বিবিসি বাংলাকে দেয়া বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাক্ষাৎকারটি দু’বার শুনেছি মূলত এজন্য যে, সুদীর্ঘ প্রবাস জীবনে এই প্রথম তিনি কোনো সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিলেন। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তার এভাবে কথা বলাটা অব্যাহত থাকবে নিশ্চয়। সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তিনি অচিরেই দেশে ফিরবেন বলেও সবাই ধরে নিয়েছে। তবে এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা কেন দিতে পারছেন না, প্রশ্ন রয়েছে। এটা নিয়ে অস্বস্তি আছে বিএনপি’র বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থকের মধ্যেও। তবে তারা আশাবাদী, ফিরতে খুব বেশি দেরি করবেন না তারেক রহমান; যেমনটা সাক্ষাৎকারে বলেছেন। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর তিনি ফিরবেন, এমন ধারণাই বেশি জোরালো।
সুদীর্ঘকাল প্রবাসে থেকে তারেক রহমান দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। নির্বাচনের সময় নিশ্চয় তিনি দেশে অবস্থান করেই দলকে নেতৃত্ব দেবেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থায় এটা অপরিহার্যও বটে। বেগম জিয়া কি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন? তারেক রহমান নিজেও সেটা স্পষ্ট করতে পারেন নি। যে বেগম জিয়া কোনো নির্বাচনে পরাস্ত হননি; তিনটি অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পর গণ-অভ্যুত্থানে বদলে যাওয়া দেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাটা তার জন্য আনন্দের হতো বৈকি। সেটি ঘটবেই না- এমনটাও বলা যাচ্ছে না। তবে নির্বাচনে মাঠে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিতে হবে তারেক রহমানকেই।
বেগম জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তিনিই তো বিএনপিকে ধরে রেখেছেন। দলটিকে আর কখনো এতটা কঠিন সময় পার করতে হয়নি। দেশের সবচেয়ে কর্তৃত্ববাদী সরকারের দমনপীড়নের মধ্যে দলকে ধরে রেখে প্রতিবাদ জারি রাখাটাও ছিল চ্যালেঞ্জের। বিএনপি’র নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলন যদিও বারবার ব্যর্থ হয়েছে; তবু মাঠে থেকে সরকারবিরোধিতা অব্যাহত রাখায় এর কিছু সুফল পেয়েছে দেশ। অনেকে মনে করেন, বিএনপিকে বিভক্ত ও প্রান্তিক করে ফেলতে হাসিনা সরকার সফল হলে দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে একনায়কতান্ত্রিক হয়ে যেত। তারেক রহমানের নেতৃত্বে মাঠে একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের উপস্থিতি জাতির মনে গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের আশাবাদটুকু অন্তত জিইয়ে রেখেছিল। অব্যাহত দমনপীড়নের মুখেও দলটি আত্মসমর্পণ করেনি হাসিনা সরকারের অভিলাষের কাছে।
মাঝে ২০১৮ সালের নির্বাচনে এসে ‘চরমভাবে প্রতারিত’ হওয়ার পর তারা গণতান্ত্রিক বিশ্বের সহানুভূতিও লাভ করেছে। এ অবস্থায় ২০২৪-এর নির্বাচন ঘিরে হাসিনা সরকার আন্তর্জাতিক চাপে পড়ার ঘটনা স্মরণ করা যায়। ভারতীয় প্রশাসন অবশ্য সেবারও তাদের রক্ষা করে। কিন্তু তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। একটি প্রান্তিক দাবিতে, সম্পূর্ণ নতুন ধরনের নেতৃত্বে গণ-অভ্যুত্থান ঘটে যায় দেশে। এতে বিএনপি’র কর্মী-সমর্থকরাও বিপুলভাবে অংশ নেয়। হতাহতের তালিকায় তাদের সংখ্যা সবচাইতে বেশি বলেই জানা যাচ্ছে। আর এতে প্রবাস থেকে তারেক রহমানের এত নিবিড় ভূমিকা ছিল যে, কেউ কেউ তাকেই বলতে চান গণ-অভ্যুত্থানের ‘মাস্টারমাইন্ড’। তিনি অবশ্য এটাকে স্বতঃস্ফূর্ত গণবিস্ফোরণ বলেই বর্ণনা করে আসছেন এবং কৃতিত্ব দিচ্ছেন ‘জনগণ’কে।
জনগণের যে অংশটি হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে রাস্তায় নেমেছিল; তাদের মধ্যে একদা আওয়ামী লীগ সমর্থকও যে ছিল না, তা নয়। ঘরে থেকে যারা এ পরিবর্তনকে অনিবার্য বলে স্বাগত জানিয়েছে, তাদের মধ্যেও একদা লীগ সমর্থক একেবারে কম ছিল না। এদের একটা বড় অংশ স্বভাবতই চাইবে, বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসুক। মাঠে থাকা দলগুলোর মধ্যে বিএনপিকে বেছে নেয়ার প্রধান কারণ, তারা বাংলাদেশকে অন্তত মধ্যপন্থায় দেখতে চান। আর এ বিএনপি কিন্তু অনেকাংশেই তারেক রহমানের হাতে পুনর্গঠিত। বিএনপি একটি মধ্যপন্থি দলও বটে। গণ-অভ্যুত্থানের পর দলটি উদারপন্থি হচ্ছে বলেও অনেকের পর্যবেক্ষণ। সেটাও ঘটছে তারেক রহমানের নেতৃত্বে। বেগম জিয়ার নিশ্চয় এ বিষয়ে সমর্থন রয়েছে। বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তারেক রহমান দেশের বর্তমান বাস্তবতায় একটি উদারপন্থি দলের নেতার মতো করেই কথা বলতে চেয়েছেন। কিছু প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেও বিভিন্ন ইস্যুতে যেটুকু বক্তব্য রেখেছেন, তাতে ওই মনোভাব অস্পষ্ট নয়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে যে তিনি চূড়ান্ত বিচারক জনগণের কাছে সোপর্দ করতে চান, সেটাও ওখানে বলতে চেয়েছেন। তিনি সম্ভবত চান, দলটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় মুসলিম লীগের ভাগ্য বরণ করুক।
তারেক রহমানের বিএনপি ‘মৌলিক সংস্কার’ চাইছে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে, সেটাও লক্ষণীয়। তার বিরোধীদের চাপের মুখে গণভোটে সম্মত হলেও সেটা চাইছে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে। এটা কেবল রাষ্ট্রের ব্যয় নিয়ন্ত্রণের প্রশ্ন নয়; ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আসন্ন নির্বাচনটিকে ঝুঁকিমুক্ত রাখার প্রশ্নও। গণভোট আয়োজন এদেশে প্রথম করেছিলেন বিএনপিরই প্রতিষ্ঠাতা, তারেক রহমানের পিতা জিয়াউর রহমান। তবে এখনকার বাস্তবতায় সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে গণভোটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। গণভোটে সংস্কারের বিরুদ্ধে রায় এলে এতদিন ধরে চলা সংস্কার প্রক্রিয়াটাই পড়বে প্রশ্নের মুখে। ভোটের আগে গণভোট আয়োজনে বিপুলভাবে আগ্রহীরা সম্ভবত ধরেই নিয়েছেন, তারা জনসম্মতি পাবেন। এ ক্ষেত্রে অবশ্য তারেক রহমানের নেতৃত্বাধীন বিএনপি’র ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে।
যেসব ইস্যুতে সব দল একমত, সেগুলোর বিষয়ে গণরায় চাওয়া হলে বিএনপি’র উচিত হবে না এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। এমনকি ভেতরে ভেতরে প্রচারণা চালানো। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সংস্কার তো প্রয়োজন এবং এ ধারাটি এগিয়ে নিতে হবে। মৌলিক কোনো সংস্কারই শেষতক না হলে গণ-অভ্যুত্থানও সার্থকতা লাভ করবে না। আর তারেক রহমানের নেতৃত্বে থাকা বিএনপি তো গণ-অভ্যুত্থানেরও অনেক আগে ‘রাষ্ট্র মেরামতে’ ৩১ দফা ঘোষণা করেছিল। হাসিনা সরকার যখন সংস্কারের বিপরীতে যাচ্ছিল, রাষ্ট্রীয় রীতিনীতি ও প্রতিষ্ঠান অব্যাহতভাবে ভেঙে ফেলছিল; তখন ৩১ দফা সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা ছিল আশা জাগানিয়া। সে কারণেও সংস্কারের পক্ষে জোরালো অবস্থান বজায় রাখতে হবে তারেক রহমান ও তার সহকর্মীদের।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া সুপারিশগুলো তারা আগে বাস্তবায়ন করবেন ক্ষমতায় যেতে পারলে। মাঠের পরিস্থিতি বিবেচনায় বিএনপি ধরে নিয়ে বসে আছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারাই ক্ষমতায় যাবে। এ অবস্থায় সংস্কারে কম আগ্রহ দেখালে গণতন্ত্র জোরদারের বিষয়ে জনমনে থাকা সংশয় আরও বাড়বে। প্রতিপক্ষও বিএনপিকে সংস্কারবিমুখ শক্তি বলে বর্ণনার সুযোগ পাবে। এ অবস্থায় নিজেদের প্রতিশ্রুত সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করেও তারেক রহমানের বিএনপিকে গণতন্ত্রের প্রতি অঙ্গীকারের প্রমাণ দিতে হবে। সাক্ষাৎকারে দেয়া তারেক রহমানের বক্তব্যে কিন্তু মনে হতে পারে, সংস্কারের বদলে নেতার সদিচ্ছাই জনগণের অধিকার নিশ্চিতকরণে গুরুত্বপূর্ণ। দেশের সিংহভাগ মানুষ হয়তো তার এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত হবে না। তারা তো ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল ও সরকার দ্বারা কম প্রতারিত হয়নি। এ ধরনের দল ও সরকারের করুণ পতনও প্রত্যক্ষ করেছে। ইতিহাসে ব্যক্তির ভূমিকা রয়েছে; তবে অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ন্যূনতম কিছু সংস্কার জরুরি বলেই বিবেচিত। বেগম জিয়ার প্রথম শাসনামলে সংসদীয় ব্যবস্থায় ফিরতে গণভোটের আয়োজন করা হয়েছিল। সে ব্যবস্থাও কিন্তু সুফল দিতে পারেনি- এতে বিরোধী দলের সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকায়। কোনো সংসদই কার্যকর হয়নি। এতে ‘ব্রুট মেজরিটি’র জোরে আনা সংশোধনীর কারণে নির্বাচন ব্যবস্থাও চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয় শেখ হাসিনার শাসনামলে। কর্তৃত্ববাদ হয় প্রতিষ্ঠিত। এখন বিএনপি ক্ষমতায় এলে সেটাই ফিরে আসবে, এমন প্রচারণা বাড়িয়ে তোলার সুযোগ কি দেবেন তারেক রহমান?
গণ-অভ্যুত্থানের পর এক বছরেরও বেশি সময়ে বিএনপি’র একশ্রেণির নেতাকর্মী যে আচরণ করেছে বিভিন্ন স্থানে, এতে আবার তাদেরকে ‘নতুন দুর্বৃত্তগোষ্ঠী’ বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। তরুণ ভোটারের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর গ্রহণযোগ্যতা বেশি, এমন চিত্রও উঠে আসছে জরিপে। এর প্রধান কারণ সম্ভবত পুরনো ধারার রাজনীতিতে বিএনপি’র আটকে থাকার সাক্ষাৎ প্রমাণগুলো। সাত হাজারের মতো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিয়েও দলে কতোটা পরিবর্তন আনতে পেরেছেন তারেক রহমান? এ প্রশ্ন কেউ না করলেও তাকে এটা নিজের কাছেই তুলতে হবে। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ যে নতুন কিছু প্রত্যাশার বাস্তবায়ন চাইছে, সেটা নিশ্চয় বুঝিয়ে বলতে হবে না তারেক রহমানকে।
সুদীর্ঘকাল বৃটেনে অবস্থান করে দেশটির অনেক কিছু শেখার কথা তিনি অক্লেশে বলেছেন। বাংলাদেশের বাস্তবতা অবশ্য অনেকখানি ভিন্ন। একটি বিকশিত গণতান্ত্রিক দেশের সঙ্গে তার তুলনা চলে না। গণতন্ত্রের ন্যূনতম শর্ত তথা নির্বাচন ব্যবস্থাই এখানে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। অনেকে বলেন, তিনটি বাজে নির্বাচনের পর অন্তত তিনটি ভালো নির্বাচন হতে হবে। এর ভেতর দিয়েই দেশ এগোবে গণতন্ত্র ও সুশাসনের পথে। এর প্রথমটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে। আর ইউনূস সরকারের কাছ থেকে এ সময়সীমা আদায়ে বিএনপি’র ভূমিকাই ছিল মুখ্য। তারেক রহমানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন বৈঠকের পর রাজনৈতিক দৃশ্যপট বদলেছে।
তারেক রহমান দেশে ফেরার পর দৃশ্যপট নাকি আরও দ্রুত বদলাবে। কিন্তু দলটিকে সুশৃঙ্খল করে নির্বাচনে যেতে না পারলে সংকট বাড়তে পারে। বদলে যাওয়া মাঠে বিএনপি’র প্রধান প্রতিপক্ষ জামায়াত ইতিমধ্যে প্রার্থী চূড়ান্ত করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে সুকৌশলে। এ কাজে এগিয়ে থেকে তাদের ছাত্র সংগঠনও সুফল পেয়েছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে। এ অবস্থায় তারেক রহমান বড় জমায়েত না করে ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচারণা চালানোর ওপর জোর দিয়েছেন। কিন্তু তার দল কি এসব করতে প্রস্তুত? তাদের অনেকে মনোনয়ন ঘিরে অন্তর্কলহও বাড়িয়ে তুলেছেন। রাউজান এর একটি উদাহরণ। কীভাবে এসব সামলাবেন তারেক রহমান?
নির্বাচনের তো বেশি দেরি নেই আর সামনের সময়টা ক্রমে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। তফসিল ঘোষণার অপেক্ষায় থাকারও সুযোগ নেই। এ অবস্থায় দলের বাইরেও ‘জনসাধারণের কাছে’ গ্রহণযোগ্য প্রার্থী মনোনয়নের ওপর জোর দিয়েছেন তারেক রহমান। ভাসমান ভোটারের আকার বেড়েছে, এটাই সম্ভবত বোঝাতে চেয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না, এটা ধরেই নেয়া যায়। সে ক্ষেত্রে তাদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোটারকে বিএনপি’র দিকে আকর্ষণের চ্যালেঞ্জও রয়েছে তারেক রহমানের সামনে।
তাদের ৩১ দফায় বিএনপি ‘রেইনবো নেশন’ গঠনের এজেন্ডা সামনে এনেছিল। গণ-অভ্যুত্থানের পর এর প্রয়োজনীয়তা ফুরায়নি; বরং নতুন তাৎপর্য নিয়ে হাজির হয়েছে। অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি লাগবে। প্রশ্ন হলো, বিভিন্ন ইস্যু সামনে এনে জনগণকে বিভক্ত করে ফায়দা হাসিলের বদলে জাতি গঠনমূলক রাজনীতি কি জোরদার করতে পারবেন তারেক রহমান? সেটা অবশ্যই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এড়িয়ে নয়। তবে এর বাইরে থাকা প্রতিপক্ষকে নিজেদের সংশোধনপূর্বক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে নিশ্চয়। অন্তর্বর্তী সরকার সে উদ্যোগ আর নিতে পারবে বলে মনে হয় না। তারেক রহমানকে তাদের ‘পারফরম্যান্স’ বিষয়ে সমালোচনামুখর দেখা যায়নি কেন, সেটা বোধগম্য। সরকারের সঙ্গে তিক্ততা আর বাড়াতে চাইছেন না তিনি। এদিকে মাঠে থাকা প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিএনপি’র সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠছে। সেটাও আর না বাড়িয়ে বিএনপি’র রাজনীতিটা স্পষ্ট করতে হবে তারেক রহমানকে। বিদেশনীতিও করতে হবে সুনির্দিষ্ট। ইউনূস সরকার এ ক্ষেত্রে যে ‘পদচ্ছাপ’ রেখে যাচ্ছে; তার কতোখানি অনুসরণ যুক্তিযুক্ত হবে, সে প্রশ্ন কিন্তু বাজারে রয়েছে। বদলে যেতে থাকা ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতায় ক্ষমতায় যেতে পারলেও সফলভাবে নেতৃত্ব প্রদান তো কঠিন।
একটা ঝুঁকিপূর্ণ অর্থনীতি পেয়েছিল ইউনূস সরকার। তারা যে অর্থনীতি রেখে যাচ্ছেন, সেটা আবার গণ-অভ্যুত্থানের ধাক্কায় স্থবির। একই সঙ্গে অস্থির। এতে গতি আনা গেলে অস্থিরতাও কমে আসবে। দেশের অর্থনীতির মোড় পরিবর্তনে জিয়াউর রহমান সরকারের বড় ভূমিকা ছিল। নির্বাচনে জিতে তারেক রহমানের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে তাদেরকেও অর্থনীতিতে বড় কিছু সংস্কার আনতে হবে। উল্লেখ্য, ইউনূস সরকার অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন গঠন করেনি। আর গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটলেই এ ধরনের সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা যে ফুরিয়ে যাচ্ছে না, এটা আশা করি তারেক রহমান বিবেচনায় রাখবেন।
লেখক: সাংবাদিক, কলাম লেখক