দ্য স্পেকটেটরের প্রতিবেদন

এমপি হিসেবে টিউলিপের দিন হয়তো শেষ হয়ে আসছে

জনতার চোখ ডেস্ক | মতামত
ডিসেম্বর ৭, ২০২৫
এমপি হিসেবে টিউলিপের দিন হয়তো শেষ হয়ে আসছে

বৃটেনে বর্তমানে নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বাঁচাতেই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন টিউলিপ সিদ্দিক। কিন্তু এমপি হিসেবে তার দিন হয়তো শেষ হয়ে আসছে। বৃটেনে তার রাজনৈতিক উত্থানে বাংলাদেশি যেসব শক্তি সহায়তা করেছিলেন, তারা এখন আর ঢাকায় নেই। বৃটেনে থাকা বাংলাদেশি অভিবাসী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকরাও এমন একজনকে সমর্থন দেয়া কঠিন মনে করবেন- যিনি তাদের এতটা প্রকাশ্যে ত্যাগ করেছেন। অনলাইন দ্য স্পেকটেটরে প্রকাশিত এক মন্তব্য প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছেন দ্য ডিপ্লোম্যাটিকের পাকিস্তানভিত্তিক সংবাদদাতা কুনওয়ার খুলদুনে শাহিদ। ‘টিউলিপ সিদ্দিক ক্যান্ট টার্ন হার ব্যাক অন বাংলাদেশি পলিটিক্স নাউ’Ñ শীর্ষক প্রতিবেদনে তিনি আরও লিখেছেন, বাংলাদেশের আদালত সোমবার বৃটিশ লেবার দলের এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। অনুপস্থিত থাকায় রায়ে তাকে দণ্ডিত করা হয়েছে। এ বছরের শুরুর দিকে দুর্নীতি দমন বিষয়ক বৃটিশ প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করা টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, ঢাকার বাইরে তার পরিবারের জন্য মূল্যবান জমির একটি প্লট নিশ্চিত করতে তার খালা, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘প্রভাবিত’ করেছিলেন। গত বছরের ব্যাপক গণবিক্ষোভের পর শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। বর্তমানে তিনি ভারতে নির্বাসিত অবস্থায় আছেন। টিউলিপ সিদ্দিক দুর্নীতির অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। দাবি করেছেন তার বিরুদ্ধে প্রমাণ জালিয়াতি করা হয়েছে। সোমবার তিনি বলেন, রায়টিকে ‘উপহাসের সঙ্গে’ দেখা উচিত। এই রায় দিয়েছে একটি ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’। সাংবাদিক কুনওয়ার আরও লিখেছেন, ২০০০-এর দশকের শেষ দিকে ক্যামডেন কাউন্সিলের নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে হাসিনার আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করতেন টিউলিপ সিদ্দিক। এমনকি বিবিসিতেও তার খালার দলের পক্ষ থেকে মুখপাত্র হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বৃটেনে টিউলিপের রাজনৈতিক উত্থান শুরু হয়। ২০১০ সালে তিনি ক্যামডেন কাউন্সিলর নির্বাচিত হন এবং ২০১৫ সালে হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন আসনে এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে হাসিনার মস্কো সফরের সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সঙ্গে তার একটি বৈঠক বাংলাদেশি রাজনীতির সঙ্গে তার সমান্তরাল সম্পৃক্ততার আরেকটি ইঙ্গিত দেয়। এমনকি তিনি বৃটিশ এমপি থাকাকালেও আওয়ামী লীগের সমাবেশে বক্তব্য দেয়া অব্যাহত রাখেন।
 

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার শাসনামলে আওয়ামী লীগ কর্মীরা বৃটেনে টিউলিপের প্রচারণায় কাজ করেছেন। হাসিনার সঙ্গে রাজনৈতিক ও পারিবারিক সম্পর্ক থেকেও তিনি উপকৃত হয়েছেন। ২০২৪ সালে জানা যায়, আওয়ামী লীগের এক নেতার মালিকানাধীন প্রায় দুই মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের একটি প্রাসাদে বসবাস করছেন। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত অর্থ পাচারের অভিযোগের মুখোমুখি। তবে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ সব ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে। এই অর্থের অনেকটাই বৃটেনে পৌঁছেছে। সেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পত্তি চিহ্নিত হয়েছে। বৃটেনের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি বৃটেনে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ১৭০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের সম্পদও জব্দ করেছে।
 

তবুও বৃটেনে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক শক্তি থাকা সত্ত্বেও এবং দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারগুলোর একটির সদস্য টিউলিপ সিদ্দিক বৃটিশ রাজনীতিতে নিজেকে ‘বঞ্চনার শিকার’ হিসেবে তুলে ধরে লেবার দলে নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়ে তুলেছেন। হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন আসনে ‘কাণ্ডজ্ঞানহীন পক্ষপাতিত্বের’ শিকারÑ এমন অভিযোগ তিনি বহুবার করেছেন। তার খালা যখন বাংলাদেশের ওপর কঠোর কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করে তার চর্চা করছিলেন, তখন টিউলিপ নিজেকে একজন ভিকটিম হিসেবে বৃটেনে তুলে ধরেন। বাংলাদেশে একজন অপহৃত ব্যক্তির পরিণতি নিয়ে তার খালা শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলার বিষয়ে টিউলিপকে অনুরোধ করেন সাংবাদিকরা। জবাবে তাদেরকে টিউলিপ বলেনÑ ‘যেহেতু আমি বাংলাদেশি নই’ তাই এ বিষয়ে তাদেরকে অত্যন্ত সতর্কভাবে কথা বলার পরামর্শ দেন। সাংবাদিক কুনওয়ার লিখেছেন, টিউলিপ সিদ্দিক তার অবস্থানকে ব্যবহার করছেন বলে মনে হয় না, বিচার নিয়ে প্রচারÑ প্রচারণার কথা বলছেন না। তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কথা বলছেনÑ এমন প্রমাণও নেই। সংখ্যালঘুরা আক্রমণের শিকার হচ্ছেন, রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীদের গুম ও নির্যাতন করা হচ্ছে। বাংলাদেশে আক্রান্ত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের জন্যও তার কোনো সহানুভূতির কথা শোনা যায় না। এ সব নেতাকর্মীর বৃটেনের মতো জীবনযাপনে বিলাসিতা নেই। 
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- পশ্চিমে যেসব অভিবাসী উচ্চবিত্ত এলিট পরিবারের সদস্য হয়েও ‘পরিচয়ভিত্তিক নিপীড়নের শিকার’ দাবি করেন, তাদের ব্যাপারে ভোটারদের আরও সতর্ক হওয়া উচিত।

 

মতামত'র অন্যান্য খবর