প্রচ্ছদ প্রতিবেদন

ভোটে-জোটে জটিল অঙ্ক

লুৎফর রহমান | এক্সক্লুসিভ
সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৫
ভোটে-জোটে জটিল অঙ্ক

জাতীয় নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরু হয়েছে নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর থেকেই। দলগুলো ভোট নিয়ে তৎপরতা শুরু করেছে। প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চলছে। নির্বাচন কমিশনও ভোট আয়োজনে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের পর ‘নতুন বাংলাদেশ’-এ প্রথম ভোট হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন অভ্যুত্থান অনেকটাই বদলে দিয়েছে রাজনীতির হিসাবনিকাশ। ফ্যাসিবাদের পোশাকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে এখন মাঠছাড়া। নেতারা হয় পলাতক, না হয় আত্মগোপনে। মাঠের পরিস্থিতি চরম প্রতিকূল। পুরনো মোড়কে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দলটির অংশ নেয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বছর বছর দলটির সহযোগী হয়ে একতরফা শাসন ব্যবস্থা দীর্ঘায়িত করার কুশীলব জাতীয় পার্টি এখন আইসিইউতে। দলের বিভক্তির সঙ্গে অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর কঠোর অবস্থানের কারণে দলটির ভবিষ্যৎ নিয়ে জোর দিয়ে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। একইসঙ্গে ভোটের মাঠে আগের সেই অবস্থানও নেই। এমন প্রেক্ষাপটে ভোট আর জোটের রাজনীতি জটিল অঙ্কে রূপ নিয়েছে। রাজনীতির মাঠে এখন প্রধান শক্তি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। দলটিকে ঘিরে সমমনা দলগুলোর জোট একটি পক্ষ। অন্যদিকে বিএনপি’র এক সময়ে জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামী ও সমমনারা আলাদা জোটে বিএনপি’র প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর ভূমিকায়। ’২৪-এর অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীদের গড়া দল জাতীয় নাগরিক পার্টির অবস্থান এখনো পরিষ্কার নয়। বিএনপি-জামায়াত বলয়ের বাইরে থাকা দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচনী জোট গঠনের চেষ্টা আছে। এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদ একীভূত হওয়ার আলোচনা চলছে। জটিল প্রক্রিয়া পেরিয়ে এই দল দু’টি একীভূত হতে পারলে তারাও নেতৃত্ব দিতে পারে নতুন রাজনৈতিক জোটের। অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে সামনে সরকার ও রাষ্ট্রের সংস্কারের পরিকল্পনায় জুলাই সনদ চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে সেখানে দলগুলোর বিভক্তি যোজন যোজন। এই বিভক্তি মেটানোর চেষ্টা আছে, কিন্তু সম্ভাবনা কম। বলা হচ্ছে গণ- অভ্যুত্থানের সময় দলগুলোর মধ্যে যে ঐক্য ছিল এখন তা আর নেই। ভোট আর দলীয় রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে বিভক্তি রেখা দীর্ঘ হচ্ছে। যা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। বিশেষ করে জুলাই সনদ দিয়ে দলগুলোর আলোচনা জারি থাকা অবস্থায় সাতটি দলের মাঠের কর্মসূচি শঙ্কা তৈরি করেছে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার। যথাসময়ে নির্বাচন আয়োজন নিয়েও আছে দোলাচল। গুজব-গুঞ্জনে মানুষের আস্থায় চিড় ধরেছে। মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোও পরিস্থিতি নিয়ে সন্দিহান। এমন অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন নয়া এক বার্তা হয়ে এসেছে। এই দু’টি ছাত্র সংসদে ছাত্রশিবিরের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও ভোটের হিসাব তরুণদের নিয়ে দলগুলোকে নতুন ভাবনার খোরাক এনে দিয়েছে। এই অবস্থায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ভোটের হিসাব মেলাতে দলগুলো তৎপরতা বাড়িয়েছে। ভোট আর জোটের পাল্লা ভারী করতে চেষ্টা চলছে। 
 

’২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান ভোট আর জোটের পুরনো সব হিসাব ভেঙে দিয়েছে। আওয়ামী লীগ মাঠে বা ভোটে না থাকলেও তাদের ভোটের হিসাব এখন আলোচনার বিষয়। সম্প্রতি প্রকাশিত জরিপের ফলেও দেখা গেছে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে না থাকলে তাদের ভোট অন্যদলের প্রার্থীদের মধ্যে ভাগ হবে। আর এই ভোটের অঙ্কটা পাল্টে দিতে পারে দলীয় ভোটের হিসাব। এমন নানা কারণে আসছে ভোটে নতুন অঙ্ক, নতুন সমীকরণ এখন দলগুলোর সামনে। এই অঙ্ক আর সমীকরণে ভুল হলে নির্বাচনী দৌড়ে যে কেউ পিছিয়ে পড়তে পারে। 
 

বিএনপি-জামায়াত ঘিরে দুই বলয়: নির্বাচন সামনে রেখে দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এখন আলাদা পথে। দল দু’টি পৃথক জোট গঠনে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা করছে। আসছে নির্বাচনটি দলের জন্য কঠিন পরীক্ষা নেতাকর্মীদের এমন বার্তা দেয়া হয়েছে বিএনপি’র হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে। এ কারণে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী দলগুলোর পাশাপাশি আরও কিছু দলকে নিজেদের জোটে রাখতে চায় বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জোটসঙ্গী এসব দলের জন্য অন্তত ৫০টি আসন ছেড়ে দেয়ার চিন্তা করছে বিএনপি। নির্বাচনের তফসিলের আগেই এসব আসনে জোট বা সমমনাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করতে এবং জোর নির্বাচনী তৎপরতা চালানোর বিষয়ে নেতারা নির্দেশনা দিয়েছেন। এ ছাড়া দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতেও তৎপরতা শুরু করেছে দলটি। অক্টোবরের মধ্যে বেশির ভাগ আসনে প্রাথমিক প্রার্থী চূড়ান্ত করতে চায় বিএনপি। 
 

দলীয় সূত্রের দাবি, ভোটের জোটে এবার ডান-বাম ও ইসলামী দলগুলোকে একসঙ্গে নিতে চায় বিএনপি। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে বিএনপি’র দীর্ঘ দিনের সঙ্গী লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), গণফোরাম, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) নেতৃত্বাধীন ১২ দলীয় জোট, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ১১টি দল, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য ও বাংলাদেশ লেবার পার্টি বিএনপি’র নেতৃত্বাধীন নির্বাচনী জোটেই থাকছে। তৃতীয় কোনো জোট হলে নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনসহ কয়েকটি দল নতুন সিদ্ধান্ত নিতে পারে এমন আলোচনাও আছে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলামসহ কয়েকটি ইসলামী দলও বিএনপি’র সঙ্গে জোটে যুক্ত হতে পারে এমন আলোচনা রয়েছে। অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেছেন বিএনপি নেতারা। হেফাজতে থাকা ইসলামী দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি রয়েছে। কয়েকটি দল ইতিমধ্যে জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর জোটের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়েছে। বাকিদের কাছে টানার চেষ্টা করছে বিএনপি। হেফাজতে ইসলাম অরাজনৈতিক সংগঠন হলেও কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক এই সংগঠনের সমর্থন ভোটের মাঠে বড় একটি ফ্যাক্টর হয়ে উঠতে পারে। 
অন্যদিকে বিএনপি ও সমমনা জোটের বিপরীতে জামায়াতসহ ইসলামপন্থি দলগুলোর ভোট এক বাক্সে আনার চেষ্টা চলছে। নির্বাচনী জোট, ফ্রন্ট বা সমঝোতার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া এগোতে পারে। দলগুলোর মধ্যে নানা ইস্যুতে ঐকমত্যও তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে নির্বাচনসহ নানা দাবিতে জামায়াতসহ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাগপা অভিন্ন কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নেমেছে। সামনে এই দলগুলো বৃহৎ নির্বাচনী জোটে পরিণত হতে পারে এমন আলোচনা জোরালো হচ্ছে। শুরুতে এনসিপিও এই জোটের অংশ হচ্ছে এমন আলোচনা ছিল। পরে অবশ্য এনসিপি স্বতন্ত্র থাকার ঘোষণা দেয়। নিজেদের নেতৃত্বে নতুন কোনো জোট না হলে এনসিপিও বড় দুই জোটের কোনো একটিতে যুক্ত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।  
 

৯ দলের পৃথক তৎপরতা: ওদিকে বিএনপি ও জামায়াত বলয়ের বাইরে ৯টি দল পৃথক তৎপরতা শুরু করেছে। এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ, এবি পার্টি এবং গণতন্ত্র মঞ্চের ছয় শরিক জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ও ভাসানী জনশক্তি পার্টি ইতিমধ্যে একাধিক বৈঠক করেছে। জুলাই সনদ চূড়ান্ত ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে সমঝোতার চেষ্টাও চালাচ্ছে এই দলগুলো। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন সামনে নির্বাচনে নিজেদের আসন নিয়ে দরকষাকষি এবং অবস্থান নিশ্চিত করতেই দলগুলো একজোট হচ্ছে। নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে মাঠের পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই দলগুলো কোনো জোটে যাবে নাকি পৃথক ফ্রন্ট থেকে নির্বাচন করবে তা নিয়ে ভাববে। যদিও এই আলোচনা প্রক্রিয়ায় থাকা দলগুলোর বেশির ভাগই অন্য রাজনৈতিক জোট বা ফ্রন্টের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছে। 
 

ওদিকে এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদ একীভূত হওয়ার আলোচনাও চলছে। আদর্শিক ও লক্ষ্যের দিক দিয়ে প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় দল দু’টি একীভূত হতে চাইছে বলে নেতারা জানিয়েছেন। যদিও দলের নাম এবং নেতৃত্বের বিষয়ে সমঝোতাকে কঠিন বলে মনে করছেন তারা। শেষ পর্যন্ত এই দুই দল একীভূত হলে রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। 
ভোটের জরিপ নিয়ে আলোচনা: জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জরিপ রিপোর্ট প্রকাশ হতে শুরু করেছে। এসব জরিপে ভোটারদের মতামত ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভোটের নয়া অঙ্কের তথ্যও উঠে আসছে। সর্বশেষ ২৪শে  সেপ্টেম্বর বুধবার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইনোভিশন কনসাল্টিং একটি জরিপের তথ্য প্রকাশ করে। এই জরিপে সহযোগিতা করেছে নাগরিক প্ল্যাটফরম ভয়েস ফর রিফর্ম ও বিআরএআইএন। ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, চলতি সেপ্টেম্বর মাসের ২ তারিখ থেকে ১৫ তারিখ পর্যন্ত সারা দেশের ১০ হাজার ৪১৩ জন বিভিন্ন বয়সী ভোটারের ওপর জরিপটি পরিচালিত হয়। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৪ হাজার ৭২১ জন উত্তরদাতা ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে নিজেদের পছন্দের দলের কথা প্রকাশ করেছেন। এতে দেখা গেছে, ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে ৪১ দশমিক ৩০ শতাংশ উত্তরদাতার পছন্দের দল বিএনপি। জামায়াতে ইসলামীকে পছন্দ করেছেন ৩০ দশমিক ৩০ শতাংশ উত্তরদাতা। আর জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) পছন্দ করেছেন ৪ দশমিক ১০ শতাংশ উত্তরদাতা। নির্বাচনে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ উত্তরদাতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া দল আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। একই সংগঠনের আগের করা জরিপের তথ্যের চেয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট দিতে চাওয়া ব্যক্তিদের হার বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ।
সর্বশেষ জরিপে ৪৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ উত্তরদাতা আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। অন্যদিকে ৪৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, বিচার হওয়ার আগে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ 

নেয়ার সুযোগ দেয়া উচিত নয়।
 

জরিপ তথ্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে ভোটের দিক থেকে লাভবান হবে বিএনপি ও জামায়াত। সে ক্ষেত্রে বিএনপিকে ভোট দিতে চেয়েছেন ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশ উত্তরদাতা। জামায়াতকে ভোট দিতে চেয়েছেন ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ উত্তরদাতা। আর ৮ দশমিক ৩ শতাংশ ভোট দিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
বেসরকারি এই প্রতিষ্ঠানের জরিপ তথ্য নিয়েও নানা আলোচনা আছে। জরিপের উদ্দেশ্য নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। তবে জরিপের এই তথ্যে বেশ কিছু বিষয় সামনে এসেছে। এর মধ্যে ভোটের মাঠে বিএনপি এখনো সুসংহত থাকলেও জামায়াতে ইসলামীর ভোট বা সমর্থন বাড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে এই জরিপ তথ্য। একইসঙ্গে অভ্যুত্থানের বড় শক্তি জাতীয় নাগরিক পার্টি এখনো ভোটের মাঠে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারেনি। ফ্যাসিবাদী শাসনের তকমা নিয়ে মাঠছাড়া হলেও আওয়ামী লীগের সমর্থকরা যে একটা ফ্যাক্টর সেটি উঠে এসেছে এই জরিপের তথ্যে। যদিও জরিপ তথ্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগের সমর্থন আগের দেখানো যেকোনো সময়ের চেয়ে দলটির সমর্থন এখন অনেক কমেছে। 
দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মনে করা হয় ১৯৯১ সালে বিচারপতি সাহাবুদ্দীনের অধীনে হওয়া নির্বাচনকে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোট ছিল ৩০ শতাংশ। ১৯৯৬ সালে দলটি পেয়েছিল শতকরা ৩৭.৪ শতাংশ ভোট। ২০০১ সালে পেয়েছিল ৪০ শতাংশ ভোট। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তারা পায় ৪৮.৪ শতাংশ ভোট। এর পরের নির্বাচনগুলো তো ইতিহাস। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো গ্রহণযোগ্য ছিল না। এবং এই তিন নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর ভোটেরও কোনো হিসাব মিলেনি। অতীতে হওয়া প্রায় গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে আওয়ামী লীগ গড়ে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ সমর্থন পেয়েছে। সাম্প্রতিক জরিপ হিসেবে দলটির সমর্থন এখন তারও অর্ধেকে নেমে এসেছে। 
এমন অবস্থায় সামনের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এই সমর্থকদের ভোট কোন বাক্সে যাবে বা তারা কি অবস্থান নেবেন এটি এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের ভোট ও অবস্থান নিয়ে রাজনীতিতে পাল্টাপাল্টি চলছে। বিএনপি সহ কিছু দল মধ্যপন্থা অবলম্বন করলেও অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া এনসিপিসহ কয়েকটি দল চাইছে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগের সহযোগী হিসেবে জাতীয় পার্টিকেও নির্বাচনের বাইরে রাখার পক্ষে তারা। আওয়ামী লীগ নিয়ে বিএনপি’র কৌশলের সমালোচনাও করছে এসব দল। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের গোপন আঁতাতের কথাও বলছেন কেউ কেউ। তবে দলটির পক্ষ থেকে এমন সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে জোরালোভাবে। আসছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে ভোট আর জোটের এই অঙ্ক সামনের দিনে আরও জটিলতর হয়ে উঠতে পারে। 
 

এক্সক্লুসিভ'র অন্যান্য খবর