নি র্বা চ ন

কবে হচ্ছে তফসিল?

মারুফ কিবরিয়া | এক্সক্লুসিভ
নভেম্বর ২২, ২০২৫
কবে হচ্ছে তফসিল?

নানা শঙ্কা। উদ্বেগ। উৎকণ্ঠা। অনিশ্চয়তা। কবে হচ্ছে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন? এমন প্রশ্নই জনমনে এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। নির্বাচন ঘিরে যে কালো মেঘ জমেছিল তা কাটতে শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে কর্মপরিকল্পনা দিয়েছিল তার সবই শেষের পথে। বলা চলে ৯৫ শতাংশ কাজই শেষ করেছে সংস্থাটি। এখন মূল প্রস্তুতি তফসিল ঘিরে। ইসি আগেই জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারির শুরুতে ভোটগ্রহণ এবং ডিসেম্বরের শুরুতে তফসিল। সে  অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব ধরনের প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশন ইতিমধ্যে ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করে তা ঘোষণা করেছে। প্রবাসীদের ভোটার করার জন্য তৈরি করা অ্যাপও উদ্বোধন করা হয়েছে। বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ইতিমধ্যে গত বৃহস্পতিবার, রোববার, সোম ও মঙ্গলবার এই চার দিনে অন্তত ৪৮টি দলের সঙ্গে সংলাপও সম্পন্ন করেছে ইসি। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে উল্লিখিত ৫৪টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গত মঙ্গলবার যুক্ত হয়েছে আরও দু’টি রাজনৈতিক দল। এসব দলের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত থাকায় নিবন্ধিত ৫৫টি দল কমিশনের তালিকায় রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বড় শরিক জাতীয় পার্টিসহ সাতটি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণই জানায়নি ইসি। সে হিসেবে বলা যায়, রীতি অনুযায়ী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপও সেরে নেয়া হয়েছে।
 

এদিকে বেশ কয়েকটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ইসি’র সংলাপে ডাক না পেলেও এ বিষয়ে তারা কোনো আপত্তি তোলেনি। সংলাপে ডাক না পাওয়ায় দলগুলোর মধ্যে রয়েছে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের বিরোধী দল ও মিত্র হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টি। এই তালিকায় থাকা বাকি দলগুলো হচ্ছে জাতীয় পার্টি-জেপি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এম.এল), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ ও বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেসব দল আমন্ত্রণ পায়নি তাদের মধ্যে জাতীয় পার্টি ছাড়া বাকিদের মাঠে কোনো অস্তিত্ব নেই। আর জাতীয় পার্টি নিয়ে জুলাই বিপ্লবীদের কঠোর বিরোধিতার কারণে আমন্ত্রণ জানায়নি ইসি। এদিকে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে দ্রুত সব কাজ গুছিয়ে নিচ্ছে ইসি। ভোটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ঠিক কি পরিমাণ সেনাসদস্য, পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্য সম্পৃক্ত করা হবে তা কয়েক সপ্তাহ আগেই নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে। নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে এমন সরঞ্জামাদিও ইতিমধ্যে ক্রয় করা হয়েছে। সীমানা নির্ধারণ, গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ চূড়ান্ত করা হয়েছে। নির্বাচনের দিন গণভোট করার সরকারি সিদ্ধান্তের পর নির্বাচন কমিশন অপেক্ষায় ছিল কবে এ বিষয়ে অধ্যাদেশ আসবে।
 

সরকারের আইন উপদেষ্টা জানিয়েছেন আগামী তিন থেকে চার কার্যদিবসের মধ্যে গণভোট আইন চূড়ান্ত করবে সরকার। অর্থাৎ গণভোট আইন আগামী সপ্তাহের মঙ্গল অথবা বুধবারের মধ্যে চূড়ান্ত হয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবে নির্বাচন কমিশন। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে ভোট অনুষ্ঠানে ইসি খুবই ত্বরিত গতিতে এগোচ্ছে। ফলে এখন অনেকটা নির্বাচনের তফসিলের কাউন্টডাউন চলছে। আজ নভেম্বরের ২৩ তারিখ, সেই হিসেবে মাত্র কয়েকদিন পরই কমিশন ঘোষণা করবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কাঙ্ক্ষিত তফসিল। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিদিনই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে ইসি। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করে ১৩ই নভেম্বর, শেষ করে বৃহস্পতিবার। ১৮ই নভেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করে। একইদিন প্রবাসী ভোটারদের জন্য পোস্টাল বিডি অ্যাপ উদ্বোধন ও দু’টি নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে কমিশন। অর্থাৎ বসে নেই এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
 

সংলাপে যারা ছিল

ইসি’র আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ১৩ই নভেম্বর সংলাপে অংশ নেয়- লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি),  বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম- এই ১২টি দল।
 

১৬ই নভেম্বর যারা অংশ নেয়-
গণফোরাম, গণফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ জাসদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপ, তৃণমূল বিএনপি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ- মোট ১১টি দল। ১৭ই নভেম্বর অংশ নেয় বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট (মুক্তিজোট), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ-বিএমএল, আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টি, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা ও জাকের পার্টি- মোট ১২টি দল।
 

১৯শে নভেম্বর যারা অংশ নেয়-
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি, গণসংহতি আন্দোলন-জিএসএ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন-এনডিএম, বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি (বিআরপি) ও বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মার্কসবাদী)- মোট ১৩টি দল।
 

চূড়ান্ত ভোটার তালিকা
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিশনের প্রকাশ করা চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় স্থান পেয়েছেন ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন। খসড়া তালিকা অনুযায়ী ভোটার ছিল ১২ কোটি ৭৬ লাখ ১২ হাজার ৩৮৪ জন। ১৮ই নভেম্বর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। তার দেয়া তথ্যানুযায়ী, চূড়ান্ত তালিকায় পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭ জন ও নারী ভোটারের সংখ্যা ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২ জন। এ ছাড়া ১ হাজার ২৩৪ জন হিজড়া ভোটার রয়েছেন। ২০২৫ সালের ৩১শে অক্টোবরের মধ্যে ১৮ বছর পূর্ণ করেছেন, তারা এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন।
১৯শে নভেম্বর সংলাপে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার দৃঢ়তার সঙ্গেই বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশন খুবই আশাবাদী। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নিঃসন্দেহে এটা বড় কাজ ছিল। যাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি, সবাই এসেছেন এবং স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নিয়ে মন খুলে কথা বলেছেন। এর মাধ্যমে সামনে নির্বাচন ও যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ খুব সহজ হয়ে যাবে। ্ত
 

এক্সক্লুসিভ'র অন্যান্য খবর