প্রচ্ছদ প্রতিবেদন

ডাকসু তারেক রহমানকে নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার | বিশেষ রচনা
সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫
ডাকসু তারেক  রহমানকে নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে

 ডাকসু’র ফলাফল নিয়ে অন্তহীন বিতর্ক। নানা মূল্যায়ন। এসব মূল্যায়নে ভবিষ্যৎ রাজনীতির ইঙ্গিত। কী হলো, কী হবে? ভবিষ্যৎ রাজনীতি কি এভাবেই ওলটপালট হয়ে যাবে! অনেক পর্যবেক্ষক সংশয় প্রকাশ করছেন। বলছেন, এটা নাও হতে পারে। তবে এটা যে ওয়াক-আপ কল এতে কোনো সন্দেহ নেই। ভারতীয় কূটনৈতিক, বিশ্লেষক এবং সংসদ সদস্য শশী থারুরের বিশ্লেষণের দিকে অনেকেই নজর রাখছেন। তিনি বলছেন, বাংলাদেশের বড় দু’টি দলের অতীত এবং বর্তমান কার্যক্রম থেকে অনেক ভোটার নিষ্কৃতি পেতে চাচ্ছেন। যে কারণে ভোটের বাক্সে বিপ্লব ঘটেছে শিবির তথা জামায়াতের। ভোট নিয়ে অনেক অনিয়মের কথাই শুনছি। তবে কিছু  আশ্চর্যজনক কৌশল যে ছিল- এতে কোনো সন্দেহ নেই। এখানে মানবিকতার কৌশলকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে গত এক বছরে শিবির যে কার্যক্রম চালিয়েছে তাও আমলে নেয়নি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। তারা বাইরের পপুলার ভোটের উপর ভরসা করে বিজয় ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল। সবসময় পপুলার ভোটে জয়ী হওয়া যায় না। তাহলে তো হিলারি ক্লিনটনের জয় পাওয়ার কথা ছিল। ডনাল্ড ট্রাম্প অপ্রত্যাশিতভাবে জয়ী হয়েছিলেন। রাজাকার ইস্যুটি যে আর মানুষ ভালোভাবে নেয় না তা শেখ হাসিনার পতন দেখে বিএনপি নেতারা বুঝতে পারেননি। ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের এই কৌশল ছিল ভুল। প্রার্থী সিলেকশনেও মুন্সিয়ানার অভাব ছিল। এখনই হল কমিটি গঠনের কী প্রয়োজন ছিল। যে কারণে হল কমিটি নিয়ে বিদ্রোহ দেখা দেয়। যিনি এর নেপথ্যের নায়ক তিনি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছেন। নারী ভোটারদের আকৃষ্ট করার মতো কোনো কার্যক্রমই চোখে পড়েনি। তাছাড়া যে যুক্তিতে বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল তা আখেরে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। জামায়াত জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে ডাকসুতে ভোটে জিতে গেলে এই যুক্তি দেখিয়েছিলেন কেউ কেউ। ভোটে অংশ না নেয়ার পক্ষেও কিন্তু যুক্তি ছিল প্রবল। এখন কি জামায়াত সহজে ভোটমুখী হবে? তারা তো এখন নিজেদের মতো ভোট চাইবে। বিএনপি’র কৌশলগত ভুল ছিল চোখে পড়ার মতো। 

 

অভ্যুত্থানের পর প্রেসিডেন্টকে রাখতে হবে, নিষিদ্ধ করা যাবে না জাতীয় পার্টিকেও। টকশোতে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে কয়েকজন বিএনপি নেতার মূল্যায়ন দেখেও অনেকেই বিরক্ত হয়েছেন। সচেতন ডাকসু ভোটাররা বিচ্ছিন্ন কোনো দ্বীপের বাসিন্দা নন। এসব কারণেই এই জেনারেশনের ছেলেমেয়েরা বিএনপি’র সিদ্ধান্তগুলোকে বাঁকা চোখে দেখেছে। অথচ মজার ব্যাপার হলো আওয়ামী লীগ তাদের পাশে দাঁড়ায়নি। বরং ভোটের পাঁচদিন আগে শেখ হাসিনা প্রফেসর ইউনূস ও তারেক রহমানের সমালোচনা করেন একই ভাষায়। এটা কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়। সময় যত গড়াচ্ছে ততই বের হয়ে আসছে লুকায়িত সত্য। ভোট গণনাকালে পরিস্থিতি নাজুক রূপ নেয়। দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দফায় দফায় বৈঠক হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে লোক জড়ো হতে দেখে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন বেসামাল হয়ে পড়ে। তাদের ধারণা ছিল, ফল গণনাকে কেন্দ্র করে বড় কিছু ঘটে যেতে পারে। যা তাদেরকেও স্পর্শ করবে। তখনই একটি সমঝোতার প্রস্তাব মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। যদিও শেষ পর্যন্ত কিছু ঘটেনি তারেক রহমানের একক সিদ্ধান্তে। তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, ফল যাই হোক গোলযোগ সৃষ্টি করা যাবে না। তখন পর্যন্ত অবশ্য তাদের কাছে ভোটের ফলাফলের সঠিক চিত্র ছিল না। ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে অনেকেই বলছেন, জামায়াত নেতারা তো বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপি সাড়া দেয়নি। যাই হোক, কেন শিবির জিতলো তার মূল্যায়নেরও দাবি রাখে।  পানির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছেলেমেয়েরা যখন সীমাহীন কষ্টে পড়েছিল তখন ছাত্রশিবির  কীভাবে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল তা কিন্তু কারও অজানা নয়।  তারা কীভাবেই বা ম্যানেজ করেছে এ নিয়ে আপনি নানা গল্প সাজাতে পারেন, কিন্তু দিনের শেষে ফলাফল ভিন্ন হবেই এবং তাই হয়েছে। এখানেই শেষ নয়। তারা এক বছর আগে থেকে ডাটাবেজ তৈরি করেছিল। ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ির ঠিকানা লিপিবদ্ধ করেছিল সফটওয়্যারে। তারা সবার পরিচয় জানতে পেরেছিল। তাই তারা ভোটের আগে নানা উপহার নিয়ে হাজির হয়েছে ভোটারদের বাড়িতে। জামায়াতের স্থানীয় নেতারা এখানে এক মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন। 

 

আগস্ট অভ্যুত্থানে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের পাশেও দাঁড়িয়েছিলেন দু’হাত বাড়িয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরপেক্ষ ছিল না- এটা বোধ করি নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। ভোট গণনার মেশিন ঙগজ নামে পরিচিত, যা এসেছিল জামায়াত নেতার ফার্ম থেকে। এটায় টেম্পারিংয়ের সুযোগ আছে। টেম্পারিং হয়েছে কিনা তদন্ত করলে হয়তো জানা যেত। কিন্তু তদন্তের কোনো আওয়াজ নেই। ভোটার তালিকাও প্রকাশিত হয়েছে একজন জামায়াত নেতা পরিচালিত প্রেস থেকে। সাদা দলের  শিক্ষকরা নির্বাচন পরিচালনায় অনুপস্থিত ছিলেন। এটাও এক রহস্যজনক ঘটনা। এসবের পরেও শিবিরের বিজয়কে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। আপনি স্বীকার করুন আর নাই করুন- ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল বাংলাদেশের রাজনীতিকে অনেকটা ওলটপালট করে দিয়েছে। বিতর্ক হচ্ছে- ছাত্রলীগের ভোট কোথায় গেল? আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইটে ডাকসু নিয়ে কোনো মূল্যায়ন নেই। তবে ভাষ্যকাররা খোলামেলাই বলছেন, শিবিরকেই ভোট দিয়েছে ছাত্রলীগ।   পর্দার আড়ালেই অনেক কিছু ঘটেছে। যা বিএনপি নেতারা জানতেন না, জানার চেষ্টাও করেননি। এখন তারা নানা কথাই বলছেন। কেউ জানাচ্ছেন ব্যক্তিগতভাবে অভিনন্দন। কারও মতে, অন্ধকারের এক শক্তি ভোটের বাক্স বোঝাই করেছে। যাই হোক, ডাকসু নির্বাচন বিএনপিকে নতুন করে ভাববার সুযোগ করে দিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, তারেক রহমান এখন আরও কঠোর হতে পারেন। যাদের গায়ে ময়লা তাদেরকে দূরে সরিয়ে দিয়ে নিতে পারেন নির্বাচনী সিদ্ধান্ত। যেটা আগে সম্ভব ছিল না। মানতেই হবে-অনেক বড় নেতার গায়েও কিন্তু ময়লা লেগেছে। ভোটের হিসাবনিকাশ যখন পাল্টে যাচ্ছে তখন নতুন করে ঘুঁটি সাজাতে হবে দাবা খেলার মতো। দলে চালাতে হবে শুদ্ধি অভিযান। তা না হলে, পপুলার ভোটের পরিণতি যা হয় তাই হবে। শেষ কথা হচ্ছে, ডাকসু নির্বাচনই সব কিছু নয়। ডাকসুতে জিতে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও মাহমুদুর রহমান মান্না নেতা হয়েছেন বটে, দল কিন্তু দাঁড়ায়নি। ভোটেও তারা জিতেননি। 

বিশেষ রচনা'র অন্যান্য খবর