সা ফ ক থা

নতুন পথে যাত্রায় আর বিলম্ব নয়

হাসান মামুন | মতামত
আগস্ট ২, ২০২৫
নতুন পথে যাত্রায়  আর বিলম্ব নয়

হাসিনা সরকারের পতন আর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বছর পূর্তির মুহূর্তে দাঁড়িয়ে দেখতে পাচ্ছি, অরাজক পরিস্থিতি সামাল দেয়ার এলোমেলো চেষ্টা আর সংস্কার আলোচনায় অনেক মূল্যবান সময় আমরা ব্যয় করে ফেলেছি। ‘আমরা’ বলতে মূলত সরকারকে বুঝতে হবে, যার ওপর দায়িত্ব ন্যস্ত হয়েছিল সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসন অবসানের পর দেশটিকে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে নিয়ে যাওয়ার। যে দেশের মানুষ ‘নির্বাচনী গণতন্ত্র’ উপভোগেরও সুযোগ বেশিদিন পায়নি, সেখানে ব্যাপকভিত্তিক সংস্কারের লক্ষ্যে কার্যক্রম গৃহীত হয়েছে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর। এতে দূরদৃষ্টি কতোটা রয়েছে, তা নিয়ে সংশয় থাকলেও দোষের কিছু নেই। সংস্কার, বিশেষত রাষ্ট্র সংস্কারে সাধারণ মানুষের আগ্রহের পাশাপাশি মাঠে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য কতোটা উপস্থিত, সেটা নিয়েও তো প্রশ্ন রয়েছে। তারপরও সংস্কার আলোচনায় অগ্রগতি কম বলা যাবে না। সত্যি বলতে, সরকারের উদ্যোগে এ ধরনের আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলোর এমন অংশগ্রহণ আর কখনোই দেখা যায়নি। এ সুবাদে সংস্কার বিষয়ে অসচেতন জনগোষ্ঠীও মূল্যবান কিছু ধারণা অর্জন করতে পারছে, যা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে তাদের ভূমিকাকে আরও জোরদার করবে। 


রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশে দেশে কেমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ে থাকে, তা অজানা নয়। বাংলাদেশে গেল বছর এমন একটি অভ্যুত্থানই ঘটে গিয়েছিল দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক অধিকারহীনতা ও অপশাসনের প্রেক্ষাপটে। এতে ঠিক কী পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, সেটা হয়তো অনেকের অজানা ছিল। গণ-অভ্যুত্থানের ফলে অল্পদিনেই গণতন্ত্র আর সুশাসনের বন্যা বয়ে যাবে, এমনটা আশা করার যুক্তি ছিল না। তবে পরিস্থিতি কতোটা জটিল হবে, তা নির্ভর করে গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব যাদের ওপর ন্যস্ত হয়েছিল, তাদের ভূমিকার ওপর। তারা কি মাঠে থাকা রাজনৈতিক দল ও পক্ষগুলোর কাউকে আহত না করে এবং সব নাগরিকের প্রতি ন্যায়বিচারের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেশ পরিচালনায় সক্ষম হয়েছেন? তেমনটি করতে পারলে যে পরিস্থিতিতে আমরা রয়েছি, তার চেয়ে পরিস্থিতি আরও গ্রহণযোগ্য হতো সন্দেহ নেই। কেউ কেউ অবশ্য বলবেন, এর চাইতেও খারাপ কিছু হতে পারতো! গণ-অভ্যুত্থানের পর সামপ্রতিক দুনিয়ার কোথায় কোথায় পরিস্থিতি এর চেয়ে খারাপ হয়েছে, সেসব দৃষ্টান্ত তারা হয়তো তুলে আনবেন। এটা মনে রাখা অবশ্যই প্রয়োজন; সেই পরিণতি এড়ানোর জন্য। সেটি আমরা করেছি বলে মনে হয় না। বিশেষত সরকার ঝুঁকিপূর্ণ সে পথ এড়ানোর প্রতিজ্ঞা করেছিল বলে মনে হচ্ছে না। 


হাসিনা সরকার রাষ্ট্রের যেসব প্রতিষ্ঠান বিনষ্ট করে আরও দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় টিকে থাকার পথ ধরেছিল, তার কোনো ক্ষেত্রে গত এক বছরে আংশিক সংস্কারও হয়েছে বলা যাবে না। যেসব সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য প্রয়োজন, সেগুলোর কথা আলাদা। আলোচনা না করে সেসব পদক্ষেপ নেয়াটাই হবে হঠকারিতা, বিশেষত একটি অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে। কিন্তু এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলোর ক্ষেত্রে আছে দীর্ঘদিনের সাধারণ ঐকমত্য। এসব ক্ষেত্র চিহ্নিত করতেও কমিশন গঠনের আবশ্যকতা ছিল কিনা, প্রশ্ন উঠতে পারে। তারপরও কমিশনগুলো এমন অনেক প্রস্তাব পেশ করেছিল, যেগুলো ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’। অভিযোগ, সেগুলোর বাস্তবায়নও শুরু করেনি সরকার। যে পুলিশ দলীয় বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল, তাদের মধ্যে প্রথম সংস্কার শুরু করা হবে বলে ব্যাপক প্রত্যাশা ছিল। সেটি হয়নি। সরকারের এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগমুহূর্তে মাত্র সেদিন ‘পুলিশ কমিশন’ গঠনের বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য রয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এদিকে পুলিশ রয়ে গেছে মনোবলহীন। তাদের নিষ্ক্রিয়তায় আইনশৃঙ্খলার কী দশা, তা সবারই জানা। অবনতিশীল পরিস্থিতিতে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগ স্পষ্ট। দ্রুত গণতন্ত্রে উত্তরণ না হলে পরিস্থিতির আরও কী অবনতি হতে পারে, সে বিষয়েও তাদের বক্তব্য রয়েছে। সাধারণ মানুষও এটা ভেবে শঙ্কিত। 


কোনো সংস্কার না করে শুধু একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার চলে যাবে- একথা দ্রুত নির্বাচনের দাবিদাররাও বলেননি। এও ঠিক, জরুরি সংস্কারগুলো করারও পরিবেশ থাকতে হবে। আর সেটা না থাকলে তা সৃষ্টি করে নিতে হবে সরকারকেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ে আসতে হবে নিয়ন্ত্রণে এবং সে ক্ষেত্রে পুলিশ অকার্যকর থাকলে ব্যবহার করতে হবে সশস্ত্র বাহিনীকে। গণ-অভ্যুত্থানে তারা জনতার পক্ষ নিয়েছিল এবং নতুন সরকার গঠনেও সহায়তা করে। শুধু নির্বাচন নয়, সংস্কারের ক্ষেত্রেও সরকারকে তারা যেকোনো পরিস্থিতিতে সহায়তা জুগিয়ে যাবে বলে অঙ্গীকার করেছিল। এখনো মাঠে থেকে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী; যদিও পুলিশি দায়িত্ব পালনের প্রশিক্ষণ তাদের নেই। এমন সহায়তাকে কাজে লাগিয়ে গত এক বছরে সরকার কী লক্ষ্য অর্জন করেছে, সে প্রশ্ন তোলা নিশ্চয়ই বাতুলতা হবে না। একটা রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের পর মব ভায়োলেন্স চলাটা কিছুদিন হয়তো স্বাভাবিক। কিন্তু এটা চলছে দীর্ঘ সময়ব্যাপী। এতে কেবল আইনশৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে না, ন্যায়বিচারের লালিত প্রত্যাশাও মার খাচ্ছে। ক্ষমতাচ্যুত পক্ষের নিরপরাধ লোকজনও পাইকারিভাবে এর শিকার হচ্ছে বললে কি ভুল হবে? আর এ সুবাদে আতঙ্কিত সম্পদশালী লোকজনের ওপর হচ্ছে নজিরবিহীন চাঁদাবাজি। হালে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্র সংগঠনের নামে চাঁদাবাজির যে চিত্র উন্মোচিত হয়েছে, তা বেদনাদায়ক। তবে এতে অবাক হওয়া যাবে না। হঠাৎ করে হাতে আসা ক্ষমতার সদ্ব্যবহার করতে মানুষ সাধারণত ব্যর্থ হয়, যদি বিশেষত জবাবদিহির কোনো ব্যবস্থা না থাকে। 


ইতিবাচক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি অন্তর্বর্তী সরকার পায়নি, এটাও স্বীকার করতে হবে। হাসিনা সরকার তার অপশাসন বিস্তৃত করেছিল উন্নয়নের নামে লুটপাটে। তাতে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে। অপতথ্য দিয়ে সেটা আড়ালের আয়োজনও তাদের ছিল। এ অবস্থায় অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র জানতে অন্তর্বর্তী সরকার একাধিক কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়। সেগুলোর রিপোর্ট বাস্তবায়নেও কিন্তু এগিয়ে আসেনি সরকার। এমন একটি কমিটির প্রধান হালে যেসব বক্তব্য রেখেছেন, তা প্রণিধানযোগ্য। এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আগেকার সরকার অন্তত শুনতে চাইতো বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য। তারা সেটা বাস্তবায়ন করতেন না। আর এখন কোনো পরামর্শ দিতে গেলেই তারা বলেন, এর সবই আমাদের জানা। আরেক অনুষ্ঠানে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে নিজ ‘প্রস্থানের পথ’ নিয়ে ভাবার ওপর জোর দিয়েছেন। প্রস্থান তো করতেই হবে; কেননা এটা অন্তর্বর্তী সরকার। মুশকিল হলো, সরকারটি গঠনের সময় সংশ্লিষ্টরা এর সময়সীমা নিয়ে কোনো আলোচনা করেননি। সরকার নিজেও স্থির করেনি নিজ সময়সীমা। তবে জনমনে প্রশ্ন উঠলে প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্বের শুরুতে দেয়া এক ভাষণে বলেছিলেন, এটা রাজনৈতিক আলোচনায় স্থির হবে। নিয়োগকর্তারা বললে তারা এক মুহূর্তও ক্ষমতায় থাকবেন না। তিনি ‘প্রাথমিক নিয়োগকর্তা’ হিসেবে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের কথা উল্লেখ করেছিলেন। সে নিয়োগ চূড়ান্ত করেন মাঠে থাকা রাজনৈতিক নেতারা। সেনাপ্রধান এ ক্ষেত্রে কিছু ভূমিকা রেখেছিলেন, এটাও বোধগম্য। 


সরকার অর্থনীতি মোটামুটি সামাল দিয়ে চলছে, তা অনস্বীকার্য। পণ্যবাজারে অস্থিরতা কম; মূল্যস্ফীতিও কমে এসেছে। ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংকের চেষ্টা লক্ষণীয়। তবে খেলাপি ঋণ অব্যাহতভাবে বেড়ে উঠে সংকট সৃষ্টির ব্যাপারটিও রয়েছে। এর বড় অংশই বিগত সরকারের আমলে পাচার হয়ে যাওয়ায় আর ফিরে পাওয়ার আশা নেই। বাকি অংশ আটকে গেছে উদ্যোক্তাদের হাতে। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অরাজকতা আর অনিশ্চয়তার কারণেই মূলত বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো নয়। কর্মসংস্থানে হয়েছে অবনতি। শহরাঞ্চলে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। দীর্ঘ রাষ্ট্র সংস্কার আলোচনার নিচে তাদের দশাটি চাপা পড়ে যাচ্ছে কিনা, সে প্রশ্ন উঠতে তেমন দেখা যাচ্ছে না। গণ-অভ্যুত্থানে শ্রমজীবীদের আত্মদানের ঘটনাই কিন্তু সবচেয়ে বেশি। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের অপ্রত্যাশিত শুল্কনীতি মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকার সফল না হলে প্রধান রপ্তানি ঘাতটি থেকে কাজ হারানোর ঘটনা আরও বাড়বে সন্দেহ নেই। সংস্কার আলোচনায় অগ্রগতির মধ্যেও এমনটি যদি ঘটে, তাতে এরই মধ্যে সংকটে নিপতিত মানুষ সেটাকে কীভাবে গ্রহণ করবে? এটাও কিন্তু লক্ষণীয়, অন্যান্য গোষ্ঠীর ব্যাপারে নমনীয় হলেও অন্তর্বর্তী সরকার শ্রমজীবীদের দাবি-দাওয়া মোকাবিলায় কঠোরতা প্রদর্শন করছে। সরকারের ভাবমূর্তির জন্য সেটা ইতিবাচক হয়নি। 


আরেকটি কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তা হলো, গণ-অভ্যুত্থানের পর দক্ষিণপন্থিদের কর্মকাণ্ডে সরকারের নীরবতা। হাসিনা সরকারের পতনে ভূমিকা রেখেছে তার সমর্থক বাদে বলতে গেলে সবাই। তাদের সাধারণ প্রত্যাশা ছিল, হাসিনা-উত্তর সময়ে দেশের গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন হবে। তাতে সব পক্ষেরই থাকবে অংশগ্রহণ। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের পর সবচেয়ে উৎসাহিত হয়ে উঠতে দেখা গেল এমন এক গোষ্ঠীকে, যারা তাদের চিন্তাভাবনা বাকি সবার ওপর চাপিয়ে দিতে ব্যগ্র। তারাই রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে আর তাদের ইচ্ছাই প্রাধান্য পাবে- এটাই এ শক্তির মূলকথা। মব ভায়োলেন্সে এরাই মুখ্য ভূমিকা রেখে পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে বললে ভুল হবে না। এদের তৎপরতায় দেশের বাইরেও বাংলাদেশে ঘটে চলা পরিবর্তন বিষয়ে নেতিবাচক বার্তা গেছে। সরকারপ্রধান ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা। কিন্তু তাতেও সরকারের মনোভাবে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এ কারণে এমন ধারণা ক্রমে জোরদার যে, অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ নয়। এ ধরনের একটি সরকারের নেতৃত্বে কীভাবে গ্রহণযোগ্য সংস্কার ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হবে, সে প্রশ্নও কম জোরালো নয়। সরকারের ভেতরকার একটি অংশ সংস্কারের নামে নির্বাচন বিলম্বিত করে গণতান্ত্রিক উত্তরণে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগও উঠে গেছে। এমন অভিযোগ ওঠার বড় কারণ, সরকারের ভেতর থেকে বিদায় নিয়ে রাজনৈতিক দল গঠনের পরও তাদেরই আরেক অংশ সরকারে থেকে গিয়ে ওই দলের সঙ্গে সহমত হয়ে অব্যাহতভাবে বক্তব্য দেয়া। খোদ প্রধান উপদেষ্টা তাদের পৃষ্ঠপোষক, এমন অভিযোগও করা হচ্ছে! 


গণ-অভ্যুত্থানের পর এতে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য বেড়ে ওঠা অস্বাভাবিক নয়। তাদের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে এবং এটা গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচকও। এতে আশা করা যায়, সামনের নির্বাচনটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে এবং এ কারণে বাড়বে জনঅংশগ্রহণ। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ এতে অংশগ্রহণের পরিস্থিতিতে না থাকলেও ওই কারণে নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য হবে। এ অবস্থায় সংস্কার আলোচনা আর দীর্ঘ না করে সরকারকে যেতে হবে নির্বাচন আয়োজনের দিকে। আর নির্বাচনের ওপর থেকে সব শর্ত প্রত্যাহার করে এর চূড়ান্ত সময়সীমা ঘোষণা করতে হবে। মধ্য আগস্টে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা। এরই মধ্যে ‘জুলাই সনদ’ চূড়ান্ত করে নির্বাচনের দিকে সরকারের অগ্রসর হওয়ার কথা। কিন্তু এ সনদ নিয়ে শেষ মুহূর্তে কিছু জটিলতা সৃষ্টির খবর মিলছে, যা দুশ্চিন্তা জাগায়। মৌলিক সংস্কারের অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি হওয়ার পরও যেসব বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি, তা নিয়ে পরিস্থিতি ঘোলা করার প্রয়াস নজর এড়াচ্ছে না। প্রধান উপদেষ্টা তো বলেছিলেন, কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ঐকমত্য অর্জিত না হলে কোনো সংস্কার না করেই সরকার নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাবে। তার প্রয়োজন অবশ্য হচ্ছে না; কেননা সংস্কার আলোচনায় অংশগ্রহণকারী দলগুলো অনেক ক্ষেত্রেই একমত হয়েছে। সেগুলোর ‘বাস্তবায়ন পদ্ধতি’ স্থির করে হাসিনা সরকার পতনের দিন ৫ই আগস্ট কিংবা অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দিন ৮ই আগস্ট নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা করা হলে সেটাই হবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য। গণতন্ত্রে উত্তরণের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলেই এটা করতে হবে। এরই মধ্যে অনেক মূল্যবান সময় চলে গেছে নতুন পথে যাত্রার। সেটা অনুধাবনের মধ্যেই রয়েছে জাতির কল্যাণ। 


লেখক: সাংবাদিক, কলাম লেখক

মতামত'র অন্যান্য খবর