সরকারের মদত ছাড়া একের পর এক ‘মব’ অব্যাহত থাকতে পারে না।
আবার! একটি সাধারণ আলোচনা সভাতেও মব সন্ত্রাস!! দেখা যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা বিষয় এলেই কিছু লোকের গায়ে জ্বালা ধরে। আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত লতিফ সিদ্দিকী, বিএনপি থেকে সাময়িক বরখাস্ত ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে মব সন্ত্রাস তাদের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয়ের কারণেই। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকও আক্রান্ত হয়েছেন এই আলোচনা সভায় যোগ দেয়ার অপরাধে। আপনাদের ভিন্ন মত থাকলে একটার বিপরীতে দশটা আলোচনা সভা করেন। না, তা করবে না, কারণ ফ্যাসিবাদী ভাব এই পথে যায় না।
এসব লাঠিয়াল বাহিনীর পরিচয় সরকারের অজানা থাকার কথা নয়, বহু সন্ত্রাসী ঘটনারই ভিডিও আছে, সন্ত্রাসীদের চেনা খুবই সহজ। কিন্তু সরকারের কোনো উদ্যোগ নাই। উল্টো সরকারের পুলিশ মব সন্ত্রাসীদের নয়, মামলা অভিযোগ ছাড়াই ধরে নিয়ে যাচ্ছে আক্রান্তদের। আসলে সরকারের মদত ছাড়া একের পর এক এগুলো অব্যাহত থাকতে পারে না। অবিলম্বে মদত দেয়া বন্ধ করতে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে দাবি জানাই।
২
হাসিনা সরকারের আমলে চাঁদাবাজি, জোর-জুলুম, অস্বচ্ছতা, কমিশনভোগী চুক্তি, নজরদারি, বিচারহীনতা, ভয়ের রাজত্ব সৃষ্টি ইত্যাদি এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছিল যা আগের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছিল। এখন অন্তর্বর্তী সরকারসহ যারা ক্ষমতার অংশীদার তাদের মধ্যে এসব ক্ষেত্রে হাসিনা আমলের চূড়া ধরার প্রতিযোগিতা দেখা যাচ্ছে।
ছাত্রলীগ আগে যাকে তাকে ধরে পিটিয়ে পুলিশে দিতো, এখনো নতুন নতুন নাম ব্যবহার করে একই রকম গোষ্ঠী শিক্ষক-শিক্ষার্থী, রিকশাচালকসহ যাকে খুশি তাকে ধরে পিটিয়ে মেরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। তখনো জনগণকে না জানিয়ে দেশবিরোধী চুক্তি করা হয়েছে, এখনো করা হচ্ছে। এখনকার চাঁদাবাজি, চাঁদার দাবিতে হামলা, খুন, ভুয়া পাইকারি মামলা সব আগেরই নতুন ‘অন্তর্বর্তী’ সংস্করণ।
সেই আমলে তৈরি করা হয়েছিল সিপি গ্যাং, অনলাইন অফলাইনে ভিন্ন মতের মানুষদের প্রতি কুৎসিত গালিগালাজ, মিথ্যাচার, কুৎসা রটনা এগুলো ছিল তাদের কাজ। অনলাইন ছাড়াও ট্যাগ দেয়া দোসর বানিয়ে ব্যানার পোস্টার করে অপদস্থ করায় তাদের উৎসাহ উপরের পিঠ চাপড়ানিতে বেড়ে যেতো। পছন্দ না হলে মুক্তিযোদ্ধারাও তাদের আক্রমণ অপমান থেকে রেহাই পায় নাই।
এই আমলেও সিপি গ্যাং-এর নতুন সংস্করণ দাপটে ঔদ্ধত্যে একই কাজ করছে। মতের মিল না হলে তাদের গণ-অভ্যুত্থানের সক্রিয় মানুষদেরও আক্রমণ করতে দ্বিধা নাই। তারাও একইরকম উপর থেকে দৃশ্যমান অদৃশ্য পিঠ চাপড়ানি পেয়ে দিনে দিনে আরও শাখা প্রশাখা ছড়াচ্ছে। ভরসার কথা একটাই- তখনো এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ছিল, এখনো আছে। আরও বাড়বে।
৩
যারা মব সন্ত্রাস করে দখল, চাঁদাবাজি, লুটপাট, খুন, জখম করছে এদের মধ্যে কিছু গোষ্ঠীর একটা দুরারোগ্য ব্যাধি আছে- সেটি হলো শিল্পী ও শিল্পকর্ম, নারী ও ধর্মীয়-জাতিগত-লিঙ্গীয় বৈচিত্র্যের প্রতি বিদ্বেষ। এরা সৃজনশীল কাজ এবং মানুষ সহ্য করতে পারে না। বৈচিত্র্য তাদের অসহ্য, বৈষম্য তাদের প্রাণ। এসব গোষ্ঠী এখন নিজেদের খুব ক্ষমতাবান ভাবছে। এরকম ভাবতে পারছে এবং দাপট দেখাতে পারছে শুধুমাত্র সরকারের প্রশ্রয়ের ভূমিকার কারণে।