সা ফ ক থা

৫ই আগস্ট আসলে কী পেলাম?

হাসান মামুন | এক্সক্লুসিভ
এপ্রিল ২৬, ২০২৫
৫ই আগস্ট আসলে কী পেলাম?

২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট আসলে কী ঘটেছে, তা নিয়ে এখনো খোদ এর অংশীজনদের মধ্যেও বিতর্ক হয়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ অবশ্য সেটাকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডের ফল’ বলে অভিহিত করে। তাদের কথা আলাদা। তবে গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যেও যখন এতদিন পরেও এর প্রকৃতি নিয়ে বিতর্ক হয়, তখন বুঝতে হবে- নজিরবিহীন একটা ঘটনাই ঘটে গেছে দেশে। এটা বিপ্লব না হলেও বিপ্লবাত্মক ঘটনা। গণ-অভ্যুত্থান না হলেও গণ-বিস্ফোরণ তো বটেই। 


সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের মতো দাবি ঘিরেই এক পর্যায়ে নানান বয়স ও দল-মতের মানুষ এসে নিবিড়ভাবে যুক্ত হয় আন্দোলনে। সরকারের নির্বিচার দমননীতি চরমে পৌঁছলে এটা রূপান্তরিত হয় তার পতনের আন্দোলনে। দ্রুতই ঘটে যায় একটি শক্তি মদমত্ত সরকারের পতন- যারা ভেবেছিল, ২০৪১ অবধি এভাবেই ক্ষমতায় থাকবে। 
অনেকেই কিন্তু বলতেন, সরকার যা-ই ভাবুক- কোনো একটা ইস্যুতে দেশে গণ-বিস্ফোরণ হবে। কেননা, অব্যাহতভাবে ভোটাধিকার হরণসহ বিভিন্ন কারণে জনমনে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল। আর এটা রূপান্তরিত হচ্ছিল ক্রোধে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে তারই বহিঃপ্রকাশ দেখা গেল। ক্রোধের এমন প্রকাশ এদেশে কখনো ঘটেনি। সামপ্রতিক দুনিয়ায়ও তা বিরল। 
এমন পরিস্থিতিতে যেকোনো সরকারের পক্ষেই টিকে থাকা কঠিন। আর শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার তো ছিল বস্তুত তিনবারের অনির্বাচিত সরকার। সরকার ও ক্ষমতাসীন দল জনবিচ্ছিন্ন হয়ে ঢুকে পড়েছিল প্রশাসনের মধ্যে। শেষদিকে প্রশাসনের একাংশ, সেনা ও সশস্ত্র বাহিনী সরকার থেকে সরে এসে ক্রুদ্ধ জনতার পাশে দাঁড়ায়। তাতে আরও রক্তক্ষয়ের আশঙ্কা কমে এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পথ হয় প্রশস্ত। 


অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হয় আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র-তরুণদের ইচ্ছায়। মাঠে থাকা রাজনৈতিক দলের নেতারা তাতে সমর্থন জোগান। তবে সরকার গঠনের ওই প্রক্রিয়া নিয়েও কিছুদিন আগে বিতর্ক হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িতরা অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন নিজ নিজ জায়গা থেকে। কিন্তু তাতে চিত্রটি সুস্পষ্ট হয়নি। মেলেনি সদুত্তর। এ নিয়ে মনে হয় পরেও আলোচনা হবে। ‘মেটিকুলাস ডিজাইনে’ (সুনিপুণ পরিকল্পনায়) সব কিছু হয়েছে বলে যারা দাবি করেন, তাদের বক্তব্য এখানে এসে মার খায়। সুনিপুণ পরিকল্পনায় সবকিছু হয়ে থাকলে অন্তর্বর্তী সরকারটিও এমনভাবে গঠিত হতো, যেটি হতো পরিষ্কারভাবে দৃশ্যমান। 


হাসিনার পতনের তিনদিন পর সরকারটি গঠিত হতো না এবং এর মধ্যে চলতো না চরম অস্থিতিশীলতা। চরিত্রের দিক থেকেও সরকারটি হতো সুনির্দিষ্ট ও ঋজু। হাসিনা সরকারের পতনের পর এমনই এক সরকার গঠিত হয়েছে, যার চরিত্র নিয়ে এখনো চলছে বিতর্ক। ওয়ান ইলেভেন সরকারের সঙ্গেও এর তুলনা চলে না। সেটা স্বাভাবিকও বটে। কারণ একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিস্থিতিতে তড়িঘড়ি করে গঠন করতে হয়েছে ইউনূস সরকার। গণ-অভ্যুত্থানের ফসল এটা। কেউ কেউ এখনো বলেন- ‘বিপ্লবের ফসল’। সরকারটি এমন না হয়ে কেমন হওয়া উচিত ছিল, তা নিয়ে দ্বিতীয় পক্ষটি এখনো প্রশ্ন তোলে। 


এসব কিছুই বলে দেয়, গত জুলাই-আগস্টে যা ঘটেছে- তাতে স্বতঃস্ফূর্ততাই ছিল প্রধান উপাদান। ঘটনা ঘটতে থাকার সময় দেশি-বিদেশি উৎসাহী মহলগুলো কিছু ভূমিকা রাখলেও রাখতে পারে। কিন্তু ছাত্র-তরুণ এবং তাদের সঙ্গে অকাতরে রাজপথে নেমে আসা জনতাই ছিল চালিকাশক্তি। এতে কোন্‌ পক্ষ কোথায় কতোটা ভূমিকা রেখেছে, কারা বেশি হতাহত- সেসব নিয়েও বিতর্ক আছে। তবে সরকার ও তার তল্পিবাহকদের আপ্রাণ চেষ্টা থাকলেও আন্দোলনে নেমে আসা পক্ষগুলোর মধ্যে সেটি চলাকালে এ নিয়ে কোনো বিভেদ উপস্থিত হয়নি। আন্দোলন দীর্ঘদিন চললে কী হতো, সেটা অবশ্য বলা যায় না। তবে বেপরোয়া দমননীতির মুখে আন্দোলন যে রূপ নেয়, তাতে সরকারের পতন ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। 


সত্যি বললে, ৩রা আগস্টেই সরকারের পতন ঘটে যায়; যেদিন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সুবিপুল জমায়েত থেকে ‘এক দফা’ ঘোষিত হয়। সেদিন সেনাসদর দপ্তরেও দরবার ডাকেন সেনাপ্রধান, যেখানে আন্দোলন দমনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ন্যূনতম শুভবুদ্ধি থাকলে সেদিনই শেখ হাসিনা পারতেন পদত্যাগের ঘোষণা দিতে। তাতে পরবর্তী দু’দিনের প্রাণহানি অন্তত ঠেকানো যেত। আন্দোলনকারীদের প্রত্যাঘাতও হয়তো কমানো যেত কিছুটা। বিশেষত পুলিশের ওপর প্রতিশোধ গ্রহণের প্রবণতা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত। 


শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা কার্যত হারিয়ে ফেলেছিলেন ন্যূনতম শুভবুদ্ধিও। যেভাবে তারা দেশ পরিচালনা করে এসেছিলেন, তাতে এটাই হয়তো স্বাভাবিক। ন্যূনতম শুভবুদ্ধি থাকলে কোটার প্রশ্নটি পুনরায় সামনে আসার পর দ্রুত এর নিষ্পত্তির উদ্যোগ তারা নিতেন। মধ্যরাতে আদালত বসিয়ে নিষ্পত্তির সুযোগও ছিল। হাসিনা সেটা করেননি রংপুরে আবু সাঈদের আত্মদানের ঘটনায় দেশ অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠার পরও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের ঘোষণা দিয়ে নামানোর ঘটনাও ছিল ভয়াবহ ভুল পদক্ষেপ। 


এসব করতে থাকার সময় শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা ভুলে গিয়েছিলেন, তারা বারুদের উপর বসে আছেন। সাড়ে ১৫ বছর একের পর এক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে টিকে থাকার শ্লাঘায় তারা বাস্তবতা উপলব্ধির ক্ষমতা হারিয়েছিলেন। সত্যি বলতে কী, একের পর এক হঠকারী পদক্ষেপ নিয়ে তারাই ডেকে আনেন নিজেদের সশব্দ পতন। এমন পতন, যা গোটা সরকার ও দলের পলায়নকে করে তুলেছিল অনিবার্য। প্রশাসনের মধ্যে বিশেষ করে পুলিশ উধাও হয়ে যায় প্রায় প্রতিটি থানা থেকে। তাদের নিরাপত্তায় এগিয়ে আসতে হয় সেনাবাহিনীকে। সেনাবাহিনী সেদিন এমন ভূমিকা গ্রহণ না করলে প্রতিশোধমূলক ঘটনাবলী আরও অনেক বেশি বিপর্যয় ডেকে আনতো। 


সুনিপুণ পরিকল্পনায় সব কিছু হয়ে থাকলে বলতে হবে, হাসিনা গংও এতে যোগদান করে কাজটা সহজ করে দিয়েছিল! তা তো নয়। হাসিনা ও তার সহযোগীরা চেষ্টা করেছেন সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজেদের পতন ঠেকাতে। একের পর এক ভুয়া নির্বাচন করে ক্ষমতায় থেকে নজিরবিহীন সন্ত্রাস ও দুর্নীতি তাদের এ পথ অবলম্বনে একপ্রকার বাধ্য করেছিল। পুলিশকে এমনই মাত্রায় দলীয়করণ করা হয় যে, নিজ স্বার্থে তারাও নেমে পড়ে ‘যেকোনো মূল্যে’ আন্দোলন দমনে। সরকার পতনের দিনও তারা সন্ধ্যা পর্যন্ত বেপরোয়াভাবে গুলি চালায় বিভিন্ন স্থানে। কিছু স্থানে উত্তেজিত জনতার দ্বারা ঘেরাও হয়েও তারা উন্মত্ত আচরণ করে। আর এটা ছিল হাসিনা সরকারের পুলিশের মধ্যে ঢুকে পড়ার পরিণতি। 


গণভবনের পাশাপাশি জনতা তাই থানাগুলোও লুট করে নিয়ে যায়। এখনো সেসব লুণ্ঠিত অস্ত্রের সিংহভাগ উদ্ধার করতে পারেনি সরকার। পুলিশও এখন পর্যন্ত পুরো সক্রিয় হতে পারেনি। তার পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে মাঠে থাকতে হচ্ছে বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে। সেনাপ্রধান একাধিকবার বলেছেন, তারা চান যত দ্রুত সম্ভব ব্যারাকে ফিরে যেতে। কিন্তু নির্বাচন ও ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে তো সেটা সম্ভব নয়। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার সম্পন্ন এবং তার আগে ‘রাজনৈতিক ঐকমত্য’ রচনার প্রশ্নও রয়েছে। এ প্রশ্নে গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মতভেদ আবার এক বড় বাস্তবতা। 


প্রশ্ন উঠতে পারে, হাসিনা সরকারের এমন পতন না হয় অনিবার্য ছিল; কিন্তু এর ভেতর দিয়ে কী পেলাম আমরা? পেলাম নজিরবিহীন স্বেচ্ছাচারী সরকারের কবল থেকে মুক্ত একটা পরিবেশ। যে ‘আঞ্চলিক শক্তি’র সমর্থনে তারা দীর্ঘদিন ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছিল, সেটিও এ পরিবর্তনে হতবাক। ওখানে আশ্রিত শেখ হাসিনার সঙ্গে তারাও অভিন্ন সুরে চালিয়ে যাচ্ছেন ইউনূস সরকারের বিরোধিতা। এটাকে অনেকে ‘প্যারাডাইম শিফট’ বা পাটাতন পরিবর্তন বলেও বিবেচনা করছেন। 


যেসব শক্তি এ পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রেখেছে, তাদের প্রত্যেকে এখন ভাবছে- এটা তার জন্য সুবর্ণ সুযোগ। মাঠে থাকা প্রধান দল বিএনপি ভাবছে, দ্রুত নির্বাচন হলে তার বিরাট বিজয় সুনিশ্চিত। জামায়াতে ইসলামী ভাবছে, দেরিতে নির্বাচন হলে তার পক্ষে গুছিয়ে উঠে লড়াই করাটা হবে সহজ। নবগঠিত এনসিপি ভাবছে, তরুণ ভোটারদের সমর্থন তারা পাবেন। তাদের একাংশ এখনো সরকারে আছে বলে অনেকে আবার মনে করেন, তারাই নিয়ন্ত্রণ করছে সরকারকে। প্রধান উপদেষ্টাও কথাবার্তায় তাদের দ্বারা গঠিত দলের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ করেছেন। ‘রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির উত্থান’ যারা চান, তাদের অনেকে অবশ্য এরই মধ্যে এনসিপি নিয়ে হতাশ। নতুন কিছু এনসিপি’র দ্বারা হচ্ছে না। তাই অন্যদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সমালোচনা তাদের কপালেও জুটছে। 
এ অবস্থায় আগামী নির্বাচন যখনই অনুষ্ঠিত হোক, তাতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ ঘিরে প্রশ্ন রয়েছে। এত কিছুর পরও দলটির মধ্যে অনুশোচনা তো নয়ই; আত্মসমালোচনাও অনুপস্থিত দেখে মানুষ হতাশ। তবে আওয়ামী লীগের একটা সমর্থকগোষ্ঠী এখনো রয়েছে, সেটা স্বীকার করছে সবাই। তাদের ‘ইনক্লুড’ বা অন্তর্ভুক্ত করে কীভাবে একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সূত্রপাত করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা রয়েছে। কিন্তু একান্ত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নির্বাচন বর্জন করলে কী হবে? তাতে নির্বাচন কি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকবে? সেটা কি গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না? 


ইউনূস সরকার মাঠে থাকা দলগুলোর জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করে তাদের সবাইকে নির্বাচনে নিতে পারবে কিনা, সে প্রশ্নও উঠেছে। এনসিপি এরই মধ্যে বলেছে, প্রশাসনে বিএনপি’র প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় তাদের পক্ষে নির্বাচনে যাওয়া কঠিন। তারা রাষ্ট্র সংস্কার, ক্ষমতাচ্যুতদের বিচার ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বেশি সোচ্চার। আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে ফিরলে তারা নিরাপত্তার অভাবে পড়বেন বলেও মত রয়েছে। এ অবস্থায় কী করবে সরকার? তাদের ক্ষমতায় থাকার সময় বাড়ানোর দাবিও উঠেছে কোনো কোনো মহল থেকে। কিন্তু শাসন পরিস্থিতি ভালো হয়নি এখনো। অর্থনীতিও মন্থর। সামনে পরিস্থিতি আরও নাজুক হওয়ার শংকা রয়েছে। 


এমনটিও বলা হচ্ছে, সরকার ক্রমে সামলে নেবে পরিস্থিতি। প্রধান সংস্কারগুলো সেরে একটা আদর্শস্থানীয় নির্বাচন দিয়ে তবেই বিদায় নেবে। অধ্যাপক ইউনূস নিজেও বলছেন আদর্শ নির্বাচন আয়োজনের কথা। গণতন্ত্রে ফিরে যাওয়ার স্বার্থে দ্রুত সে ধরনের নির্বাচন কর?তে হবে বৈকি। গণ-বিস্ফোরণে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, সেখান থেকে বেরিয়ে জনভিত্তিসম্পন্ন রাজনৈতিক সরকারে যেতে না পারলে একটা ভঙ্গুর ও ঝুঁকিপূর্ণ পথেই আমাদের থাকতে হবে। জনসমর্থনহীন অথচ উচ্চাভিলাষী শক্তিগুলো এর সুযোগ নিয়ে দেশকে বিপথগামী করতে পারে বলে মত ক্রমে জোরালো। দেশের সামগ্রিক মঙ্গল তথা জনগণের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিমুক্ত রাখতে ইউনূস সরকারকে তাই দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব সংস্কার বিষয়ে ‘জুলাই চার্টার’ ঘোষণা করে নির্বাচন অনুষ্ঠানই হওয়া উচিত তাদের লক্ষ্য। 


অনেকে বলেন, শুধু একটি নির্বাচনের জন্য কি এত আত্মদান? তিন-তিনটি ভুয়া নির্বাচনের পর একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারাও বড় বিষয় বৈকি। আর এত আত্মদানের ঘটনা ঘটেছে হাসিনাতন্ত্রের মতো অপশাসন দেশে শেকড়বাকড় গজিয়ে ফেলেছিল বলেই। একে উপড়ে ফেলতে এত মানুষকে জীবনদান করতে হতোই। এরশাদ কিন্তু অল্প আত্মদানের চাপেই ক্ষমতা ছেড়েছিলেন। হাসিনা তো এরশাদ নন। তিনি এরশাদের চাইতেও কর্তৃত্ববাদী, স্বেচ্ছাচারী। তার শাসন উচ্ছেদ করে গণতন্ত্র ও জবাবদিহির পথে যাত্রাই ছিল জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মূল বিষয়। এ জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার জরুরি বৈকি। সে প্রয়াস জোরদার রাখতে হবে নির্বাচনের পরেও। 


গণ-অভ্যুত্থানে দ্রুত বিজয় অর্জনের পর তড়িঘড়ি করে গঠিত একটি সুশীল সমাজের সরকারের কাছে ‘প্রয়োজনীয় সব সংস্কার’ আশা করা ভুল। এর প্রধান সব ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোও তো একমত হতে পারছে না। সে জন্য তাদের দোষ দেয়াও যাবে না। মতভিন্নতা থাকবেই। গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তীকালে মাঠে থাকা দলগুলোর মতভিন্নতাও বলে দেয়, এখান থেকে উত্তরণ কঠিন। 
 

লেখক: সাংবাদিক, কলাম লেখক

 

এক্সক্লুসিভ'র অন্যান্য খবর