২০২৫: নজর থাকবে ৮ বিষয়

মোজাম্মেল হোসেন | বিশেষ রচনা
ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪
২০২৫: নজর থাকবে ৮ বিষয়

চলতি বা তৃতীয় সহস্রাব্দের প্রথম সিকি শতাব্দী অতিক্রম করার মুখে আমরা। আগামী বুধবার পয়লা জানুয়ারি শুরু হতে যাচ্ছে ২০২৫ সাল। সে বছর শেষে আমরা পেরিয়ে যাবো একবিংশ শতাব্দীর এক চতুর্থাংশ। স্বাগত নতুন খ্রিষ্টাব্দ বা সাধারণ অব্দ। 
 

যিশু খ্রিষ্টের জন্মের দিন থেকে হিসাবের কারণে এই দিনপঞ্জী বা ক্যালেন্ডারের বছরকে খ্রিষ্টাব্দ (এডি বা ‘অ্যানো ডমিনি’ বা ‘প্রভুর বছর’) বলা হতো। তা এখনো বলা হয়, তবে জাতিধর্ম নির্বিশেষে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহৃত হওয়ায় ক্রমশ বলা হচ্ছে ‘কমন এরা’ (সিই) বা সাধারণ অব্দ। 
 

বাংলাদেশে ২০২৫ এসেছে সম্পূর্ণ নতুন এক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে। এই পরিবর্তনের পূর্বাভাস কয়েকদিন আগেও ঘুণাক্ষরে পাওয়া যায়নি। পনেরটি বছর সাংবিধানিক সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যেই আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনার একচ্ছত্র কর্তৃত্ববাদী শাসন চলেছে দোর্দণ্ড প্রতাপে। তিনটি জাতীয় নির্বাচন জঘন্য কারচুপি ও জবরদস্তির মাধ্যমে প্রহসনে পরিণত করে তিনি একটানা ক্ষমতায় থাকেন। জবাবদিহির অভাবে তখন নজিরবিহীন দুর্নীতি হয়। একদিকে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নতি হওয়ায় জনগণ কিছু সুফল পেয়েছে, অন্যদিকে গণতান্ত্রিক কাঠামো ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়ায় সুবিধাভোগী গোষ্ঠীগুলোর অত্যাচারে জনজীবন পিষ্ট হয়েছে।ওই স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলন অনেক বছর সফল হয়নি। বাস্তবে যে, ‘দিনে দিনে  বহু বাড়িয়াছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ’ তা-ও  সেভাবে সবার কাছে ঠাহর হয়নি। এ অবস্থায় সরকারি চাকরিতে কোটার বিরুদ্ধে ছাত্রদের একটি আন্দোলন ন্যায়সঙ্গতভাবে মোকাবিলা করতে না পারায়, পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে অনেক ছাত্র-তরুণের মৃত্যু ঘটায় মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে তেড়েফুঁড়ে এসে ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনাকে তখতে তাউস থেকে ছুড়ে ফেলে দেয়। তিনি দেশত্যাগ করেন। দেশ তিন দিন সরকারবিহীন থাকার পরে ছাত্রনেতাদের আমন্ত্রণে বিদেশ থেকে এসে ৮ই আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা পদ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 
 

ত্বরিতগতিতে হাসিনা সরকারের পতন ঘটলেও এ আন্দোলন যে হঠাৎ নয়, আগে নিপুণ পরিকল্পনা করা হয়েছিল সে-কথা স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. ইউনূস গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে বিল ক্লিনটনের গবেষণা প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্য সভায় বলেছেন। অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এই কথা তিনি সেখানে বলেন যে, ছাত্র আন্দোলনে কারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তা জনগণ জানতো না। এভাবে আন্দোলনকে সুরক্ষা দেয়া হয়েছিল। 
 

সত্যিই দেখা যায় যে, আন্দোলনটি কোটা-সংশ্লিষ্ট অরাজনৈতিক দাবিতে করা হলেও শেখ হাসিনার পতনের সঙ্গে সঙ্গে অনেক দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক পরিকল্পনা সামনে চলে আসে। মুক্তিযুদ্ধের সক্রিয় বিরোধিতাকারী ও ৫৩ বছর এ ব্যাপারে অনুতাপহীন জামায়াতে ইসলামীসহ ডজনের বেশি ইসলামী দল প্রভাব খাটানোর অবস্থানে চলে আসে। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম, স্মৃতি, ছবি এক রকম অঘোষিতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়, আর ঘোষিতভাবে ঐতিহাসিক দিবস ৭ই মার্চ, ১৫ই আগস্ট ও ৪ঠা নভেম্বরের সরকারি স্বীকৃতি বাতিল করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের নতুন চিত্রায়ণ ও নতুন ব্যাখ্যা প্রচার, দেশের সংবিধান বাতিল ও দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র ঘোষণার সুচিন্তিত পূর্বপ্রস্তুত দাবি উত্থাপিত হতে থাকে। আন্দোলনের ছাত্রনেতাদের আত্মপরিচয় গোপন রাখার মতো এই রাজনৈতিক দাবিগুলোও ৫ই আগস্টের আগে পর্যন্ত গোপন রাখা হয়েছিল। 
 

শেখ হাসিনা গণতন্ত্র নস্যাৎ করে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ অসম্ভব করে লুটেরা শাসন কায়েম করেছিলেন বলে জনগণ ঐ অধিকার ফিরে পেতে চায়। এটাই স্বাভাবিক। প্রশাসনের দলীয়করণসহ দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে বলে রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে কয়েকটি সংস্কার প্রয়োজন। সরকার দশটি সংস্কার কমিশন গঠন করে সে কাজও শুরু করেছেন। তবে রাজনৈতিক মতৈক্য ছাড়া সংস্কার কার্যকর করা সম্ভব নয় এবং জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া সংস্কার কে করবে, কার এখতিয়ার সে প্রশ্নে ইতিমধ্যেই তর্ক উঠেছে। আওয়ামী লীগ পুরোপুরিই পলাতক হয়ে যাওয়ায় অন্য বৃহত্তম দল বিএনপি স্বভাবতই নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী কিছুটা ধৈর্য ধরতে প্রস্তুত। 
 

সরকার পতনের পরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি, জনজীবনে নিরাপত্তা আসেনি, দ্রব্যমূল্য অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় শুধু গরিব নয়, মধ্যবিত্তের বিরাট অংশের মানুষ অতিশয় কষ্টের মধ্যে পড়েছে, শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ চার মাসেও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়নি, এসে গেল স্কুলের নতুন শিক্ষাবর্ষ, এর মধ্যে সম্পূর্ণ নতুন পরিস্থিতি হিসেবে ভারতের সঙ্গে  দেখা দিয়েছে সম্পর্কের অবনতি ও উত্তেজনা, দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বোধের অভাব- এই সবকিছু মিলিয়ে একটা টালমাটাল অবস্থায় এসেছে নতুন বছর। বছরটি কেমন যাবে সে প্রশ্ন পৃথিবীর সব দেশেই নিজ নিজ পরিবেশ-পরিস্থিতি, ইস্যু ও এজেন্ডা অনুযায়ী আলোচিত হয়, যদিও কেউ ভবিষ্যদ্বক্তা নয় তবু বাস্তবভিত্তিক আঁচ-অনুমান চলে। 
আসুন, আমরা দেখি ২০২৫ সালে কোন্‌্‌ কোন্‌্‌ বিষয়ে, ইস্যুতে আমরা নজর দেবো, সজাগ থাকবো। 
 

১. বিচার 
ছাত্র-জনতাকে হত্যার জন্য দায়ী করে অন্তর্বর্তী সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের মন্ত্রী, পুলিশ ও র‌্যাবসহ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের হত্যা, গুম, ও নিপীড়নের জন্য বিচার করতে বদ্ধপরিকর। এজন্য  জোর দাবি তুলছেন আন্দোলনের ছাত্রনেতারা। 
 

প্রধান উপদেষ্টা গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেন যে অপরাধ করে থাকলে ভারতে থাকা শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে অবশ্যই বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত। এর মধ্যে হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা ও শুনানি শুরু হয়েছে। ধৃত ১৩ জনকে জেলে রাখা হয়েছে। হাসিনার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগে পৃথক একটি মামলাও হয়েছে। আবার এই ট্রাইব্যুনালের বাইরে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময়ের ঘটনায় বহু থানায় ও আদালতে দণ্ডবিধিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা ও অন্যান্য মামলার সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে এবং প্রতিনিয়ত মামলা দায়ের চলছে বিধায় বলা যায় অসংখ্য লোকের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা হয়েছে। এগুলোর তদন্তসহ প্রক্রিয়া কীভাবে চলে তা দেখার বিষয়। শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে আনার বিষয়টি খুবই জটিল হবে বলে মনে করা হচ্ছে এবং ইতিমধ্যে আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হলেও সরকার এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ওদিকে লন্ডনের একজন আইনজীবী হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে হাসিনাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একটি মামলা করেছেন। তবে এই মামলার গতি মন্থর হবে এবং পরিণতি অনুমান করা কঠিন। সর্বশেষ আরেকটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে  ২০০৯ সালের বিডিআর বিদ্রোহের চক্রান্তকারী বলে শেখ হাসিনাসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে। বেশি দায়িত্বই নিচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২৫ জুড়ে তাদের এই ব্যস্ততার প্রতি মানুষের নজর থাকবে।
 

২. নির্বাচন  
ত্রয়োদশ নির্বাচন অনুষ্ঠান অন্তর্বর্তী সরকারের বড় কাজ। প্রথমদিকে নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে প্রফেসর ড. ইউনূস এবং সরকার কিছুই বলতে উৎসাহিত না হলেও বিএনপি’র এবং পশ্চিমা দেশগুলোর মনোভাবসহ পরিস্থিতির চাপে ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনসহ ‘নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে’ বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে এবং সর্বশেষ প্রধান উপদেষ্টা ২০২৫-এর শেষ বা ২০২৬-এর প্রথমার্ধে নির্বাচন হবে বলার পরে তার প্রেস সচিব আরও স্পষ্ট করে জানান যে, ’২৬-এর ৩০শে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। এ ঘোষণার প্রতি বিএনপি ইতিবাচক থেকেও নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ দাবি করছে। আবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চাপ সৃষ্টিকারী নেতারা শেখ হাসিনার শাস্তির আগে নির্বাচন নয়, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে বলে বক্তৃতা করে  বেড়াচ্ছেন। 
 

আসন্ন বছরের প্রথমভাগেই নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতি জমে উঠবে অনুমান করাই চলে এবং আওয়ামী লীগের ভূমিকা ও অবস্থান কী হবে সেটাও লক্ষ্য করার বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। 
 

৩. সংস্কার
সরকার নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান, দুর্নীতি দমন, স্বাস্থ্য, গণমাধ্যম, শ্রমিক অধিকার ও নারী বিষয়ক ১০টি যে সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন তার প্রথম ৬টির প্রতিবেদন ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই দেয়ার কথা। অধিকাংশ কমিশন তা দিতে পারবে বলে মনে হয়। কোনো কোনোটির অল্প বিলম্ব হতে পারে। বলা হয়েছে, প্রতিবেদনগুলোর ভিত্তিতে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যে আসার চেষ্টা করবেন। এতে নতুন বছরের প্রথম দুই থেকে তিন মাস লেগে যেতে পারে। এগুলোর সুপারিশ এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্যের বিষয় অনুমান করা কঠিন। নির্বাচনের ঝোঁক চলে এলে হয়তো অধিকাংশ কাজই পরবর্তী সংসদের জন্য রেখে দেয়া হতে পারে। কিছুটা উগ্রপন্থি ছাত্রনেতারা কী অবস্থান নেন এবং রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের সংঘাত বাধে কি-না সেটাও আসন্ন বছরে দেখার বিষয় হবে। 
 

৪. দ্রব্যমূল্য
হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে জনগণের ক্ষোভ বেড়েছিল নিশ্চয়ই দ্রব্যমূল্যের টানা ঊর্ধ্বগতির জন্য। ২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধের অভিঘাত গত দেড় বছরে অধিকাংশ দেশ সামাল দিতে পারলেও বাংলাদেশ ব্যতিক্রম। ২০২১-২২ অর্থবছরকে ভিত্তি ধরে ’২২-এর নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্ট, মানে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮.৮৫ শতাংশ, ২০২৩ সালে ৯.৪৯% এবং ইউনূসের শাসনে গত ৫ই ডিসেম্বর পরিসংখ্যান ব্যুরোর হাল নাগাদ তথ্যে এই নভেম্বরে তা ১১.৩৮%। খাদ্যপণ্যে তা ১৩.৮০%। আর মজুরি বৃদ্ধি ৮.১০%। ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় মানুষ খেয়ে বাঁচে কীভাবে? অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন অর্থনীতির শ্বেতপত্র কমিটির অনুসন্ধানে প্রকৃত মূল্যস্ফীতি হবে ১৫% থেকে ১৭%। 
 

প্রফেসর ইউনূস ২৫শে আগস্ট জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া প্রথম ভাষণে আইনশৃঙ্খলা ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার বলে উল্লেখ করেছিলেন। পারেননি। কতোখানি পারবেন তা দু’সপ্তাহ আগে বাজার থেকে সয়াবিন তেলের অন্তর্ধান ও দাম বাড়িয়ে প্রত্যাবর্তনেই প্রমাণ। পুরানা ব্যাধি চাঁদাবাজি, কারসাজি ও সিন্ডিকেশনে হাত দিতেই পারেন নাই। 
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর ১৪ই ডিসেম্বর আশার বাণী শুনিয়েছেন যে, আগামী জুনে সাধারণ পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ৭% ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মধ্যে ৫ শতাংশে আনা সরকারের লক্ষ্য। আসছে বছরেই গভর্নরের মুখে ফুলচন্দন পড়ুক। 
 

৫. আইনশৃঙ্খলা
৩০শে নভেম্বর ঢাকা চেম্বারের এক অনুষ্ঠানে শিল্পপতি-ব্যবসায়ী নেতারা বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীনের সঙ্গে বাহাসে লিপ্ত হন শিল্পখাতে নিরাপত্তার অভাবের জন্য। প্রকৃতপক্ষে কিছুটা উন্নতি হলেও বিভিন্ন স্থানে শ্রমিক অসন্তোষে লাগাতারভাবে অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। 
 

৫ই আগস্টের পরে সরকারবিহীন  তিন দিন সাধারণ জনজীবনে ব্যাপক বিপর্যয় না ঘটলেও তিন শ্রেণির মানুষ হামলা ও হতাহতের লক্ষ্যবস্তু হন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, হিন্দুরা ও পুলিশ। এই সময়ে কতোজন হতাহত হয়েছেন তার সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি। পরে ১৫ই জুলাই থেকে ৮ই আগস্ট পর্যন্ত গণ-অভ্যুত্থান সংশ্লিষ্ট ঘটনার জন্য কোনো মামলা হবে না বলে সরকারি সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়। ৫-৮ আগস্টের এই কার্যত দায়মুক্তির  প্রবল সমালোচনা হয়। 
গত চার মাসের বেশি সময় প্রতিহিংসামূলক হামলা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টার্গেট করে করে শিক্ষক বিতাড়ন ও ছাত্রদের মধ্যে মারামারি, অপরাধী সাব্যস্ত করে পিটিয়ে হত্যা তথা ‘মব ট্রায়াল’, সূফী মুসলিমদের মাজার, খানকা ও মসজিদে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, দফায় দফায় ছাত্র, আনসার, গার্মেন্ট শ্রমিক, রিকশাচালকদের রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন ও সংঘর্ষ, গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগ কর্মীদের বিক্ষোভ সেনা নিয়োগ করে সামলানো, সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সারা দেশে শৃঙ্খলা রাখার চেষ্টা প্রভৃতি দেখা গেছে। বহু থানার অস্ত্র লুট হওয়ায় ও জেল থেকে দুর্ধর্ষ আসামি বের হওয়ায় অপরাধ বৃদ্ধি ও জননিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ইতিমধ্যে উন্নতি হলেও পুলিশের দায়িত্ব পালন সম্পূর্ণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ২০২৫ সালেও থাকবে। ডিসেম্বরের শেষভাগে দুটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র ‘গুপ্তহত্যা’র শিকার হয়েছে বলে ছাত্রনেতাদের অভিযোগ, একাধিক জেলায় পিটিয়ে হত্যার কিছু ঘটনা এবং একজন বিতর্কিত ইসলামী নেতার গলা চড়িয়ে ‘তুরাগ নদের পানি লাল করে দেয়ার’ ঘোষণার পর তাবলীগ জামাতের দুই গ্রুপের হানাহানিতে ৪ জনের মৃত্যু প্রভৃতি চ্যালেঞ্জকে বড় করেই দেখাচ্ছে। 
 

৬. নতুন রাজনৈতিক দল
ঘোষণা অনুসারে পয়লা জুলাই গঠিত সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর নেতারা সরকার পতনের আগে পরিচয় না দিলেও পরে দ্রুতই পরিষ্কার হয় যে, তারা অধিকাংশ দক্ষিণপন্থি ও ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর ভাবধারায় লালিত। বেশির ভাগ ২০২৩ সালে গঠিত ‘গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির’ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া দুজনে ছাত্র শক্তির নেতা ছিলেন।  নিশ্চিতভাবে তথ্য যাচাই করা সম্ভব না হলেও রাজনৈতিক মহলে ধারণা আছে যে, ছাত্র শক্তি সংগঠনটি জামায়াতে ইসলামী থেকে বেরিয়ে আসা সংস্কারপন্থিদের ২০২০ সালে গঠিত ও গত ২১শে আগস্ট নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’ বা এবি পার্টির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। 
জুলাই আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড বলে খ্যাত উপদেষ্টা মাহফুজ আলম নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী দল হিজবুত তাহরীরের সদস্য বলে প্রচার পেয়েছিলেন, তবে তিনি তা দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আগে মাহফুজ মাদ্রাসায় তার শিক্ষাজীবন শুরু করেন। তিনি বেশ পড়াশোনা করেন এবং তার ভাষা ব্যবহারে আরবি ভোকাবুলারি বা শব্দমালার প্রাধান্য রয়েছে। হিজবুত তাহরীরের সদস্যরা জুলাই-আগস্টে ছাত্র মিছিলে কালেমা খচিত তাদের কালো পতাকা নিয়ে উপস্থিত ছিলেন; যার ছবি বিদেশি মিডিয়ায় প্রচার পেয়েছে। 
 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের তৎপরতায় নিয়োজিত আছেন। মিডিয়াকে তারা বলেন- যে ছাত্র আন্দোলনের প্ল্যাটফরমটিকে তারা রাজনৈতিক দলে জড়াতে চান না। কেউ ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচনে দাঁড়াতে পারে। তাদের সহযোগী হিসেবে গত ৮ই সেপ্টেম্বর আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক কমিটি এখন দ্রুত সারা দেশে জেলা-উপজেলা কমিটি বানাচ্ছে। এই কমিটিগুলো ভবিষ্যতে নতুন রাজনৈতিক দলের সাংগঠনিক ভিত্তি জোগাতে পারে। মাহফুজ আলমের নেতৃত্বে গঠিত একটি লিয়াজোঁ কমিটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের কাজে বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ ও আলোচনা করছেন। তিনি বিএনপি’র সঙ্গেও কথা বলেছেন। নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারি ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন দু’জনেই এবি পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। 
 

তিন দশকের বেশি সময় পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষ ও সংঘাতের রাজনীতি চর্চাকারী পরিবারকেন্দ্রিক দুই সাবেকী দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র বিপরীতে শিক্ষিত তরুণদের পরিশীলিত একটি আধুনিক রাজনৈতিক দলের উদ্ভবকে স্বাগত জানানোই যায়। কিন্তু এই তরুণদের মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু, বাঙালি সংস্কৃতি, উদারনৈতিক গণতন্ত্র ও সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের প্রতি উদাসীনতা এবং সাম্প্রদায়িক মনস্কতার যে পরিচয় আমরা পাচ্ছি, ১৯৭২-এর সংবিধান বাতিল করে রাষ্ট্রের চরিত্র বদলানোর যে আকাঙ্ক্ষা তাদের তা দেশবাসীর কাছে কতোটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাবে সে প্রশ্ন সঙ্গত। 
 

এখানেই আরেকটি প্রশ্ন আসে। ওরা যে পরিবর্তন আনতে চান তা টেকাতে হলে ওদের দলকে আগামী নির্বাচনে বড় জয় পেতে হবে। ওরা যদি জনগণের ইচ্ছার ওপর ছেড়ে না দিতে চান তাহলে উপায় কি? অল্পদিনের নতুন দল কেন বিজয়ী হবে? আমাদের দেশের ইতিহাসেই দৃষ্টান্ত রয়েছে। ‘জনতার চোখ’ ম্যাগাজিনে আমি একটি নিবন্ধ লিখে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলাম যে, পাকিস্তানে আইউব খান এবং বাংলাদেশে জিয়াউর রহমান ও এরশাদ তিন সামরিক শাসক ক্ষমতায় বসে তথাকথিত গণভোটের মাধ্যমে প্রথমে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন, তারপরে দল বানিয়ে কারচুপির ভোটে বা ভোট ডাকাতি করে ঐ দলকে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জিতিয়ে এনেছেন যেন তারা যা-কিছু করেছেন তা রেটিফাইড হয় ও তারা শাস্তির হাত থেকে বেঁচে যান। এবার সামরিক শাসন নেই, তবে ক্যান্টনমেন্টে বসে দল বানানো আর ক্ষমতার প্রসাদ নিয়ে বানানো প্রায় একই কথা।  
নতুন দল যদি হয় তা ২০২৫-এর প্রথম প্রান্তিকেই হতে পারে। চোখ রাখুন। 
 

৭. আওয়ামী লীগ
অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেশান্তরী হওয়ার পর মুহূর্তেই লাখো লাখো সদস্যের আওয়ামী লীগ দলটি কর্পূরের মতো উবে যায়। তারা পলাতক, দেশান্তরী, নিষ্ক্রিয়। সমর্থকরা হতভম্ব, নির্বাক। দেশের স্বাধীনতায় নেতৃত্বকারী পুরানা দলের জন্য এটাও বিস্ময়কর। তবে ভারতে বসে শেখ হাসিনা সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দিচ্ছেন। দেশে আওয়ামী লীগের কর্মীরা হামলার মুখে পড়েও বিচ্ছিন্নভাবে উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। যেমন ১০ই ডিসেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবসে ছাত্রলীগ গুলিস্তানে জমা হবে বলে ফেসবুকে প্রচার হতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়ে, অতিরিক্ত পুলিশ-বিডিআর মোতায়েন হয়।  এই অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া অন্তর্বর্তী সরকার ও ছাত্রনেতাদের জন্য বিব্রতকর। ছাত্রলীগকে আইনত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’সহ বিভিন্ন অপরাধের মামলা দিয়েও, তাকে ফিরিয়ে এনে বিচার করার কথা বলা হলেও, ভারতের সঙ্গে সেই প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিক শুরু করা হয়নি। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগ অলক্ষ্যে থেকেও অতিমাত্রায় উপস্থিত আছে। আওয়ামী লীগের উচিত নিজেদের শাসনকালের দোষ স্বীকার করে বিনীত হয়ে জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে রাজনৈতিক কাজ শুরু করা- একথা অনেক মানুষ বললেও আওয়ামী নেতৃত্ব সে পথে হাঁটছেন না। তারা কোনো অনুতাপ দেখাচ্ছেন না। দীর্ঘ অভিজ্ঞতার অধিকারী আওয়ামী নেতারাই ঠিক করবেন তারা কোন পথে যাবেন। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ দল নয়। তা করাও সহজ নয়। ছাত্রনেতারা দাবি করছেন। অন্য রাজনৈতিক নেতারা অবশ্য সে কালিমা গায়ে মাখতে চান না। নিষিদ্ধ করলেও সামাল দেয়া সহজ নয়। নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হলে আওয়ামী লীগাররা নানাভাবে সক্রিয় হতে পারেন। ফলে ২০২৫ ‘আওয়ামী লীগের বছর’ হয়ে উঠতে পারে। নজর রাখুন। 
 

৮. ধর্মীয় সংখ্যালঘু
স্বাধীন বাংলাদেশর ৫৪ বছরের ইতিহাসে বর্তমানেই প্রথম ধর্মীয় সংখ্যালঘু, প্রধানত হিন্দুদের বিষয়টি সবচেয়ে বড় আকারে সামনে  এলো। সরকার পরিবর্তনের পরে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগার ও অল্পবিস্তর হিন্দুদের বাড়িঘর আক্রান্ত হওয়ায় ভারতের মিডিয়ায় জোরালো প্রতিক্রিয়া হলো। সরকারি পর্যায়েও সম্পর্কের টানাপড়েন ও জটিলতা হলো। এই প্রথম সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিজস্ব ব্যানারে অক্টোবরে চট্টগ্রামে দু’টি ও নভেম্বরে রংপুরে তিনটি বিশাল সমাবেশ হলো। এত বড় সমাবেশ আগে কখনো হয়নি। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য পৃথক আইনি-প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার কয়েক দফা দাবি জানানো হলো। এর পরই ঐ সমাবেশের নেতা কৃষ্ণভাবনার আন্তর্জাতিক ভাববাদী সংঘ ‘ইসকন’-এর সাবেক সাধু চিন্ময় কৃষ্ণ দাশকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই গ্রেপ্তার যে বিবেচনাপ্রসূত হয়নি তা অচিরেই প্রমাণ হয়। দেড় মাস আগে দায়ের করা পতাকা অবমাননার একটি মামুলি মামলায় রাজদ্রোহের অভিযোগে জামিন না দিয়ে তাকে কারাগারে রাখা হয়। সনাতনীদের বিক্ষোভের মধ্যে  আদালত প্রাঙ্গণে এক মুসলিম আইনজীবী নিহত হন। কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশের কূটনৈতিক অফিসগুলোয় বিক্ষোভ-হামলায় দু’দেশের উত্তেজনা নজিরবিহীনভাবে বাড়ে। অবশেষে ৯ই ডিসেম্বর ঢাকায় দু’দেশের পররাষ্ট্র সচিবদ্বয়ের বৈঠকে স্বাভাবিক সম্পর্কের অঙ্গীকার ব্যক্ত হয়েছে, তবে দিল্লিতে শেখ হাসিনার সক্রিয় থাকা বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি, অস্বস্তিও দূর হয়নি। 
 

স্বাধীনতার জন্য সম্প্রদায় নির্বিশেষে বাংলাদেশের মানুষ একাত্তরের জনযুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে। তবে মানতেই হবে এদেশে হিন্দুরা কখনো সার্বিকভাবে ভালো থাকেনি। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সরকার যে ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ করেছিল তা স্বাধীন বাংলাদেশে নামে ‘অর্পিত সম্পত্তি’ হলেও হিন্দুদের ক্রমাগত নীরব উচ্ছেদ ও জমি-জিরাত হারানোর প্রক্রিয়া কখনো বন্ধ হয়নি। এর প্রমাণের অধিক সত্য হলো হিন্দু জনসংখ্যার ক্রমহ্রাস। ১৯৭৪ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জনশুমারিতে হিন্দুর অংশ ছিল ১৩.৫ শতাংশ। সর্বশেষ ২০২২ সালে তা ৮.৫৪ শতাংশ। এটা কী দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়? আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি ছাড়া অন্যান্য যেসব জাতিসত্তার মানুষ বাস করে তারা সংখ্যালঘু। তারা কি বাস্তবে সমান নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিয়ে বসবাস করে? 
 

ধর্ম-সম্প্রদায় ও জাতিগত পরিচয় নির্বিশেষে সমান নাগরিক অধিকারের আধুনিক দেশ বানাতে হলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের নতুন মতলবি বয়ান না ঝেড়ে, খিলাফতের অবাস্তব খোয়াব ছেড়ে ধর্মনিরপেক্ষ উদারনৈতিক গণতন্ত্র ও জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রের পথে হাঁটতে হবে। দেখা যাক, ২০২৫ সাল আমাদের কোন্‌ পথে এগিয়ে নেয়। 
 

বিশেষ রচনা'র অন্যান্য খবর