সা ম্প্র তি ক

লন্ডনে যেমন আছেন খালেদা জিয়া

কিরণ শেখ | এক্সক্লুসিভ
জানুয়ারী ১৮, ২০২৫
লন্ডনে যেমন আছেন খালেদা জিয়া

বৃটেনের ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই চিকিৎসা শুরু হয়েছে। দেয়া হচ্ছে থেরাপি। ছেলেসহ নাতনিদের দীর্ঘদিন পর পাশে পেয়ে মানসিকভাবে খুবই খুশি, উৎফুল্ল ও উজ্জীবিত বোধ করছেন। তার স্বাস্থ্যের রুটিন পরীক্ষা প্রতিদিনই চলছে। পুরো চিকিৎসা শুরুর আগে চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা। পরীক্ষা-নিরীক্ষাও শেষ হয়েছে। রিপোর্ট নিয়ে শুক্রবার লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকদের মেডিকেল বোর্ড ও বাংলাদেশ থেকে আসা চিকিৎসকদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে। এতে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। বৈঠকে রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করা হয়। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ছেলে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দুই পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান ও সৈয়দা শর্মিলা রহমান এবং নাতনিসহ স্বজনদের সান্নিধ্যে সময় কাটাচ্ছেন খালেদা জিয়া। তারেক রহমান মা’কে হাসপাতালে সময় দিচ্ছেন। তার বাসা থেকে রান্না করা খাবার খাচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল, দুপুর, বিকাল ও সন্ধ্যায় এই খাবার হাসপাতালে নিয়ে আসেন তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমান নিজে। খালেদা জিয়া তার দুই ছেলের তিন মেয়ে (তারেক রহমানের মেয়ে জাইমা রহমান, আরাফাত রহমান কোকোর মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমান) সার্বক্ষণিক দাদির সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন। ওদিকে খালেদা জিয়ার খোঁজখবর নিতে ক্লিনিকের সামনে প্রতিদিন ভিড় করছেন বিএনপি’র স্থানীয় নেতাকর্মীরা।


বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে লন্ডনে যাওয়া ৬ সদস্যের চিকিৎসক টিমের সদস্যদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, লন্ডন ক্লিনিকে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া চিকিৎসকদের সঙ্গে বসে খালেদা জিয়ার লিভার, কিডনি, হৃদযন্ত্রসহ বিভিন্ন রোগের হিস্ট্রি জেনেছেন এবং সেসব চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করে সে সম্পর্কে বিস্তারিত অবহিত হয়েছেন।
সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা খবর নিয়েছি, উনি (বেগম খালেদা জিয়া) মানসিক দিক দিয়ে এবং শারীরিক দিক দিয়ে, আলহামদুলিল্লাহ আগের চাইতে অনেকটা ভালো আছেন।


বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ আল মামুন ‘জনতার চোখ’কে বলেন, ৮ই জানুয়ারি লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই ম্যাডামের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। বর্তমানে উনার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষাও শেষ হয়েছে। রিপোর্ট নিয়ে শুক্রবার লন্ডন ক্লিনিকের চিকিৎসকদের মেডিকেল বোর্ড এবং বাংলাদেশ থেকে আসা চিকিৎসকদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এতে রিপোর্টগুলো পর্যালোচনা করা হয়। এরপর পরবর্তী চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।


গত ৭ই জানুয়ারি রাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির নিজের রাজকীয় এয়ারলাইন্সের বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্সে ঢাকা ছাড়েন বেগম খালেদা জিয়া। ৮ই জানুয়ারি সকালে তিনি হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছান। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনকে লন্ডনে ডেভেনশায়ার প্লেসে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল ‘লন্ডন ক্লিনিকে’ ভর্তি করা হয়। সেখানে লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডির তত্ত্বাবধানে তিনি চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকা ছাড়ার দিনে গুলশানের বাসা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ সড়কে অবস্থান নিয়ে বিপুল শুভেচ্ছা জানান। বিদেশ যাত্রার আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
৮ই জানুয়ারি সকালে হিথ্রো বিমানবন্দরে পৌঁছালে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান ছেলে তারেক রহমানসহ স্বজনরা। সেখানে তারেক রহমানের মা’কে জড়িয়ে ধরার আবেগঘন ছবি খবরের শিরোনাম হয়। তারেক রহমান বরাবরের মতো নিজে গাড়ি চালিয়ে খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যান। সর্বশেষ ২০১৭ সালের জুলাইয়ে মা-ছেলের সর্বশেষ সাক্ষাৎ হয়েছিল। 
২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি দুর্নীতি মামলায় সাজা দিয়ে খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়। ওদিনই বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারেক রহমানকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০২০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয়। কিন্তু দুই শর্তের কারণে তিনি কার্যত বন্দি ছিলেন বাসায়। শুধু হাসপাতালে যেতে পারতেন। পরিবার এবং দলের পক্ষ থেকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার জন্য বার বার অনুমতি চাইলেও তাতে সাড়া দেয়নি আওয়ামী লীগ সরকার। দল এবং স্বজনরা বারবার আবেদন জানালেও তাতে কর্ণপাত করেনি ফ্যাসিস্ট সরকার। 


৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিস সহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে আইসিইউতে রেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে তাকে দীর্ঘ সময় চিকিৎসা নিতে হয়েছে। 

এক্সক্লুসিভ'র অন্যান্য খবর