উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন ও কার্যক্রম দীর্ঘ তিন দশক স্থগিত রেখে প্রায় বিনষ্ট করে ফেলার পরে দেশের নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সেটা শুরু হলো। এটি নিঃসন্দেহে সুখবর। তবে অত্যন্ত বেদনাদায়ক পটভূমিতে এই নতুন অধ্যায়ের শুরু এবং এখনো আনন্দিত হওয়ার মতো বেশি কিছু ঘটেনি। তবুও হাজার হাজার নবীন ছাত্রছাত্রীর জীবনে প্রথম ভোট দিয়ে নিজেদের নেতা নির্বাচন করার মতো ঘটনায় তাদের উৎফুল্ল ব্যস্ততা ও হাসিমুখ দেখে ভালো লাগে। আমরা আশায় থাকবো নতুন অধ্যায়ের জন্য।
৯ই সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা ডাকসু’র নির্বাচন হয়েছে। ১১ই সেপ্টেম্বর হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জাকসু’র নির্বাচন। এখানে উল্লেখ করা যায় যে, এই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ‘ছাত্র সংসদ’-এর পরিবর্তে ‘শিক্ষার্থী সংসদ’ নামকরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। এতে ছাত্র ও ছাত্রীর পরিবর্তে ইংরেজি ‘স্টুডেন্ট’-এর মতো একটি উভলিঙ্গবাচক বা লিঙ্গনিরপেক্ষ একটি শব্দ পাওয়া গেল যা সামপ্রতিক সময়ে সংবাদমাধ্যমে খুব ব্যবহৃত হচ্ছে। এবং এতে সংক্ষিপ্ত নাম বা ইংরেজির অ্যাব্রেভিয়েশনে ‘জাকসু’ অপরিবর্তিত রাখতে অসুবিধা হলো না। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘রাকসু’ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের তারিখ তিনবার এদিক-ওদিক করে স্থির হয়েছে ২৫শে সেপ্টেম্বর। এরূপ তারিখ পরিবর্তনের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা এবং নির্বাচন পরিচালনাকারী শিক্ষকদের অদক্ষতা প্রকাশ পায়। কারণ দ্বিতীয়বার স্থির করা হয়েছিল এমন একটি দিন যেদিন দুর্গাপূজার ষষ্টি। ধর্মীয় বিষয়ে অসংবেদনশীলতা আর কাকে বলে? পরে তারিখটি বদলানো হয়। এ দফায় ঘোষিত সর্বশেষ নির্বাচন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২ই অক্টোবর।
এই নির্বাচনগুলোর প্রতিনিয়ত সংবাদ গণমাধ্যমে এত বেশি প্রচারিত হয়েছে যে, তথ্য মোটামুটি সকল পাঠকই জানেন। আমরা এখানে মোটা দাগে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়ে পর্যবেক্ষণ উপস্থিত বা আলোকপাত করবো।
প্রথমেই আসে ডাকসু নির্বাচনের চমক লাগানো ফলাফল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের ইতিহাসে ডাকসুতে প্রথমবার রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির ডাকসুতে নির্বাচিত হয়। আর তারা এত বেশি ভোটে কেন্দ্রে ও হল বা ছাত্রাবাসগুলোর সংসদে একচেটিয়াভাবে জয়লাভ করে যে, তা শুধু সর্বমহলে বিস্ময় সৃষ্টি নয়, বলা যায় আক্ষরিক অর্থেই দেশকে চমকে দিয়েছে। ডাকসুতে বিজয়ী সহ-সভাপতি বা ভিপি শিবিরের আবু সাদিক কায়েম পেয়েছেন ১৪ হাজার ৪২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি অনুসারী জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আবিদুল ইসলাম খান পেয়েছেন ৫ হাজার ৭০৮ ভোট। ডাকসু’র ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টির দখল পেয়েছে শিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা। ভিপিসহ ১৫টি সম্পাদকীয় পদের ১২টিতে তারাই। ৩টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী। ১৩টি সদস্যপদের ১১টিতে শিবির এবং একজন বামপন্থি ও একজন স্বতন্ত্র। বিস্ময়করভাবে বিএনপি অনুসারী ছাত্রদল একটি আসনও পায়নি। শূন্য। স্মরণ করিয়ে দেয়া প্রয়োজন যে, শিবির ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অনুসারী ছাত্র সংগঠনগুলোর প্যানেল দলীয় নামে নয়; যেমন শিবিরের প্যানেলের নাম ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’, ছাত্রদলেরটি ‘বাংলাদেশপন্থি শিক্ষার্থী ঐক্য’। সব সংগঠনের প্যানেলই অনুরূপ বিভিন্ন নামে, ডাকসুতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার নিয়মে। প্যানেলের নামেই লিফলেট বা প্রতিশ্রুতিপূর্ণ ইশতেহার ছাপানো হয়। প্যানেলের এরূপ নামকরণ হলেও প্রার্থীদের সবাই চেনে মূল সংগঠনের পরিচয়ে। মিডিয়ায় সংবাদ পরিবেশনে রাজনৈতিকভাবেই সংগঠন ও প্রার্থীদের তুলে ধরা হয়। সাধারণভাবে ‘শিবির সমর্থিত’ বা ‘ছাত্রদল সমর্থিত’ কাগজে লেখা ও সমপ্রচারে বলা হলেও কোনো কোনো মিডিয়া সরাসরি ‘শিবিরের জয়’, ‘ছাত্রদলের পরাজয়’ বলেই প্রচার করে, যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো দলিলে এই পরিচয় থাকে না। বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর জোটবদ্ধ দু’টি প্যানেলের নাম আছে ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ ও ‘অপরাজেয় ৭১-অদম্য ২৪’। এর প্রথমটির সাধারণ সম্পাদক বা জিএস প্রার্থী ছাত্র ইউনিয়নের মেঘমল্লার বসু না জিতলেও তৃতীয় অবস্থানে থেকে ৪ হাজার ৯৪৯ ভোট পেয়েছেন। আর দু’টি চমক হলো শামীম হোসেন নামে এক চৌকস ছাত্র ভিপি পদে একা লড়ে ৩ হাজার ৮৮৩ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে এবং গত বছর হাসিনা সরকারের পতন ঘটানো ঐতিহাসিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা ভিপি পদে ৩ হাজার ৩৮৯ ভোটে রয়েছেন। এই ছাত্রী ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য’ নামে এক প্যানেল গড়ে নেতৃত্ব দেন। দল ছাড়া স্বতন্ত্রদের এমন উদ্যোগও ডাকসু’র ইতিহাসে অনন্য।
স্বতন্ত্র বিষয়ে আরেকটি চমকপ্রদ তথ্য হলো এবারের ডাকসু নির্বাচনে শিবির বিপুল ভাবে বিজয়ী হলেও সামগ্রিকভাবে দলগত প্রভাবের বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সংখ্যা বেড়েছে এবং তাদের প্রতি বা প্রার্থীদের ব্যক্তিগত যোগ্যতার প্রতি সাধারণ ছাত্রদের আকর্ষণ বেড়েছে। এই একটি তথ্যই যথেষ্ট যে, ১৮টি হল সংসদের ভিপি, জিএস ও এজিএস এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদে মোট ৫৪ জনের মধ্যে ৫৩ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী। দলগুলো এদের অনেককে অবশ্য সমর্থন দিয়েছে। তবে স্বতন্ত্র হিসেবে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও বিজয়টা উল্লেখযোগ্য। উমামা ও শামিমের মতো আশিকুর রহমান, মহিউদ্দিন রনি প্রমুখ একগুচ্ছ স্বতন্ত্র প্রার্থী তাদের বক্তব্য, কৌশল ও প্রচারে অভিনবত্ব ও বুদ্ধির দীপ্তি দেখিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
ডাকসু এবং একদিন পরে অনুষ্ঠিত জাকসু নির্বাচন কতোটা সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে তা নিয়ে তর্ক উঠেছে এবং তর্ক চলছে। ডাকসুতে শেষ বেলা উমামা ফাতেমা কারচুপির অভিযোগ তুলে বর্জন করেছেন এবং ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল বর্জন না করলেও বিস্তর হৈ-হল্লা করেছে। জাকসুতে চারটি প্যানেল এবং দায়িত্বরত কয়েকজন শিক্ষকও অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগে শেষবেলা বর্জন করেছেন। এই লেখার সময়ে জাকসু’র গণনা শেষ হয়নি। ডাকসুতে কয়েকটি ব্যালটে আগেই ভোটের টিক দেয়া ধরা পড়া, যে কলমে ভোটার টিক দেবেন সে কলম না থাকায় বলপেন ব্যবহার করায় গণনা মেশিনে রিডিং ভ্রান্তি প্রভৃতি অভিযোগ এবং জাকসুতে অতিরিক্ত ব্যালট ছাপানো, সন্দেহজনক প্রতিষ্ঠানকে ব্যালট ছাপানোর দায়িত্ব দেয়া, গণনাকালে সকল প্রতিনিধি না থাকাসহ পরিচালনাগত ত্রুটি-বিচ্যুতির অভিযোগ উঠেছে। ধর্তব্য প্রমাণ হাজির করা হয়নি, যেমনটা আগেও আমাদের জাতীয় ও স্থানীয় অনেক নির্বাচনে দেখা গেছে যে, হৈচৈ করলেও পরে আর আইনিভাবে প্রমাণ করতে অভিযোগকারীরা এগিয়ে আসেন না। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাপকভাবে জামায়াতপন্থি শিক্ষক যে দায়িত্ব লাভ করেছেন তাতে সন্দেহ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান নিজেই ১৯৮০’র দশকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অত্যন্ত সক্রিয় শিবিরকর্মী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলতি নির্বাচনে একটি পরিবেশগত আধিপত্য কর্তৃপক্ষ বলবৎ করতে পারে তা বিশ্বাসযোগ্য। তবে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে যে বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী ভোট দিয়েছে তাতে ঐ আধিপত্য সত্ত্বেও নির্বাচনে আমলে নেয়ার মতো কারচুপি হয়েছে বলা যায় না। বরং জাকসু’র পরে বাকি দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়া নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধতে পারে।
যে প্রশ্নটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে তা হলো- শিবিরের এমন ভূমিধস বিজয় ঘটলো কেন ও কীভাবে? আর আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি জিতবে বলে প্রায় সবার ধারণা সেখানে তাদের ছাত্রফ্রন্ট ছাত্রদলের এমন করুণ অবস্থা হলো কেন? নিষিদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগ অনুপস্থিত থাকায় ক্যাম্পাসে তো ছাত্রদলেরই আপাত প্রাধান্য। আওয়ামী শাসনের গত ১৫ বছর ছাত্রদলও ক্যাম্পাস ছাড়া, কিন্তু সে তুলনায় শিবির তো গত দুই দশক প্রকাশ্যে কোথাও কাজ করতে পারেনি, সারা দেশে জামায়াত ও শিবিরের কোনো অফিসও খুলতে পারেনি।
এই জয়-পরাজয়ের কারণ নিয়ে প্রায় সর্বত্রই তুমুল আলোচনা চলছে। আরও চলবে। সবটুকু বুঝতে সময় লাগবে। এই মুহূর্তে এটা মানতেই হবে যে, গত বছরের জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনের পটভূমি, গভীরতা ও অভিঘাতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, জেন-জি বলে অভিহিত তরুণ বয়সীদের অধিকাংশের মনন ও চিন্তায় বড় পরিবর্তন এসেছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের জানা-শোনা, বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাদের সংযোগ এই পরিবর্তনের একটি বড় কারণ। ইতিহাস-ঐতিহ্য, আচরণ ও সংস্কৃতির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন ঘটছে। এই পরিবর্তনের স্বরূপ, এর কতোটুকু ভালো ও কতোটুকু মন্দ, তা স্থায়ী হবে কি-না ইত্যাদি পরিষ্কার হতে আরও একটু সময় নেবে। একদিকে আধুনিকতা, আবার রাজনৈতিক-সামাজিক পরিসরে ধর্মকে আনার উৎসাহ, আবার অশ্লীলতা ইত্যাদি জগাখিচুড়ি দেখে বোঝা যায় স্থিতি আসেনি। এমন অবস্থায় এই তরুণ প্রজন্মকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক স্বার্থান্বেষী নানা মহল বিপথগামী করতে পারে। এসব বিষয়ে এখনই চূড়ান্ত বলা না গেলেও উপরিস্তরে মোটা দাগে আমরা বলতেই পারি যে, জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের কাছে এবং বিএনপি ও ছাত্রদল কৌশলগত দক্ষতা, প্রস্তুতি ও সক্ষমতায় হেরে গেছে। জামায়াত-শিবির প্রকাশ্যে কাজ না করতে পারলেও দীর্ঘদিন ধরে ক্যাডারভিত্তিক রাজনৈতিক দলের স্বভাবজাত শৃঙ্খলা, একাগ্রতা ও নৈপুণ্য নিয়ে কাজ করেছে। পক্ষান্তরে গণভিত্তিক দল হিসেবে বিএনপি-ছাত্রদল ছিল ঢিলেঢালা, জনপ্রিয়তা সম্পর্কে আত্মতুষ্টিতে নিমগ্ন ও চাঁদাবাজির মতো অপ্রিয় কাজে গণভিত্তি খুইয়েছে, নিজেদের মধ্যে উপদলীয় কোন্দলে মেতেছে। তার চেয়ে বড় কথা বিএনপি আইডেনটিটি বা পরিচয় নড়বড়ে করে ফেলেছে। ১৯৯১ ও ২০০১ দুইবারই জামায়াতের সমর্থনে সরকার করতে হয়েছে। জামায়াতের সঙ্গে গভীর ঘনিষ্ঠতার জন্য আওয়ামী লীগ বিএনপিকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী বা রাজাকার বলয়ে ঠেলে রেখেছিল। খালেদা জিয়ার নির্বাচনী প্রচার হতো ‘আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে বাংলাদেশ দিল্লির অধীন হয়ে পড়বে... মসজিদে আজানের পরিবর্তে উলুধ্বনি শোনা যাবে’ ইত্যাদি। অথচ জুলাই অভ্যুত্থানের পরে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে বিএনপি রাতারাতি জামায়াতের প্রবল প্রতিপক্ষ এবং সমালোচকরা কৌতুক করে বলে, ‘বিএনপি এখন এক চিমটি ইসলাম, এক চিমটি মুক্তিযুদ্ধ, একচিমটি প্রগতিশীলতা’ মিশিয়ে ঘুটা দিয়ে আইডেনটিটির স্যালাইন বানাতে চাচ্ছে। এই পরিস্থিতি বিএনপিকে করুণ অবস্থায় ফেলেছে। তাদের প্রধান নেতা ও ঘোষিত ‘পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী’ তারেক জিয়া লন্ডন থেকে দেশে না ফেরায় ভিরু বলেও চিহ্নিত হচ্ছেন।
এবার প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকটি উল্লেখ করতে চাই। যে প্রশ্নগুলোর জবাব খুঁজতে হবে সেগুলো হলো: কেন তিন দশক ছাত্র সংসদগুলোর নির্বাচন হয়নি? সেই কারণগুলো দূর না করেই কি নির্বাচনের আয়োজন করা হলো? ডাকসু নির্বাচনে এত বেশি মিডিয়া প্রচার কেন? ঘটনার তুলনায় কি তা অতিমাত্রায় নয়? ছাত্র সংসদগুলোর মূল কাজ, উদ্দেশ্য ও মূল ভূমিকা আড়ালে রেখে কি অতিমাত্রায় রাজনীতির আলোচনা হচ্ছে না? ডাকসু-জাকসু নির্বাচনে কেন জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা সরাসরি মাঠে নেমেছেন, ক্যাম্পাসের দোরগোড়ায় এসে ভিড় করছেন? কেন ডাকসুতে শিবিরের জয়লাভে সুদূর পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী বিবৃতি দিয়ে অভিনন্দন জানায়? এটা কি স্বাভাবিক?
উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদগুলোর মূল কাজ কী? সেই কাজ গৌণ করে রেখে ছাত্র সংসদগুলোর অতিরাজনৈতিকায়ন বা ওভারপলিটিসাইজেশনে কি আমরা লাভবান হবো? এতে আমাদের শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা, ছাত্রসমাজ, দেশ ও জাতির উপকার হবে না অপকার?
পাঠকরা নিজেরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর সহজেই দিতে পারবেন। এবং এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনাই প্রয়োজন। গত ১৬ই আগস্ট ২০২৫ জনতার চোখ ম্যাগাজিনে আমি ‘ডাকসু নির্বাচন যেন ফাকসু না হয়ে যায়’ শিরোনামে একটি পর্যালোচনা লিখেছিলাম। আমি খুশি যে, আমার সংশয় ভুল প্রমাণ করে, কারচুপি-অনিয়মের কিছু অভিযোগ সত্ত্বেও ব্যাপক অংশগ্রহণের ভিত্তিতে দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়েছে। তবে প্রক্রিয়াটি চলমান, বলা যায় ছাত্র সংসদগুলোর পুনরুজ্জীবন শুরু হচ্ছে মাত্র। উত্থাপিত প্রশ্নগুলো নিয়ে আমার পর্যবেক্ষণ আমি জনতার চোখ-এর পরবর্তী সংখ্যায় লিখবো আশা করি।