দেশে যে নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থান ঘটে গেছে, সেটা ঘিরে সম্ভাবনার কথা বলা মানুষ কম মিলছে না। গণ-অভ্যুত্থান ঘিরে সৃষ্ট ঝুঁকির কথাও বলা দরকার। ঝুঁকিকে অবশ্য অনেকে ‘চ্যালেঞ্জ’ বলে বর্ণনা করেন। তাতে ঝুঁকি কমে না; হয়তো আরও বেড়েই যায়। বলিষ্ঠভাবে ঝুঁকি মোকাবিলা করতে পারলে অবশ্য বলা যাবে, আমরা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছি! সেটা আমাদের নিয়ে যাবে একটা স্বস্তিকর পরিবেশে।
গণ-অভ্যুত্থান কেবল আমাদের দেশে হয়েছে, তা তো নয়। দেড় দশক আগে-পরে উত্তর আফ্রিকা আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয়ও হয়েছে গণ-অভ্যুত্থান। তিউনিশিয়ায় তা শুরু হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল পাশের দেশগুলোতে। সবখানে এটা একইভাবে কাজ করেছে, তা নয়। একেক দেশে তো একেক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সে অনুযায়ী গণ-অভ্যুত্থান সফল, আধা সফল কিংবা ব্যর্থ হয়েছে। সাফল্য-ব্যর্থতার মূল্যায়ন অবশ্য একেকজন একেকভাবে করবেন। ‘আরব বসন্তের’ মূল্যায়ন এখনো চলছে। তবে খুব কম মানুষই বলছেন, এর ফল সিংহভাগ ক্ষেত্রে সুখকর হয়েছে। কোথাও কোথাও নতুন স্বৈরশাসন পর্যন্ত জেঁকে বসেছে। কোথাও দেখা দিয়েছে গৃহযুদ্ধ। কোথাও উত্থান হয়েছে জঙ্গিবাদের। একাধিক দেশ তছনছ হয়ে গেছে পশ্চিমা পরাশক্তির সরাসরি হস্তক্ষেপে।
দক্ষিণ এশিয়ার শ্রীলঙ্কায়ও গণ-অভ্যুত্থান হয় আমাদের এখানে হওয়ার বছর দুই আগে। এতে যে সরকারের পতন ঘটে, তা কিন্তু বছর দুই আগেই নির্বাচনের ভেতর দিয়ে এসেছিল। তারপরও মানুষ রাস্তায় নেমে আসে প্রধানত ক্ষমতাসীনদের বাজে অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার শিকার হয়ে। শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি কোন উদ্বেগজনক জায়গায় চলে গিয়েছিল, তা আমরা জানি। সরকারে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা আর দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়ে বাড়িয়ে তোলার অভিযোগও ছিল। ছিল অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমনের চেষ্টা। তাতে শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদও চলে যায় জনতার দখলে।
শ্রীলঙ্কানদের পরবর্তী অভিজ্ঞতা অবশ্য খুব অসুখকর হয়নি। সেখানেও একটি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালন করে দুই বছরেরও বেশি সময় জুড়ে। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে তাদের সাফল্য হয়তো বেশি নয়। তবে তারা শ্রীলঙ্কাকে এগিয়ে দেয় শান্তিপূর্ণভাবে গণতন্ত্রে উত্তরণের দিকে। গণ-অভ্যুত্থান দেশটিতে এক নতুন রাজনৈতিক শক্তিরও উত্থান ঘটিয়েছে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্যদিয়ে ক্ষমতায় এসে গেছে তারা। স্বস্তি অনেকখানি ফিরে এসেছে জনজীবনে। বিদেশি পর্যটকও আসতে শুরু করেছে, যেটা তাদের আয়ের এক বড় উৎস। এটা গোলযোগপূর্ণ একটা দেশে স্বাভাবিকতা ফিরে আসারও নির্দেশক।
গণ-অভ্যুত্থানের পর শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞতা একটু বেশি স্মরণ করা হলো এজন্য যে, আমাদের দেশে এটাই ছিল প্রত্যাশিত। এও ঠিক, সব দেশে একইভাবে গণ-অভ্যুত্থান হবে না আর এর পরবর্তী অভিজ্ঞতাও হবে না একই রকম। বাংলাদেশে শ্রীলঙ্কার মতো একটি ‘নির্বাচিত সরকার’ থাকলেও তারা আসলে নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছিল। শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার আরও কী কী করেছিল, তার বিবরণ দেয়া অনাবশ্যক। বহির্বিশ্বেও এসব নিয়ে কম আলোচনা হচ্ছে না। বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহে নজর রাখছিল অনেক আগে থেকেই। সম্ভবত একটা গণ-অভ্যুত্থানের আশংকায় তারা হাসিনা সরকারকে হুঁশিয়ার করেও যাচ্ছিল। সব কিছুর পরও ২০২৪ সালের শুরুতে হয়ে যাওয়া নির্বাচনটিকে গ্রহণযোগ্য করতে তাদের চেষ্টা কম ছিল না। সেটা ব্যর্থ করে দেয়ার পরিণতি হাসিনা সরকারের জন্য ভয়াবহ হয়েছে।
গণ-অভ্যুত্থানের আলামত টের পেয়েও সরকার শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা ছাড়ার পথে যায়নি। মতান্তরে, সে সুযোগও পায়নি তারা। ঘটনা এত দ্রুত ঘটছিল যে, শেষতক শেখ হাসিনা, তার স্বজন এবং দলের তৃণমূল পর্যায়ের মানুষজনকেও দেশ ছাড়তে হয়। দেশের বাইরে যেতে না পারা তাদের লোকজন স্থান পরিবর্তন করে গ্রেপ্তার এড়াচ্ছে। তাদের নিরপরাধ অংশের অনেকেও মবের শিকার হচ্ছে, যা বন্ধ করা ছিল সরকারের দায়িত্ব। এক বছর চলে গেলেও সে ক্ষেত্রে সফল হয়নি সরকার। শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব তারা পালন করতে চাইছেন কিনা, সে প্রশ্নও কম উঠছে না।
গণ-অভ্যুত্থানের পর আইনশৃঙ্খলার অবনতির ধারায় আমরা রয়েছি। এর প্রভাব পড়ছে জনজীবনে এবং সবচেয়ে বড় কথা অর্থনীতিতে। অর্থনীতি শ্লথ হয়ে পড়েছে, যদিও এর কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাফল্য দেখাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন গভর্নর এসে আর্থিক খাতের হাল ধরায় এক ধরনের শৃঙ্খলা ফিরেছে ব্যাংক খাতে। উন্নতি পরিলক্ষিত ডলার বাজার ও রিজার্ভে। মূল্যস্ফীতিতে কিছুটা উন্নতি দেখা যাচ্ছে। এর ‘প্রকৃত কারণ’ ব্যাখ্যায় অনেকে আবার অর্থনৈতিক স্থবিরতার কথা তুলে ধরছেন। অর্থপাচার কমার কারণে রিজার্ভে উন্নতি, এটাও অনেকে বলতে চাইছেন। তবে এ প্রশ্নে মতপার্থক্য নেই যে, গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অস্থিরতা বেড়ে চলেছে। সঙ্গে জননিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি উদ্বেগজনক।
গণ-অভ্যুত্থানে সাধারণত দীর্ঘদিনের কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থা তছনছ হয়ে যাওয়ায় একটা অরাজক পরিস্থিতি জন্ম নেয়। এটা কতোখানি ভয়াবহ হবে, তার অনেকখানি নির্ভর করে বিগত সরকার কী অবস্থায় দেশটি রেখে গেছে, তার ওপর। আমরা জানি, হাসিনা সরকার দেশকে কী অবস্থায় রেখে গেছে। এ পরিস্থিতিতে যে ধরনের অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রয়োজন ছিল এবং সে সরকার যেভাবে দায়িত্ব পালনের প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হয়নি। সে কারণেই কোনো কোনো ক্ষেত্রে উন্নতি পরিলক্ষিত হলেও সামগ্রিকভাবে আমাদের পার করতে হচ্ছে গভীর সংকটকাল। এ অবস্থায় অনেকে অবশ্য তত্ত্ব জোগাচ্ছেন যে, পরিস্থিতি এর চাইতেও প্রতিকূল হতে পারতো। আরও বেশি প্রতিহিংসা এবং নিজেদের মধ্যে আরও বেশি হানাহানি হয়ে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে চলে যেতে পারতো। অন্তর্বর্তী সরকার এবং তার সঙ্গে গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিগুলো সেই আশংকা নাকি রোধ করেছে।
বাংলাদেশ যে অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, তার অনুরূপ অভিজ্ঞতা আর নেই বলে সেটা মোকাবিলায় সাফল্য-ব্যর্থতার মূল্যায়ন সত্যিই কঠিন। তবে আমরা নিশ্চয় বিচার করে দেখবো, সরকার কোন কোন ক্ষেত্রে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে ব্যগ্র। সেসব ক্ষেত্রে সরকার যে পুরো ব্যর্থ হয়েছে, তা কিন্তু নয়। পণ্যবাজার শান্ত রাখতে উদ্যোগী হওয়ার সুফল কি মেলেনি? কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে সরকার উদোগী নয়, সেগুলোয় সাফল্য আসবে কীভাবে? সরকার মব ভায়োলেন্স বন্ধ করতে এক বছর পরও সেভাবে উদ্যোগী নয়। এ অবস্থায় রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এমন সব মানুষজনও ভয়াবহভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। রংপুরের তারাগঞ্জের ঘটনাটির উল্লেখ এখানে করা যায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েও নিজেরা মব দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে ফিরে আসে এবং দুই দলিত সমপ্রদায়ের মানুষ প্রাণ হারায়। গণ-অভ্যুত্থানের পরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও নিছক সন্দেহবশত এক বুদ্ধি প্রতিবন্ধী তরুণকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মানুষ শিউরে উঠেছিল। সেটা ছিল খুবই দুর্ভাগ্যজনক; কেননা এ ক্যাম্পাস থেকেই ছড়িয়ে পড়েছিল গণ-অভ্যুত্থানের আগুন!
এ পরিস্থিতিতে স্বভাবতই বিনিয়োগ বাড়ছে না। কিছু কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বরং বেকারত্ব বেড়েছে। কর্মহীনতার শিকার জনগোষ্ঠীও জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে। সামাজিক অপরাধের পাশাপাশি রাজনৈতিক অপরাধও বাড়ছে। বাড়ছে অন্তর্কলহ এবং তা ঘিরে রক্তপাত। পুলিশ এখনো মনোবলহীন। আর সেনাবাহিনী মাঠে থাকলেও যথেষ্ট সক্রিয় নয়। মাঠেঘাটে চাঁদাবাজি আরও বেড়েছে বলেই অভিযোগ। সরকারি অফিসে ঘুষের রেটও বেড়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এ কথা জোরেশোরে উঠছে যে, তাহলে পরিবর্তন হলো কোথায়?
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে, মাত্র এক বছরে প্রত্যাশিত পরিবর্তন ঘটে যাবে না, এটা অবশ্য ঠিক। তবে একটা দলনিরপেক্ষ সরকারের আমলে, বিশেষত নজিরবিহীন গণ-অভ্যুত্থানের পর কিছু ইতিবাচক ঘটনা ঘটার প্রত্যাশা তো অমূলক নয়। অবশ্য এ বিতর্ক শুরু থেকেই আছে যে, সরকারটি ‘দলনিরপেক্ষ’ কিনা। বিতর্কটা কমিয়ে আনা যেত, সরকারের একাংশ একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেয়ার পর তারা সবাই সরকার থেকে সরে এলে। উল্টো এ অভিযোগ বরং জোরালো যে, সরকারের ভেতর থেকে তাদের সহায়তা জোগানো হচ্ছে।
বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে একটি নতুন নেতৃত্বে। এরা কারা, সেটা বুঝতে বুঝতেই ঘটে গেছে গণ-অভ্যুত্থান। ছাত্র-শ্রমিক-জনতা আসলে মনেপ্রাণে চাইছিল একটা পরিবর্তন। হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের অপমানে তারা ছিল ক্রুদ্ধ। মানুষ খাদ্যাভাবও হয়তো সহ্য করে; কিন্তু অপমান নয়। আবার বড় পরিবর্তনের পর মানুষ চায় একটুখানি স্বস্তি এবং ভবিষ্যতের বিষয়ে একটা নিশ্চয়তা। সরকারের পাশাপাশি মাঠে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেও এটা তাদের দাবি। এর পরিপূরণে গণ-অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারছে না। এর ভেতর দিয়ে শ্রীলঙ্কার মতো করে একটি নতুন রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ ঘটবে বলেও তো অনেকে আশায় বুক বেঁধেছিল। তারা সম্ভবত সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছে মানুষকে। তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ কোনোটাই ব্যাপক মানুষকে আকর্ষণ করতে পারেনি। প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোও অতীত মডেল অনুসরণ করে চলতে চাইছে, এমনকি এত রক্তক্ষয়ী গণ-অভ্যুত্থানের পরও। ক্ষমতায় এলে তারা ইতিবাচক কিছু করবে কিনা, সে বিষয়ে শংকাও গভীর থেকে গভীরতর।
গণ-অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র সংস্কারের আওয়াজ ওঠে সবখানেই। অপরাধীদের বিচারের প্রশ্ন সামনে আসে। গত এক বছরে এ দুই ক্ষেত্রেও অগ্রগতি সামান্য। বিচারে তড়িঘড়ি অগ্রগতির সুযোগ নেই। তবে সুযোগ ছিল ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ সংস্কার এগিয়ে নেয়ার। সে ক্ষেত্রেও অগ্রগতি কম। ‘মৌলিক সংস্কার’ নিয়ে এখনো চলছে আলোচনা। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে ইতিবাচক ঘটনা হলো নির্বাচনের নিঃশর্ত সময়সীমা ঘোষণা। কিন্তু তার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির জোরালো প্রয়াস কি রয়েছে? যে মানের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এর জন্য প্রয়োজন, তার কোনো আলামত কি দেখতে পাচ্ছি? রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্পর্কের কোনো উন্নয়ন কি পরিলক্ষিত? কোনো কোনো দল কিন্তু এমনও বলছে যে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না। এটা সরকারের প্রতিও এক ধরনের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া নয় কি? সরকার শেষতক নির্বাচনকে নিঃশর্ত করলেও কোনো কোনো পক্ষ এটিকে এখনো করে রাখতে চাইছে তাদের শর্তের অধীন। এটা ঝুঁকিপূর্ণ বটে!
কোনো চেনা কাঠামোয় এখানে গণ-অভ্যুত্থান হয়নি বলে অনেক পক্ষই এর মালিকানা দাবি করছে। এটাও ঝুঁকি তৈরি করেছে গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে। নির্বাচনে যাদের বিজয় লাভের দৃশ্যত কোনো সম্ভাবনা নেই, তারাও ‘স্বপ্ন’ দেখছে নিজের মতো করে দেশটি পরিচালনার। তারা অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ভর করেছে বলে অভিযোগ এখনো থেকে থেকে উঠছে। নির্বাচনের যথেষ্ট আগেই সরকারকে এমন অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে হবে। নইলে এ দাবিও উঠে যেতে পারে যে, নতুন একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই।
গণ-অভ্যুত্থানের পর বর্তমান সরকারেরই অবশ্য তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করার কথা। একটি উৎকৃষ্ট নির্বাচনও তাদের দেয়ার কথা। সেটা হলো এ মুহূর্তে তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। চ্যালেঞ্জ নিতে হলে তাকে ঝুঁকিমুক্তও হতে হবে। রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ হতে হবে। প্রথমেই বন্ধ করতে হবে মব। পণ্যবাজারে দৃষ্টি দিতে হবে নতুন করে। বন্ধ কারখানা চালুর উদ্যোগ নিতে হবে। বার্তা দিতে হবে যে, এখানে বিনিয়োগ আর ঝুঁকিপূর্ণ নয়। আর সবাই আইনের সুরক্ষা পাবে। অপরাধীও পাবে ন্যায়বিচার। অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ আর রাজনীতির দিকে আমরা যাবো, এ বার্তাই জোগাতে হবে সরকারকে।
রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে জরুরি সংস্কারও বাস্তবায়ন করা চাই। এতে সরকারের জনসমর্থন বাড়বে। প্রশাসনের ওপর তার কর্তৃত্বও যেন বাড়ে। প্রশাসন তো নির্বাচনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আর নির্বাচন ভণ্ডুল করে অন্য কোনো দিকে দেশকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা থাকলে মূলত সরকারকেই সেটা রোধ করতে হবে। নিজ মতামত চাপিয়ে দেয়া কোনো গোষ্ঠী নয়; জনগণই নির্ধারণ করবে দেশের ভাগ্য। এটা নিশ্চিত করা না গেলে এত আত্মত্যাগের গণ-অভ্যুত্থানও ব্যর্থ হয়ে যাবে।
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট