দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের। এ বিষয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ডাকসু নির্বাচন দীর্ঘদিন অনিয়মিত থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন ২০১৯ সালে হলেও তার আগে প্রায় তিন দশক ধরে ডাকসু নির্বাচন হয়নি। এর ফলে একটি প্রজন্ম গণতান্ত্রিক এই প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে। নিয়মিত নির্বাচন না হওয়া শুধু নেতৃত্ব গঠনের ধারাকে ভেঙে দেয়নি বরং বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতিকেও অস্বাভাবিকভাবে অচল করে রেখেছিল। তাই সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং নিয়মিত ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করা জরুরি। যাতে শিক্ষার্থীরা আবারো গণতান্ত্রিক চর্চায় অংশ নিতে পারে। ডাকসু নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও গণতান্ত্রিক জীবনে এক অমূল্য সম্পদ। এটি নেতৃত্ব তৈরি করে, গণতান্ত্রিক চর্চা শক্তিশালী করে, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের মঞ্চ হয়ে ওঠে এবং জাতীয় রাজনীতির গতিপথে প্রভাব ফেলে। তাই ডাকসু নির্বাচনের গুরুত্ব নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বরং প্রশ্ন হচ্ছে এই নির্বাচন নিয়মিত ও সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে কিনা। যদি তা সম্ভব হয়, তবে এটি শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সমগ্র বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য এক বিরাট শক্তি হিসেবে কাজ করবে।


ডাকসু নির্বাচনের আগে বহুল আলোচিত প্রসঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে গুপ্ত রাজনীতি। এ বিষয়ে সিপিবি’র সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ডাকসু রাজনীতি শুধু হল রাজনীতি নয়। একটা চিন্তা খুব স্ট্রংলি প্রচার করা হয় যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে। বুয়েটে করে দেয়া হলো। তারপর বলা হয় দেখো বুয়েট সুন্দর। ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখেন ওইখানে যে ছাত্রকে হত্যা করা হলো, তখন তো রাজনীতি নিষিদ্ধই ছিল। তারপরও এটা হয় কীভাবে? রাজনীতি নিষিদ্ধ মানে প্রকাশ্যে রাজনৈতিক দল এবং সংগঠন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এটা অসাংবিধানিক। কোনো ছাত্রের বা কোনো নাগরিকের তার সংগঠন করার অধিকার যদি নিষেধ করা হয়, সেটা সংবিধানের লঙ্ঘন হয়ে যায়। সেকেন্ডলি, এটা হওয়ার ফলে তাহলে পরে যে ভ্যাকুয়ামটা সৃষ্টি হয়, সেখানে হয় মাস্তানবাহিনী সামনে চলে আসবে, কিংবা গুপ্ত সংগঠন জন্ম নিবে।


তিনি আরও বলেন, আমরা জানি যে কীভাবে এটা করতে হয় এবং কীভাবে এটা করা যায়। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে আমি বলবো, তারা তো এই মেকানিজম জানে এবং তার ভেতরে খুবই ন্যক্কারজনক যে তারা নিজেকে বাঁচানোর জন্য, দলকে বাঁচানোর জন্য ছাত্রলীগের ভেতরে ঢুকে গেল। আমার তো সন্দেহ হয় হেলমেট বাহিনী হিসেবে তারাই এসে ওই সময় যদি সন্ত্রাস করে থাকে, তাহলে তো কেউ বলতে পারবে না। আমি কি বলবো যে, হ্যাঁ, ঠিক আছে সে দলকে রক্ষা করার জন্য ছদ্মবেশে ওটার ভেতরে ছিল? সেই লোকই এখন যদি এসে বলে যে, না আমি দেশপ্রেমিক, তাহলে তো এটা বিশ্বাসযোগ্য হবে না।


ডাকসুকে বলা হচ্ছে ভবিষ্যৎ রাজনীতির ট্রায়াল। শুধু ডাকসু নয় এর পাশাপাশি কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আসন্ন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভোট ১১ই সেপ্টেম্বর। এ ছাড়াও শিগগিরই হবে রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন। বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জোর দাবি তুলছেন ছাত্র সংসদ নির্বাচনের। কান পাতলে আওয়াজ আসছে কলেজগুলো থেকেও। এদিকে গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর হাতে গড়া গণবিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ২৫শে সেপ্টেম্বর ছাত্র সংসদ নির্বাচন। যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।


মাহমুদুর রহমান মান্নার মতে, পুরো দেশটা সংস্কার করতে হবে যাতে আরেকবার আবার ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে। দেখেন একসঙ্গে কতোগুলো রাজনৈতিক প্রশ্ন চলে এসেছে এবং এর মধ্যেই আবার যারা এতদিন ধরে আন্দোলন করেছে তারা নির্বাচন চাচ্ছে, সেটাই স্বাভাবিক এবং তাড়াতাড়িও চেয়েছেন। সেটা একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে বা না হয়েছে এ প্রশ্ন আছে, কিন্তু রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়ে গেছে। ছয় মাস পরে নির্বাচন। জনমনে ব্যাপক আশা। আর সেই আশার ভিত্তিতে দেশে নির্বাচন কাঠামো গড়ে তোলার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের প্রচণ্ড আকাঙ্ক্ষা। তারা আগের মতো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস চায় না, আগের মতো র‌্যাগিং চায় না, গেস্টরুম কালচার চায় না, বুলিং চায় না, যে দখলদারিত্ব ছিল সেটা চায় না। এই সবকিছু মিলে একটা নতুন আঙ্গিক। অথচ গত ১৫ বছর শিক্ষাঙ্গনে কোনো রাজনীতি ছিল না।


তিনি কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, পিকুলিয়ারলি আমি দেখলাম, ডাকসু নির্বাচনের ঢোল বেজেছে কিন্তু নাচ নেই। মানে এক ধরনের আমেজ তৈরি হয়েছে বটে কিন্তু ওই উৎসবের কোনো একটা ঢেউ, তরঙ্গ কিছু দেখছি না। হবে হয়তো। আমাদের সময় ডাকসু নির্বাচন নিয়ে মাস ধরে জল্পনা-কল্পনা, সভা-সমিতি, মিছিল-মিটিং নতুন আরেক বিষয় হয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে যে, হলগুলোতে কোনো রাজনীতি চলবে না। কতোটা প্যারাডক্সিক্যাল? আপনি চিন্তা করেন যে, এত বড় একটা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আকাঙ্ক্ষাই হচ্ছে নতুন দেশ গড়বো। অ্যাবসোলিউটলি পলিটিক্যাল সেটা। 


তিনি বলেন, সেটা কে করবে? ডাকসু মানে এটা অনেকেই ভুল করছে। আমাদের ছাত্রদের যে গৌরব ঐতিহ্য, ডাকসুর যে গৌরব ঐতিহ্য সেটা কিসে? সেটা ৫২’র। তখন ডাকসু ছিল না, কিন্তু ছাত্র আন্দোলনের ফসল, আমাদের ভাষা। ’৬২, ’৬৫, ৬৬’র আন্দোলন মানে শিক্ষার এবং ছয় দফার। পুরোটাই ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে পরিচালিত। স্বাধীনতা যুদ্ধের পতাকা উঠলো বটতলাতে। কতো নদীর রক্ত কিন্তু নামলো না। ডাকসু শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন নয়, ডাকসু বার্গেনিং এজেন্ট নয়, ডাকসু একটা লোকাল বডি নয়। ডাকসু অ্যাবসোলিউটলি আ রিপ্রেজেন্টেশন অফ দি পিপল্‌স উইল। থ্রু স্টুডেন্ট ইউনিয়ন বা স্টুডেন্ট ফেডারেশন যেটাকে ওরা বলে। অথচ সেখানে বলা হচ্ছে যে, না রাজনীতির ভিত্তিতে হবে না। ডাকসু মানে ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল স্টুডেন্ট ইউনিয়নের বেইজ হলো হল। মূলত ইউনিভার্সিটিতে যে মিছিল হয় আন্দোলন সেগুলোতে মিছিল তো ছাত্ররাই বের করে। 


তিনি বলেন, আপনি যদি ছাত্রলীগ বাড়াবাড়ি করেছে বলে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন, তাহলে ছাত্রলীগের তো ফাদার হলো আওয়ামী লীগ এবং তারা বাড়াবাড়ি করেছে ১০০ গুণ। তাহলে তো দেশের রাজনীতি বন্ধ করে দিতে হয়। বার বার ট্রমা তো আছে। আবার কি সেই আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে? এবং এই আশঙ্কা তো বেশি করে আছে। আওয়ামী লীগ যেহেতু পার্শ্ববর্তী দেশ তাদেরকে জায়গা দিয়েছে, তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তারা তৎপরতাও চালাচ্ছে। তাহলে এটা বন্ধ করলেন কেন? কিন্তু তবুও ছাত্রদের মধ্যে এই প্রবণতা আছে। এটা আমি দুঃখের সঙ্গে স্বীকার করছি, তারা মনে করছে ছাত্র রাজনীতি না থাকলে, হলের মধ্যে যদি ছাত্র সংগঠন না থাকে আমরা সেইফ থাকবো। কিন্তু ছাত্ররা তাদের জাতির জন্য যে বৃহত্তর দায়িত্ব পালন করে আসছে এতদিন ধরে। এবং এক বছর আগেও যে অঙ্গীকারটা করেছে সেই অঙ্গীকার তো এরা রক্ষা করতে পারবে না। ফলে আমি মনে করি এ জায়গাটা থাকবে না। এটা একটা দুঃখ-কষ্ট। এই ডাকসু নির্বাচনের প্রভাব কি জাতীয় নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে? উত্তরে বলেন, ধরেন ডাকসুতে জাসদ জিতেছে, জাতীয় রাজনীতিতে জাসদ একটা ফ্যাক্টর হয়ে গেল। কিন্তু এখন এমন কেউ কেউ জিততে পারেন যাদের জাতীয় রাজনীতিতে এমনিতেই তেমন প্রভাব নেই। এই ছাত্র রাজনীতি যদি বলতো ডাকসু নির্বাচনে যে আপনার ডাকসু, রাকসু, চাকসু-এর সব জায়গাতে এটা চাই যে দেশে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা গড়ে উঠুক। যে সংস্কারের চেষ্টা হচ্ছে সেই সংস্কারের মধ্যদিয়ে একটা উন্নত সংস্কৃতি রাজনীতি গড়ে উঠুক, আমাদের সেটাই লক্ষ্য। এটা জাতীয় রাজনীতিকে আপনাকে এগিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু এই বক্তব্য নিয়ে কি কেউ নামছে? নামতেও পারে। আমি এখন জানি না। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই ট্রেন্ড আমি দেখছি না। ফলে এই জায়গাতে আবারো একটু আমি ধাক্কা খাচ্ছি এবং আমি এটা ফিল করি- ধরেন আমার কথা যারা শুনবে তাদেরকে আমি এটাই করতে বলবো। কারণ এটা না হলে কেবলমাত্র ডাইনিং হলে খাবারের মান বাড়ানো আর লাইব্রেরিতে ১০টা বই বেশি দেয়া, এই সংগ্রাম ছাত্ররা জীবনেও করেনি। এটা করবে কেন?


মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ডাকসু নির্বাচনের মূল্যায়নে বলেন, ডাকসু নির্বাচন খুবই এক্সাইটিং। সম্ভবত পাবলিক ইউনিভার্সিটির আরও তিনটে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যে ইলেকশন হওয়ার কথা আছে। আমি প্রথমেই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, এইটা একটা লোক দেখানো সেন্সেশনালিজম যে, আমরা করলাম এমন যেন না হয়। বিষয়টা খালি একবার ডাকসু ইলেকশন করলে তো হবে না। খালি চারটা ইউনিভার্সিটি করলে তো হবে না। প্রত্যেকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রত্যেক বছর নিয়মিতভাবে নির্বাচন করতে হবে এবং সেটা কেন করতে হবে যুক্তিটা এখনই পরিষ্কার করা দরকার। 
প্রথম, সবারই সংসদ থাকে, ইউনিয়ন থাকে। উকিল সাহেবদের থাকে, ইঞ্জিনিয়ারদের থাকে, ডাক্তারদের থাকে। তো ছাত্রদের থাকবে না কেন? তাদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ইন্টারঅ্যাকশন। শুধুমাত্র এই জায়গাটা যদি আমরা ধরি, তাহলে তো এটা একান্তভাবে প্রয়োজন এবং এটাই যদি না থাকে, তাহলে পরে ছাত্রদের নির্বাচিত মুখপাত্রের জায়গাটা দখল করে নেয় মাসল পাওয়ার, চাঁদাবাজ। আর তার সঙ্গে ইন্টিগ্রেটেড হয়ে যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসন। আরেকটু হিসাব করলে দেখা যাবে রাজনৈতিক যে ক্ষমতার যে সিনারিও সেইটাও এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। সুতরাং ইলেকশন, এই কায়েমী স্বার্থবাদী গোষ্ঠী কোনোদিনই নির্বাচিত প্রতিনিধি, তারা চায় না। নির্বাচিত মুখপাত্র চায় না।
তিনি বলেন, সেকেন্ড হলো, প্রকৃত শিক্ষা। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা, সেটা একজন ছাত্র বা ছাত্রীকে কেবল বইয়ের পোকা বানানোর জন্য তো শিক্ষার উদ্দেশ্য হতে পারে না। তাকে দেশপ্রেম শিখাতে হবে। তাকে মানবতা শিখাতে হবে। মানুষের প্রতি ভালোবাসা, তার সামাজিক বোধ, তার সংস্কৃতি, এই সমস্তটাকে বিকশিত করার মাধ্যমেই তাকে অগ্রসর করতে হবে। তার সমস্ত একাডেমিক কার্যকলাপের সঙ্গে যদি এটাকে যুক্ত না করা হয়, তাহলে পরে কিন্তু সে একটা যন্ত্র হয়ে যাবে। এবং যন্ত্র হিসেবে পুরনো সমাজের যত রুগ্‌ণতা শিক্ষার ভেতরে প্রবেশ করে তাকে একটা অমানুষে পরিণত করবে। এটা একটা ফলাফলও বটে এবং কারণও বটে। 


ইতিহাসের অভিজ্ঞতা এ কথাই বলে- রাজনীতি হলো অর্থনীতিরই ঘনীভূত প্রকাশ। অর্থনীতি যদি বাজার অর্থনীতির ধারায় পরিচালিত হয়, সবকিছুই কেনাবেচা, লাভ-লোকসান- এই হিসাবে যেমন নাকি অর্থনীতি ব্যক্তি মালিকানাধীন বাজার অর্থনীতি পরিচালিত হয়। রাজনীতিতেও এটা চলে আসবে। সুতরাং আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, এই সময়ের কথা, খুবই মানে আশ্চর্য হলাম, যখন শুনলাম যে সমন্বয়কের কেউ কেউ তারা টাকা দিয়ে ছাত্রলীগের কমিটির ভেতরে ঢুকেছিল। যাতে তাদের খুঁজে না পাওয়া যায়। তো আমরা আইয়ুব খানের আমলে এনএসএফ’র বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। তো আমরা যদি ওই পথ গ্রহণ করতাম, তাহলে আইয়ুবের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান হতো? কিংবা এরশাদের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান সেটা কি হতো? তাহলে পরে এই কৌশল যারা অবলম্বন করে, তারা নৈতিকভাবে দুর্বল। তখন তারা ভাবা শুরু করে যে, কোন কৌশলে আমি এই নিজের ব্যক্তিগত সুবিধাটা অর্জন করতে পারবো? এবং সেটারই কিছু ফেনোমেনা কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি। এবং আমি ওদেরকে সরাসরি বলেছি, তোমরা বিএমডব্লিউ গাড়িতে চড়ো, তোমরা মার্সিডিজ ছাড়া চলো না। কেউ কেউ নাকি মিটিং করতে যাও হেলিকপ্টারে করে, কেউ কেউ রূপায়ণ টাওয়ারের দুইটা ফ্লোর নিয়ে আছে। 


জাতীয় নির্বাচনের পথ কী দেখাবে ডাকসু? তিনি বলেন, দু’টি কথা বলতে চাই। কারও কারও চিন্তায় আছে যে পলিটিক্স খারাপ এবং ডাকসু বা এসব ছাত্র সংসদের একেবারে পলিটিক্স থেকে দূরে থাকতে হবে। এটা হলো অ্যান্টি-পলিটিক্স, ডিপলিটিসাইজেশন, বি-রাজনীতিকীকরণ। এটা মারাত্মক একটা ষড়যন্ত্র। এবং আমাদের এখানে সিভিল সোসাইটির নামে, এনজিও’র নামে একটা কালচার তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে যেখান থেকে রাজনীতিকে দূরে রাখতে হয়। ‘তোমরা খালি এই ভাঙা বেঞ্চের কথা বলো, ব্ল্যাক বোর্ডের কথা বলো, অমুক কথা বলো। রাজনীতি-টাজনীতি এখানে চলবে না।’ আমি এটাকে বিরোধিতা করি। আবার সঙ্গে সঙ্গে ওভার পলিটিক্যালাইজেশন। ডাকসুতে হেরে গেলে বা অমুক কলেজে হেরে গেলে, আমি তো আর এমপি হতে পারবো না। আমি তো আমার সরকার রক্ষা করতে পারবো না।


তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যত দোষ করেছে, সব দোষকে আমরাই কাভার করতাম এই কথা বলে যে, ‘বঙ্গবন্ধু তো ভালো আছে। উনি তো চেষ্টা করতেছে।’ পরে আমরা মূল্যায়ন করেছি। কোন ব্যক্তি দলের স্বার্থের ঊর্ধ্বে আল্টিমেটলি উঠতে পারে না। দল আল্টিমেটলি তার শ্রেণি স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না। সুতরাং বঙ্গবন্ধু বা একজন ব্যক্তিকে আলাদা করে, এবং বুর্জোয়া রাজনীতি এই কারণেই এরকম হয় যে, সুপ্রিমো তারা সিলেক্ট করে। একজন সুপ্রিমোকে উপরে উঠিয়ে তোলে এবং তাকে সমস্ত মানে তার, তার প্রশংসাসূচক যেগুলো, সেগুলো করতে হবে। তা না হলে আমাকে বলেন। আমরা যে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, আমরা কি ’৭২-এর সংবিধানের ভিত্তিতে করেছি, না স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের ভিত্তিতে করেছি? আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, ১০ই এপ্রিল যেটা। 


যেভাবে ডাকসু ইতিহাসের অংশ হলো
১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পরের বছর প্রতিষ্ঠিত হয় ডাকসু। প্রথমে এর নাম ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাসু)। তখন শিক্ষার্থীদের এক টাকা চাঁদা দিয়ে এর সদস্য হতে হতো। শুরুর দিকে অরাজনৈতিক কার্যকলাপ পরিচালনার উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি পায়। সে সময়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হল- ঢাকা হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ও জগন্নাথ হল থেকে একজন করে শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধি এবং ভাইস চ্যান্সেলর মনোনীত একজন শিক্ষক দিয়ে সংসদ গঠিত হতো। ১৯২৪-২৫ সালে প্রথম ডাকসুর ভিপি মনোনীত করা হয়। সে বছর ডাকসুর প্রথম ভিপি ও জিএস হিসেবে মনোনীত হন মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও যোগেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত।


১৯৫৩ সালে গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে নাম পরিবর্তন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) রাখা হয়। সে বছরই (১৯৫৩ সালে) বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ডাকসুর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এস এ বারী  ও জুলমত আলী খান হচ্ছেন ডাকসুর প্রথম নির্বাচিত ভিপি ও জিএস। এরপর অনেকটা নিয়মিতই ছিল ডাকসু নির্বাচন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ডাকসু গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে। ১৯৭১ সালের ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক বটতলায় প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয় যা ছিল ডাকসুর নেতৃবৃন্দের অন্যতম সাহসী ও বলিষ্ঠ উদ্যোগ। তখন ডাকসুর ভিপি ও জিএস ছিলেন ছাত্রলীগের আ স ম আবদুর রব ও আব্দুল কুদ্দুস মাখন।


স্বাধীন দেশে প্রথম ডাকসু নির্বাচন হয় ১৯৭২ সালে। সেবার ডাকসুর ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন থেকে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম এবং জিএস নির্বাচিত হন মাহবুবুর জামান। এরপর আরও পাঁচবার ডাকসু নির্বাচন হয়। তবে সর্বশেষ ডাকসুর নির্বাচন হয় নব্বইয়ের দশকে। ১৯৯০ সালের ৬ই জুন ডাকসু ও ১৮টি আবাসিক হল সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ নির্বাচন যেটা ছিল নব্বইয়ের দশকে। ১৯৮৯-৯০ ছাত্রলীগের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ ভিপি ও মুশতাক হোসেন জিএম নির্বাচিত হন। পরের বার ১৯৯০-৯১  ভিপি ও জিএস হন ছাত্রদলের আমানউল্লাহ আমান ও খায়রুল কবির খোকন। এরপর দীর্ঘ ২৮ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছে শিক্ষক সংগঠন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নির্বাচন। কিন্তু হয়নি গুরুত্বপূর্ণ ডাকসু নির্বাচন। এরপর ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের বাহুবলে হয় নির্বাচন। যাতে নুরুল হক নুর সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ থেকে ভিপি নির্বাচিত হলেও তা ছিল প্রশ্ন সংকুল। এতে জিএস হয়েছিলেন বর্তমানে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের গোলাম রব্বানী।

এক্সক্লুসিভ'র অন্যান্য খবর