চলছে ঐতিহাসিক জুলাই মাস। বছরখানেক এই মাসটায় সারা দেশে নির্মমভাবে চলেছে গণহত্যা। ছাত্র-জনতার তাজা রক্ত দিয়ে রঞ্জিত হয়েছে রাজপথ। বছরখানেক পর ‘পথ হারাচ্ছে কী বাংলাদেশ?’ সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কাজী জেসিনের উপস্থাপনায় ‘টাইম লাইন বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানে যোগ দেন সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাহেদ-উর-রহমান।
আলোচনায় যোগ দিয়ে সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, সরকার মব থামানোর জন্য যে কর্মকাণ্ড করছে, এর থেকে হাস্যকর আর কিছু হতে পারে না। তার মতে বিএনপি যেভাবে অপরাধ থামানোর চেষ্টা করছে, তাতে ১০০ বছরেও পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে গণ-অভ্যুত্থানের সরকার মানতে নারাজ। তিনি বলেন, এটা ড. ইউনূসের সরকার। এই সরকারের ৮০ শতাংশের সঙ্গে গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা বা কোনো সম্পর্ক নাই। নির্বাচন ছাড়া সমস্যার সমাধান হবে না এবং ড. ইউনূসের একটা পলিটিক্যাল পার্টি আছে, তিনি কীভাবে নির্বাচনে নিরপেক্ষ থাকবেন বলে প্রশ্ন তোলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ-উর-রহমান প্রশ্ন রেখে বলেন, ড. ইউনূস কী শেখ হাসিনা? ডিক্টেটররা পরিবর্তন আনতে চান না। তিনি কেন উপদেষ্টা পরিষদে পরিবর্তন আনছেন না? তিনি বলেন, বিপ্লব বিপ্লব করে আমরা গণ-অভ্যুত্থানের ১২টা বাজিয়েছি। যার কারণে অনেক সুফল পাইনি। ড. ইউনূস কপালের উপর ছেড়ে দিয়ে দেশ চালাতে চাইছেন। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার আমরা সমানভাবে চাই না। যার ব্যাখ্যা তিনি দিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, বিএনপি ফেল করলে বাংলাদেশে একটা ডিজাস্টার নেমে আসবে। আর নির্বাচনে না যাওয়ার কথা বলে একটা গ্রুপ টেকনিক্যালি ঝামেলায় ফেলতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
মিটফোর্ডের নৃশংস হত্যার বিষয়ে মাসুদ কামাল বলেন, দল তো আর খুন করে না। কিছু লোক করে। যারা করে তারা দলের লোক। অনেকে হয়তো রাজনীতিও করে না। ওই দলের ছত্রছায়ায় থাকে। বিপদে পড়লে দল তাকে রক্ষা করে। এই লোকগুলো তো হাসিনার আমলে মারতে পারতো না। তখন পারতো যুবলীগ, ছাত্রলীগেরা। ওই লোকেরা এখন লুকিয়ে আছে। বিএনপি এখন ক্ষমতায় নাই। কিন্তু সারা দেশে যত চাঁদাবাজি হচ্ছে। হয় বিএনপি করছে কিংবা বিএনপি’র লোকেরা করছে কিংবা বিএনপি’র নামধারীরা করছে। পুলিশ চিন্তা করছে আমি যে থামাবো এরা দুইদিন পর ক্ষমতায় আসবে। দুইদিন পর এরা আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। একই জিনিস জামায়াত-এনসিপিও করছে। আমি তো মনে করি এনসিপি সরাসরি এখন সরকারি দল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের প্রতি কী মনে করে? তাদের প্রতি পারসেনশন তারা সরকারের ঘনিষ্ঠ। আমি এদের কথা না শুনলে বিপদ হতে পারে। তিনি বলেন, কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, তাদের সামনে ঘটেছে কিন্তু প্রতিবাদ করার সাহস পাই নাই। সাহস যে আসলে পাই নাই তার প্রমাণ সে সাংবাদিককে বলছে কিন্তু নাম বলে নাই। কেউ ৯৯৯-এও ফোন করে নাই। এই সাহসটা দেবে সরকার। এটা সরকারের ব্যর্থতা। সরকার যে মব থামানোর কর্মকাণ্ড করছে, এর থেকে হাস্যকর আর কিছু হতে পারে না। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে গঠিত কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ-উর- রহমান বিএনপি’র বিপক্ষে হওয়া মিছিলের বিষয়ে বলেন, মিছিলটা বিএনপি’র বিরুদ্ধে হয়েছে। কিন্তু হওয়া উচিত ছিল সরকারের বিরুদ্ধে। সরকারের একজন ছাত্র উপদেষ্টা বললেন, ‘প্রস্তর যুগে স্বাগত। কেউ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেবেন না। ধন্যবাদ।’ একটা আনন্দ আনন্দ ভাব। অথচ এক বছর ধরে আপনি ক্ষমতায়। দেশ যদি প্রস্তর যুগে যায় আপনাদের জন্য গেছে। এটুকু ভাবার ক্ষমতা আমাদের উপদেষ্টাদের নাই। বিএনপি চাঁদাবাজি, খুনোখুনি করবে না; এটা আপনি এক্সপেক্ট করতে পারেন। একটা স্টেট-গভর্মেন্ট এটা এক্সপেক্ট করবে না। ফোর্স আছে, তদন্ত আছে, আদালত আছে। আমাদের উন্নয়ন বাজেট ২ লাখ কোটি টাকা। সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকা হচ্ছে অপারেশনাল বাজেট। সরকার চালাতে এই খরচ আছে। আমি আপনাকে পুষছি আপনি এগুলো ঠেকাবেন। দীর্ঘদিন ঠেকাননি বলেই এই জায়গায় এসেছে। এই স্ট্যাটাস এনসিপি দিতে পারে। যেহেতু তারা রাজনীতি করছে। তারপরও এটা এক্সট্রিম হয়েছে। এটা একটা বীভৎস বিরাজনীতিকরণের বিষয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার মাঝে মধ্যে ভিডিও আসে- এই তুমি কী দিয়ে ভাত খাইছো। নামাজ... সহজ-সরল মানুষ। ওনার এগুলো কাজ? উনি আবার কৃষি উপদেষ্টাও। কেন ওনাকে পরিবর্তন করা হয় না? ড. ইউনূস কী শেখ হাসিনা? শেখ হাসিনা কাউকে পরিবর্তন করতো না। সরকার চেষ্টাও করছে না। শেখ হাসিনা পরিবর্তন করতেন না; কারণ প্রমাণ করতে চাইতেন তিনি ঠিক। ডিক্টেটররা পরিবর্তন করেন না। ভয়ের সংস্কৃতির বিষয়ে বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে যখন আমরা একত্র হয়েছিলাম, সেই সাইকোলজি এখন নেই। আর এই সাহস থাকবেই বা কেন? বাস্তব জীবনে আমরা এতটা সাহসী নই। জীবন বিপন্ন হতে পারে। আহত হলে ভালো চিকিৎসা করোনো হবে এই গ্যারান্টি নেই। বিচার তো পরের কথা। ’২৪-এ আমাদের ম্যাজিক্যাল মোমেন্ট এসেছিল। ’৭১-এ-ও এই মোমেন্ট এসেছিল। ’৭৩ সালে ‘আবার তোরা মানুষ হ’ সিনেমা বানাতে হয়েছে। ’৭১-এ প্রশিক্ষিত মিলিটারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। মাসুদ কামাল বিএনপিবিরোধী মিছিলের বিষয়ে বলেন, এই মিছিলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে কোনো স্লোগান নেই। দায়তো তাদের। এখানে বিএনপি’র লোক হতে পারে। এদের থামানো বিএনপি’র বিষয়। থামাতে না পারলে সেটা বিএনপি’র ব্যর্থতা। তারা যেভাবে থামাচ্ছে এই প্রক্রিয়ায় ১০০ বছরেও অপরাধ থামবে না। তিনি বলেন, পুলিশ প্রশাসন তো হাসিনার প্রশাসন। সবাইকে তো সরানো যাবে না। সরালে সব কলাপস করবে। বলা হচ্ছে অমুক লোকটা আওয়ামী দোসর। আমার প্রশ্ন আওয়ামী দোসর না কে? আওয়ামী দোসরদেরও পুরস্কৃত করা হয়েছে। এই সরকার গণ-অভ্যুত্থানের সরকার না। এটা ড. ইউনূসের সরকার। ড. ইউনূস তো গণ-অভ্যুত্থানে ছিল না। গণ-অভ্যুত্থানে সামনে কিছু লোক ছিল। তারা নিজেদের নেতা দাবি করে বলেছে, এই লোকটাকে আনতে হবে। উনি যাদের নিয়ে আসছেন তাদের কার এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল। এই সরকারের ৮০ শতাংশের সঙ্গে গণ-অভ্যুত্থানের চেতনা বা কোনো সম্পর্ক নাই। অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে জাহেদ-উর-রহমান বলেন, বাংলাদেশে এত বেশি সমর্থন নিয়ে কোনো সরকার হয়নি। ড. ইউনূস আসায় কোনো প্রশ্ন আসেনি। আমার মতে শুরুতে ভারতের যে চাপ হতে পারতো উনি অত্যন্ত সফলভাবে মোকাবিলা করেছেন। বিপ্লব বিপ্লব করে আমরা গণ-অভ্যুত্থানের ১২টা বাজিয়েছি। সুফল বেহাত করা হয়েছে। আমরা কিছু সংস্কার, কিছু পরিবর্তন করবো, করে এই পথে হাঁটা শুরু করবো। মুহূর্তেই শুনলাম এই সংবিধান ফেলে দাও। কেন শপথ শহীদ মিনারে হয়নি। এসব করতে করতেই মাঠটাকে নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। এই সরকার এগুলো হ্যান্ডেল করে নিতে পারেনি। সংস্কার একটা শিক্ষিত সচেতন গোষ্ঠীর চাওয়া। কিন্তু ডেইলি রুটিন কাজ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সেটা করতে পারছে না। সরকার কেন ব্যর্থ হচ্ছে? উত্তরে তিনি বলেন, সরকার আসলে সিরিয়াস কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। সেনাবাহিনী কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নিয়ে মাঠে আছে। সেনাবাহিনী মাঠে থাকা অবস্থায় এই ঘটনা ঘটছে। সরকার তো কিছু ট্রাই করবে। এই ব্যক্তিকে দিয়ে হচ্ছে না আরেকজনকে দায়িত্ব দেয়া। ব্রি. সাখাওয়াত হোসেনের একটা মন্তব্য খারাপ লেগেছে- তাকে মুহূর্তে সরিয়ে ফেলা হলো। ওনাকে বলছি তা না অন্য কাউকে দিয়েও তো ট্রাই করা যায়। স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে নিয়েও একই অভিযোগ আছে। প্রধান উপদেষ্টাকে একজন সম্পাদক উপদেষ্টাদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তাদেরকে কী বলবো? আমার নিজের অবস্থাই তো ভালো না। উনি বলছেন, যেটা করছি লেগে গেলে লেগে গেল। যদি না লেগে যায় তাহলে আমাদের কপাল খারাপ। উনি কপালের উপর ছেড়ে দিয়ে উনি দেশ চালাতে চাইছেন। এনসিপি প্রধান নাহিদ ইসলাম মার্চ মাসে রয়টার্স এবং এএফপি ইন্টারভিউ দিলেন। তখন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছিল। তিনি বললেন, দেশের পরিস্থিতি ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়া সম্ভব না। এখন ফেব্রুয়ারি তো বেশি দূরে না। এখন কেউ যদি পাথর দিয়ে মারে। থানায় হামলা হয়... একটা চ্যানেলে বিএনপি’র গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে নিয়ে টকশো করেছি। তিনি বলেছেন, বিএনপি’র অন্তর্কোন্দল নিয়ে মারামারি-আহত হওয়া নিয়ে ওনারা তালিকা নিয়ে থানায় গেছেন এইভাবে মামলা করতে হবে। বিএনপি আহ্বান জানাচ্ছে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। বিএনপি রিলেটেড অপরাধগুলোতে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। বিএনপি আরও খারাপ হোক এটা চাওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি দুটো থানায় আক্রমণ হয়েছে। জামায়াত আমীর পাটগ্রামে থানায় হামলার কথা বলেছেন ওটায় বিএনপি আছে বলে। কিন্তু আরেকটি থানাতে যে হামলা হলো সেটা বলে নাই। তিনি বলেছেন, থানায় যদি হামলা হয় তাহলে কীসের নির্বাচন।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন বলেছেন, অদৃশ্য শত্রু দৃশ্যমান হচ্ছে। এ বিষয়ে মাসুদ কামাল বলেন, এই ধরনের কাজে সরকারের একটা প্রচ্ছন্ন সমর্থন আছে এটাও বলেছেন। অদৃশ্য শত্রু ওনার দলের মধ্যেও আছে। ঘরেরটা আগে খুুঁজুক। ব্যক্তিগতভাবে ওনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। উনি অনেক কিছু চেষ্টা করছেন। কিন্তু চেষ্টা ও কাজ হওয়া এক নয়। ওনার দলের অবস্থা ভালো না। কোনো কাজ হলে বহিষ্কার করা হচ্ছে। কিন্তু এই বহিষ্কারে কেউ তো ভয় পাচ্ছে না। ভয় পায় না কারণ এখানে অনেক ভাই দাঁড়ায় যায়। কারণ তারা জানে নির্বাচনের সময় তাকে কাজে লাগবে। বহিষ্কারাদেশ থাকবে না। তিনি দেশে আসলে পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে। অনেকে বলে নিরাপত্তার সমস্যা। নির্বাচনের সময় আসবেন না। জুজুর ভয়ে আতঙ্কিত হলে ভালো কথা না। সাধারণ মানুষ অকুতোভয় লিডার দেখতে চায়। বাংলাদেশে রাজনীতিতে দুটো গ্রুপ। এক গ্রুপ চায় যত দ্রুত নির্বাচন। আরেকটা গ্রুপ যত দেরিতে হয়। নির্বাচন দেরিতে হলে সরকারের লাভ ১০টা ফাইলে সাইন হবে। তবে নির্বাচন ছাড়া কোনো সমস্যার সমাধান হবে না। আরেক প্রশ্নের জবাবে জাহেদ-উর-রহমান বলেন, মিটফোর্ডের ঘটনার সময় চাঁদপুরে, খুলনাতেও একটা ঘটনা ঘটেছে। খুলনার প্রসঙ্গে বলেন, এই হত্যার একটা প্যাটার্ন আছে রগ কাটা। ওই ভদ্রলোককে কুয়েটে অস্ত্র হাতে দেখা গেছে। এরপর বিএনপি তাকে বহিষ্কার করে। চাঁদপুরে ধর্ম নিয়ে যেটা ঘটে... উনি ধরা দিয়েছেন বলে ওনাকে ধরা হয়েছে। সরকার এই গ্রুপটাকে একদম ঘাঁটাতে চায় না। ব্লগার হত্যাকাণ্ড নিয়ে গ্রাফিতি আঁকা হয়েছে সেটা মুছে ফেলা হয়েছে। হ্যাঁ তাদের কয়েকজন ধর্ম নিয়ে বীভৎস কথাবার্তা লিখেছে। এগুলো অনেককে আহত করেছে। কিন্তু এদেরকে হত্যা করা যাবে তা নয়। তার মানে সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার আমরা সমানভাবে চাই না।
তিনি বলেন, বিএনপি’র অপরাধ-ভুল আছে। বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য বিএনপি’র একটা ইতিহাসের রোল আছে। বিএনপি ফেল করলে বাংলাদেশে একটা ডিজাস্টার নেমে আসবে। শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের পতনের পর বিএনপি একমাত্র পাওয়ারফুল মধ্যপন্থি দল। তার বিপরীতে ডানপন্থি একটা শক্তি মাথাচাড়া দিচ্ছে। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন। ইসলামী আন্দোলনের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি কিছুদিন আগে একটা ইন্টারভিউতে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই তারা আসতে চান। যদি আসতে পারেন, বাংলাদেশে শরিয়া কায়েম করবেন এবং আফগানিস্তানের মতো দেশ বানাবেন। আমাদের সামনে কিন্তু এই ঝুঁকিগুলো আছে। এখন বিএনপি’র অপরাধ করতে গিয়ে, বিএনপি’র অপরাধের আলোচনায় আমরা বিএনপিকে শেষ করে দিতে চাই, এটা বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য ডিজাস্টার তৈরি করবে। মাইনাস টু এর একটা আলোচনা দীর্ঘদিন থেকে ছিল। বাংলাদেশে যদি একটা ধর্মীয় রাজনৈতিক জোট বা দল বা কিছু উগ্রবাদী, বাংলাদেশে আফগানিস্তান বানাবো, এই ঘটনা যখন বাংলাদেশের ভেতরে ওঠে, এটা অসাধারণভাবে হেল্প করে ভারতকে। বাংলাদেশে যখন এ ধরনের জিনিস মাথাচাড়া দেবে, তার ডমেস্টিক পলিটিক্সে সুবিধা হবে। সে তার এই হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি করবে, সে বাংলাদেশের উপর চাপ তৈরি করতে পারবে। সো আমাদের মহাবিপদ আছে এবং ডেসপাইট অল দ্য ক্রিটিসিজম, বিএনপিকে সমালোচনা করেই বিএনপিকে এই দেশের পলিটিক্সের মধ্যে রাখতে হবে। না হলে আমাদের সামনে এই বিপদ অপেক্ষা করছে।
মাসুদ কামাল দ্বিমুখী ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে বলেন, এখন আওয়ামী লীগ মাঠে নাই। বিএনপি’র বাইরে যারা আছে, সবাই মিলে এক ধরনের ঐক্যবদ্ধ হইছে যে বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া যাবে না। বিএনপি তো চায় যে আমি ক্ষমতায় যাবো। এটা তার পলিটিক্স। দুঃখটা হচ্ছে এইখানে যখন সরকার যুক্ত হয়ে যায়। এই সরকার তো কোনো দলের সরকার না। সরকারের উপরে আমরা, উনি যখন বলেন- আমি ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নির্বাচন দেবো। তখন তো আমরা বিশ্বাস করতে চাই। উনি কখনোই বিএনপি’র প্রতি বায়াসড ছিলেন না। উনার বেসিকটাই হলো মাইনাস টু ফর্মুলার একজন উদ্যোক্তা। উনি এই পরিবারতন্ত্র, আওয়ামী লীগ-বিএনপি, এই দুইটাকেই উনি পছন্দ করেন না। আমি আগে যেটা জানতাম আর কি, ইদানীং তার মধ্যে কোনো চেঞ্জ আসছে কিনা জানি না। আরেক প্রশ্নের জবাবে জাহেদ-উর-রহমান বলেন, শাপলা যদি প্রতীক দিতে হয় সেটা নাগরিক ঐক্যকে দিতে হবে। তারা এটা অনেক আগে চেয়েছে। শাপলা না পেলে এনসিপি শোরগোল করবে। তারা অলরেডি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের কথা বলেছে। তিনি বলেন, পৃথিবীর খারাপ কাজের কোনো কোনো ব্যক্তির স্বার্থ আছে। একটা মানুষের মৃত্যুতেও কারও একটা বিজনেস জড়িত আছে। সমাহিত করার কেনাকাটা আছে। নির্বাচন পেছানোয় কিছু লোকের স্বার্থ আছে। নির্বাচন বাধা দিতে হয়তো পারবে না। কিন্তু তারা নির্বাচনে না যাওয়ার কথা বলে টেকনিক্যালি ঝামেলায় ফেলতে পারে।
নির্বাচন নিয়ে মাসুদ কামাল বলেন, মব, মারামারি হচ্ছে, এটাও কিন্তু তারা প্রমাণ করতে চাচ্ছে যে, এরা পারবে না। এই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পর্যাপ্ত নয়। নির্বাচনের দিন সেনাবাহিনী ভূমিকা রাখতে পারে। আমি যদি পুলিশ দিয়ে না পারি, আমি পারছি না, তো সেনাবাহিনী নামবে। অসুবিধাটা কি আছে?
তিনি বলেন, তারা নির্বাচনে যাবে আল্টিমেটলি। কারণ না গেলে এটা ড. ইউনূসের জন্য খুবই একটা বিব্রতকর অবস্থা হয়ে যাবে। এভাবে আসলে হওয়া উচিত না। কিন্তু এটা ড. ইউনূসের জন্য খুবই একটা বড় ধরনের বিব্রতকর অবস্থা হয়ে যাবে। কিন্তু যদি কেউ না যায়, এটাকে ইস্যু করে নির্বাচন পেছানোর কথা আসতে পারে। আমি এই সরকারের অধীনে নির্বাচন হোক, এইটা আমি চাই না। আমি ড. ইউনূসকে নিরপেক্ষ মনে করি না। এটা তো আমি অনেক আগেই বলেছি আপনাকে। ড. ইউনূসের একটা পলিটিক্যাল পার্টি আছে এখানে। কাজেই তিনি কীভাবে নিরপেক্ষ থাকবেন?