টিউলিপ কাণ্ডে তোলপাড়। বাংলাদেশ থেকে বৃটেন। বৃটেন থেকে সারাবিশ্বে এখন আলোচনার বিষয় টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি বাংলাদেশে ছাত্রদের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা ছেড়ে পালানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে। বৃটেনে রাজনীতি করেন লেবার পার্টির। এমপি হয়ে পেয়েছিলেন মন্ত্রীর পদ। খুব বড় মন্ত্রী না হলেও, একেবারে কম দায়িত্ব নয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুর্নীতিবিরোধী দায়িত্ব। কিন্তু তাকেই নিয়ে উঠলো দুর্নীতির অভিযোগ! শুধু অভিযোগ না। একেবারে রেকর্ডসহ বৃটিশ পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফ, ডেইলি মেইল সহ বিভিন্ন পত্রিকা প্রকাশ করে দিলো তার কেলেঙ্কারির কথা। তারা বলে দিলো বাংলাদেশে তার খালা শেখ হাসিনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন ডেভেলপার আবদুল মোতালিফ কিংস ক্রসে একটি ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিককে। এরপরই বলা হয়, টিউলিপের বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তিকে একটি ফ্ল্যাট উপহার দিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ একজন আইনজীবী মঈন গণি। সেই ফ্ল্যাটটি বোন টিউলিপকে ব্যবহার করতে দেন আজমিনা। এভাবেই টিউলিপের দখলে আসে ওই দু’টি ফ্ল্যাট। কিন্তু তিনি এ তথ্য গোপন করেন। প্রথমে বলেন, পিতামাতা কিনেছেন ফ্ল্যাট। পরে অবশ্য চাপে পড়ার পর স্বীকার করেন। অন্যদিকে বাংলাদেশে তার খালা শেখ হাসিনার রাজনীতির সঙ্গে তিনি নিজের রাজনীতি গুলিয়ে ফেলেন। অথচ কোনো দেশের রাজনৈতিক নেতা হয়ে, পার্লামেন্টের সদস্য হয়ে- অন্য দেশের রাজনীতিতে যুক্ত হতে পারেন না কেউ। কিন্তু টিউলিপ তাই করেছেন। তিনি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। অন্যদিকে তার নির্বাচনে সহযোগিতা করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। এ অভিযোগ ওঠার পর তিনি তা অস্বীকার করেন। কিন্তু তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে নিজের পাশে খালা শেখ হাসিনাকে রেখে বলেছিলেন- আপনাদের সমর্থনের জন্য আমি গর্বিত। আপনারা আমাকে সহযোগিতা না করলে আমি কখনোই বৃটিশ এমপি হতে পারতাম না। এ কথা তিনি তার ব্লগে লিখেছিলেন বলে বৃটিশ মিডিয়া সাক্ষ্য দিচ্ছে। কিন্তু যখন দেখলেন বিপদে পড়তে যাচ্ছেন, তখন ওই ব্লগ মুছে ফেলেছেন। কেলেঙ্কারির তথ্য ফাঁস হওয়ার পর টিউলিপের পদত্যাগ দাবি করেন কনজারভেটিভ দলের নেতা কেমি ব্যাডোনচ। কিন্তু কোনো তোয়াক্কাই করেননি টিউলিপ। এর কারণ হিসেবে বৃটিশ মিডিয়া বলছে, টিউলিপের ক্ষমতার খুঁটি হলেন প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার। তারা একে অন্যের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। পাশাপাশি আসনে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন দু’জনেই। কিয়ের স্টারমারকে সর্ব অবস্থায় বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন টিউলিপ। এ জন্য টিউলিপ কারও কোনো কথায় কান দেননি। তিনি সিটি মিনিস্টার ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবিরোধী পদ থেকে পদত্যাগে বিলম্ব করেছেন। অবশ্য দ্য টেলিগ্রাফ তার এক রিপোর্টের প্রথম লাইনে লিখেছে- পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন টিউলিপ। তার অর্থ হলো- তিনি পদত্যাগ করতে চাননি। তাকে বাধ্য করা হয়েছে। কে করেছে? কেউ কেউ আকারে ইঙ্গিতে বলছেন- প্রধানমন্ত্রী যখন দেখেছেন টিউলিপের বিরুদ্ধে যেসব তথ্য বের হয়েছে, তাতে তাকে রক্ষা করা কঠিন হতে পারে- হয়তো তখন তিনিই তাকে গোপনে পদত্যাগ করতে বলতে পারেন। এমনও হতে পারে এমপি, মন্ত্রীদের চাপে পড়ে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর অধীনে মন্ত্রিত্ব বিষয়ক আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে কিনা, তা যাচাই করেন নিরপেক্ষ উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস। পদত্যাগের দু’একদিন আগে তার দরবারে গিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করেন টিউলিপ। তিনি যাচাই বাছাই শেষে সোমবার ঘোষণা দেন যে, টিউলিপ অজান্তেই জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন। তার খালার রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল তার। তবে তিনি কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি বলে দাবি করেন ম্যাগনাস। তিনি রিপোর্টে আরও বলেন, ফ্ল্যাটের ঘটনাটি অনেক আগের। এ বিষয়ে যথাযথ তথ্যপ্রমাণ হাজির করতে অক্ষম হয়েছেন তিনি। অর্থাৎ তিনি যতই বলুন আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি টিউলিপ। কিন্তু আইনের চোখে যখন জনগণকে বিভ্রান্ত করেন একজন মন্ত্রী, তিনি তার সম্পদের বিষয় গোপন করেন- তখন তার পদে থাকা অসম্ভব হয়ে ওঠে। অন্তত বৃটেনের মতো দেশে। শেষ পর্যন্ত তা-ই হয়েছে। এখন অনেকে বলছেন, খালা শেখ হাসিনার রাজনীতিই টিউলিপকে খেয়ে দিয়েছে। টিউলিপের এই পরিণতির জন্য দায়ী তার খালা শেখ হাসিনা। আগে থেকেই টিউলিপের ফ্ল্যাট নিয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর একেবারে খুলে যায় প্যান্ডোরার বাক্স। তার ভেতর থেকে বেরুতে থাকে একে একে ভয়াবহ সব তথ্য।
বিপদ হতে পারে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীরও: রাজনীতির কাদায় শুধু টিউলিপ একা নন, আটকে পড়েছেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমারও। সমালোচনা উঠেছে যে, টিউলিপকে ছায়া দিয়ে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন তিনি। এমনকি বলেছেন, টিউলিপের জন্য তার দরজা খোলা। ফলে তোপের মুখে পড়েছেন কিয়ের স্টারমার। এখন নিজ দলের ভেতর থেকেই প্রশ্ন উঠছে স্টারমারের বিরুদ্ধে। ঘনিষ্ঠ বন্ধু টিউলিপকে দুর্নীতিবিরোধী দায়িত্ব দেয়া নিয়ে এই সমালোচনা। টিউলিপকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিতে দেয়ার বিরুদ্ধে সমালোচনা করেছে বিরোধী কনজারভেটিভরা। তারা বলেছে, প্রধানমন্ত্রী দুর্বল। তিনি তাকে বরখাস্ত করার সাহস দেখাননি। কেমি ব্যাডেনচ বলেছেন, ‘তার (প্রধানমন্ত্রী) ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী সময়ক্ষেপণ করেছেন। এখন বাংলাদেশে যখন টিউলিপের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে, তখন প্রধানমন্ত্রী তার (টিউলিপের) অপরিহার্য পদত্যাগে ব্যথিত হয়েছেন। লেবার দলের একজন এমপি নাম প্রকাশ না করে বলেন, এ বিষয়টি একান্তই প্রধানমন্ত্রী নিজের বিষয়। সবাই জানেন যে, টিউলিপ বাংলাদেশি রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের একজন সদস্য। এই রাজনৈতিক ডাইনেস্টির সঙ্গে বিপুল ক্ষমতা এবং অর্থের যোগ রয়েছে। তার মতো ব্যক্তিকে ওই দায়িত্ব দেয়ার বিষয়ে পৃথিবীতে কে বলবে যে, এটা ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে? ওদিকে পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডার্ডস কমিশনার ডানিয়েল গ্রিনবার্গকে টিউলিপ সিদ্দিকের বিষয়ে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়ে লিখেছে বিরোধী দল কনজারভেটিভ। একই দলের নেতা কেমি বাডেনোচ বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীকে ‘দুর্বল নেতৃত্ব’ হিসেবে অভিযুক্ত করেছে। টিউলিপের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বন্ধুত্বের সম্পর্কের জন্যই আইনগত প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়েছে কিনা- তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
টিউলিপের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ: টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও বোন শেখ রেহানার মেয়ে। শেখ হাসিনার পতনের পর টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কেলেঙ্কারির খবর বোমার মতো ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ ওঠে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ একজন আওয়ামী লীগ নেতা ও ডেভেলপার আবদুল মোতালিফের কাছ থেকে উপহার হিসেবে বৃটেনের কিংস ক্রসে একটি ফ্ল্যাট নিয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। তার বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তির নামে আরও একটি ফ্ল্যাট উপহার দেন আইনজীবী মঈন গণি। প্রকারান্তরে সেই ফ্ল্যাটও টিউলিপকে উপহার দেয়া হয়েছে। কারণ, রূপন্তি ওই ফ্ল্যাট টিউলিপকে পরিবার সহ ব্যবহার করতে দিয়েছেন। এসব বিষয় গোপন করেছেন টিউলিপ। শুধু তা-ই নয়, তিনি শেখ হাসিনার ভাগ্নি হওয়ার পরও তার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক আলোচনা কখনো করেননি বলে দাবি করেন। কিন্তু তার ব্লগ ফাঁস করে দিয়েছে মিডিয়া। তাতে দেখা যায়, তিনি শেখ হাসিনার জয়ে গর্ব প্রকাশ করেছেন। তার প্রচারণায় ছিলেন তিনি। এর বাইরে রাশিয়ার সঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি করার মধ্যদিয়ে শেখ হাসিনা, টিউলিপ, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় প্রমুখ ৫০০ কোটি ডলার মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগে বাংলাদেশে দুদক তদন্ত করছে। তদন্ত চলছে বৃটেনে। কিন্তু অভিযোগ ওঠার পর দীর্ঘ সময় তা অস্বীকার করে মন্ত্রী পদে অধিষ্ঠিত থাকেন টিউলিপ। বিবিসি বলছে, বাংলাদেশে দুদকের দুর্নীতি বিষয়ক তদন্তে ক্রমবর্ধমান চাপের ফলে পদত্যাগ করেছেন বৃটিশ ট্রেজারি মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক। তিনি বৃটেনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসন থেকে এমপি। স্কাই নিউজের রাজনীতি বিষয়ক ডেপুটি সম্পাদক স্যাম কোটস বলেন, সরকারের এথিকস এডভাইজার তার রিপোর্টে টিউলিপ কোনো অন্যায় করেননি বলে ছাড়পত্র দিয়েছেন। কিন্তু রাজনৈতিক বাস্তবতা হলো যখন বিদেশি কোনো সরকার কারও বিরুদ্ধে তদন্ত করে তখন তার ক্ষমতায় থাকা ভালো দেখায় না।
পদত্যাগপত্রে যা লিখেছেন: দুর্নীতি নিয়ে উত্তেজনার মধ্যে ট্রেজারি মন্ত্রীর পদত্যাগ করেন টিউলিপ সিদ্দিক। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমারকে একটি চিঠি লিখেছেন লরি ম্যাগনাস। তাতে তিনি বলেছেন, তিনি মনে করেন যে, তার উচিত টিউলিপের চলমান দায়িত্বগুলোর বিষয়ে বিবেচনা করা, যদিও তিনি মনে করেন- টিউলিপ মন্ত্রিত্বের আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি। তবে একই দিন কিয়ের স্টারমারকে নিজে একটি চিঠি লিখেছেন টিউলিপ। তাতে তিনি স্বীকার করেছেন যে, পার্লামেন্টের সামনের সারিতে বসে তার দায়িত্ব অব্যাহত রাখা হতে পারে সরকারের কাজের জন্য বিভ্রান্তিকর। চিঠিতে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে তাকে সমর্থন দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মিস সিদ্দিক। তিনি বলেছেন, আপনি জানেন যে, আমার অনুরোধে অভিযোগের বিষয়ে গভীরে গিয়ে পর্যালোচনা করেছেন স্যার লরি। তিনি নিশ্চিত করেছেন, আমি মন্ত্রিত্বের বিধি ভঙ্গ করিনি। টিউলিপ আরও বলেছেন, আমার পারিবারিক সম্পর্কের বিষয়টি সরকারি রেকর্ডের ব্যাপার। যখন আমি মন্ত্রী হই, সে সময় আমার সম্পর্ক এবং সরকারের প্রাইভেট ইন্টারেস্ট সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা দিয়েছি। টিউলিপ দাবি করেছেন, তিনি পূর্ণাঙ্গ স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করেছেন। সরকারে থাকার সময় তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয় থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন। তিনি আরও বলেন, আমার আনুগত্য এই লেবার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি আছে এবং সবসময় থাকবে। সরকার যে জাতীয় রূপান্তরকরণ ও পরিবর্তন শুরু করেছে সেই কর্মসূচির প্রতি আনুগত্য থাকবে। তাই আমি মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
টিউলিপের জন্য দরজা উন্মুক্ত:
টিউলিপের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার বলেন, ট্রেজারির অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ ছিল বেদনার। তিনি আরও বলেন, টিউলিপ সিদ্দিকের জন্য তার দরজা উন্মুক্ত। কিয়ের স্টারমার আরও বলেন, আপনার চিঠির জন্য ধন্যবাদ। এটা বেদনার যে মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে আপনার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করতে হচ্ছে। দায়িত্বে থাকার সময় আপনি যে প্রতিশ্রুতি পালন করেছেন তার জন্য ধন্যবাদ। আপনার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে আমি এটা পরিষ্কার করতে চাই যে, স্যার লরি ম্যাগনাস নিরপেক্ষ উপদেষ্টা হিসেবে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, তিনি মন্ত্রিত্বের আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোনো তথ্য পাননি, আপনার দিক থেকে আর্থিক কোনো অসঙ্গতির তথ্যপ্রমাণ পাননি। তার কাছে আপনার নিজে থেকে আত্মপক্ষ সমর্থনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। ধন্যবাদ জানাতে চাই এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করার জন্য। আপনি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
নিজের অজান্তেই জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন টিউলিপ: মঙ্গলবার স্যার লরি ম্যাগনাস বলেছেন- এটা দুঃখজনক যে, মিস সিদ্দিক বাংলাদেশি সাবেক শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে তার পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের বিষয়ে সুনামের ঝুঁকি সম্পর্কে যথেষ্ট সতর্ক ছিলেন না। তিনি আরও বলেছেন, যে দু’টি প্রোপার্টি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তার ডকুমেন্ট পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। এই ঘটনাটি ঘটেছে কমপক্ষে ২০ বছর আগে। টিউলিপ সিদ্দিক ও তার বোনকে ২০০৪ সালে এবং ২০০৯ সালে ওই দু’টি ফ্ল্যাট উপহার দেয়া হয়েছে। ৪২ বছর বয়সী টিউলিপ উল্লেখযোগ্য ব্যাকগ্রাউন্ড তথ্য সরবরাহ করেছেন। তাতে দেখিয়েছেন যে, তার তহবিল ব্যবস্থাপনা নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে। তবে এটা ‘কনক্লুসিভ’ ছিল না। এসব লেনদেনের অভিযোগের গুরুত্বের প্রেক্ষিতে এটা দুঃখজনক যে, কনক্লুসিভ তথ্যগুলো পাওয়া যাচ্ছে না। স্যার লরি আরও বলেন, মিস সিদ্দিক অজান্তেই কিংস ক্রসে তাকে কে একটি ফ্ল্যাট উপহার হিসেবে দিয়েছে, সেই দাতার পরিচয় সম্পর্কে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন ২০২২ সালের জিজ্ঞাসাবাদে।
‘কনজারভেটিভদের মতোই খারাপ লেবার সরকার’: টিউলিপ সিদ্দিককে নিয়ে কিয়ের স্টারমার দু’জন মন্ত্রী হারালেন। এক দশক আগে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ স্বীকার করে নেয়ার পর গত মাসে পদত্যাগ করেন পরিবহনমন্ত্রী লুইস হাই। তারপর দ্বিতীয় মন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগ করলেন টিউলিপ। ক্ষমতায় আসার প্রথম ৬ মাসের মধ্যেই অনেক স্ক্যান্ডাল বা কেলেঙ্কারি জেঁকে ধরেছে লেবার পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকারকে। এর ফলে স্যার কিয়ের স্টারমার ঐতিহাসিকভাবে একজন নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অজনপ্রিয়তার নিম্নতম স্থানে পৌঁছে গেছেন। প্রধানমন্ত্রিত্বের ১০০ দিনের আগেই তিনি বরখাস্ত করেছেন নিজের চিফ অব স্টাফ সু গ্রে’কে। লেবার দলের দাতা লর্ড আলির কাছ থেকে অবাধে অর্থ এবং পোশাক নেয়ার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। এর পরিমাণ হাজার হাজার পাউন্ড। এমন অবস্থায় রিফর্ম ইউকে এবং লিবারেল ডেমোক্রেটরা লেবার পার্টিকে বিগত কনজারভেটিভ সরকারের মতোই খারাপ হিসেবে অভিহিত করেছে। রিফর্মের একজন মুখপাত্র বলেছেন, দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের মধ্যেই পদত্যাগ করতে হয়েছে কিয়ের স্টারমারের দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রীকে। লিবারেল ডেমোক্রেট দলের কেবিনেট অফিসের মুখপাত্র সরাহ ওলনি বলেন, কনজারভেটিভ দলের বছরের পর বছর ধরে কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতির পর জনগণ এই সরকারের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করেছিল। কনজারভেটিভ দলের কেমি ব্যাডেনচ বলেন, সপ্তাহান্তে এটা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল যে, দুর্নীতিবিরোধী মন্ত্রীর পদ পুরোপুরি অক্ষম হয়ে পড়েছে। তবু স্যার কিয়ের স্টারমার তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে সুরক্ষিত রাখতে বিচলিত হন এবং বিলম্ব করেন। এখন পর্যন্ত টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে একটি ফৌজদারি মামলা হয়েছে। এতে টিউলিপের পদত্যাগে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আসলে দুর্বল নেতৃত্ব থেকে তৈরি হন একজন দুর্বল প্রধানমন্ত্রী।