প্রায়শই আলোচনায় আসে জাতীয় পার্টি। শক্তিমত্তা কিংবা ভোট ব্যাংক; কোথাও স্বস্তি নেই দলটির। দলীয় নেতাকর্মীদের কাছেও আস্থার জায়গা হারিয়েছে। বরাবরই ক্ষমতাসীনদের পাশে থাকাটাই যেন একমাত্র লক্ষ্য। আওয়ামী লীগের একতরফা নির্বাচনকে বৈধতা দিতেই ব্যস্ত ছিল দলটি। শীর্ষ নেতারা ভাবেননি তৃণমূলের কথা। আসন সংখ্যাটাই তাদের মুখ্য ইস্যু। আবার ভোট ব্যাংকের হিসেবে রংপুর গুরুত্বপূর্ণ হলেও ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর সেখানে বিবর্জিত দলে পরিণত হয়েছে। এখন আওয়ামী লীগ ভর দিতে চাইছে জাতীয় পার্টির উপর। নেতাকর্মীরাই প্রশ্ন তুলছেন কেন রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো আর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা প্রতিহতের নামে আক্রমণ করলো কারা?
কী ঘটেছিল কাকরাইল পার্টি অফিসে
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করে। প্রথম বৈঠকে যোগ দেয়ার পরই আপত্তি জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর বিরোধিতা করে জাতীয় পার্টি। অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ’র রংপুর সফরের বিরোধিতা করে রংপুর জাতীয় পার্টি। তাদের রংপুরে করা হয় অবাঞ্ছিত। এরপর গত শনিবার চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ দলের নেতাদের নামে ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবিতে ২রা নভেম্বর রাজধানীতে সমাবেশ এবং বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয়া হয়। এরই বিরোধিতা করে গত বৃহস্পতিবার গণঅধিকার পরিষদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা জাতীয় পার্টি কার্যালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা’র ব্যানারে করা মশাল মিছিলটি জাতীয় পার্টির কার্যালয়ের কাছাকাছি গেলে সেখানে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিছিলে থাকা লোকজনের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
জাতীয় পার্টি অফিসে থাকা ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির এক নেতা বলেন, আমরা কয়েকজন অফিসে ছিলাম। আমাদের লক্ষ্য ছিল তাদের প্রতিহত করা। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করলাম যেই মিছিলটি কাছাকাছি আসে চারপাশ থেকে ৭০/৮০ জন কোথা থেকে সামনে চলে আসে। তারা দু’পক্ষের দিকেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রথমে আমরা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। এরপর তাদের সঙ্গে আমরাও এগিয়ে যাই। তারাই মূলত পার্টি অফিসে ভাঙচুর করে। অগ্নিসংযোগ করে। তিনি আরও বলেন, এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ার পর তারা সেখান থেকে চলে যায়। তারা কারা ছিল আমরা জানি না।
পরদিন জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের। তিনি অভিযোগ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। গতকাল ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জাতীয় পার্টি ইনিয়ে বিনিয়ে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে আনার কাজ করছে। শনিবার তারা রংপুরে লাঠিসোটা নিয়ে জঙ্গি মিছিল করেছে। তাদের সমাবেশে আওয়ামী লীগ সারা দেশ থেকে লোক পাঠাচ্ছে, জিএম কাদের এটা স্বীকারও করেছেন। জাতীয় পার্টি অফিসের সামনে মশাল মিছিলে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা হামলা চালিয়েছে।
যেভাবে বিরাগভাজন হলো জাপা
জাতীয় পার্টি বরাবরই থাকতে চেয়েছিল ক্ষমতার প্রদীপের নিচে। আওয়ামী লীগ আমলে আসন ভাগাভাগির সঙ্গে জোট সঙ্গীও ছিল। ২০২৪ সালের নির্বাচনে সব থেকে খারাপ সময়ে পা দেয় দলটি। নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কথার কোনো গুরুত্বও দেয়নি দলটির শীর্ষ নেতারা। জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ভারত সফরে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে কী কথা হয়েছে তা নিয়ে ছিলেন চুপ। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। তিনি বলেছিলেন- ভারতের অনুমতি ছাড়া তারা এসব কথা বলতে পারবেন না।
অনেকটা নাটকীয়ভাবেই নির্বাচনে যায় দলটি। নির্বাচনের পূর্ব থেকেই আলোচনা হয় নির্বাচনে যাবেন কিনা? কিন্তু শীর্ষ নেতারা বরাবরই মুখে কুলুপ এঁটে ছিলেন। দেশের বিভিন্ন স্থানের নেতাকর্মীদের নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন তারা। সেখানে প্রায় সকলেই নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। কিন্তু নেতাকর্মীদের কথা শুধু শুনেই গেছেন। দলের শীর্ষ নেতাদের বিপক্ষে কথা বলায় একের পর এক প্রবীণ ও ত্যাগী নেতাদের বহিষ্কার করা শুরু হয়।
এরপর পর্দার আড়ালে চলে যান জিএম কাদের। ১৪ই নভেম্বর থেকে ২৩শে ডিসেম্বর ৪০ দিন আসেননি গণমাধ্যমের সামনে। এরপর তিনি বলেছিলেন, নির্বাচনে প্রতিযোগিতা থাকতে হয়, না হলে ভালো নির্বাচন হয় না। তবে এটার ব্যবস্থা করার দায়িত্ব আমাদের হাতে ছিল না। জাতীয় পার্টি এখন কোনো দোটানার মধ্যে নেই। আশা ও আগ্রহ নিয়ে নির্বাচনে এসেছি। কেন নীরব ছিলেন? কেন নির্বাচনে গিয়েছিলেন? এসব প্রশ্নের জবাবে তিনি শুধু বলেছেন, চাপের মুখে নির্বাচনে গিয়েছেন। কিন্তু এখন অবাধ সুযোগ থাকার পরও স্পষ্ট করেননি তা। আবার দেন-দরবারও করে গেছেন আসন নিয়ে। ৪০ দিন নীরব থাকা সময়ে কথা বলে গেছেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। দলটির অবস্থা এতটাই নাজুক হয়ে পড়ে যে, দলের নেতাকর্মীরাই প্রকাশ্যে কথা বলতে শুরু করেন। নির্বাচনে দেন-দরবারে যায় দলটি। জোট না হলেও মাত্র ২৬ আসনে ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। জিএম কাদের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান তার স্ত্রী শেরীফা কাদেরের আসনের জন্য। সমালোচনার জেরে দীর্ঘদিনের সহচর জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, গোলাম সারোয়ার মিলন, ইয়াহিয়া চৌধুরীসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাদের বহিষ্কার পর্যন্ত করা হয়। ভাগ-বাটোয়ারায় পাওয়া আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী উঠিয়ে নিলেও সেখানে রেখে দেয়া হয় আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। দলের মহাসচিব মুজিবুল হক নির্বাচনী প্রচারণার পোস্টারে লিখেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। তাকে অনুসরণ করেন অন্যান্য নেতারাও। আবার অনেকে মাইকিং করেন, শেখ হাসিনার সালাম নিন, লাঙ্গল মার্কায় ভোট দিন। এরপর নির্বাচনের পর তারা আসন পায় মাত্র ১১টি। খাদের কিনারায় চলে যায় দলটি, মুখ ফিরিয়ে নেন নেতাকর্মীরা। স্ত্রীর জন্য দেন-দরবারে ব্যস্ত থাকা জিএম কাদেরের স্ত্রী শেরীফা কাদের জয়ী হতে পারেননি ঢাকা-১৮ আসনে। বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোট পেয়েছিলেন ৭৯ হাজার আর লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান মাত্র সাড়ে ছয় হাজার ভোট। নির্বাচনে পরাজিত ৯২ প্রার্থী গত ১৪ই জানুয়ারি আলোচনা সভার আয়োজন করেন। তারা প্রশ্ন তোলেন নেতৃত্বের। সেই সঙ্গে আওয়ামী লীগ থেকে পাওয়া টাকার ভাগ না পাওয়ার কথা জানান।
দ্বিমুখী আচরণ
আওয়ামী লীগের কোর্টে দোষ চাপিয়ে চলা জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদের নেতিবাচক কথা বলে চলেছেন সব সময়। কিন্তু নির্বাচনের পর স্বেচ্ছায় বেছে নেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার পদ। নির্বাচনে যাবে কি যাবে না- এমন পরিস্থিতিতে তিনি বলেছিলেন, ভিক্ষার আসন চাই না। কিন্তু স্ত্রীর আসন নিশ্চিত হওয়ার পর চুপ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারি সুবিধা নিয়ে চালিয়েছেন নির্বাচনী প্রচারণা। অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় প্রথম দফায় অংশ নিয়েছিল দলটি। বৈঠক থেকে বেরিয়ে মহাসচিব বলেছিলেন, আমরা চাপের মুখে নির্বাচনে গিয়েছিলাম। এটা আমাদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ সমপ্রতি একটি ভিডিও শেয়ার দেন। পার্টি মহাসচিব মুজিবুল হক একটি সংসদে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, ’১৪ সালে আমার নেতা এরশাদ (সাবেক প্রেসিডেন্ট এইচ এম এরশাদ) নির্বাচনে যাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। আমরা নেতার কথা না শুনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর (সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনে এসেছিলেন। আমরা যখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে যাই তখন আওয়ামী লীগের অনেক সিনিয়র নেতা বলেছিলেন, এই চুন্নু তোমার কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে? দেশের অবস্থা দেখো না? নির্বাচন কী হবে? তোমার কী জান থাকবে, প্রাণ থাকবে? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বললেন, তোমরা নির্বাচন করো। আমরা অন্য কোনো দলকে নির্বাচনে আসতে দেবো না। এরপর আমরা নির্বাচন করলাম। আমাদের তিনজনকে মন্ত্রী দেয়া হলো। ’১৮ সালে আমরা জোট করলাম। আমরা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসার জন্য সহযোগিতা করেছি।
আওয়ামী লীগের আমলে বরাবরই তুরুপের তাস ছিল জাতীয় পার্টি। ভোটের মাঠে যাচ্ছে তাই হলেও নির্বাচনী আমেজ আনার কাজটা করে গেছে দলটি। ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পতন হয় আওয়ামী লীগের। দলটির দোসর জাতীয় পার্টি যদিও পূর্ব থেকেই আওয়ামী বিরোধী কথা বলে আসছিল। কিন্তু দলটি নির্দিষ্ট করে কোনো অপরাধ নিয়ে কথা বলতো না। মোটাদাগে দলটি দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা, অর্থ পাচার এসব নিয়ে কথা বলতো। বক্তব্যগুলো এতটাই সরলীকরণ করে বলা হতো যাতে নির্দিষ্ট কোনো আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে না যায়। আর সংসদে বিরোধীদলীয় নেতার বিরোধিতা ছিল অধিকাংশই জনতোষবাদী।
দেবর-ভাবীর দ্বন্দ্ব
জাতীয় পার্টিকে হাতে রাখতে বরাবরই কৌশল অবলম্বন করে গেছে আওয়ামী লীগ। তারা এরশাদপত্নী রওশন এরশাদকে প্ররোচিত ও ক্ষমতায় যাবার লোভ দেখিয়ে রেখেছিল। এমনভাবে পরিকল্পনা সাজায় যাতে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি কোনো হাতছাড়া হলে রওশন এরশাদকে নির্বাচনের মাঠে নামিয়ে দিতে পারে। অভিযোগ রয়েছে আওয়ামী লীগের সমর্থনের জোরে রওশন এরশাদপন্থিদের দিয়ে কাউন্সিলসহ নানা আয়োজনে যুক্ত করে। একইসঙ্গে নেতাকর্মীদের জিএম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নুর প্রতি অনাস্থা আনায় বিপাকেই পড়ে দলটি।
কী ভাবছেন নেতাকর্মীরা
দলটির একাধিক তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলেন, এখন এই দলটির আর ভবিষ্যৎ নেই। তারা আর নিজেদের এই তালিকায় নাম রাখতে চান না। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার নেতা মো. আশিকুর রহমান জাতীয় পার্টিকে মাছের গন্ধের সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, এই গন্ধ এখন হাত থেকে দূর হচ্ছে না। আমি আর রাজনীতির সঙ্গে নেই। এই দলের সঙ্গে থাকা মানে বোকামি করা। কারণ দলের নেতারা শুধু নিজেদের কথা ভেবে কাজ করেন। জিএম কাদের একজন আমলা তিনি রাজনীতিতে শিশু। আর মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু আওয়ামী লীগের দালাল। চুন্নু দলের কথা কখনই ভাবেন না। তিনি দলকে বিক্রি করতেও পিছপা হবেন না। কিশোরগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির নেতা সাদিকুল ইসলাম বলেন, আমার সারা জীবন গেছে রাজনীতি করে। এখন মনে হচ্ছে আমার গোটা জীবনটাই বৃথা। এমন একটা দলের রাজনীতি করলাম যে দলের পরিচয়টাও এখন দেয়া যায় না। আমি কখনো এমপি-মন্ত্রী কিংবা চেয়ারম্যান হওয়ার জন্যও রাজনীতি করি নাই। চেয়েছিলাম একটু সম্মান। কিন্তু জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে থাকা মানে নিজেকে হাসির পাত্র বানানো। কিশোরগঞ্জ-৬ আসন থেকে ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়া নুরুল কাদের সোহেল বলেন, জিএম কাদের বার্তা দিয়ে বলছেন ছাত্র-জনতার পক্ষে আছেন। তিনি একদিন রাজনৈতিকভাবে মাঠে নামলেন না কেন? উনি আওয়ামী লীগের সংসদ থেকে ৫ই আগস্টের একদিন আগেও তো পদত্যাগ করতে পারতেন। উনি যদি এতই আওয়ামী বিরোধী, এটা কী সংসদের সিটটা যাবার পর মনে হলো? তিনি আরও বলেন, জিএম কাদের স্বৈরাচারের মতো পার্টি চেয়ারম্যানের পদে বসে আছেন। তার কোনো যোগ্যতা নাই পদে থাকার। আমরা তাকে নির্বাচনের আগে একক ক্ষমতা দিয়েছিলাম নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার। কিন্তু তিনি কী করলেন, আমাদের মতামতের গুরুত্ব না দিয়ে নির্বাচনে গিয়ে দলের মান-সম্মান ডোবালেন।
রওশন এরশাদপন্থি জাতীয় পার্টি নেতা সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া চৌধুরী বলেন, জিএম কাদের সব সময় বলেন, তাকে জোর করে নির্বাচনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি প্রশ্ন রাখতে চাই তাহলে, তিনি কেন দেন-দরবার করলেন? আচ্ছা বুঝলাম জোর করা হয়েছে। উনার স্ত্রীকেও কী জোর করে নির্বাচনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে? জিএম কাদের নিজেই একজন স্বৈরাচার। তিনি ভেবে বসে আছেন তার ভাই চেয়ারম্যান ছিলেন এজন্য তিনিও আজীবন চেয়ারম্যান থাকবেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জিএম কাদের স্বৈরাচারী কায়দায় দল পরিচালনা করেন- এজন্য যাকে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। এজন্য আমরা রওশন এরশাদকে সামনে নিয়ে এগিয়েছি। এখন আমরা চাই জাতীয় পার্টিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ফিরে আসুক।
আওয়ামী লীগ কী জাপায় শেল্টার খুঁজছে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিংবা গণঅধিকার পরিষদের মতো দলগুলো বিভিন্ন সভা- সমাবেশে জাতীয় পার্টিকে ‘আওয়ামী লীগের পরাশক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করে। এর কারণ হিসেবে জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে আসতে পারবে না। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে আসলে আওয়ামী লীগের কিছু ভোট ও কিছু দ্বিতীয় সারির নেতা সামনে আসতে পারবেন। ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির এক নেতা বলেন, আমি ঢাকাতে রাজনীতি করলেও আমার বাড়ি রাজশাহীতে। আমার কাছে একটি ইন্টারনেট ব্যবহার করে কল আসে। বিপরীত পাশ থেকে বলা হয়, আপনি এলাকায় আসেন সামনে নির্বাচন আছে। আপনাকে নির্বাচন করার জন্য যত টাকা লাগে আমরা দেবো। আর আমাদের আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী পদপদবিতে ছিল না তাদের পদে যুক্ত করেন। এরপর তিনি না করায় তাকে ভেবে দেখার সময় দেয়া হয়।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিলাম এখন আমরা মুক্ত। আমরা এখন নিজেদের হয়ে রাজনীতিটা চালিয়ে যেতে চাচ্ছি। আমরা এখন এককভাবে এগিয়ে যেতে চাই আওয়ামী লীগ বা কোন দলের হয়ে রাজনীতির মাঠে থাকতে চাই না। রাজনীতি করতে গেলে চড়াই উতরাই থাকে। আমরা এখন দলকে সুসংগঠিত করার দিকে মনোনিবেশ করতে চাই। দলের নেতাকর্মী-জনগণের সঙ্গে কথা বলে জাতীয় পার্টিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবো।