সুপ্রিয় হাসু আপা, আফসোস হয় আপনার জন্য। আপনার দলের জন্য। দেশের মাটিতে নেতাকর্মীদের বেপরোয়া কারবারে আজ আপনার এ দুর্দশা। আপনিসহ আপনার দলের বাঘা বাঘা নেতারা দেশছাড়া। আপনাদের এই দেশছাড়াই প্রমাণ করে আপনারা অন্যায় করেছেন দেশবাসীর সঙ্গে। বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন দেশের মাটির সঙ্গে। সত্যিই আপা, জীবনে ভাবিনি আপনাকে এভাবে দেশছাড়া হতে হবে। আর আমাদের মতো হতভাগার অপার দুঃখ নিয়ে দিন কাটাতে হবে। আরও আফসোস হয়, এ অবস্থায়ও আপনার দলের নেতাকর্মীরা শুধরায়নি। তারা মনে করছে এখনো ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। এই যে আওয়ামী লীগ দেশছাড়া হলো এটা গোটা বিশ্বে একটা লজ্জার। এ লজ্জায় যেখানে নিজেদের শুধরানোর কথা- সেখানে আপনার দলের নেতাকর্মীরা বিদেশের মাটিতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘ অধিবেশনে যাওয়া রাজনৈতিক দলের উপর চড়াও হওয়া, গালিগালাজ করা, ডিম ছুড়ে মারা কি প্রমাণ করে আপা? ভেবে দেখেছেন কি? এ কাণ্ড এটাই প্রমাণ করে যে, আওয়ামী লীগের কর্মীরা ঠাণ্ডা মাথায় কিছু করার চিন্তা করে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে আওয়ামী লীগ কর্মীদের এমন ব্যবহার গোটা বিশ্ব দেখেছে। এতে বিশ্ব কি মনে করছে আপনি বলুন তো? নিশ্চয় বিশ্ব এটাকে ভালোভাবে নেয়নি। আরেকটি কথা অনেক আগে থেকেই লেখালেখি হচ্ছে। টকশোতে আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর বিদেশ শাখা কেন থাকতে হবে? এর কারণ কি? এতে কি রাজনৈতিক দলগুলোর আর্থিক কোনো লাভ হয়? নাকি ডিম ছুড়ে মারা, প্রতিদ্বন্দ্বী দলকে ঘায়েল করার জন্য তাদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে রাখা হয়। এ ঘটনা কোনটা প্রমাণ করে।
আপা, আপাগো আরেকটি কথা মনে পড়লেই কলিজাটা একেবারে মোচড় দিয়ে ওঠে। ট্রাইব্যুনালে আপনার বিরুদ্ধে হওয়া একটা মামলা এখন প্রায় রায়ের পর্যায়ে। রায়ে কি হয় আল্লাহ মালুম। প্রত্যেক সাক্ষী আপনার বিরুদ্ধে বলেছে। রাজসাক্ষী তো আপনার নিয়োগ করা পুলিশের আইজিপি। প্রসিকিউশন শক্ত প্রমাণ হাজির করেছে ট্রাইব্যুনালে। যাকগে সেসব কথা। মূল কথা হলো- রাজনীতিকরা যদি এ থেকে শিক্ষা নেয় তাহলে দেশ উপকৃত হবে। আপা, আপনি নিশ্চয় ভিনদেশে বসে ভাবছেন কীভাবে অন্তর্বর্তী সরকারকে কাবু করা যায়। পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে প্রশাসনে আপনার দলের অন্ধভক্তরা বিভিন্ন সময় সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে কাজ করছে। প্রশাসনের লোকজন পক্ষান্তরে আপনার পক্ষে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ঘটনায় তা প্রমাণও হয়েছে। আপনি কি আপনার নেতাকর্মীদের একটু বলতে পারেন না। ধৈর্য ধর। একনাগাড়ে চারটি নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে। যদিও ২০০৮ সালের নির্বাচন ছাড়া অন্য তিনটি নির্বাচনকে দেশ-বিদেশের কেউই স্বীকৃতি দেয়নি। তারপরও গলার জোরে আওয়ামী লীগ সরকার চালিয়ে গেছে। এ লজ্জা গোটা দেশের।
হাসু আপা, সামনে নির্বাচন। ফেব্রুয়ারিতেই হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আবার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচনের আগেই আপনিসহ তারা দেশে ফিরবেন। আমার কথা- যেটা সম্ভব নয়, সেটা আপনার নেতারা বলে কেন? তারা এসব বলে মানুষের কাছে হেয় হচ্ছে। এমন কর্মকাণ্ড না চালাতে অনুরোধ করছি আপা। যদি ভালো মনে করেন তাহলে নির্বাচনটা ভালোভাবে হতে দিন। দেখবেন এ দেশের মানুষই আপনাকে সংবর্ধনা দিয়ে দেশে আনবে। এখন তো শুধু আপনার দলের কিছু লোক আপনাকে চাঙ্গা করে দেয়। আপনিও তাদের কথায় নেচে নানা সময়, নানা বিতর্কিত কথা বলে বেড়াচ্ছেন। যা আখেরে আপনার বিরুদ্ধেই যাচ্ছে।
আপা, নির্বাচনটা কেমন হবে বলে মনে করছেন? ওরাও না খুবই বোকা। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে আন্দোলন করে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করাতে পেরেছে। কিন্তু ওরা একবারও ভাবলো না নির্বাচন হলেও তো আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী পাওয়া যাবে না। কারণ আওয়ামী লীগ নিজেকে নিজেই বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। আবার জাতীয় পার্টিও নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে। এ নিয়ে কতো কাণ্ড। গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ভিপি নুর এমন মার খেয়েছে যে, তার বাঁচার আশাই ছেড়ে দিয়েছিল অনেকে। কিন্তু আল্লাহ্ তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। এখন নুর বিদেশে চিকিৎসা করাচ্ছে। দোয়া করি নুর সম্পূর্ণ সুস্থভাবে দেশে ফিরে আসুক। প্রিয় আপা, জামায়াত নাকি ভারতের সঙ্গে ভাব জমাচ্ছে। সে দেশের পত্রিকায় এমন রিপোর্ট ছাপা হয়েছে। বিএনপি তো নিজেদের নিয়ে ভাবছে যে, তারা সরকারে বসতে যাচ্ছে। ওদিকে ডাকসু, জাকসুতে বিএনপি’র ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের শোচনীয় পরাজয় হয়েছে। ছাত্রশিবির দেখিয়ে দিয়েছে ওরা রাজনীতি বুঝে। সমাজনীতি বুঝে। মানবিকতা বুঝে। ওরা মানুষের মন জয় করতে জানে। আপনার শাসনামলে শিবিরের লোকজন ভিড়ে গিয়েছিল ছাত্রলীগে। আপনি পালানোর পর ওরা ওদের খোলস পাল্টেছে। ছাত্রদলকে তো কোনো ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতেই দিতো না ছাত্রলীগ। প্রবেশ করলেই লাঠি নিয়ে মারধর আর দৌড়ানি দিয়েছে কতো। আপনি এসব দেখেও না দেখার ভান করেছেন। এর কুফলই হয়তোবা এখন ভোগ করছেন।
হাসু আপা, আপনাকে একটি কথা না বললেই নয়- কথাটি হলো, মানুষ দুনিয়ায় যা করে তার ফল ভোগ করে যায়। এখন বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ দলগুলোতে নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এ হিসাব-নিকাশ কোথায় গিয়ে ঠেকে কে জানে। পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে এনসিপি আর গণঅধিকার পরিষদ একীভূত হওয়ার আলোচনা চলছে। এ ছাড়া আরও একদিকে সাত দল নিজেদের নিয়ে চিন্তা করছে। আবার ৯টি দলও এক কাতারে নির্বাচন করার চিন্তা করছে। আর বিএনপি তো বলেই রেখেছে তারা নির্বাচনে জয়ী হলে জাতীয় সরকার করবে। এ অবস্থায় নির্বাচন হলে কী হবে তা সবারই অজানা। তবে দেশের মানুষ নির্বাচন চায় দ্রুত। আন্তর্জাতিক বিশ্বও নির্বাচন চায়। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। এ নির্বাচন কেউ ঠেকাতে পারবে না। অবশ্য ইতিমধ্যে জামায়াত তিনশ’ আসনে তাদের প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে। বিএনপিও যাচাই বাছাই করছে। আরও কয়েকটি দল বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। এসব নির্বাচন হওয়ার লক্ষণ। নির্বাচনে সবাই যাবে। নতুন ভোটার যারা গত ষোলটি বছর তাদের ভোট প্রয়োগ করতে পারেনি তাদের উপর নির্ভর করছে কোন দল এগিয়ে থাকবে। তাই বলছি, আপা এমন মুহূর্তে আপনি আপনার দলের লোকজনকে ক্ষেপিয়ে দেবেন না। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি যেন তৈরি না হয়। এমনিতে আপনার কথা শুনে ঝটিকা মিছিল করতে গিয়ে দুই শতাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হয়েছে। তাই বলছি- দয়া করে আর উস্কানি নয়, শান্তির বার্তা দিন। মানুষ দেখুক আপনি এতকিছুর পরও দেশের মানুষের মঙ্গল চান। খুনের বদলে খুন নয়, বাড়ি পোড়ানোর বদলে বাড়ি পোড়ানো নয়-আইনের মাধ্যমে যা হওয়ার তা হবে।
সবশেষে বলবো, আপনি ভালো থাকুন। মেজাজ ঠাণ্ডা রাখুন। মনে রাখবেন- এক মাঘে শীত যায় না।