প্রিয় হাসু আপা, আপনি সফল। দূরদেশ থেকে আপনার দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল করছেন। আপনি যে আওয়ামী লীগকে খাদে ফেলে পালিয়েছিলেন তারা সেই আওয়ামী লীগকে খাদ থেকে তুলে আনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু ফ্যাসিস্ট ট্যাগ লাগানো থাকায় একটু কষ্ট হচ্ছে। পাঁচ-সাত মিনিটের বেশি রাস্তায় থাকতে ভয় পাচ্ছে। আবার সকাল কিংবা গভীর রাতকে বেছে নেয়া হয়েছে এই ঝটিকা মিছিলের সময়কে। তারপরও বলতে হয়, আপনি সফল। আপনি আপনিই। আপনি যেভাবে এদেশে জামায়াতকে গর্তে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন! আর ওই গর্ত থেকে মাঝে মাঝে তারা সূর্যের আলো দেখতো। সেই পাঁচ-সাত মিনিটের জন্য। তেমনটাই এখন আপনার নেতাকর্মীরা করছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে-এভাবে কতোদিন। আপনি তো প্রায় ষোল বছর তাদের ঝাপটে রাখতে পেরেছিলেন। এখন? হ্যাঁ এখন তো সব দল এককাতারে। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে সবার এক কথা। বিচার হতে হবেই। আপনি নিজেই তো বলেছেন দুই শতাধিক হত্যা মামলা আপনার বিরুদ্ধে। আচ্ছা আপা, বলুন তো এসব মামলা কী মিথ্যা। দেশের মানুষ বলছে- সব মামলাই সত্যি। আপনার নির্দেশে গণহত্যা হয়েছে। আপনার নির্দেশে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। আপনার নির্দেশে আপনার ছাত্রলীগ-যুবলীগ অস্ত্র হাতে নিরস্ত্র মানুষের বুকে বুলেট ছুড়েছে। এতসব করে, এত সহজে কি রাজনীতিতে আপনার দল দাঁড়াতে পারবে? আপনি কী মনে করেন? আপনি মাঝে মাঝে বলেন, আমি দেশে ফিরবো। আমার কথা হলো দেশে ফিরছেন না কেন? কে আপনাকে বাধা দিয়েছে? আপনি দেশে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করলে প্রয়োজনে দিল্লিতে বাংলাদেশ বিমানের স্পেশাল ফ্লাইট পাঠাতেও রাজি সরকার। কারণ আপনি বাংলাদেশের মাটিতে এলে আপনার স্থান হবে কারাগারে। আর বিশেষ আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে আপনার বিচারও হবে দ্রুত। আপনি এত কাঁচা কাজ করেছেন- আপনার প্রতিটি কুকর্মের সাক্ষী রেখে গেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ভাইরাল। এমনও কনভারসেশন শোনা গেছে আপনি বলছেন গুলি করতে। এসব প্রমাণ যখন হাজির করা হবে তখন আদালত কী রায় দেবে? এ ছাড়া জাতিসংঘ তদন্ত রিপোর্টেও আপনার অপরাধের কাহিনী সবিস্তারে তুলে ধরা হয়েছে। আপনি কী পার পাবেন? আপনার নেতাকর্মীরা বলাবলি করছেন আপনি মুখে দেশে ফেরার কথা বললেও অন্তরে আপনার অন্যকথা। ওদিকে আপনাকে দেশে ফেরানোর জন্য সরকার কতো চেষ্টাই না করছে। ভারত কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকেও আপনাকে ফেরত চাওয়া হয়েছে। সর্বশেষ ইন্টারপোলের সাহায্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তারপরও আপনি আসছেন না। এমনকি আপনি ভারতের কোথায় লুকিয়ে আছেন তাও অত্যন্ত গোপন রাখা হয়েছে। আন্দাজে অনেকে অনেক জায়গার কথা বলছে। কিন্তু ভারত সরকার এ ব্যাপারে একেবারেই নীরব। আপনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বলেছিলেন ভারতকে যা দিয়েছেন সারা জীবন মনে রাখবে। নিশ্চয় মনে রেখেছে বলেই আপনার মতো নিষ্ঠুরতম স্বৈরাচারকে তারা মেহমান হিসেবে রাখছে। সত্যিই আপনি বড় ভাগ্যবান। ক্ষমতার লোভ এত আপনার? মুখে বলতেন আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। এ দেশের জন্য জীবন দিতেও প্রস্তুত। এ জন্যই ৫ই আগস্ট জীবন বাঁচাতে দেশ ছেড়ে অন্যদেশে পালিয়ে গেছেন? এতে কী প্রমাণ হয়? আপনি মুখে যা বলেন তা বলার জন্য বলা। আর অন্তরে আপনার অন্য কথা। এর বহু প্রমাণ এ দেশের মানুষ পেয়েছে। এখনো পাচ্ছে। তাই বলি এখনো সময় আছে সত্যের পথে হাঁটুন। এ কথা বলতে গিয়ে মনে পড়ে গেল- কামারের দোকানে কোরআন পড়ার কথা বলছি না তো? আবার মনে পড়ে সেই কথা- চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী।
যাই হোক, হাসু আপা আপনি কিন্তু এ দেশের অনেক উন্নয়ন করেছেন। তবে এসব উন্নয়ন পাশের দেশকে সুবিধা দেয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেছেন। পদ্মা সেতু করেছেন দেশের উপকার হয়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু এ সেতু ভারতকে খুব কাছে এনে দিয়েছে। এই সেতু ব্যবহার করে ভারত তার সেভেন সিস্টার্সখ্যাত সাত রাজ্যে মালামাল দ্রুত পাঠাতে পারবে। আবার সেদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখলাম ঢাকা-চট্টগ্রাম বুলেট ট্রেন প্রকল্প আপনি হতে দেননি। বারবার আপনার সামনে ফাইল গেলেও তা ফিরিয়ে দিয়েছেন। এখানেও নাকি আপনার ভারতপ্রীতি কাজ করেছে। বুলেট ট্রেন হলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে সময় লাগতো মাত্র ৫৫ মিনিট। চীনের সহায়তায় এ প্রকল্প হবে বলেই আপনার সামনে ছিল বিশাল বাধা। সত্যি মিথ্যা আপনি জানেন। কিন্তু এসব শোনে মানুষের আপনার প্রতি আরও ঘৃণা বাড়ছে। এতদিন বিভিন্ন মাধ্যমে আপনি এবং আপনার পালিয়ে যাওয়া মন্ত্রিসভার সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতাদের বিলাসী জীবনের কথা শুনেছি। কিন্তু একটি রিপোর্ট ও ছবি দেখে এ কথার সত্যতা পাওয়া গেছে। মানুষ বলাবলি করছে কোনো মানুষ কী পারে তাদের নেত্রীর বিপদের সময় এমন আনন্দ উৎসব করতে? কিন্তু আপনার নেতাকর্মীরা পেরেছে। ওরা আরও বড় কিছু করতে পারবে- এটাই বিশ্বাস এদেশের মানুষের। কিন্তু সেই উৎসব, আনন্দ? একবার চোখ বুলিয়ে নেই রিপোর্টটির দিকে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে- দামি গাড়িতে করে একে একে নামছিলেন স্যুট পরা ব্যক্তিরা। স্থানটিও ছিল অনেক দামি। সন্ধ্যার আলো ঝলমলে সাজানো লন্ডনের ওটু এরিনার প্রেস্টিজিয়াস ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের হলরুমে ঢুকছিলেন অতিথিরা। অতিথিদের লাইনেই ছিল ছবি তোলার হিড়িক। মনে হচ্ছিলো কেউ একজন বা কয়েকজন ভিআইপি অতিথি আছেন। এভাবেই একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের পলাতক সাবেক মন্ত্রী ও এমপিরা। সূত্র মতে, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমানের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকে নানা দুর্নীতির অভিযোগে পলাতক মন্ত্রী ও এমপিরা। লন্ডনের ওটু এরিনার প্রেস্টিজিয়াস ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে বিয়ের অনুষ্ঠানে ২০শে এপ্রিল সন্ধ্যায় যোগ দেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমান, সাবেক প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিব। বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া মন্ত্রীরা বেশ হাসি-খুশি ছিলেন। অনেকের সঙ্গে ছবিও তুলেছেন। পালিয়ে আসা মন্ত্রী-এমপিদের এমন আনন্দঘন পরিবেশে দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা। তাদের প্রশ্ন, লাখ লাখ নেতাকর্মীকে বিপদের মুখে ফেলে পালিয়ে এসে তারা কীভাবে এসব অনুষ্ঠানে অংশ নেন? এত আনন্দই বা কীভাবে তাদের মনে আসে?
এ রিপোর্টে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে বাংলাদেশে। সোহাগ নামে একজন তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এভাবে- ছবিতে যে মানুষগুলো পাশে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে ছবি তুলছে, এমন নির্লজ্জ মানুষ এখনো পৃথিবীতে আছে? সত্যিই সেলুকাস। আর বাজ চৌধুরী নামে একজন লিখেছেন- নির্লজ্জ, অমানবিক এবং নির্দয়-এই শব্দগুলোই যথেষ্ট নয় তাদের বর্ণনা করার জন্য। যারা আজ লন্ডনের বিলাসবহুল হোটেলে আনন্দ-উৎসবে মেতে উঠেছে, তারাই একসময় দেশের মাটিতে হাজারো নিরীহ মানুষকে গুম, খুন ও নির্যাতনের মধ্যদিয়ে দমন করেছে। ২০০০’রও বেশি মানুষের রক্ত যাদের হাতে লেগে আছে, আর ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষকে যারা চিরতরে আহত ও নিঃস্ব করেছে, তাদের মুখে হাসি আর বিলাসবহুল কফির আড্ডা জাতির প্রতি এক ধরনের নিষ্ঠুর উপহাস। এই পলাতক ফ্যাসিস্ট মন্ত্রী-এমপিরা আজ প্রবাসে নিরাপদ আশ্রয়ে আনন্দে গা ভাসালেও, দেশের মাটিতে আজও মায়েরা সন্তান হারানোর আহাজারি করছে, পরিবারগুলো খুঁজছে তাদের প্রিয়জনদের। যারা জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে, আজ তারা আবারো দেখিয়ে দিলো-তারা কেবল দুর্নীতিবাজ নয়, বরং অমানবিকতা ও নিষ্ঠুরতার প্রতিমূর্তি। বাংলার মানুষ এই দুঃশাসনের হিসাব অবশ্যই একদিন চেয়ে নেবে। ইতিহাস কখনো ক্ষমা করে না। যারা রক্তে হাত রাঙিয়েছে, তারা কোনো উৎসবের আলোয় নিজেদের অপরাধ ঢাকা দিতে পারবে না। শুধু প্রতিরোধ নয়, এই অন্যায়ের বিচার হোক, এটাই এখন সময়ের দাবি।
সুপ্রিয় আপা, বুঝলেন তো মানুষ কী ভাবছে? এবার বলুন এইসব নেতারা কি আপনার দুঃসহ পরিস্থিতির কথা ভাবেন? অথচ তাদেরই মন্ত্রী, এমপি বানিয়েছেন। দুঃখ হয় না আপা। হাসু আপা, এ লেখা যখন লিখছি তখন খবর এলো আপনিসহ আপনার পরিবারের ১০ জনের এনআইডি স্থগিত করা হয়েছে। আফসোস আপনার বাড়াবাড়ির জন্য আরও কতো কিছু না দেখতে হয়।