উৎস: ১৯৭১-এর সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রাম এবং ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার দুনিয়া কাঁপানো অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গণআকাঙ্ক্ষাভিত্তিক সংবিধান প্রণয়নে ‘সংবিধান সংস্কার’ করা, ঐতিহাসিক প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। কারণ সংবিধানে জনগণের সার্বভৌমত্বকে সংগতিপূর্ণ উপায়ে ও ন্যায়সঙ্গতভাবে বণ্টন করা হয়। ভোটাধিকার প্রধানত রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক সাম্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রাথমিক শর্ত। এ কারণেই বলা হয়- প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের রাজনৈতিকব্যবস্থা হলো জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত, নিয়ন্ত্রিত এবং পরিচালিত শাসনব্যবস্থা।
জনগণের রাজনৈতিক সার্বভৌমত্ব এবং সরকারের আইনগত সার্বভৌমত্ব- সুনির্দিষ্ট ও ভারসাম্যপূর্ণ না হওয়ায়, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। সুতরাং সংবিধান হবে- স্থায়ী ও স্থিতিশীল। তাই বিদ্যমান সংবিধানকে বাতিল না করে সংস্কার বা সংশোধন অথবা প্রয়োজনীয় পরিবর্তন, পরিবর্ধন কিংবা সংযোজন করাই হবে- মৌলিক কর্তব্য। সংবিধানকে সর্বোচ্চ আইন হিসেবে গ্রহণ করার পেছনে যে যুক্তি কাজ করে, সেটাই হলো সংবিধানের নৈতিক ভিত্তি। এটা সমস্ত জনগণের জন্য একটি দিকনির্দেশনা (Guiding Star)। সংবিধানের প্রস্তাবনা হলো- রাষ্ট্রক্ষমতার সঙ্গে জনগণের সম্পর্কের আত্মজীবনী বা সারসংক্ষেপ।
স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে- সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক সুবিচার- এই ত্রয়ী আদর্শকে প্রজাতন্ত্রের দার্শনিক ভিত্তি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু তা ধারণ, লালন না করায় জাতীয় চেতনা এক ভয়াবহ ভিন্নপথে প্রভাবিত হয়েছে এবং মানুষের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে অবস্থান গ্রহণ করেছে। অথচ এই ভাবাদর্শকে নিয়েই রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি প্রণয়ন করতে পারলে, মানুষের আকাঙ্ক্ষাসমূহ সার্থক ও চরিতার্থ লাভ করতে পারবে। ’৭২-এর সংবিধান, এই ভূখণ্ড ও জনগোষ্ঠী নিজেদের প্রয়োজনে নিজেরাই প্রণয়ন করে। যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যমান সংবিধানের মৌলিক বিষয়ে প্রস্তাব উত্থাপন করছি।
নতুন প্রস্তাবনা
আমরা জনগণ, দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে বিশেষ করে ’৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, অগ্নিঝরা মার্চের পতাকা উত্তোলন, স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, ৭ই মার্চ-সহ ঐতিহাসিক ও তৎপণ্ডমর্জিত ঘটনাবলী অতিক্রম করে ’৭১-এর সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন-সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি।
আমরা আরও অঙ্গীকার করছি, যেসকল মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে- সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের দার্শনিক ভিত্তিতে বীর শহীদগণ আত্মোৎসর্গ করেছিলেন সে ভিত্তিতেই রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নির্ধারণ হবে।
আমরা আরও অঙ্গীকার করছি যে-
১. ‘সাম্য’, ‘মানবিক মর্যাদা’ ও ‘সামাজিক সুবিচার’- এই ত্রয়ী দার্শনিক ভিত্তি হবে রাষ্ট্রীয় আদর্শ। সংবিধানই রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক নকশা, যার মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার রূপ-প্রকৃতি-চরিত্র নির্ধারিত হবে।
২. জাতির দীর্ঘ লড়াইয়ের মহান অর্জনগুলো বিশেষ করে- ভাষা আন্দোলন, রক্তঝরা মার্চ-এর ঐতিহাসিক ঘটনাসহ ’৭১ ও ’২৪-এর গণহত্যার রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্যদিয়ে গড়ে ওঠা গণ-অভিপ্রায়ের প্রতিফলন হবে, বৈষম্যমুক্ত গণমুখী রাষ্ট্র বিনির্মাণের পূর্ব শর্ত। সংবিধান হবে জাতীয় ঐতিহ্য ও গণআকাঙ্ক্ষার-অভিপ্রায়ের প্রতিচ্ছবি (Mirror of national and social aspiration)।
৩. প্রজাতন্ত্র বিনির্মাণের আইনগত ও দার্শনিক নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ১০ই এপ্রিলকে ‘প্রজাতন্ত্র দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত করা।
৪. রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হবে ‘গণতন্ত্র’ অর্থাৎ Democracy is a Government of the People by the People and for the People.
৫. জীবন (Life): রাষ্ট্র যেকোনো নাগরিক বা জনগণের ‘জীবন সুরক্ষার’ প্রশ্নটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিবে (Highest Priority on Life Protection).
৬. সমপ্রীতি (Harmon): সকল ধর্ম ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণার্থে সকল ধর্ম-বর্ণের পারস্পরিক সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব এবং সামাজিক সমপ্রীতি রক্ষা করা হবে- রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব ও কর্তব্য।
৭. প্রতিশ্রুতিবদ্ধ (Committed): মানুষের উপর প্রভুত্ব বিস্তারে স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদিব্যবস্থায় রাষ্ট্র কখনো ফিরে আসবে না, প্রজাতন্ত্রকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় রূপান্তর করে বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণ করাই হবে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।
৮. দৃঢ়প্রতিজ্ঞ (Determined): শুধুমাত্র জনগণের অভিপ্রায়ের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে, কোনো বাইরের শক্তি দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে সংবিধানের দর্শন অনুসারে রাষ্ট্র পরিচালনায় আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
৯. জাতীয় ঐক্য (national consensus): স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক শৃঙ্খলার মৌলিক নিশ্চয়তা হবে জাতীয় ঐক্য এবং সকল অপশক্তি মোকাবিলা করার প্রেরণা। জাতীয়তাবাদ এবং রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বিভিন্ন জাতিসত্তার আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার নিশ্চিত করা।
১০. নির্দেশনা (Guided): ‘সাম্য’, ‘মানবিক মর্যাদা’ ও ‘সামাজিক সুবিচার’-এই ত্রয়ী দর্শনের ভিত্তিতে দেশজ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধারণ করে এবং ১৯৭১ ও ১৯২৪-এর নির্দেশনায় পরিচালিত হওয়া।
১১. আমাদের ঘোষণা (We Declared): রাষ্ট্রের সকল আইনের উৎস হবে- ‘মানবিক মর্যাদা’(ঐঁসধহ ফরমহরঃু) সুরক্ষা করা। রাষ্ট্র সকল মানুষের পূর্ণ মানবিক মর্যাদা সুনিশ্চিত করবে। রাষ্ট্র কোনো অবস্থায় মানুষের মর্যাদা বিপন্ন করবে না।
আমরা আরও দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করছি যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ স্বাধীন সত্তায় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক-সহ সকল ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি ও উৎকর্ষতা লাভ এবং জাতীয় মুক্তিকে ত্বরান্বিত করে মানবজাতির অগ্রসরমান আশা-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সংগতি রেখে, শান্তিপূর্ণ বিশ্বের ঐতিহাসিক সম্ভাবনাকে বিবেচনায় নিয়ে বৈশ্বিক রাজনীতিতে আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা গ্রহণ করতে পারি।
সমস্ত জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তির মতাদর্শিক নির্দেশনা সংবলিত মহৎ কর্মকাণ্ডের ভিত্তি হবে প্রজাতন্ত্রের সংবিধান। এই সংবিধানকে কোনো দল বা গোষ্ঠী কর্তৃক ক্ষমতার হাতের খেলনা বা রাষ্ট্রক্ষমতা দখলে বল প্রয়োগের সুযোগ নিলে, তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাই হবে জনগণের ন্যায়সংগত অধিকার।
এই সংবিধানের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধান করা সকল নাগরিকের মৌলিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। ১৯৭২ সালের ৪ঠা নভেম্বর এই জনগোষ্ঠীর পক্ষে প্রথম সংবিধান যে গণপরিষদ রচনা ও বিধিবদ্ধ করে সমবেতভাবে গ্রহণ করেছিল তার কাঠামোগত ও মৌলিক সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্রের জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাবনা গৃহীত হলে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা পূরণে সহায়ক হবে। বিদ্যমান সংবিধানের যে সকল অনুচ্ছেদের বা দফা কিংবা উপ-দফার শুধুমাত্র সংশোধনী আনয়ন করা হয়েছে তা নিম্নরূপ:-
প্রজাতন্ত্র
১. বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র, যাহা “গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ” হিসেবে পরিচিত হইবে।
২. ক) প্রজাতন্ত্র সকল ধর্মের অর্থাৎ ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান-সহ অন্যান্য ধর্ম পালনে সমমর্যাদা ও সমঅধিকার নিশ্চিত করবে।
রাষ্ট্রভাষা
৩. প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রভাষা বাংলা। তবে অন্য জনগোষ্ঠীর ভাষা বিকাশেও রাষ্ট্র কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ করবে না।
৪. (ক) আইন দ্বারা নির্ধারিত প্রতিষ্ঠাতা অভিভাবক (ঋড়ঁহফরহম ঋধঃযবৎং) ফাউন্ডিং ফাদার্সদের প্রতিকৃতি- রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও প্রধান বিচারপতির কার্যালয় এবং সকল সরকারি, আধা- সরকারি অফিস, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস-মিশনসমূহে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করতে হবে।
৬. ২) বাংলাদেশের বাঙালি জনগোষ্ঠী জাতি হিসেবে বাঙালি, কিন্তু অন্যান্য জাতিসত্তার নাগরিকগণও স্ব-স্ব জাতীয় পরিচয়ে পরিচিত হতে পারবে কিন্তু নাগরিক হিসেবে সকলেই বাংলাদেশি।
সংবিধানের প্রাধান্য
প্রতিস্থাপিত:
৭. (ক) কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি ‘গণতন্ত্র’কে প্রতারণার মাধ্যমে সমস্ত জনগণের ভোটাধিকার এবং অভিপ্রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে, আইনগত ও নৈতিকভাবে সংবিধানের মর্মবস্তুকে উপেক্ষা ক’রে-সংবিধানের প্রতি জনগণের আস্থা, বিশ্বাস এবং প্রত্যয় বিনষ্ট করলে, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
(খ) নির্বাচনকে প্রতারণা বা অপকৌশল করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে জনগণের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ন বা বাতিল করলে জনগণের অভ্যুত্থান, বিদ্রোহ বা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থাকবে। যা জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
৭. (খ). ১৪২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন হবে। তবে-
১) জনগণ সকল সার্বভৌমত্বের মালিক
২) সংবিধানে প্রাধান্য
৩) গণতন্ত্র
৪) প্রজাতান্ত্রিক সরকার ও
৫) বিচার বিভাগের স্বাধীনতা
৬) রাষ্ট্রের তিন বিভাগের ক্ষমতার ভারসাম্য বিনষ্ট হতে পারে বা খর্ব করতে পারে তা সংশোধন অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
দ্বিতীয় ভাগ
রাষ্ট্র পরিচালনার দিকনির্দেশনামূলক নীতি সমূহ:-
৮. (১)
ক.
জাতীয়তাবাদ: বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠন, বিনির্মাণ ও বিকাশের অপরিহার্য শর্ত এবং রাজনীতির অন্যতম নির্ণায়ক উপাদান। সাম্রাজ্যবাদ, সমপ্রসারণবাদ, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদ হবে মূল প্রেরণা। জাতীয়তাবাদ স্বাধীনতার পূর্বে এবং পরেও ক্রিয়াশীল। জাতীয়তাবাদের আরও উচ্চতর বিকাশ ঘটবে।
ঐক্য, সংহতি এবং আত্মরক্ষার ভিত্তি হবে জাতীয়তাবাদ। আগামীতে স্বকীয় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে বাঙালি কর্ম ও পেশাভিত্তিক জাতিত্বে উন্নীত হবে। এটাই হবে বাঙালির তৃতীয় জাগরণের রূপ।
খ. রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার আত্মপরিচয়ের প্রশ্নেও রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রীয়ব্যবস্থা কোনো বৈষম্য প্রদর্শন করবে না।
গ. ঔপনিবেশিকতার বিলোপসাধন করে সাম্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রের প্রতিটি জাতিসত্তার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করাকে রাষ্ট্র অগ্রাধিকার প্রদান করবে।
২) বৈষম্যহীন সমাজ: আর্থসামাজিক অসাম্য ও নিপীড়নমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা অতিক্রম করে- সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করার জন্য সামাজিক বিপ্লবকে ত্বরান্বিত করাই হবে প্রজাতন্ত্রের মূল লক্ষ্য। মানুষের উপর মানুষের শোষণ হতে মুক্তি লাভ করার জন্য সামাজিক বিপ্লবের দ্বারা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য নিরসনের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিকব্যবস্থা রূপান্তর করাই হবে চূড়ান্ত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। রাষ্ট্র এমন কোনো আইন প্রণয়ন করতে পারবে না, যা উপরোক্ত ত্রয়ী আদর্শকে খর্ব করতে পারে বা ক্ষুণ্ন করতে পারে।
৩) অংশীদারিত্বের গণতন্ত্র: রাষ্ট্র পরিচালনার মূলভিত্তি হবে সমাজের সকল অংশের মানুষের অংশগ্রহণ-ভিত্তিক অংশীদারিত্বের গণতন্ত্র। গণতন্ত্রকে ক্রমাগত সমপ্রসারিত করতে হবে এবং সর্বক্ষেত্রে আইন প্রণয়ন ও নীতিনির্ধারণের স্তরে জনগণের সকল অংশের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
৪) ধর্মীয় স্বাধীনতা বা সমপ্রীতি: রাষ্ট্র সকল ধর্মের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে। কারও কোনো ধর্মীয় অনুশাসনে রাষ্ট্র কোনোরকম বিঘ্ন সৃষ্টি করবে না।
৮. (২) এই ভাগে বর্ণিত নীতিসমূহ বাংলাদেশ পরিচালনার দিকনির্দেশনা। আইন প্রণয়নকালে রাষ্ট্র এই নির্দেশনাগুলো প্রয়োগ করবে। এই সংবিধান ও বাংলাদেশের অন্যান্য আইনের ব্যাখ্যা প্রদানে তা নির্দেশক হবে এবং তা রাষ্ট্র ও নাগরিকদের কার্যের ভিত্তি হবে।
গণতন্ত্র ও মানবাধিকার
১১. প্রজাতন্ত্র হবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে। রাষ্ট্র পরিচালনার মূল ভিত্তি গণতন্ত্র। সকল মানুষের সমান অধিকারের প্রজাতন্ত্র। গণতন্ত্র ও মানবাধিকার অবিচ্ছেদ্য। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবেও বাংলাদেশ হবে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র। সীমিত গণতন্ত্রকে ক্রমাগতভাবে অংশীদারিত্বের গণতন্ত্রে রূপান্তর করার মানেই হলো সমাজের সকল অংশের মানুষের মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা।
ক) প্রশাসনের সকল পর্যায়ে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে রাষ্ট্রের সকল স্তরে সর্বস্তরের জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
১২. ধর্মীয় স্বাধীনতার নীতি বাস্তবায়ন:
ক) সর্বপ্রকার সামপ্রদায়িকতা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার নিষিদ্ধ করা।
খ) কোনো ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বিদ্বেষ বা বৈষম্য বিলোপ করা।
আন্তর্জাতিক শান্তি, নিরাপত্তা ও সংহতির উন্নয়ন
২৫.
২) জাতীয় প্রতিরক্ষা কাউন্সিল:
বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ঝুঁকিকে বিবেচনায় নিয়ে প্রতিরক্ষা প্রশ্নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে।
১) রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার স্বার্থে আক্রমণাত্মক নয়, প্রতিরোধমূলক নীতির ভিত্তিতে অবিলম্বে ‘জাতীয় প্রতিরক্ষা কাউন্সিল’ গঠনপূর্বক যুগোপযোগী জাতীয় প্রতিরক্ষা নীতি প্রণয়ন করা।
২) ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সকল নারী-পুরুষকে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণের আওতায় আনার রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
লেখক: গীতিকবি ও সংবিধান বিশ্লেষক।
faraizees@gmail.com