হাসু আপার সংখ্যালঘু ইস্যুও মাঠে মারা গেল। অবশ্য কিছুটা উত্তেজনা ছড়াতে পেরেছিল। এই যা। কিন্তু আপার ফাঁদে পড়ে ভারত যে কতো হেয় হয়েছে তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে তারা। কারণ বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারাই বলছে- এই ইস্যুর পেছনে ষড়যন্ত্র আছে। ভারত না জেনে শুনে এতে পা দিয়েছে। এ ছাড়া উত্তেজনার বশে ভারতের যেসব ব্যবসায়ী বাংলাদেশিদের খাবার দেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন তারাও এখন হায় হায় করছে। যে সব ডাক্তার চিকিৎসা দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন তারা এখন রোগীর অভাবে কাতর। এ থেকে বের হতে অন্য ডাক্তারদের দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছেন। আরও কতো কী ঘটছে সেখানে। মার্কেটগুলো ক্রেতাশূন্য। হোটেলগুলোর রুম ফাঁকা পড়ে আছে। পর্যটনে ভাটা পড়েছে। সবই হয়েছে বাংলাদেশিদের অভাবে। এ অবস্থা হবে ভারত হয়তো কখনো ভাবেনি। তাই ভারত হয়তো এখন গান গাইছে-ও আমার দরদী/আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় চড়তাম না/ভাঙা নৌকায় চড়তাম না আর/ওই দূরের পাড়ি ধরতাম না/তোর নব লাগ পা নিজের বেশা/ওই নায়ে বোঝাই করতাম না...।
প্রিয় হাসু আপা, আপনার জন্য ভারত এমন বিপদে পড়েছে। এখন আপনিই বলুন, তারা কি আর আপনার পাশে দাঁড়াবে। নিশ্চয় না। কেন এত তাড়াহুড়ো করতে গেলেন আপনি? জানি, ক্ষমতার স্বাদ ভুলতে পারছেন না। পাওয়ারের ক্ষমতা মনে করে আপনি হেই হারিয়ে ফেলছেন। আপনার অঙ্গুলি হেলনে এখন আর কেউ উঠে বসে না। ইস আফসোস হয় আপনার জন্য। আপা, আপাগো কথায় বলে বেশি বাড় বেড়ো না, ভেঙে পড়ে যাবে। আপনি এত বাড় বেড়েছিলেন যে ভেঙে পড়তে হয়েছিল। কেন গো আপা? এখন নির্জন ঘরে বসে এসব কী একটু ভাবেন? একটু দেখুন তো ভেবে আপনার চারপাশে কতো চাটুকার, কথাকার ছিল। আপনার চারপাশে কতো তৈলমর্দনকারী ছিল। আপনাকে তেল মারতে মারতে আকাশে নিয়ে ঠেকিয়েছে। যারপর আর যাওয়ার জায়গা নেই। এমতাবস্থায় একেবারে ধপাশ। কথায় বলে না আপা, সকাল বেলার ধনীরে তুই/ফকির সন্ধ্যা বেলা। আপনার বেলায় এমনটাই হয়েছে। আসলে আপা এটাই বাস্তবতা। এ বাস্তবতা আপনাকে মানতেই হবে। আপনি জেনেশুনে বিষ পান করেছেন। এতে কারও কোনো দোষ নেই। দল চালিয়েছেন নিজের মতো করে। নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন অন্যায় কাজ করতে। আপনার দলের কেউ অন্যায় করলে আনন্দিত হয়েছেন। চমৎকার আপনার চরিত্র। এ চরিত্র দিয়ে পরিবারই চালানো যায় না। আপনি চালিয়েছেন রাষ্ট্র। কীভাবে সম্ভব হয়েছে আল্লাহ মালুম।
মনে পড়ে আপা, আপনার আরেকটি গণহত্যার কথা? কি যে বলি? কেন মনে পড়বে না। সব তো আপনারই খেলা ছিল। সাতক্ষীরাসহ খুলনাঞ্চলে আপনার ইশারায় গণহত্যা চালিয়েছিলেন। গ্রামের পর গ্রামে অভিযান চালিয়ে মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছেন। সাতক্ষীরার সেই ঘটনা এখনো দগদগে ঘা হয়ে আছে সেখানকার মানুষের। এই গণহত্যা চালানোর পেছনে কি কারণ ছিল আপা? সেখানকার মানুষ আল্লামা সাঈদীর বিরুদ্ধে দেয়া ট্রাইব্যুনালের রায়ের প্রতিবাদ জানিয়েছিল। এই এক সাঈদীকে নিয়ে আপনার কতো ভয় ছিল। তাকে সাজা দিয়েও স্বস্তিতে থাকতে পারলেন না। প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিলেন আপনার পুলিশ বাহিনী। ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্দেশ দিলেন পুলিশের পাশে থাকার জন্য। সাতক্ষীরার নির্মম নির্যাতনের চিত্র দেখে তখন গোটা দেশ শিহরে উঠেছিল।
আপা, আপাগো, চোখ বুঝলে কি এসব এখন দেখতে পান। স্বপ্নে কি নির্যাতিতরা আপনাকে দেখা দেয়? বড় জানতে ইচ্ছে করে- তারা আপনাকে কি বলে? আপনি কি তখন কুঁকড়ে উঠেন? কথায় বলে আপা, ইটটি মারলে পাটকেলটি খেতে হয়। আপনি আপনার জামানায় লন্ডনে নির্বাসিত তারেক রহমানের বক্তব্য-বিবৃতি যেন মিডিয়ায় প্রকাশিত না হয়, সে ব্যাপারে আদালতের মাধ্যমে নির্দেশ দিয়েছিলেন। দেখলেন তো এখন। আপনার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচারে একই নিষেধাজ্ঞা এসেছে আদালত থেকে। এখন কী বলবেন আপনি?
হাসু আপা, আপনি স্বাধীনতার ঘোষক সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ভাবে তুলে ধরতেন সমাজে। তাকে রাজাকার বলতেও ছাড়েননি। বলেছেন পাকিস্তানি চরও। শুধু কি তাই? বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, বীরউত্তমকেও রাজাকার উপাধি দেয়া হয়েছে আপনার দল থেকে। কিন্তু আপনার আশেপাশে যে রাজাকারের মজমা সেটা জায়েজ ছিল আপনার কাছে। বেছে বেছে রাজাকার কিংবা রাজাকার পুত্রদের নিয়োগ দিয়েছেন বিভিন্ন স্থানে। আর তা দেখে মুক্তিযোদ্ধারা আক্ষেপ করেছে। কি বিচিত্র আপনার রূপ? মুখে রাজাকার, রাজাকার বলে ফেনা তুলতেন আর অন্তরে লালন করতেন রাজাকারদের। সব জায়গায় তাদের এগিয়ে রেখেছিলেন আপনি। দেশে প্রথম আপনার হাত ধরেই রাজাকারের গাড়িতে জাতীয় পতাকা উঠে। আবার আপনার আমলেই মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় যে রাজাকার তালিকা প্রকাশ করে এরমধ্যে আশি ভাগই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর নাম। এ নিয়ে যে কতো হইচই হয়েছে তা আপনিই জানেন। শেষমেশ প্রকাশিত তালিকা স্থগিত করে নতুন করে তালিকা করার ঘোষণাও দিয়েছিলেন।
সোমবার দেখলাম, আপনি ভারত থেকে লন্ডনে আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু সেখানেও আপনি সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে মাতামাতি করেছেন। আপনার আমলে কতো হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যে নিঃস্ব হয়েছে। নির্যাতিত হয়েছে। দেশছাড়া হয়েছে তার হিসাব কি আপনি জানেন? আপনার দলের লোকজন বলে, হিন্দু দেশে থাকলেও আওয়ামী লীগের লাভ। দেশ ছাড়লেও আওয়ামী লীগের লাভ। কারণ দেশে থাকলে ভোট পাবে। দেশ ত্যাগ করলে জায়গা-জমি, ভিটা পাবে। এ অবস্থায় আপনার সংখ্যালঘু কার্ড কতোটুকু উপকারে আসবে? ভারতেরই কণ্ঠ শিল্পী কবীর সুমন বলেছেন ভারত থেকে বাংলাদেশের হিন্দু-মুসলমান সম্পর্কে মিথ্যা প্রচার হচ্ছে। ওপার বাংলার খ্যাতিমান গায়ক, গীতিকার, সুরকার, কবি, লেখক ও সাংবাদিক কবীর সুমন তার ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে এ কথা বলেন। তিনি লেখেন, ‘আমি হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি। কিন্তু আমি মানুষ হতে চাই। মুসলমানরা আমার ও আমার পরিবারের ওপরে অত্যাচার করেনি জেঠু। আমার প্রণাম নিবেন। কথাগুলো একটু আগে আমায় লিখে জানিয়েছেন, আমার স্নেহভাজন এক নবীন বাংলাদেশি বন্ধু।’ তার নাম আমি প্রকাশ করছি না। মাঝেমাঝে তিনি কলকাতায় এসে আমার সঙ্গে দেখা করে যান। তার পরিচয় জানলে আমার দেশে তার কপালে কী জুটবে কে জানে।’এই সংগীতশিল্পী লিখেছেন, ‘ভারত থেকে যারা বাংলাদেশের মুসলমান আর হিন্দুদের সম্পর্কে মিথ্যা কথা প্রচার করে চলেছে, তারা জেনে রাখুক, মিথ্যা প্রচারে শেষ পর্যন্ত কোনো কাজই হয় না। পশ্চিমবঙ্গের সন্দেশখালি এবং আরজি-কর নিয়ে অকথ্য অনর্গল মিথ্যা প্রচার যেমন প্রচারকদের কোনো সুবিধাই ডেকে আনেনি।’ কবীর সুমন ভারতীয় হয়ে যা বলেছেন, আপনি সেই ভারতে বসে তার উল্টো সুর গাইছেন। আপা, আপনার এ কথা কে বিশ্বাস করবে।
আপাগো আরেকটি উদাহরণ দেই- আপনি পালিয়ে যাওয়ার পর আপনার সুবিধাভোগী এমপি, মন্ত্রী, দলীয় পদধারী সব নেতা বাংলাদেশ থেকে উধাও হয়ে যায়। কিন্তু জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব কেন পালালেন? এর কোনো মাজেজা খুঁজে পাচ্ছি না।
হাসু আপা, এখনো সময় আছে লাইনে আসেন। দেখবেন আপনার দল কোনো না কোনো সময় আবারো দাঁড়াবে। ক্ষমতায় থাকাকালে এমনিতেই যে শিক্ষা দিয়ে গেছেন তার রেশ এখনো বইতে হচ্ছে। আপনার গভীর চিন্তার ফসল গায়েবি মামলা এখনো দেশের বিভিন্ন জায়গায় হচ্ছে। এতে আপনার দলের নেতাকর্মীরা আসামি হচ্ছেন। কথায় বলে-আপনি যা করবেন তা আবার আপনার কাছেই ফেরত আসবে। এমনটাই হচ্ছে।
একটি অনুরোধ করবো আপা, মনে চাইলে রাখবেন। জানি আপনি জীবনে কারও অনুরোধ রাখেন না। তারপরও সাহস করে বলে ফেললাম। পারলে মনটাকে সুন্দর করুন। পরিষ্কার করুন। দেশবাসীর কাছে আপনার ষোল বছরের কৃতকর্মের জন্য দুই হাত করজোড় করে ক্ষমা প্রার্থনা করুন। এতে হয়তো দেশবাসীর মন কিছুটা গললেও গলতে পারে। এটা বললাম এ কারণে- যে হারে মানুষ আপনাকে বকাঝকা করে তা আর সহ্য হয় না। রাস্তা-ঘাটে, হাটে-বাজারে, পথে-প্রান্তরে, গাঁও-গ্রামে, শহর-বন্দরে যেখানেই যাই না কেন শুধু আপনাকে দেয়া গালি কানে আসে। তাই বলছিলাম আর কি। মনে কিছু কইরেন না আপা। আপনার মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই ইতি টানছি। পাশের দেশের বন্ধুদের নিয়ে ভালো থাকুন।