স ম্পা দ কী য়

সেই জুলাই, এই জুলাই

কাজল ঘোষ | মতামত
জুলাই ১৯, ২০২৫
সেই জুলাই, এই জুলাই

দিন যায়। কথা থাকে। ইতিহাসের ডালপালা ছড়ায়। নতুন নতুন বয়ান যুক্ত হয়। আসে নতুন নতুন শব্দবিন্যাসও। চব্বিশের ছাত্র আন্দোলন এক বিশাল বাঁক পরিবর্তনের সূচনা। রাজনীতির গতি-প্রকৃতির এক জটিল ধারাপাত। ফিরে দেখা জুলাইয়ে রাজপথ কাঁপছে স্লোগানে, ব্লকেড, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড, গ্রাফিতি, ‘মার্চ টু ঢাকা’। হাজারো ছাত্র-জনতার রক্তে রঞ্জিত রাজপথ। অসংখ্য পরিবারের কান্না। এরপরের ঘটনা তো ইতিহাস। হাসিনার ক্ষমতার কেন্দ্র চুরমার। ৫ই আগস্টের পর অন্য এক বাংলাদেশ। অমিত সম্ভাবনার ইচ্ছেঘুড়ি। ৮ই আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ। একের পর এক চ্যালেঞ্জ। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। সংবিধান ও নির্বাচন কমিশন সংস্কার। প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে সংস্কার। গঠিত হলো ঐকমত্য কমিশন। ধীরে ধীরে নানান রাজনৈতিক মতবিভেদ প্রকাশ হতে লাগলো। এই লেখাটি যখন লিখছি সেই সময়টাতে অভ্যুত্থানে জড়িত পক্ষগুলো একে অন্যের মধ্যে লড়াইয়ে। সরকারের ভেতরে আরেক সরকার। ড. ইউনূসের সামনে সবচেয়ে বড় করণীয় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন। তা নিয়েও বিভক্ত দলগুলো। নয়া বিতর্ক উস্কে দেয়া হয়েছে পিআর পদ্ধতি সামনে এনে। ইসলামী দলগুলো এক ছাতার নিচে অবস্থান নিয়েছে। নয়া নয়া মেরূকরণ এই এক বছরে দানা বেঁধেছে। বিপ্লবের পর যে স্বস্তি এবং শান্তির সুবাতাস বইয়ে যাবে তা কেবল অলীক স্বপ্নেই মিলিয়ে যাচ্ছে। এক বছরে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ‘মবোক্রেসি’। সারা দেশে মব জাস্টিসের নামে মানুষ অপদস্থ হচ্ছে, অনেক স্থানেই প্রাণ পর্যন্ত বিপন্ন হয়েছে। সেই তালিকাও লম্বা। যা এই সরকারের সময় অনাকাঙ্ক্ষিত। কিন্তু যে ভাষায় সরকার সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টারা কথা বলছেন তা মবকে উৎসাহ-ই দেয়া হয়েছে। প্রেসার গ্রুপ বলে মবকে চালিয়ে দেয়ায় মবকে দমন করা যায়নি। এই জুলাইয়ে যখন চব্বিশের জুলাই নিয়ে সারা দেশে এনসিপি পদযাত্রা করছে তখনই ঘটে গোপালগঞ্জে তাদের ওপর হামলা। এ নিয়ে রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এনসিপি’র পক্ষ থেকে গোয়েন্দা দুর্বলতা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার বিষয়টি সামনে আনা হয়েছে। অবশ্য রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এনসিপি’র পদযাত্রা কেন গোপালগঞ্জে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ হলো তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। সেখানে গোলাগুলিতে ৪ জন নিহত হয়েছেন। যা ড. ইউনূস সরকারের জন্য ভালো দৃষ্টান্ত নয়। যার ফলাফল সামনের দিনগুলোতে দেশকে নতুন কোনো রাজনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দেবে কিনা তা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।

 

মতামত'র অন্যান্য খবর