প্রাচীনকালে রাজা, বাদশাহ, জমিদাররা দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে জ্যোতিষীর পরামর্শ গ্রহণ করতেন। গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান জেনে তারা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। কালের পরিক্রমায় রাষ্ট্র কাঠামোতে পরিবর্তন এসেছে। রাষ্ট্রপ্রধানদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াতেও পরিবর্তন এসেছে। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্বটা ভোটের মাধ্যমে রাজনীতিবিদদের কাঁধেই বর্তায়। কিন্তু সেই দায়িত্ব কখনো ক্ষমতার মোড়কে ঢাকা পড়ে স্বৈরতন্ত্রে রূপ নেয়। কথিত রয়েছে, বাংলাদেশে যারা স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছেন তারা ব্যক্তিগতভাবে জ্যোতিষীদের পরামর্শ নিয়ে চলতেন। হাল আমলে জ্যোতিষ বিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্র সংকুচিত হলেও রাজনীতিতে প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে তা বিদ্যমান। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ‘জনতার চোখ’-এর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল দু’জন জ্যোতিষের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে আলাপকালে প্রাপ্ত ধারণা মতে, ২০২৫ সাল হবে রাজনৈতিক সহিংসতার বছর। এবছরে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংঘাত বাড়বে। বিশেষ করে বছর শুরুর ৩ মাস পর থেকে রাজনৈতিক উত্তেজনা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। বিএনপি’র অভ্যন্তরীণ কোন্দল বৃদ্ধি পাবে। আওয়ামী লীগ দল গোছানো শুরু করবে। জামায়াত ও ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ঐক্য ও সমঝোতার সম্ভাবনা নেই নতুন বছরে। রক্তপাত সারা বছর। জাতীয় পার্টির ভূমিকা চোখে পড়ার মতো থাকবে না। রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা হতে পারে বিশেষ মৃত্যুর কারণে- আকস্মিক মৃত্যুতে। তবে যত বাধা-বিঘ্নই আসুক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মোটাদাগে কোনো ঝুঁকি নেই। উপদেষ্টাদের মধ্যে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে তথা উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল ঘটবে। যুদ্ধের ডামাডোল বাজলেও এ বছরে সীমান্তে বড় কোনো ঘটনা বা যুদ্ধবিগ্রহের সম্ভাবনা নেই। পাকিস্তান তাদের সহযোগিতার হাত যতই বাড়াক, অবশেষে তা গুটিয়ে নেবে। সংখ্যালঘুদের কোনো রকম আন্দোলন চোখে পড়বে না- তাদের ওপর নিপীড়ন বাড়লেও তারা সহিষ্ণুতার পরিচয় দেবে। জাল নোট ও মাদক প্রচুরভাবে ছড়াবে। খাদ্যদ্রব্য আমদানিনির্ভর সকল দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি পাবে। বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নয়ন ভালো হবে না। তবে জ্বালানি তেলের বাজারে সুখবর থাকবে। সুখবর রয়েছে দেশের চিকিৎসা খাতের জন্য। চিকিৎসা ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ও সুস্থিরতা ফিরতে পারে নতুন বছরে। সেবার মানও বাড়বে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওষুধপত্র রপ্তানি বাড়তে পারে। যা বিদেশিদের আকৃষ্ট করবে। জ্যোতিষবিদ কে সি পাল পুরো বছরকে তিনটি ভাগে ভাগ করে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। তার পর্যবেক্ষণ অনুসারে, ১লা জানুয়ারি থেকে ১৪ই মে রাজনৈতিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে। স্বজনদের মধ্যে তথা রাষ্ট্রের শাসকদের মধ্যে হানাহানি হতে পারে। শাসকদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল বাড়তে পারে। উপদেষ্টা পরিষদে রদবদল হতে পারে। এর মধ্যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন আকস্মিকভাবে ঘটার সম্ভাবনা নেই। দেশে সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে। ব্যবসা-বাণিজ্যেও আশানুরূপ উন্নতি হচ্ছে না বছরের এ সময়ে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। বছরের শুরুতে বৈদেশিক সহায়তা খুব বেশি পাওয়া যাবে না। দেশের রিজার্ভও প্রথমদিকে বাড়ার সম্ভাবনা নেই। শেয়ারবাজার নিম্নগামী থাকবে এই সময়টাতে। ধর্ম-অধর্ম কিংবা জাতিগত দাঙ্গা-যুদ্ধ বৃদ্ধি পাবে বছরের এ সময়ে। ২৯শে মার্চ থেকে ১৭ই মে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
১৫ই মে থেকে ২৭শে আগস্টের মধ্যে আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে। দলটির নেতারা সংগঠন গুছানোর ব্যাপারে সক্রিয় হতে পারে। প্রাচীন এই দলটির প্রধান নেতৃত্বেও পরিবর্তন আসতে পারে। নীতি-আদর্শে পরিবর্তন এনে অভ্যন্তরীণভাবে শক্তি অর্জন করতে পারে আওয়ামী লীগ। বক্তৃতা-বিবৃতি নানা কথা বললেও ভারত ও আমেরিকা প্রকাশ্যে কোনোরকম সহযোগিতার হাত বাড়াবে না। তবে এ সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি ও বৈদেশিক লেনদেনে উন্নতি ঘটবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। শেয়ারবাজারও ইতিবাচক ধারায় ফিরবে। এই সময়ে ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলা করতে হতে পারে। শীত-বর্ষার তীব্রতা স্মরণকালের রেকর্ড ছাড়াবে। অর্ধশত ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই তাপমাত্রা হতে পারে। তীব্র মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে এ সময়ে। ২৮শে আগস্ট থেকে ৩১শে ডিসেম্বর সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব বাড়বে। আন্তঃদলীয় সংঘাত বাড়ার সম্ভাবনা আছে। তবে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দৃঢ়ভাবে সবকিছু মোকাবিলা করবে। বহির্বিশ্বের চাপে মাথানত বা কোনো হুমকিতে কর্ণপাত করবে না। একক সিদ্ধান্তে দেশ চালাবে তারা। এ সময়টাতে বৈদেশিক সহযোগিতা, চুক্তি, ক্রয় ফলপ্রসূ হবে। রপ্তানি বাণিজ্যও বাড়বে। বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ আরও বাড়বে। খাদ্যশস্য উৎপাদন ভালো হবে।
জ্যোতিষবিদ ড. মাধব আচার্যের গবেষণা মতে, ২০২৫ সালের গ্রহ সন্নিবেশ শুভ নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ-বিগ্রহ সহ নানান সমস্যা লেগে থাকবে। এতে অনেক জান-মালের ক্ষতি হতে পারে। রাজনৈতিক অভ্যন্তরীণ গোল থামবে না। একটার পর একটা সমস্যা লেগে থাকবে। এক কথায় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগবে সকল দল। প্রকৃত দৃষ্টিতে জটিল রোগে বিভিন্ন গুণীজনের মৃত্যুর সম্ভাবনা দেখা যায়।
বাংলাদেশের জন্ম গ্রহ চক্র অনুসারে ড. মাধব জানান, ২০২৫ সাল তেমন শুভ ফল বয়ে আনবে না। রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান সহসাই হবে না। তবে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন দলের জোরালো ভূমিকা থাকবে। আর নির্বাচনের দাবিতে সকল দল এগিয়ে আসবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক আলোচনা ফলপ্রসূ হবে। বর্তমান সরকার প্রধানের জোরালো চেষ্টায় অনেক কঠিন সমস্যার সমাধান হবে। দেশ-বিদেশের সাহায্য সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। বছর শুরুর ৩ মাস পর থেকে রাজনৈতিক উত্তেজনা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ঘটনায় ব্যাপক হারে জান-মালের ক্ষতি হতে পারে।
