হাসু আপা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখলাম আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিচ্ছেন পুতুল। তিনি নিজেই এ ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া জয়কেও দেখলাম ফেসবুকে এসে বলছেন, এখন থেকে আমার বোনই সব দেখবে। তার উপরই আমরা দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি। শুনে খুব খুশি হয়েছি। তবে মনে একটা খটকা লেগে আছে। এগুলো সত্যিই। নাকি এ আই দিয়ে তৈরি। আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কতো কিছু যে দেখায়? কাউকে উঠাচ্ছে, কাউকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে। কোনো সিরিয়াস বিষয় নিয়ে হাসির খোরাক বানাচ্ছে। এসব দেখে ভিরমি খেতে হয়। এই যে দেখুন না, আপনাকে নিয়ে যে কতো রকম কি যে বানাচ্ছে। ইজ্জত যাবার অবস্থা। তারপরও এগুলো বন্ধ করা যাচ্ছে না। ক’দিন আগে শুনেছিলাম আপনার দেয়া আক্রমণাত্মক বক্তব্য যেন প্রচার না হতে পারে এজন্য দু’টি সাইট বন্ধ করে দেয়া হবে। কই অনেকদিন হয়ে গেল বন্ধ তো হলো না। তার মানে আপনি যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন তা জাতি দেখতে পারবে মন ভরে। আপনার দলের লোকজন তা দেখে উজ্জীবিত হতে পারবে। কেউ কেউ আপনার কথা শুনে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে যাবে। বাড়িঘর ভাঙচুর করতে পারবে। যেমনটা আপনি নির্দেশ দিয়েছেন তেমনটা করতে পারবে। এ ছাড়া একটি রেকর্ডে তো আপনি হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন এদের কাউকে ছাড়া হবে না। প্রত্যেকটার বিচার করবেন। তো আপা কবে আসছেন দেশে। কারণ দেশে এলে এসব বিচার তো দেখতে পারবে দেশের মানুষ।
প্রিয় হাসু আপা, আপনার এসব কথা শুনে সাধারণ মানুষ কি বলে জানেন? হয়তো জানেন। হয়তো জানেন না। মানুষ বলে হাসিনার বৈশিষ্ট্য আর বদলালো না। তিনি সরকারে থাকলে যেমন যুদ্ধংদেহী মনোভাব দেখান। বিরোধী দলে থাকলেও তেমনি থাকেন। আবার দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েও একই চরিত্র নিয়ে মানুষের সামনে হাজির হন। মানুষ বলে, হাসিনাকে কি বুঝাবার কেউ নেই? যিনি বলবেন-আপা এভাবে বলা ঠিক নয়। আমাদের এখন নরম হতে হবে। কৌশলী হতে হবে। জনগণের কাছে যেতে হলে এটার খুবই প্রয়োজন। এটা তো আপা সত্যি আপনার আমলে জুলাই আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের দায় আপনাকে নিতে হবে। কারণ আপনার নির্দেশে এসব হয়েছে। আপনার নির্দেশে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। আপনার নির্দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর হয়েছে। এসব আপনার প্রকাশিত অডিও বক্তব্য থেকেই দেশবাসী জানছে। যার ভেতর-বাহির এমন জ্বালায় জ্বলছে তার দ্বারা এ দেশের মানুষ যে উপকার পাবে না তা দেশের মানুষ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে।
আপা, আপাগো এ মুহূর্তে আপনার জন্য বলা যায় একটি সুখবরই আছে। বিদেশি কূটনীতিকরা আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনতে মাঠে নেমেছে। চার/পাঁচদিন আগে আপনার সরকারের মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর বাসায় তিন কূটনীতিক গিয়েছিলেন। অবশ্য কি কথা হয়েছে তা জানা যায়নি। তবে মানুষ আন্দাজ করছে নির্বাচন নিয়ে হয়তো কিছু একটা হবে। মাঝে মাঝে আপা, আমি চিন্তা করি ওরা কি ভেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে হাজির হয়েছিল। যদিও সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছে। ওরা ভেবেছিল নিষিদ্ধ করে দিলে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে না। কি বোকা দেখেন ওরা? নিষিদ্ধ না করলেই কি আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে পারবে? কারণ তাদের সকল নেতাই তো এখন আত্মগোপনে। কেউ বিদেশে আরামে আয়েশে দিন কাটাচ্ছে। কেউ কেউ মিটিং করে আগামী দিনের পরিকল্পনা সাজাচ্ছে। আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার মতো সাহসী নেতা আওয়ামী লীগে ক’জন আছে বলুন। এটা চিন্তা না করে আপনার দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি ও পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা বহির্বিশ্বে ভালো বার্তা যায়নি। এতে কিন্তু আখেরে আপনার দলেরই লাভ হয়েছে। বহির্বিশ্ব এখন সব দলকে নিয়ে নির্বাচন করার কথা বলছে।
হাসু আপা, জানি আগামী কয়েক বছর আপনার দলের কার্যক্রম ফেসবুক নির্ভরই থাকবে। আর আপনার নির্দেশে দেশে গুপ্ত হামলা হতে পারে। দেশ অস্থিতিশীল হতে পারে। যত কিছুই হোক সরকারে থাকতে আপনার ও আপনার দলের লোকজনের যে অহংকার দেখেছে দেশবাসী, যে অত্যাচার দেখেছে দেশবাসী, চাঁদাবাজি, দখলবাজি, সন্ত্রাস, হামলা, মামলা দেখেছে তা মনে করলে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ নাম শুনলেই এখনো আঁতকে উঠে। এ অবস্থায় আপনার দলের অবস্থা কী একটু নিজেই চিন্তা করে দেখুন। তার উপর ক’দিন পরপর যদি আপনি অডিও রেকর্ডে নানা হুমকি দিতে থাকেন তাহলে তো মানুষ আরও ভয় পেয়ে যাবে। আগেও বলেছি- এমন হুমকি না দিয়ে এমন কথা বলুন জনগণের মনে যেন ফের জায়গা করে নিতে পারেন। আপনার দলের লোকজন আপনাকে যতই বলুক জনগণ আপনার পক্ষে আছে আসলে তা ডাহা মিথ্যা কথা। আপনি তাদের কথা না শুনে নিজে নিজে চিন্তা করুন। নিজে নিজে ভাবুন। জনগণের কাছে অনুতপ্ত হোন। ক্ষমা চান। বাঙালি বড়ই অদ্ভুত। তারা সহজেই মানুষকে বিশ্বাস করে। আপনি অভিনয় করে ক্ষমা চাইলেও ওরা বিশ্বাস করে নেবে। ক্ষমতায় থাকতে অগণিত প্রতিহিংসাপরায়ণ কাজ করেছেন। আবার এগুলো বুক ফুলিয়ে বলেছেন। মনে করেছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার উঠিয়ে দিয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপনিই থাকবেন ক্ষমতার শীর্ষে। দেশের মানুষ হবে আপনার গোলাম। একবারও কি ভাবেননি-এ দেশের মানুষ বারবার গোলামির জিঞ্জির ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এ দেশের মাটিই নাকি এমন। মানুষকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সজাগ করে দেয়। এক সময় অন্যায়কে প্রতিহত করে। যেভাবে আপনাকে প্রতিহত করে দেশছাড়া করেছে। এখন কোথায় আপনার চেলাচামুণ্ডারা। যারা নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে আপনাকে নিষ্ঠুরতম স্বৈরাচার বানিয়েছে। মনে পড়ে আপা, শাহবাগে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের সময় গণজাগরণ মঞ্চ বানিয়ে নিজের ফায়দা লুটে নিয়েছেন। এই গণজাগরণ মঞ্চের কথা শুনে আইন পর্যন্ত বদল করেছেন। ট্রাইব্যুনালের রায়ে যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত আসামিকে উচ্চ আদালত ফাঁসি দিতে পারবে এমন আইন করেছেন। যা পৃথিবীতে বিরল এক আইন। অথচ সাজাপ্রাপ্ত আসামি উচ্চ আদালতের আশ্রয় নেয় এই ভেবে যে, তিনি খালাস পাবেন- নয়তো সাজা কিছুটা হলেও কমবে। এর দু’টির একটিও যদি না হয় তাহলে নিম্ন আদালতের দেয়া সাজাই বহাল থাকবে। আপনি এখানে প্রতিহিংসার আগুনে আইনকে ওলটপালট করে দিয়েছেন। এখন যে ট্রাইব্যুনালে আপনার ও আপনার দলের লোকজনের বিচারকাজ চলছে সেখানেও তো এমন হতে পারে। আপনার আইনেই আপনি ফেঁসে যেতে পারেন। আপা আরও কতো প্রতিহিংসার কাজ করেছেন। শুয়ে শুয়ে একটু ভাবুন। দেখবেন চোখের সামনে সব ভেসে উঠবে। আর যদি এসবকে সঠিক বলে মনে করেন তাহলে তো কোনো কথা নেই। মানুষ মাত্রই ভুল করে। আপনিও মানুষ। যদি ফেরেশতা হতেন তাহলে কোনো ভুল হতো না। মানুষ বলেই আপনার ভুল হতে পারে। আর যারা ভুল স্বীকার করে নেয় তারা মহামানব। এটা নিশ্চয় জানেন।
শ্রদ্ধেয় হাসু আপা, জীবনটা ক্ষণিকের। কে কখন পরপারে চলে যায় একমাত্র আল্লাহই জানেন। কিন্তু সবাইকে যেতে হবে। আর পরপারের কথা চিন্তা করে মানুষ পৃথিবীতে এগিয়ে যায়। যারা অমানুষ তাদের তো পরপারের চিন্তা নেই। তারা নিজেরাই নিজেকে অনেক কিছু মনে করে। অন্য মানুষকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। আপনি এমন হবেন- এটা আশা করি না। আশা করি আপনি পরবর্তীতে জনগণের সেবক হবেন। দলের নয়। এখন যেভাবে দেশটাকে দুই ভাগে ভাগ করে রেখেছেন এ থেকে পেছনে ফিরে আসতে হবে। নিজেকে বদলাতে হবে। যদি পুতুলকে দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টি সঠিক হয় তাহলে বলবো আপনার চেয়ে অনেক ভালো হবে। আওয়ামী লীগও ফের দ্রুত জায়গা করে নেবে। আপা, এটা মনে রাখবেন বড্ড শ্রদ্ধা করি আপনাকে। আর শ্রদ্ধা করি বলেই এসব কথা বলে যাচ্ছি। আপনি কীভাবে নেবেন সেটা আপনার ব্যাপার। আজ এ পর্যন্তই। ভালো থাকবেন। শরীরের দিকে খেয়াল রাখবেন। আল্লাহ হাফেজ।