ডনাল্ড ট্রাম্প। এক বিস্ময়কর নাম। আলোচিত নাম। সমালোচিতও। এবার দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসের মসনদের মালিক। মেয়াদ আগামী চার বছর। এ সময়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বমঞ্চে আরও শক্ত অবস্থানে নিয়ে যেতে পারেন। আবার সমালোচকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখনো বিশ্বের এক নম্বর শক্তিধর দেশ। কিন্তু ট্রাম্প যেসব নীতি অবলম্বন করছেন তাতে তিনি এই অবস্থান থেকে নামিয়ে ফেলতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রকে। ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ তার এবারের মূলমন্ত্র। নির্বাচনী প্রচারণায় এই মন্ত্র ছিল ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’। তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে গ্রেট করতে গিয়ে ভূখণ্ড বিস্তৃত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন একাধিকবার। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী বহু লাখ বিদেশি অবৈধ অভিবাসীকে বের করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সে অনুযায়ী কাজ করছে বর্ডার গার্ডস সহ সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলো। ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণার সময়ই কার্যত হুমকি দিয়েছেন। বলেছেন, তিনি ডেনমার্কের অধীনে থাকা গ্রিনল্যান্ডকে কিনে নেবেন। তিনি মনে করেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য গ্রিনল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে থাকা অত্যাবশ্যক। এখানেই থেমে থাকেননি। পানামার নিয়ন্ত্রণে থাকা পানামা ক্যানেল যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন। বলেছেন, ওই ক্যানেল নিয়ন্ত্রণ করছে চীনা সেনারা। এটা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তবে পানামা সরকার ট্রাম্পের এ বক্তব্যকে খণ্ডন করেছে। তারা বলেছে, সেখানে চীনের কোনো উপস্থিতি নেই। ট্রাম্প আরও ভয়ের যে কথা বলেছেন, তা হলো কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য বানাতে চেয়েছেন। বলেছেন, এ জন্য অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহার করবেন। অর্থনৈতিক শক্তির ব্যবহার বলতে বোঝায় সাধারণত নিষেধাজ্ঞা, শুল্ক আরোপের মতো পদক্ষেপকে। ২০শে জানুয়ারি শপথ নেয়ার সময় তিনি সম্প্রসারণবাদ নিয়ে কয়েকবার কথা বলেছেন। এর বাইরে ওইদিনই তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার নির্বাহী আদেশ দেন। তার দাবি এই সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি অর্থ দিচ্ছে। অন্যদের এক্ষেত্রে বাজেট বাড়িয়ে ভারসাম্য বজায় রাখার আহ্বান জানান ট্রাম্প। কিন্তু তার প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেডরোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানান। পরে জানানো হয়, ট্রাম্প তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারেন। একই সময়ে বাতাসে অনেক খবর ভাসে। শোনা যায়, তিনি ন্যাটো থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। যদি তা-ই হয়, তাহলে ইউরোপ অরক্ষিত হয়ে পড়তে পারে। এসব সিদ্ধান্তকে বিশ্লেষকরা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন। কারণ, এর প্রতিটি পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে গেলে বিদেশি শক্তির ক্রমবর্ধমান বিরোধিতার মুখে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে ২০১৬ সালে নির্বাচনী প্রচারণায় ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) বাণিজ্যিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এই চুক্তির ফলে প্যাসিফিক রিম বলে পরিচিত ১১টি দেশের মধ্যে বাণিজ্য হতো। এই চুক্তির অংশ ছিল না চীন। ফলে ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র বেশ ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারতো। কিন্তু ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, এই চুক্তিটি ত্রুটিপূর্ণ। এতে পরে চীনের যুক্ত হওয়ার জন্য একটি পেছনের দরজা খোলা রেখেছে। এ কারণে প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার কয়েকদিনের মধ্যে এই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র সরে যাওয়ার পর টিপিপি’র অংশীদাররা এর নতুন নাম দেন- কমপ্রিহেনসিভ অ্যান্ড প্রোগ্রেসিভ অ্যাগ্রিমেন্ট ফর ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (সিপিএটিপিপি)। তখন ব্যাপকভাবে সমালোচনা হয় যে, যুক্তরাষ্ট্র সরে যাওয়ার ফলে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ করতে পারে চীন এবং এর মধ্যদিয়ে ওই অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ পাবে চীন। অর্থাৎ চীনকে সুযোগ সৃষ্টি করে দেন ট্রাম্প। ফলে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের জায়গায় ওই চুক্তিতে যুক্ত হতে আনুষ্ঠানিকভাবে আবেদন করে চীন। এ সময় চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস বলে- এর ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্যে দেশের নেতৃত্ব দৃঢ় হবে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ক্রমাগতভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প শুধু এই নীতি করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের জন্য সফর নিষিদ্ধ করেন। যুক্তরাষ্ট্র- মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ করেন। পরিবার বিচ্ছিন্নকরণ বিষয়ক একটি পলিসি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বাস্তবায়ন করেন। ২০১৮ সালে চীনের বিরুদ্ধে শুরু করেন বাণিজ্য যুদ্ধ। তবে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু বলে পরিচিত উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু তা সম্পন্ন করতে পারেননি। এবারও তিনি তেমন কোনো উদ্যোগ নেবেন কিনা, তা স্পষ্ট নয়। কোভিড-১৯ মহামারিকালে স্বাস্থ্য বিষয়ক নীতি মানতে গড়িমসি করেন ট্রাম্প। এক পর্যায়ে নিজেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ২০১৯ সালে তাকে কংগ্রেসে ক্ষমতার অপব্যবহার ও বাধা দেয়ার অভিযোগে অভিশংসিত করা হয়। ২০২১ সালের ৬ই জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গায় উস্কানি দেয়ায় অভিযুক্ত হন। তবে পরে দু’টি অভিযোগ থেকেই তাকে খালাস দিয়েছে সিনেট। তিনি আবারো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। আবারো যেসব নীতি হাতে নিয়েছেন তাতে যুক্তরাষ্ট্র পুঁজিবাদী ধারণাকে সামনে নিয়ে এগুতে পারে। এর মধ্যদিয়ে তারা বিপুল অর্থের মালিক হতে পারে। এমনকি সাম্রাজ্যবাদের দিকে ধাবিত হতে পারেন ট্রাম্প। যেমনটি ছিল ঊনবিংশ শতাব্দীতে এবং বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে। ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার অপেক্ষায় যখন ছিল বিশ্ব, তখন বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের দখলদারিত্ব ও সাম্রাজ্যবাদী যুগের মধ্যে তুলনা করতে থাকেন কেউ কেউ। এরই মধ্যে প্রটেকশনিজম বা সংরক্ষণবাদী হিসেবে একটি যুগের চ্যাম্পিয়ন হয়ে ওঠেন ট্রাম্প। তিনি দাবি করেন যুক্তরাষ্ট্র ১৮৯০-এর দশকে সম্ভবত সবচেয়ে বেশি সম্পদশালী ছিল। কারণ, তখন শুল্ক আরোপের একটি সিস্টেম ছিল। এখন দৃশ্যত তিনি বিংশ শতাব্দীর শেষে এবং একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকের মতো ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দিকে দৃষ্টি দিয়েছেন। বিষয়টি ভূরাজনীতিতে একটি আতঙ্কের সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে বড় রকম অর্থনৈতিক ও সামরিক সংঘাতও হতে পারে। নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির যুক্তরাষ্ট্র বিষয়ক একজন ইতিহাসবিদ ডানিয়েল ইমারওয়াহর বলেন, আমরা বিশ্বকে গ্রাস করার আরও একটি পুরনো সংস্করণ দেখতে পাচ্ছি। ট্রাম্পের দৃষ্টিতে নিজেদের সীমান্ত থেকে বহু দূরে অবস্থানরত চীন বিভিন্ন ভূখণ্ড তাদের অধীনে নিতে পারে। এ জন্য তিনি বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি করা পানামা ক্যানেল নিয়ন্ত্রণ করছে বেইজিং। একই সঙ্গে চীন ও তার মিত্র রাশিয়া আর্কটিক সমুদ্রপথ ও মূল্যবান খনিজ তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করছে। একই সময়ে চতুর্দিকে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারত, সৌদি আরব সহ কিছু দেশের উত্থান ঘটছে। ভেনিজুয়েলা ও সিরিয়ার মতো দেশ ঘূর্ণাবর্তে এবং তারা বাইরের প্রভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। ১৮৮০-এর দশক এবং ১৮৯০-এর দশকে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে লড়াই ছিল। কিন্তু কোনো একক দেশ আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি। বেশির ভাগ দেশ ছিল অধিক মাত্রায় শক্তিধর। এর ফলে এশিয়া থেকে ক্যারিবিয়ান অঞ্চল পর্যন্ত যুদ্ধ হয়েছে। বিরোধ বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন করে মানচিত্রের সীমানা আঁকা হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে গ্রিনল্যান্ড, পানামা ক্যানেল এমনকি কানাডাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার বিষয়টি সম্প্রসারণবাদ। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসের যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে ইতিহাসবিদ ইয়ান টাইরেল বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের দখলদারিত্ব বজায় রাখার চর্চা করে, চেষ্টা করে। তারা যেসব এলাকাকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ বলে মনে করে তখনই এমন করে। ট্রাম্প কানাডা, মেক্সিকো, চীনা পণ্যের বিরুদ্ধে যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তাতে এসব দেশের বাণিজ্যই যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এমন নয়। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। শুল্ক বাড়ানোর পর ভোক্তারা চাহিদা কমিয়ে দিতে পারেন। তাতে বাজার অর্থনীতিতে বড় রকমের আঘাত লাগতে পারে। যদি সেটাই হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র আর্থিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এদিক দিয়ে চীনের উত্থান ঘটতে পারে। তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশ, আফ্রিকার কিছু দেশকে নিয়ে বড় একটি বলয় তৈরি করে ফেলতে পারে। তিনি গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার যে হুমকি দিয়েছেন তার কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিউট বোরাপ এগেদে এবং ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মিত্তি ফ্রেডেরিকসেন। ফ্রেডেরিকসেন বলেছেন, সীমান্তের ওপর সম্মানজনক পূর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ আছে ডেনমার্কের। এ বিষয়ে নরডিক দেশগুলো, ইউরোপ এবং ইউরোপের বাইরের দেশগুলোর পরিষ্কার বার্তা আছে। গ্রিনল্যান্ড হলো ডেনমার্কের অধীনে একটি স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ। ইউরোপিয়ান অঞ্চলে এমন হুমকিতে বিবৃতি দিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। তারা ট্রাম্পের হুমকিকে সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে। সর্বশেষ ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোক রাসমুসেন প্রতিক্রিয়া দিয়ে বলেছেন, গ্রিনল্যান্ডকে পাবেন না ট্রাম্প। গ্রিনল্যান্ড হলো গ্রিনল্যান্ড। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী গ্রিনল্যান্ডের মানুষ গ্রিনল্যান্ডিক। বার বার আমরা বলে আসছি, এই দ্বীপের মানুষরাই তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু ট্রাম্প বার বার ওই দ্বীপ দখল করে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন। কানাডাকে দখল করে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন। এসব হুমকিতে এক রকম অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে চীন যে তাইওয়ানকে তাদের নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে তার বিরুদ্ধে অবস্থান ব্যক্ত করেছে ট্রাম্পের নতুন প্রশাসন। ইরান ইস্যুতে ট্রাম্প প্রথম মেয়াদেই সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে ২০১৫ সালে করা ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করেন। উল্টো তিনি ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ওই চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করতে এসে সদ্য বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অনেক চেষ্টা করলেও তেমন কোনো ফল হয়নি। উল্টো ইরানের রেভ্যুলুশনারি গার্ডের প্রথম সারির কয়েকজন নেতা নিহত হন। তীব্র ইরান বিরোধী ট্রাম্প এবার ইরান ইস্যুতে কি অবস্থান নেন, তা এখনো পরিষ্কার নয়। তবে তিনিও জো বাইডেনের মতো কঠোর ইসরাইলপন্থি এটা আগের মেয়াদেই প্রমাণ দিয়েছেন। বরং বাইডেনের চেয়ে তিনি একটু বেশি ইসরাইলপন্থি। তার হুমকিতে হামাস যদিও ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করেছে, তা কতোদিন স্থায়ী হয়- সেটা এখন দেখার বিষয়।
ডনাল্ড ট্রাম্প যা করছেন তাকে কেউ কেউ ট্রাম্পইজম বলে অভিহিত করছেন। তিনি বিগত সময়ে এবং এখনো বেশ কিছু তথ্য দিয়েছেন। এসব তথ্যকে আন্তর্জাতিক মিডিয়া মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর বলে অভিহিত করছে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে অভিবাসনবিরোধী অভিযান শুরু হয়েছে। এর মধ্যে আছেন বাংলাদেশ ও ভারতের অভিবাসীরাও। ভারতীয় মিডিয়ায় প্রকাশ ভারত ১৮ হাজার অভিবাসীকে ফেরত নেয়ার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এ সংখ্যা পরিষ্কার করে বলেননি। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ক্ষমতায় আসার পর প্রথম কোনো বিদেশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেখানে দ্বিপক্ষীয় বিষয়, আঞ্চলিক ও বিশ্ব নিরাপত্তার ইস্যু আলোচিত হয়েছে। উঠেছে প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে। সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ, ওই সংলাপে নাকি বাংলাদেশ ইস্যুও উঠেছিল। তবে বাংলাদেশ নিয়ে কি আলোচনা হয়েছে তা জানা যায়নি। এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার দহরম মহরম সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এবারো কি তাই হবে? ট্রাম্প যখন ভারতীয় অবৈধ অভিবাসীদের বের করে দেবেন, তখনই এ সম্পর্ক সম্পর্কে আন্দাজ করা যাবে। তাছাড়া সবেমাত্র ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু। এখনই ভারতের সঙ্গে তার সমীকরণ কেমন হয় তা বোঝা দুরূহ।
ডনাল্ড ট্রাম্প ২০শে জানুয়ারি শপথ নিয়ে হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় মেয়াদে ফিরে যান। এ সময়ে বিশ্বের বহু দেশ আন্দাজ করে নিয়েছে তার অধীনে তাদের প্রত্যাশা কি হবে এবং তাদের সামনে যা আসতে চলেছে তার জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে। তিনি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ পলিসি নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন। এই পলিসির মধ্যে তিনি যেসব নীতি গ্রহণ করেছেন তাতে কি যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের শক্তিধর এক নম্বর আসন ধরে রাখতে পারবে! অথবা তারা কি যে অবস্থায় আছে তার থেকে আরও উপরে উঠে আরও শক্তিশালী হবে! নাকি যুক্তরাষ্ট্র নিজে নিজেই ধসে পড়বে! বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এখন এই আলোচনা। কারণ, ট্রাম্প শপথ নেয়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। তার দাবি, এই সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্র একাই সবচেয়ে বেশি অর্থ দিয়ে আসছে। অন্যদেরকেও তাদের আর্থিক অনুদানে ভারসাম্য রক্ষার আবেদন দীর্ঘদিন ধরে করে আসছেন তিনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় ২০২৩-২০২৪ সময়কালে বাজেট ছিল ৬২০ কোটি ডলার। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একাই দিয়েছে শতকরা ১৮ ভাগ। যার পরিমাণ দাঁড়ায় কমপক্ষে ১২২ কোটি ডলারের অনেক বেশি। ট্রাম্প চাইছেন এই অর্থ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে না দিয়ে তার দেশের মানুষের সেবায় ব্যবহার করতে। তাতে যুক্তরাষ্ট্র সমৃদ্ধ হবে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের যে শূন্য আসন তৈরি হবে, যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, তা ওই অর্থ দিয়ে পূরণ করা যাবে না। এ বিষয়টি যখন ট্রাম্প প্রশাসনে আলোচনা হচ্ছে, তখন শোনা যাচ্ছে তিনি এ সিদ্ধান্তটি বিবেচনা করছেন। এর বাইরে ক্ষমতার প্রথম মেয়াদে তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেন নির্বাচিত হয়ে এসে সেই চুক্তিতে ফিরে গেছেন। আবারো ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা ভাবছেন। তিনি এবার ক্ষমতায় এসেছেন জাতীয়তাবাদকে পুঁজি করে। অর্থাৎ মার্কিনিদের স্বার্থকে বড় করে দেখিয়েছেন। তিনি মার্কিনিদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন বেশ কয়েকটি। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো- অবৈধ লাখ লাখ অভিবাসীদের বের করে দেবেন। মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তে বেড়া নির্মাণ করবেন। পানামা ক্যানেল, গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবেন। গালফ অব মেক্সিকোর নাম পাল্টে দিয়ে নতুন নাম রাখবেন গালফ অব আমেরিকা। কানাডা, চীন, মেক্সিকো সহ বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানিতে বিপুল পরিমাণে শুল্ক আরোপ করবেন। যুক্তরাষ্ট্রে কোনো অভিবাসীর সন্তান জন্ম নিলে তারা জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাবে না। একদিনের মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করে দেবেন। ইত্যাকার প্রতিশ্রুতিতে মার্কিনিরা তাকে ক্ষমতায় এনেছে। ট্রাম্প ২০শে জানুয়ারি শপথ নেয়ার পরই প্রথম ভাষণে যুক্তরাষ্ট্রের সীমানাকে বর্ধিত করার কথা বলেছেন। আসলে এর মধ্যদিয়ে তিনি গ্রিনল্যান্ডকে দখল করে নেয়ার কথা বুঝিয়েছেন। ২৫শে জানুয়ারি তিনি গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের কাছে ট্রাম্প ওই দ্বীপটিকে দখল করে নেয়া সম্পর্কে বলেছেন- আমরা মনে করি এটা আমরা নিয়ে নেবো। এই দ্বীপে বসবাস করেন প্রায় ৫৭ হাজার মানুষ। তাদেরকে আমরা আমাদের সঙ্গে পেতে চাই। এর আগে ট্রাম্প যখন এই দ্বীপকে যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে নেয়ার দাবি করেছিলেন, তখন ডেনমার্ক এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে তার বক্তব্যের কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে এক ফোনকলে কথা বলেন ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মিত্তি ফ্রেডারিকসেন। ফোনালাপটি ছিল উত্তপ্ত। সেখানে ফ্রেডারিকসেন জানান, গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়। উল্লেখ্য, ডনাল্ড ট্রাম্প ২০১৯ সালে প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সময় আর্কটিক অঞ্চলের এই বিশ্বাল দ্বীপটি কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তখন তিনি বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্রের অধীনে থাকা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে গেছে। তবে তিনি এয়ারফোর্স ওয়ানের প্রেসরুমে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ নিয়ে নতুন করে কথা বলেন। ট্রাম্প বলেন, আমি জানি না ডেনমার্ক কেন এটার দাবি করছে। যদি তারা এটা (যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে) হতে না দেয়, তাহলে তা হবে খুবই অবন্ধুত্বসুলভ কাজ। কারণ, এই গ্রিনল্যান্ডের সুরক্ষাটা মুক্ত বিশ্বের জন্য প্রয়োজন। বিশ্বকে স্বাধীনতা দেয়ার জন্য আমি মনে করি আমরা গ্রিনল্যান্ড নিয়ে নেবো। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু করার নেই। কারণ, শুধু যুক্তরাষ্ট্রই সেখানে স্বাধীনতা দিতে পারে। তারা (ডেনমার্ক) পারে না। শুধু গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত করার হুমকি দিয়েই তিনি ক্ষান্ত থাকেননি। একই সঙ্গে কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য বানানোর হুমকি দেন। বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কানাডাকে অঙ্গরাজ্য বানাতে অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহার করতে পারেন। তারও কড়া জবাব দিয়েছে কানাডা। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি ক্ষমতার প্রথম দিনেই থামিয়ে দিতে পারবেন ইউক্রেন যুদ্ধ। অবশ্য, তিনি এ নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলেছেন।
চীন-রাশিয়া কী এক হচ্ছে: ডনাল্ড ট্রাম্পের হুমকি মোকাবিলা করতে চীন ও রাশিয়া কি এক হচ্ছে? ২০শে জানুয়ারি ট্রাম্প শপথ নেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই ভিডিওকলে কথা বলেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তারা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে সবচেয়ে উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শি জিনপিংকে একজন ‘প্রিয় বন্ধু’ সম্বোধন করে পুতিন বলেছেন- বাইরের চাপ থাকা সত্ত্বেও বন্ধুত্ব, পারস্পরিক আস্থা এবং সমর্থনের ভিত্তিতে রাশিয়া ও চীন তাদের সম্পর্ক গড়ে তুলবে। পক্ষান্তরে পুতিনকে কৌশলগত সহযোগিতা গভীর করতে, পারস্পরিক সমর্থনকে উন্নত করতে এবং বৈধ স্বার্থের সেফগার্ড দেয়া অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান শি জিনপিং। ওদিকে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি চীনকে একটি নির্যাতনকারী বা অপব্যবহারকারী (অ্যাবিউজার) হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সতর্ক করেন এই বলে যে, যদি ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধে চুক্তি করতে ব্যর্থ হয় তাহলে মস্কোর সামনে বড় বিপদ আসতে চলেছে। শি জিনপিংকে পুতিন বলেন, ইউক্রেন নিয়ে যেকোনো সমাধান হতে হবে রাশিয়ার স্বার্থকে সম্মান জানিয়ে। ওই ফোনকলের পর সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন পুতিনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ। বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে, ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোকে যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহ দিচ্ছে তারা। চীন ও রাশিয়ার মধ্যে ২০২৩ সালে রেকর্ড ২৪০০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। ২০২১ সালের পর এই পরিমাণ শতকরা কমপক্ষে ৬৪ ভাগ বেশি। উশাকভ বলেন- যদি ট্রাম্প টিম আগ্রহ দেখায় তাহলে পারস্পরিক সুবিধা এবং সম্মানের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলতে প্রস্তুত পুতিন ও শি জিনপিং। তিনি আরও জানান- এই দুই নেতার মধ্যে ফোনকলের কোনো সম্পর্ক নেই ট্রাম্পের শপথ অনুষ্ঠানের। তাদের মধ্যে কল স্থায়ী হয় প্রায় দেড় ঘণ্টা। এমন এক প্রেক্ষাপটে টেলিফোনে কথা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র। যত যাই বলা হোক, চীনের মন পাওয়া বা রাশিয়ার মন পাওয়া এতটা সহজ হবে না ট্রাম্পের জন্য। কারণ, এদের কারও বিষয়ে তার নীতি সুখকর নয়। ফলে তাকে মোকাবিলা করতে একজোট হতে পারে চীন ও রাশিয়া।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন কি কথা হলো: কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে প্রথম আলোচনা করেছে চীন। দুই দেশকে সব দিক থেকে ঠিক উল্টো পিঠের বলে বিবেচনা করা হয়। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চীনের বিরুদ্ধে তিনি বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। কিন্তু এবার দ্বিতীয় মেয়াদে এসে কী করবেন! আগেই তিনি ঘোষণা দিয়েছেন চীনা পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করবেন। কিন্তু বেইজিং আশা প্রকাশ করেছে যে, সুপরিচিত চীন বিশেষজ্ঞ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দুই দেশের জনগণের কল্যাণের জন্য গঠনমূলক পদক্ষেপ নেবেন। এ নিয়ে শুক্রবার মার্কো রুবিওর সঙ্গে আলোচনা করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। এ সময় তিনি নিজেদের নেতাদের নির্দেশনা অনুসরণ করে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক সঠিক পথে নেয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। শুক্রবার ওয়াং ই’র সঙ্গে প্রথম টেলিফোনে কথা বলেন মার্কো রুবিও। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে নতুন প্রশাসনে এই দুই শীর্ষ কূটনীতিকের এটাই প্রথম টেলিসংলাপ। এতে ওয়াং ই’কে মার্কো রুবিও বলেন, চীনের সঙ্গে একটি সম্পর্ক গড়ে তুলবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের স্বার্থ থাকবে সর্বাগ্রে। এ তথ্য জানানো হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে। এতে আরও বলা হয়, এই অঞ্চলে মিত্রদের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি জোর দিয়ে তুলে ধরেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। একই সঙ্গে তাইওয়ান এবং দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের ক্ষতিকর পদক্ষেপের বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ জানিয়েছেন। তবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই দুই নেতা যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক এবং তাইওয়ান ইস্যুতে আলোচনা করেছেন। ওয়াং ই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিওকে বলেছেন, চীন এবং মার্কিন জনগণের জন্য, শান্তিপূর্ণ বিশ্ব ও স্থিতিশীলতার জন্য ভবিষ্যতে গঠনমূলক পদক্ষেপ নেবেন বলে আমি আশা করি। কিন্তু ফেনটালাইন বাণিজ্যে বেইজিংয়ের ভূমিকার কারণে চীনা পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র শতকরা ১০ ভাগ শুল্ক আরোপের কথা বিবেচনা করছে বলে বুধবার জানান ট্রাম্প। এরপর দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই টেলিসংলাপ অনুষ্ঠিত হলো। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, রুবিওকে ওয়াং বলেছেন, তাদের রাষ্ট্রের প্রধানরা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন এবং সম্পর্ক কেমন হবে তার ইঙ্গিত দিয়েছেন। ওয়াং ই বলেন, দুই দেশের টিমের উচিত তাদের রাষ্ট্রের প্রধানদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে যোগাযোগ অব্যাহত রাখা, মতপার্থক্য দূর করা, সহযোগিতা বৃদ্ধি করা, স্থিতিশীলতাকে উৎসাহিত করা এবং যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে একটি সুস্থ ও টেকসই সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানো। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যেন একটি নতুন যুগের সূচনা হয়, তেমন সঠিক পথ খুঁজে বের করার তাগিদ দেন তিনি। গত সোমবার শপথ নিয়ে ক্ষমতায় বসেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তার আগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে তিনি ফোন করেন। এই ফোনকলে দুই নেতা একমত হন যে, বড় সব সমস্যা সমাধানে তারা একটি কৌশলগত যোগাযোগ চ্যানেল সৃষ্টি করবেন। বৃহস্পতিবার ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে বক্তব্য রাখেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে অত্যন্ত সুসম্পর্ক চান তিনি। তিনি আরও আশা প্রকাশ করেন যে, ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধে সাহায্য করতে পারে চীন। বৃহস্পতিবার ফক্স নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার খুব ভালো ও বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে। তিনি আশা করেন এর ফলে বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছতে পারবেন। সোমবার তিনি বলেন, চীন সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন তিনি। এ বছর খুব তাড়াতাড়ি তিনি চীন সফরে যাবেন। এর আগে ক্ষমতার প্রথম মেয়াদের প্রথম বছরে দ্রুততার সঙ্গে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন ট্রাম্প। উভয়ে উভয়কে যথাক্রমে ফ্লোরিডা এবং বেইজিংয়ে বিলাসবহুল অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সম্পর্ক একটি বাণিজ্য যুদ্ধ থামাতে পারেনি। পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করেছে এক দেশ অন্য দেশের বিরুদ্ধে। এতে বিশ্ব জুড়ে সরবরাহ চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিনেটে কনফার্মেশন শুনানিতে মার্কো রুবিও বলেছেন, চীন বিশ্বাস করে যুক্তরাষ্ট্র আগামী ২০ থেকে ৩০ বছর বিশ্বে আধিপত্যবাদী শক্তি হিসেবে থাকবে। তবে ওয়াং ই বলেন, কাউকে ছাড়িয়ে যেতে বা কারও স্থান দখল করার মানসিকতা নেই চীনের। তিনি বলেন, তবে আমাদের উন্নয়নের বৈধ অধিকারকে সুরক্ষিত রাখবোই আমরা। তাইওয়ান ইস্যুতে তিনি বলেন, প্রাচীনকাল থেকেই ওই দ্বীপটি চীনের অংশ। চীনের কাছ থেকে তাকে কখনো বিচ্ছিন্ন হতে দেবে না চীন। ওদিকে গণতান্ত্রিকভাবে শাসিত তাইওয়ান বেইজিংয়ের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি কখনোই ওই দ্বীপরাষ্ট্রকে শাসন করেনি। অন্যদিকে তাইওয়ানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করে যুক্তরাষ্ট্র। নিজেদের আইনের অধীনেই তারা এই অস্ত্র বিক্রি করে। কিন্তু তা নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্কে টান ধরেছে।
সৌদি আরব আগেই নতজানু: সৌদি আরবকে হুমকি দেয়ার আগেই সে নতজানু হয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের চার বছর ক্ষমতার মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রে বিস্তৃতক্ষেত্রে এবং বাণিজ্যে ৬০,০০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে সৌদি আরব। ট্রাম্পকে এরই মধ্যে এ কথা জানিয়ে দিয়েছেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। সৌদি আরবের সরকারি বার্তা সংস্থা এ খবর প্রচার করেছে। তার ওপর ভিত্তি করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, দুই নেতা টেলিফোনে কথা বলেছেন। ক্রাউন প্রিন্স বলেছেন- তিনি আশা করেন ট্রাম্প প্রশাসন আগে দেখা যায়নি এমন অর্থনৈতিক সুযোগ ও সমৃদ্ধি সৃষ্টি করতে সংস্কার করবেন। তবে ৬০ হাজার কোটি ডলারের সূত্র কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি মোহাম্মদ বিন সালমান। বলেননি এই অর্থ সরকারি নাকি বেসরকারি খাত থেকে আসবে। কীভাবে সেই অর্থ বিনিয়োগ হবে তাও বিস্তারিত বলেননি তিনি। ক্রাউন প্রিন্স যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে বলেছেন, যদি আরও সুযোগ আসে তাহলে এই বিনিয়োগ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। উল্লেখ্য, ক্ষমতার প্রথম মেয়াদে সৌদি আরব সহ উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক গাঢ় করেছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। বিশেষ করে ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল দহরম মহরম। সৌদি আরব সফরে এসে সেই সম্পর্ককে আরও জোরালো করেন দুই নেতা। ট্রাম্পকে অভূতপূর্ব সংবর্ধনা দেয়া হয় সৌদি আরবে। তার মধ্যে তিনি সোর্ড ড্যান্স (তরবারি হাতে বিশেষ নাচ) দেন। বিমান বাহিনীর জেট বিমান ফ্লাইপাস্ট দেয় তাকে। ট্রাম্পের জামাই এবং সাবেক সহযোগী জারেড কুশনারের গঠন করা একটি প্রতিষ্ঠান এই দেশে বিনিয়োগ করেছে দুইশত কোটি ডলার।