ফেসবুক থেকে

সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে আনু মুহাম্মদ-এর দু’টি প্রশ্ন

আনু মুহাম্মদ | মতামত
অক্টোবর ২৫, ২০২৫
সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে  আনু মুহাম্মদ-এর দু’টি প্রশ্ন

একটা কথা বাজারে বেশ চালু করা হয়েছে- ‘আমরা তো আগে আওয়ামী লীগ দেখেছি বিএনপিও দেখেছি। এই বার জামায়াতকে দেখি।’ এই কথায় তথ্যগত ভুল আছে। আমরা ‘জামায়াতকে দেখি নাই’ কথাটা ঠিক না, একটু খেয়াল করলেই মনে পড়বে, আসলে ভালোভাবেই দেখেছি তাদের। ১৯৭১ সাল তার সবচাইতে বড় দৃষ্টান্ত। পাকিস্তান সামরিক বাহিনী এই  দেশে যখন ভয়ঙ্কর নৃশংস গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট চালাচ্ছে তখন তার প্রধান সহযোগী হিসেবে জামায়াত ও তার সব সংগঠনই ক্ষমতা উপভোগ করেছে। অসম্ভব মাত্রায় মানুষের ওপর ভয়ঙ্কর জুলুমে তারা দানবীয় ভূমিকা নিয়েছে।  সেজন্য লাখ লাখ মানুষ হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনের দায় তাদেরও নিতে হবে। 


৮০ দশকে প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতায় জামায়াতের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো শক্ত হয়। সে সময় হলো দখল, সন্ত্রাসের বহু ঘটনাতেও তাদের ভূমিকা আছে। রতন, কবিরসহ নিহত, রগকাটাসহ হতাহতের বহু ঘটনা তার দৃষ্টান্ত। এরপর ১৯৯১ সালে বিএনপি’র আসন ঘাটতির কারণে তাদের সমর্থন দিয়ে ক্ষমতার সহযোগী  হয় তারা। যুদ্ধাপরাধের কারণে নাগরিকত্ব হারানো  গোলাম আজম জামায়াতের আমীর হিসাবে তখনই আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৯৫-৯৬ সালে জামায়াত আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে বিএনপি’র বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। ২০০১ সালে আবার বিএনপি’র সঙ্গে জামায়াত ক্ষমতায় যায়, দুটো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় তখন ছিল তাদের হাতে। তাদের ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় র‌্যাব গঠন হয়,  আদমজী পাটকল বন্ধ করে  দেয়া হয়, বাংলা ভাইসহ সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটে, বিচার বহির্ভূত রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড ব্যাপকভাবে শুরু হয় এই সময়...।  
আওয়ামী লীগ বিএনপি সবারই নিজ নিজ কৃতকর্মের দায় নিতে হবে। জামায়াতকেও তাই।



আওয়ামী লীগের লোকজনদের কথাবার্তা রাগ উচ্ছ্বাস আক্রমণ গালিগালাজ মনোযোগ খেয়াল করলে  বোঝা যায় যে, অনেক কিছুই তারা এখন দেখতে পারছেন যা আগে তারা দেখতে পেতেন না। 
একটা উদাহরণ দেই। যেমন চট্টগ্রাম বন্দর মার্কিন পকেটের এক দেশের কোম্পানির হাতে তুলে দেবার ব্যাপারে ইউনুস সরকার মাত্রাতিরিক্ত আগ্রহ দেখাচ্ছে, জোরজবরদস্তি করছে। ইউনুস সাহেব নিজেই বলেছেন, কোনো বিরোধিতা তিনি মানবেন না, বিশেষ সহকারী বলেছেন, সিঙ্গাপুর হবে, ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত যার কাছ থেকে আগে অন্যায়ের প্রতিবাদ শোনা যেত তিনি বলছেন এটা করতেই হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বড় বোঝা তৈরি করে, লাভজনক হওয়া সত্ত্বেও, বন্দরের মাশুল বাড়ানো হয়েছে শুধু ওই কোম্পানির অতিরিক্ত মুনাফা নিশ্চিত করার জন্য। নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তার অধিকতর বিকাশ না ঘটিয়ে, সমস্যা যা আছে তা দূর করার চেষ্টা না করে, বিদেশি কোম্পানির হাতে বন্দর তুলে দেয়া হচ্ছে, কোনো দরপত্র ছাড়া। দেশে-বিদেশে আওয়ামী লীগের লোকজনের বিরুদ্ধে আরও কঠোর আন্দোলন হচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।  জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে তাদের এরকম প্রতিবাদী সুর খুব ভালো লাগছে। শুধু একটা বিষয় তাদের মনে করিয়ে দেই যে, দরপত্র ছাড়া এই একই বিদেশি কোম্পানির হাতে এরকমভাবেই বন্দর তুলে দেবার কাজ শুরু করেছিলেন শেখ হাসিনা নিজেই, ২০২৩ সালে। ইউনুস হাসিনার অসমাপ্ত কাজই সমাপ্ত করতে মরিয়া। আমরা অবশ্যই এর প্রতিবাদ করেছি, করছি এবং করবো। 
এরকম ঘটনা আরও আছে। এখানে শুধু এটুকু বলতে চাই যে, এই ব্যক্তিরা যদি আগেও এসব অপরাধী তৎপরতার বিরুদ্ধে একটু প্রতিবাদের সুর তুলতেন তাহলে দেশের এবং তাদের এই অবস্থা তৈরি হতো না! 

মতামত'র অন্যান্য খবর