৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে আশ্রয় নেন দিল্লি। দলের নেতাকর্মীরাও প্রাণ বাঁচাতে চলে যান আড়ালে। ডাকসাইটে সাবেক মন্ত্রীদের বেশির ভাগ দেশের বাইরে, অনেকেই কারাগারে বা আত্মগোপনে। এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের কি হবে? দলের হাল কে ধরবেন? যদিও এখনো পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা না এলেও শেখ হাসিনাই দলের সভানেত্রী হিসেবে দল চালাচ্ছেন। শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর থেকে আলোচনা আছে তাজউদ্দীন আহমদের পরিবার থেকে কেউ দায়িত্ব নিতে পারেন আওয়ামী লীগের। বিশেষত সোহেল তাজের নাম চাউর আছে। তাজউদ্দীন পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, দলের দায়িত্ব নেয়ার জন্য আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। করা হয়েছে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ফোন। বলা হয়েছে, পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টের পরে যেভাবে জোহরা তাজউদ্দিন দলের কান্ডারি হয়েছিলেন। এবারো দুঃসময়ে দলের দায়িত্ব নিয়ে পুনর্গঠন করা। কিন্তু আলাপ-আলোচনার একপর্যায়ে তাজউদ্দিন পরিবার থেকে দু’টি শর্তের কথা বলা হয়। এক. যে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশের বাইরে পাচার হয়েছে তা ফিরিয়ে দেয়া। দুই. জুলাই-আগস্টে নির্বিচারে যে ধরনের নির্যাতন চালানো হয়েছে, মানুষ হত্যা হয়েছে তার জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া। এই দুই শর্তে আলোচনা আর এগোয়নি।
ঢাকা সফররত তাজউদ্দীন আহমদের জ্যেষ্ঠ কন্যা শারমিন আহমদ গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আওয়ামী লীগের উচ্চ মহল, শেখ হাসিনার আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে আমি, সোহেল আমাদের কাছে ফোনকল এসেছে। তারা জানতে চেয়েছেন, আওয়ামী লীগের হালটা ধরবো কিনা। আমি তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছি যে’ ’৭৫ পরবর্তী সময়ে জোহরা তাজউদ্দীন আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন। তখন কিন্তু আওয়ামী লীগের অবস্থা এখানকার চেয়ে অনেক ভালো ছিল। আমার মা যখন আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন, তখন আওয়ামী লীগের প্রায় সবাই তৃণমূলের রাজনীতি থেকে উঠে আসা মানুষ। আমার মায়ের কথা ছিল, যোগ্য, মেধাবীদের ছাত্রলীগে রিক্রুট করো। কিন্তু সংগঠনে কে আসবে, কে আসবে না, তা নিয়ে তিনি কোনো হস্তক্ষেপ করতেন না। ফলে সংগঠনে মেধাবী তরুণরা আসতে শুরু করলো। কিন্তু এর পরিণতি কী হলো?
আম্মা যখন আওয়ামী লীগকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে আসতে শুরু করলেন, দলকে একটা শক্ত জায়গায় নিয়ে এলেন তখন কী হলো? আব্দুর রাজ্জাক সাহেবরা দিল্লি থেকে শেখ হাসিনাকে নিয়ে এলেন। এরপর আওয়ামী লীগ আর দলের থাকলো না। পরিবারের হয়ে গেল। আমি ব্যক্তিগতভাবে রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্র পছন্দ করি না। কেউ যদি নতুন আসে, আমরা তাদের জন্য কাজ করবো, তাদের গাইড করবো। কিন্তু তাজউদ্দীনের সন্তান হিসেবে আমরা রাজনীতিতে আসতে চাইবো না।
যারা ফোনকল করেছেন, আমি তাদের বলেছি, আপনারা আবার তাজউদ্দীনের পরিবারের কাছে আসছেন! আপনারা নিজেরা দলকে ধ্বংস করে এখন চাচ্ছেন আবার আমরা আসবো, দলকে গড়ে দেবো। এরপর আপনারা ফিরে এসে সেটার ফল নেবেন? এবার আমরা এই অবস্থান নিয়েছি যে, আওয়ামী লীগের ভেতর থেকে অনুশোচনা আসুক, আত্মোপলব্ধি আসুক। জনগণের কাছে তাদের ক্ষমা চাইতে হবে। প্রত্যেক আহত ব্যক্তির কাছে, প্রত্যেক নিহত ব্যক্তির পরিবারের কাছে গিয়ে পা ধরে মাফ চাইতে হবে। যে টাকা বিদেশে পাচার করে নিয়েছেন, সেটা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।